মুহাররম ১৪৩১   ||   জানুয়ারী ২০১০

সুস্বাস্থ্য ও খেলাধুলা

আবু সালেহ

পড়াশুনা ও অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিশুর শারীরিক সুস্থতার প্রতি লক্ষ্য রাখা পিতা-মাতা ও দায়িত্বশীলদের কর্তব্য। অল্প সময়ে অত্যধিক পড়াশোনা চাপিয়ে দেওয়া যেমন উচিত নয় তেমনি অবিরাম পড়াশোনায় লাগিয়ে রাখাও ক্ষতিকর। পড়াশোনার মাঝে কিছু সময়ের বিরতি থাকা চাই। এতে শিশুর মাঝে নতুন উদ্যম সৃষ্টি হবে এবং অল্প সময়ে অধিক পড়া ইয়াদ হবে। পরিমিত শরীর চর্চা ও মুক্ত বাতাসে খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেওয়া খুবই প্রয়োজন। আমাদের পূর্বসূরী মুসলিম মনীষীগণ এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।

ইমাম গাযালী রাহ. বলেন, শিশু যখন মকতব থেকে ফিরে আসে তখন তাকে খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া উচিত। যাতে দীর্ঘ সময়ের পড়াশোনার চাপ দূর হয়ে যায়। শিশুকে যদি খেলাধুলার সুযোগ না দেওয়া হয় এবং সারাক্ষণ বই-খাতা নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয় তাহলে তার স্বতঃস্ফূর্ততা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। পড়াশোনা তার কাছে কারাগারের শাস্তি বলে মনে হবে। ফলে সে যে কোনোভাবে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য পাগলপারা হয়ে উঠবে।-ইহ্‌ইয়াউ উলূমিদ দীন ৩/৫৯

ইবনে মিসকাওয়াহই বলেন, কিছু সময় শিশুকে খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া চাই। যাতে পড়াশোনার ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এমন কোনো খেলায় যেন সে মগ্ন না হয় যাতে ব্যথা পাওয়ার বা অতি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বলা বাহুল্য যে, শরীর চালনা স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে, অলসতা দূর করে, বুদ্ধিকে শানিত করে, নতুন উদ্যম সৃষ্টি করে এবং মনে প্রশান্তি দান করে।-তাহযীবুল আখলাক পৃ. ২০

পিতা-মাতাকে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, শিশুরা স্বভাবগতভাবেই চঞ্চল ও খেলাধুলা প্রিয় হয়ে থাকে। তাদের এই প্রবণতায় বিরক্ত না হয়ে উপযুক্ত সময় তা প্রকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে স্বভাবের এই প্রবণতা তার সুস্থতা ও নব উদ্যমের কারণ হয়ে যায়। একজন মুসলিম মনীষী আবুল কাসিম আবদুল্লাহ তার সঙ্গী মুআইক্বীব ইবনুল আযহারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমাদের মকতবের শিশুরা কেমন আছে? মুআইক্বীব উত্তরে বললেন, তারা খেলাধুলায় প্রবল আগ্রহী। আবুল কাসিম বললেন, কখনো তাদের আগ্রহে ভাটা পড়লে তাদের গলায় তাবিয ঝুলিয়ে দিও। অর্থাৎ শিশুরা খেলাধুলায় আগ্রহী হবে এটাই স্বাভাবিক।

 

advertisement