বন্ধু-শত্রুর খেলা
‘গুজরাটের কসাই’ বলে খ্যাত নরেন্দ্র মোদির ব্যাপারে অবস্থান বদল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতদিন তাকে এড়িয়ে চললেও এখন আমেরিকা তার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই মধ্যে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বও সেরে ফেলেছেন। যে মোদিকে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গেই হাত মিলিয়েছে এবার যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার কারণেই নাকি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
এটাই হচ্ছে বড় রাষ্ট্র আমেরিকার নীতি। নীতির নীতি : পলিসির ইথিক্স। বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মুদ্রাবদল ওরা এভাবেই ঘটায়। প্রয়োজন ও স্বার্থের কাছে নৈতিক অবস্থানের কোনো ভূমিকা থাকে না। এজন্যই ২০০২ সালে গুজরাট হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়ক মোদির ব্যাপারে প্রথমে কঠোর হলেও এখন তারা বেশ নমনীয়। কারণ মিডিয়া ও জরিপে মোদির জিতে আসার সম্ভাবনা উচ্চারিত হচ্ছে। সে বর্বর না হত্যাকারী-তাতে আমেরিকার কিছুই যায়-আসে না। তাছাড়াও হত্যাকান্ডটি তো ছিল মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা বা হত্যাকান্ড। লজ্জা ও মুখরক্ষার জন্য তখন একটা স্ট্যান্ড নিতে হয়েছিল আমেরিকাকে। এটাকে তো আর দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায় না। আগামী মে মাসের নির্বাচনে বিজেপি জিতে এলে, মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে আমেরিকা তখন কী করবে? সেজন্য আগেভাগেই হাত মিলিয়ে নিল। গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা আইনের শাসন ইস্যু হিসেবে তখন একটু বিশ্রামে থাকবে-এই যা। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব দেশেই স্বার্থের জন্য এই হিসাব ধরেই কদম ফেলে থাকে।
বাংলাদেশও কি এর বাইরে? গত একটি বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র মুখে মুখে এ দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বড় পাহারাদার। ব্যস্ত বাক্যবাগিশ আচরণে দেশের বহু মানুষকে তারা একদম ভুলিয়েই রেখেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে আরেক কথা। স্বার্থ, চুক্তি এবং মুসলিমবিরোধী আঞ্চলিক ও নিজস্ব নীতির কারণে সব ধরনের অবিশ্বাস্য অনৈতিকতাই দারুণ নির্বিকারত্বের সঙ্গে তারা সয়ে যাচ্ছে। মুখে মুখে ত্রাণকর্তার ভান ধরে অন্যায্য ও অনৈতিক শক্তির প্রতিই প্রকৃত সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে আছে। এখানে আঞ্চলিক কূটনীতি ও প্রভাবের অংকে বিয়োগ হতে চলেছে জবাবদিহি, সুশাসন ও মানবাধিকার। দরকষাকষির ইস্যু হিসেবে সবকিছুই মুখে উচ্চারিত হয়, কিন্তু বাস্তব পদক্ষেপে সবকিছুই স্থগিত থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থান্ধ বন্ধুত্ব ও শত্রুতার খেলায় সরল-শরিক যারা হয়, লোকে বলে নিদান কালে তাদের কোনো শত্রুর নাকি দরকার হয় না।
এই বন্ধু-শত্রুদেরই একটি দল গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারিতে গিয়ে গণমাধ্যমের খবর হয়েছে। এদের ভাবসাব তো ‘নির্দোষ কূটনীতিকের’। কিন্তু পরবর্তী আচরণ হয়ে থাকে একদম অপরিচিতের। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের এক মাদরাসায় গিয়েছিল আরেকটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিক। সেটাও খবর হয়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য সেই মাদরাসায় অনেক বড় একটি ‘দুর্ঘটনা’ ঘটেছিল। যার জের চলছে এখনও। এরই মধ্যে মার্কিনী কূটনীতিকদের হাটহাজারিগমন নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও ঘনিষ্ঠজনরা জঙ্গিবাদে উসকানির সূত্র খুঁজতে শুরু করেছেন।
মাদরাসাবিদ্বেষী চক্র তো এসব ঘটনাকে বাঁকা চোখে দেখবেই। সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে এসব পশ্চিমা ‘সহযোগীর’ বর্ণময় শত্রুতা ও বন্ধুত্ব নিয়েও সাবধান থাকা উচিত। তাদের কোনো আচরণই যে সরল নয়- সেটাও সব ভালো মানুষদের, সব ইতিবাচক শক্তি ও দলের মাথায় থাকা দরকার। এদের মৌখিক সৌজন্যে যারা আস্থা রেখে হাত বাড়িয়ে দেয় বেশির ভাগ সময়েই আক্ষেপে নিজেদের সে হাত তাদের কামড়াতে হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন। ষ