ইসলাহ ও মুহাসাবার মৌলিক বিষয় থেকে উদাসীন না হই ‘যিকর ও ফিকর’ কিতাবটির রাহনুমায়ী গ্রহণ করি
ফরযে আইন যে সমস্ত আমল, তার অন্যতম হল মুহাসাবা। বা বলা যায়, নিজের ইসলাহের ফিকর। ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
(তরজমা) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।-সূরা হাশর (৫৯) : ১৮
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
فَأَمَّا مَنْ طَغَى l وَآَثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا l فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى l وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى l فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى
অনন্তর যে সীমা লঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস। পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস।-সূরা নাযিয়াত (৭৯) : ৩৭-৪১
মুহাসাবা এটার নাম। ইসলাহের ফিকির এটার নাম । এই কাজটা ফরযে আইন। কিন্তু এই কাজের এবং এই ইসলাহের তারতীব কী হবে তা আলোচনার দাবি রাখে।
মুহাসাবা যখন আমি করব, দেখব- আমার মাঝে অনেক ত্রুটি। বর্জনীয় অনেক কিছুতে আমি লিপ্ত এবং করণীয় অনেক কিছু আমার মধ্যে নেই। এখন ইসলাহ তো আমার করতে হবে। যে করণীয়গুলো আমার মধ্যে নেই সেগুলো আনতে হবে। বর্জনীয় যেগুলো আমার মধ্যে আছে সেগুলো ছাড়তে হবে। কিন্তু সবকিছু সাধারণত একসাথে করা যায় না। সকল করণীয় একসাথে অর্জন করা যায় না । আবার সকল বর্জনীয়ও একসাথে ছেড়ে দেওয়া যায় না। এটা একটা বাস্তবতা। আল্লাহ তাআলাও এই বাস্তবতা এবং বান্দার এই কমযোরির কথা জানেন। সেজন্য আল্লাহর দেওয়া শরীয়তে এক্ষেত্রে তারতীব রক্ষা করা হয়েছে। তাই যদি ফিকির থাকে, ইসলাহের চেষ্টা-মেহনত অব্যাহত থাকে তাহলে সেটাকে খুবই কদরের নযরে দেখা হয়। কিন্তু যদি কেউ গাফেল হয়ে বসে থাকে- কোনো ফিকির নেই, কোনো চেষ্টা নেই, তাহলে সেটা একজন মুমিনের জন্য বড় ভয়াবহ।
তো যাই হোক, এর তারতীবটা এমন- যার কাছে যেটা সহজ সেটা সে আগে গ্রহণ করবে । ছোট এবং সহজ দিয়ে ইসলাহ শুরু করা শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর নয়। তবে ইসলাহের ফিকিরটা সেখানে গিয়ে থেমে যাওয়া আপত্তিকর । সুন্নতি জামা, টুপি, এমনকি পাগড়িও সে গ্রহণ করল। যাহেরী দিকটাকে সে আগে সুন্দর করে নিল এটা ভালো। এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এটুকুতেই ইসলাহকে সীমাবদ্ধ রাখা নিন্দনীয়। কারো কথায় কাজে এমন ভাব প্রকাশ পাওয়া যে, লেবাস পোষাক ঠিক করে ফেলার মধ্যেই তার সকল দায়িত্ব শেষ, অথবা এতেই তার ইসলাহ সম্পন্ন হয়ে গেছে, সেটা খুবই খতরনাক। স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা, আশপাশের মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, এগুলোর জন্য তার কোনো ফিকির নেই। লেনদেনের স্বচ্ছতা নিয়ে চিন্তা নেই, সেটা হল আপত্তিকর ।
যখনই দ্বীনের তলব তার মধ্যে পয়দা হয়েছে, নামায ধরেছে, এখন আর তার নামায কাযা হয় না। খুব ভালো। বড় একটা ফরয তার আমলে এসে গেছে। এরপর আরো তারাক্কী করেছে। ফলে দাড়িও এসে গেছে,পাগড়িও এসে গেছে । অবশ্যই ভালো। কিন্তু এরপর যদি সে থেমে যায়, তাহলে সেই থেমে যাওয়াটা আপত্তিকর। কারণ শরীয়তের আহকামের যে স্তর ও ফরযের মধ্যে কোনটা বড় ফরয, কবীরা গোনাহের মধ্যে কোনটা বড় কবীরা, এইসব তার যেহেনে স্পষ্ট নয়। আর সেজন্য যাহেরী কিছু আমল সে গ্রহণ করে, কিছু ইবাদাত বন্দেগী নিয়ে, কিছু গোনাহ ছেড়ে দিয়ে সে ভেবেছে, তার ইসলাহ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন যতই সে মুহাসাবা করে- দেখে যে, সে ঠিক আছে। তার মানে হল, ইসলামী তালীমাতের সঠিক ধারণা তার নেই। ইসলামী শিক্ষাগুলোর পরিপূর্ণ ধারণা, স্পষ্ট ধারণা, নির্ভুল ধারণা তার নেই। যদি থাকত তাহলে এই তারতীব, আহকামের এই পর্যায়ক্রম সে শিখতো এবং সেই হিসাবে ইসলাহের ফিকির করত। মাপে কম দেওয়া, ভেজাল দেওয়া, দুর্নীতি করা এজাতীয় ভয়াবহ কবীরা গোনাহ যেগুলো ঈমানের দাবী পরিপন্থী সেগুলো থেকে সে বেঁচে থাকত।
এজন্য মুহাসাবার সময় নিজেকে এভাবে প্রস্ত্তত করতে হবে যে, আমি আমার নফল আমলের তুলনায় ফরযের দিকে তাকাব বেশি। নফল যেসব আমল আমার মধ্যে এসেছে সেগুলোর জন্য আলহামদুলিল্লাহ; আল্লাহর শোকর আদায় করব। তবে সেজন্যে একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা যাবে না। আমার মুহাসাবার মধ্যে প্রথমেই তাকাতে হবে যে, আমার ফরয ওয়াজিব কোনো আমল একেবারে ছুটে যাচ্ছে কি না। ফরয ওয়াজিবের ব্যাপারে উদাসীন, অথচ নফলের ক্ষেত্রে উৎসাহী এমন যেন না হয়। হারাম হয়ে যাচ্ছে, কবীরা গুনাহ হয়ে যাচ্ছে কোনো পরোয়া নেই, অথচ কোনো একটি নফল নিয়ে খুব পেরেশান। এটা কেমন কথা?
একজন এক অদ্ভুত ঘটনা শুনিয়েছিল, এক লোক নাকি শরাব পান করে কিন্তু এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকে যেন মোচে সেই শরাব না লাগে। সব সময়ই এ বিষয়ে তার চূড়ান্ত সতর্কতা। একদিন তার খাদেম সাহস করে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, পানীয় বস্ত্ত মোচে লাগিয়ে পান করা আদব পরিপন্থী।
অর্থাৎ যা পান করছে তার বৈধতা অবৈধতা আলোচনার বিষয় নয়। পান করার ক্ষেত্রে আদব রক্ষা হচ্ছে কিনা সেটা আলোচনার বিষয়।
তো নফলের ব্যাপারে উৎসাহী হওয়া দোষ না। কিন্তু একদিকে ফরয ওয়াজিবের ব্যাপারে উদাসীনতা আর অন্যদিকে নফলের ব্যাপারে আগ্রহ-উৎসাহ, এটা শয়তানের ধোঁকা। এমনিভাবে একদিকে কবীরা গোনাহ হয়ে যাচ্ছে, ইসলাহের কোনো ফিকির নেই, অন্যদিকে উত্তম অনুত্তম নিয়ে চূড়ান্ত পেরেশানী! এটা খেয়াল করার বিষয়।
মোটকথা, ইসলাহ ও মুহাসাবার ক্ষেত্রে তারতীব রক্ষা করা জরুরী। যদিও বাস্তব ইসলাহের ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায়ই তারতীবের অপেক্ষায় বসে থাকা জরুরী নয়। বরং যখন যেটা আমলে আনার সুযোগ হয় সেটা নিয়ে আসা এবং যখন যেটা ছেড়ে দেওয়ার বিষয় ছেড়ে দেওয়া, যেটা সহজ হয় সেটা ছেড়ে দেওয়াই উচিৎ। ইসলাহের বাস্তব যে তারতীব তাতে প্রাথমিক অবস্থায় একথা বলা হয় না যে, সকল ফরয যতক্ষণ পর্যন্ত আমলে না আসে ততক্ষণ কোনো নফলের তামরীন করা যাবে না। বা সকল কবীরা গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার আগে ছগীরা গুনাহ ছাড়ার পেছনে পড়া যাবে না; বরং আমি নেকীর রাস্তায় অগ্রসর হতে থাকব এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার মশক করে যেতে থাকব। যখন যেই করণীয় সহজ ও সম্ভব হবে সেটা করতে থাকব এবং যখন যে গোনাহ ছেড়ে দেওয়া সহজ ও সম্ভব হবে সেটা ছেড়ে দেওয়ার প্রতি যত্নশীল হব। এটা হল আমলের তারতীব। কিন্তু ফিকির ও মুহাসাবার তারতীব এটা না। ফিকির হবে এমন যে, আমার তো এখনো অনেক ফরয বিধান আমলে আসেনি। যেমন, পর্দা একটা ফরয বিধান। আমি আমার বাড়িতে সেই বিধান যথাযথ পালন করতে পারি না। এমনিভাবে অনেক কবীরা গোনাহ এখনো আমি ছাড়তে পারিনি! এভাবে ফিকিরকে সজাগ রাখতে হবে এবং ধীরে ধীরে হলেও অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এর সাথে সাথে পূর্ণ মুহাসাবাও জারি রাখতে হবে। আর সেটাই মুমিনের কর্তব্য। যাহেরের ইসলাহ করে বাতেন থেকে বেখবর হওয়া, নফলের ইসলাহ করে ফরয থেকে বেখবর হওয়া, এমনিভাবে অনুত্তম ও মাকরূহের ইসলাহ করে হারাম ও কবীরা গুনাহ থেকে বেখবর হওয়া মুমিনের শান নয়।
ইবাদাতের ইসলাহ করলাম কিন্তু আকীদা থেকে বেখবর, অথবা আকীদার ইসলাহ করলাম কিন্তু ইবাদাতের কোনো খবর নেই, ইবাদাতের খবর আছে কিন্তু বিদআতওয়ালা ইবাদাত, অন্যের ইসলাহের ফিকির করি কিন্তু নিজের ইসলাহের ফিকির নেই, উম্মতের ইসলাহের ফিকির আছে, কিন্তু আওলাদের ইসলাহের ফিকির নেই এমন হলে হবে না।
বিশেষ করে যে চারটা সিফাতের কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أربع إذا كن فيك فلا عليك ما فاتك من الدنيا حفظ أمانة وصدق حديث وحسن خليقة وعفة في طعمة
চারটি গুণ এতই মূল্যবান যে, তা যদি তোমার মধ্যে থাকে তাহলে দুনিয়ার আর কী তোমার নেই সে চিন্তারই দরকার নেই। ১. আমানত রক্ষা করা ২. সত্য কথা বলা ৩. উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া ৪. রিযিক হালাল হওয়া।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৬৩৬৫
সব ধরনের মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আমানতের পথ অবলম্বন করতে হবে এবং সব ধরনের খিয়ানত থেকে বেঁচে থাকতে হবে। বদ আখলাকী থেকে বেঁচে থাকা এবং নেক আখলাকীর পথ অবলম্বন করা। লেনদেনের স্বচ্ছতা, আয় উপার্জনে হালালের প্রতি খেয়াল রাখা এবং সব ধরনের হারাম থেকে বেঁচে থাকা। নিজের ইসলাহের মুহাসাবার ক্ষেত্রে এই চারটা বড় ময়দান।
মুআশারার ইসলাহের ফিকির না করা, লেনদেনে স্বচ্ছতার ফিকির না করা, হারাম পেশা-হারাম চাকুরী ছাড়ার ফিকির না করা, এমনকি সুদ ঘুষ ও আত্মসাতের মতো ভয়াবহ কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বাঁচার ফিকির না করা, বদ আখলাকী থেকে বাঁচার ফিকির না করা, কবীরা গুনাহ থেকে বাঁচার ফিকির না করা, ফরয ওয়াজিবের ক্ষেত্রে যত্নবান না হওয়া, আকীদা বিশুদ্ধ করার ব্যাপারে যত্নবান না হওয়া, বিদআত-শিরক থেকে বাঁচার ফিকির না থাকা-এই সব হল গাফলত।
তাহাজ্জুদের ব্যাপারে খুব যত্নশীল, ভালো। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকা এবং এইসব বড় বড় বিষয়ের ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রকাশ পাওয়া খুব খারাপ। আর এই উদাসীনতা প্রমাণ করে যে, তার মধ্যে ইসলামী তালীমাতের সঠিক ধারণা নেই।
কারো নফল উমরা করার খুব আগ্রহ, কিন্তু ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে উদাসীন, সদকা-খয়রাতের খুব আগ্রহ, কিন্তু বোনের মীরাস দেওয়ার ব্যাপারে উদাসীন, এটা কেমন ঈমানদারী?
হক্কানী কোনো পীরের কাছে গিয়ে ইসলাহের ফিকির পয়দা হয়েছে, কিংবা চিল্লা লাগানোর মাধ্যমে ফিকির এসেছে, অথবা হজ্ব করার পর সচেতনতা তৈরী হয়েছে, এই ফিকির এই সচেতনতাকে ধরে রাখতে হবে। প্রথম ধাপে যেটুকু ইসলাহ হয়েছে তার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। বরং এই ফিকিরকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে এবং কোন্ কোন্ ত্রুটি রয়ে গেছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে ইসলাহের ফিকির করতে হবে।
হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর কিতাব ‘যিকর ও ফিকর’ মূলত পাকিস্তানের দৈনিক ‘জঙ্গ’-এর সাপ্তাহিক কলামের সংকলন। এতে হাদীসের ঐ চার বিষয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিতাবটি বারবার পড়া দরকার এবং মুহাসাবা ও বাস্তব ইসলাহের পদক্ষেপসহ আত্মস্থ করা দরকার। ৫৬ টি শিরোনাম আছে। শুধু সূচিপত্রটা যদি পড়া হয় তাহলেও দিল দেমাগে অনেক চিন্তা-চৈতন্য সৃষ্টি হবে এবং ইসলাহের ক্ষেত্রে অনেক অবহেলিত বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি পড়বে।
যাইহোক, এই কিতাবটি সবার কাছে থাকা দরকার। ‘ইসলাম ও আমাদের জীবন’ নামে এর বাংলা অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। কিতাবটি বারবার পড়া দরকার এবং আমলের নিয়তে ফিকিরগুলো অনুধাবন করা দরকার। এ কিতাব বা এ জাতীয় কিতাবের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে। নিজেদের মাঝে এ সমস্ত আফকার ও ইসলাহী কথাগুলোর চর্চা হতে হবে এবং সাথী সঙ্গীদের সাথে যখন বিভিন্ন বিষয়ে মুযাকারা হয় তখন এইসব ফিকিরও আলোচনায় আসতে হবে।
দ্বীনী কিতাবগুলোর মধ্যে কিছু আছে যেগুলো সহজ ও নরম কথা বেশি বলে থাকে। আর কিছু আছে যেগুলো সরাসরি ইলাজ বা অপারেশনের ভূমিকা পালন করে। তো আমাদের জন্য দ্বিতীয় প্রকারের কিতাবগুলোই বেশি জরুরী।
ওয়ায়েযদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমন। মাওলানা হাবীবুল্লাহ মেসবাহ ছাহেব রাহ. বলতেন, আমার ওয়ায কারো চোয়ালে লাগে। কারো পোষাকে লাগে। কারো আয় উপার্জনে গিয়ে লাগে। তখন আর তার বরদাশত হয় না। তার কাছে সেই ওয়ায পছন্দ হয় না। এখন কারো গায়ে লাগবে দেখে যদি ওয়ায বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শুধুই এমন ওয়ায করা হয় যেটা কারো গায়েই লাগবে না, তাহলে আর ওয়াযেরই প্রয়োজন কী?
আমি শুধু তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহর ওয়ায করছি, ভালো। মসজিদে প্রবেশের সুন্নত, জুতা পায়ে দেয়ার সুন্নত, জামা পরিধানের সুন্নত ইত্যাদি বলছি, ঠিক আছে। ভালো। কিন্তু সারা জীবনই কি আমি কেবল এই ওয়ায করব? তাহলে জুতা জামা হালাল পয়সার কি না, সেই ওয়ায করবে কে? কেউ গোল জামার ওয়ায শুনে তার খুব গুরুত্ব দিচ্ছে, এমনকি সেজন্যে লড়াই ঝগড়াও করছে, কিন্তু জামা হালাল পয়সায় বানানোর প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপই করছে না, সেটা কেমন?!
পাগড়ির ওয়াযে এক রাকাতে সত্তর রাকাতের সওয়াবের কথা শুনল। সেটা মওযু রেওয়ায়েত শুনল নাকি গ্রহণযোগ্য কোনো রেওয়ায়েত শুনল, তার খবর নেই। এরপর সে আর পাগড়ি ছাড়ছে না। খুব ভালো। কিন্তু পাগড়ির শান রক্ষা করার ব্যাপারে তার কোনো গুরুত্ব নেই। পাগড়ি মুস্তাহাব। তবে তার শান রক্ষা করা ফরয। এখন মুস্তাহাব আমলের খুব যত্ন, কিন্তু ফরযের ব্যাপারে কোনোই গুরুত্ব নেই, সেটা কেমন কথা? এই যুগে পাগড়ি হল মুত্তাকী ও নেক হওয়ার সর্বোচ্চ আলামত। অতএব তার শান রক্ষা করা খুবই জরুরী। সেজন্যে পাগড়িওয়ালা কেউ কবীরা গুনাহ করলে একদিকে যেমন কবীরা গুনাহ অন্যদিকে পাগড়ির শান রক্ষা না করার গুনাহ। পাগড়িওয়ালা কেউ দুর্ব্যবহার করলে, রিক্সার ভাড়া কম দিলে, একজায়গায় নামার কথা বলে আরেকটু সামনে গিয়ে নামলে, সেটা হবে অনেক বড় অপরাধ। তো এসব বিষয়ে খুব খেয়াল রাখতে হবে।
এই কিতাবে এজাতীয় ইসলাহের আলোচনাই হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসাবে কবুল করুন এবং আমাদের জীবনের সকল অঙ্গনে ঈমানের শান বজায় রেখে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।
ইয়া রাববাল আলামীন।