রবিউল আখির ১৪৩৫   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৪

আল্লাহওয়ালাদের তাযকেরায় দিল তাযা হয়

ইসহাক ওবায়দী

১৯৮১ সাল আমার জন্য যুগপৎ বেদনা ও আনন্দের কারণ হয়ে আছে। এক দিকে আববাজানের বিয়োগ ব্যথা, অন্যদিকে রেডিওর চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে হযরত হাফেজ্জী হুযুরের সোহবত-সান্নিধ্যের আনন্দ। ১০ ই ফেব্রুয়ারি আববার মৃত্যু, মার্চ মাসেই নূরিয়া মাদ্রাসায় আমার নিয়োগ। আমার অস্থির কলবের জন্য এক মহা সুকুন ও শান্তির আয়োজন। আমি যেন আমার হারানো পথে ফিরে এলাম। এরই মধ্যে দেখতে পেলাম হযরত হাফেজ্জী হুযুরের আমন্ত্রনে করাচীর হযরত মাওলানা হাকীম আখতার ছাহেবের আগমন। সে কী ধুমধাম অবস্থা! মসজিদের দক্ষিণ বারান্দায় দরসে মসনবীর নিয়মিত মজলিস। নগরীর বিভিন্ন মাদরাসা ও মসজিদ থেকে আলেমদের সমাগম। আরো থাকত অনিয়মিত ছোটখাট মজলিস। সব মিলিয়ে যেন একটা জান্নাতি পরিবেশ।

আমি হাকীম ছাহেব হুযুরের বেশি বেশি কাছে থাকার চেষ্টা করতাম। হযরত সাঁতার জানতেন না, অনেক সময় আমাকে নিয়ে সাঁতার কাটতে চেষ্টা করতেন আর বলতেন, সাঁতার হল সব ব্যায়ামের রাজা। এক সাঁতারের মাধ্যমে শরীরের সবগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। হযরত আছরের পর প্রায় হাঁটতে বের হতেন। কখনো বলতাম, হযরত! বান্দা ভী সাথ হো লোঁ? হযরত বলতেন জী হ্যাঁ, ইজাযত ছে হোনা চা-হিয়ে

হযরত হাকীম ছাহেব হুযুরের আন্দাযে বয়ান ও বলার ঢং আমার কলম প্রকাশ করতে অক্ষম। যেমন থাকত এশ্কী আন্দায ও রং, তেমনি থাকত এলমী নেকা-ত ও রহস্য। তাঁর বয়ান-বক্তব্য আকাবের ও আসলাফের জীবন নির্ভর এবং ইলমী দালায়েল ও আশেকীনদের শেয়ের শায়েরী দ্বারা ভরপুর হওয়াতে তালেবানে ইলমরা তা খুব উপভোগ করত এবং লজ্জত হাসিল করত।

হযরতের কোনো কথা দলিল ছাড়া হত না। তিনি বেশি দলিল পেশ করতেন আল্লামা আলুসী রাহ.-এর তাফসীরে রূহুল মাআনী থেকে এবং মেরকাত শরহে মেশকাত থেকে। আরো পেশ করতেন আল্লামা রূমীর মসনবী অথবা কোনো আশেকের শেয়ের থেকে। তাঁর প্রতিটি কথায় আশেকী লব্রেয থাকত, ফলে শ্রোতামন্ডলীকে এশ্কে খোদাওয়ান্দিতে ভাবাপ্লুত করে ফেলতেন। তাঁকে দেখে ও তাঁর বয়ান শুনে মানুষ তাঁর আশেক না হয়ে থাকতে পারত না।

হযরত হাকীম ছাহেব হুযুরের ঐ সফর ছিল সম্ভবত দ্বিতীয় সফর এবং একা। তাঁর প্রথম সফর আমি পাইনি। আমি তখন অন্য জগতে ছিলাম। ঐ প্রথম সফরটি হয়েছিল তাঁর দ্বিতীয় শায়েখ হযরত মাওলানা আবরারুল হক ছাহেবের সাথে যৌথভাবে। তখনই হযরত হাফেজ্জী হুযুর রাহ. তাঁর ভেতরের জ্বালা দেখতে পেয়েছেন হয়ত। তাই মৃতপ্রায় খানকাহী যিন্দেগীকে জিন্দা করার উদ্দেশ্যে তাঁকে দাওয়াত করে এনেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক করেছেনও তাই। এখন বাংলাদেশে হাকীম ছাহেব হুযুর ও তাঁর দ্বিতীয় শায়েখ হযরত মাওলানা আবরারুল হক ছাহেবের খেলাফতের মাধ্যমে আলহামদুলিল্লাহ অনেক কাজ হচ্ছে। তাঁদের খলিফাদের সংখ্যাও আল্হামদুলিল্লাহ অনেক।

হযরতের সাথে আমার সম্পর্ক আনেকটা মহববতের, সাদেগীর সম্পর্ক ছিল। আমার বাইয়াত হবার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল কিন্তু আমার শায়েখ ওলামা বাজারের হযরত মাওলানা আব্দুল হালীম ছাহেব হুযুর তখনো হায়াতে থাকায় আমি একদিন আরয করলাম, হযরতের কাছে বাইয়াত হওয়ার খুব শওক অনুভব করছি। তবে আমার শায়েখ হায়াতে আছেন বলে সমস্যা মনে করছি। হযরত বললেন, কুয়ী বাত নেহীঁ, কেছীসে এসলাহ হোনা আওর কাম করনা মাকসাদ হ্যায়। আরেকদিন বললাম, হযরত! মেরী জিন্দেগী তো গান্দেগী ছে ভরপুর হ্যায়, ম্যাঁই রেডিও মে নৌকরি কিয়া থা আওর গা-না অগাইরাহ ভী লেখখা থা। হযরত বললেন, তোম ইয়ে শেয়ের যেয়াদাহ যেয়াদাহ পড়হো।

اگرچہ دور افتادم بايں اميد خور سندم  * كہ شايد دست من بار دگر جانان من گيرد

অর্থ: যদিও আমি তোমা থেকে বহুদূরে পড়ে আছি তবে এই আশায় সান্তনা পাচ্ছি যে, আমার মাহবুব হয়তো আবার আমাকে হাত ধরে উঠাবেন। আমি বললাম, হযরত! বিলকুল এহি মানা পর মেরা এক গা-না ভী হ্যায়। হযরত বললেন, সোনাও সোনাও। আমি তখন বললাম, জীবন নদীর স্রোতের টানে যদি কোন দিন যাই ভেসে যাই, সাগরে পড়ার আগে তোমারই দুহাত যেন কাছে আরো কাছে পাই। গানটি উর্দু তরজমা করে শোনালাম, হযরত হাসলেন।

হযরত হাকীম ছাহেব হুযুর এমনিতে খুব খোশ মেযাজের লোক ছিলেন। আমি তাঁর ওপর উর্দুতে কয়েকটি কাসীদা লিখেছিলাম। বলার পর হযরত ভরা মজলিসেই পড়ে শোনাতে বললেন। আমি শোনালাম। হযরত বললেন, বহুত আচ্ছা, উওহ মুঝে লিখদো, ম্যাঁই আলবালাগ মে ছাপ্ওয়া দে-ঙ্গে। এখানে ঐ কাসীদা থেকে কয়েকটি শেয়ের নমুনা স্বরূপ দেয়া হলো।

اگرچہ دور افتادم بايں اميد خور سندم  *  كہ شايد دست من بار دگر جانان من گيرد

محفل تو يوں بہت ہے مگر *  يہ محفل جو تیرا ہے اور ہے

بياں تو گوشہ گوشہ ہی ہے مگر *  يہ بيان جو تيرا ہے اور ہے

عارف تو يوں بہت ہے مگر  *  يہ عرفان جو تيرا ہے اور ہے

نظر ولايت تو بہت ہے مگر  *  يہ نظر جو تیرا ہے اورہے

شان ولايت تو بہت ہےمگر  *  يہ ولايت جو تیرى ہے اور ہے

পরবর্তী সময়ে দুএক বছর পর পরই বাংলাদেশে হযরতের সফর হয়েছে। ঢালকানগরে হাজ্বী কোববাদ সাহেবের বাসায় প্রথম, পরে ঢালকানগর মাদরাসা ও খানকায় এবং হাজ্বী কামাল সাহেবের বাসায় হযরতের অবস্থান ও মজলিসগুলো চলত। হযরতের মধ্যে যে  আকর্ষণ ছিল তা আ-ম খা-ছ সকলকেই টেনে এনেছে। তবে খাওয়াছের অর্থাৎ ওলামায়ে কোরামের আগমন ছিল পতঙ্গের মতো। একদিনের একটি বিশেষ ঘটনা মনে পড়ছে, উপমহাদেশের অন্যতম  বড় মুহাদ্দিস হচ্ছেন লালবাগ মাদরাসার সাবেক মুহতামিম, পরে যাত্রাবাড়ি জামিয়া মাদানিয়ার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা হিদায়াতুল্লাহ ছাহেব রাহ.। তাঁকে একদিন দেখলাম রিক্সায় করে যাত্রাবাড়ি থেকে ঢালকানগরে হাজ্বী কামাল ছাহেবের বাসায় হাকীম ছাহেব হুযুরের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাশরীফ এনেছেন। যাওয়ার সময় হাকীম ছাহেব হুযুর রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে রিক্সায় উঠিয়ে দিলেন। উল্লেখ্য যে, হযরত মুহাদ্দিস ছাহেব হুযুর রিক্সা ছাড়া অন্য কোনো গাড়িতে চড়তে পারতেন না। তাই হযরতকে তেমন কোথাও যেতেও দেখিনি কোনোদিন।

হযরত মুহাদ্দিস ছাহেব হুযুর হাকীম ছাহেব হুযুরের কাছে আগেই বাইআত হয়েছিলেন।  তাই পীরের সাথে দেখা করতে এসেছেন। লালবাগ মাদরাসার মুহাদ্দিস ঢাকুবী হুজুর, বড় কাটারা মাদরাসার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান ছাহেব ও পটিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা ইখলাস জাদীদ ছাহেব হুজুর এঁদের সবাই ছিলেন হাকীম ছাহেব হুজুরের আজাল্লে খলিফা। পীর সহীহ ও সঠিক হওয়ার একটি আলামত হচ্ছে তাঁর কাছে আলেমদের আনা-গোনা বেশী হওয়া। এ ব্যাপারে হাকীম ছাহেব হুজুরের ছিফত অগ্রগণ্য বলতে হয়। হযরতের আগমনে সারা দেশ থেকেই আলেমদের ভীড় জমে থাকত সব সময়।

নূরিয়া মাদরাসা থেকে আমার চলে যাওয়ার পর মাদরাসা ও আলেম-ওলামার সোহবত-সান্নিধ্য কম হওয়ার কারণে দুএকবার এমনও হয়েছে যে, হযরতের সফর সম্পর্কে প্রথম দিকটায় আমি জানতেই পারিনি। তবে শেষের দিকে জুমার দিন ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে জুমার নামায পড়তে গিয়ে দেখি হযরত হাকীম ছাহেব হুযুর বয়ান করছেন। আমি তো অবাক, হাজ্বী হাবীব সাহেবের বাসায় গিয়ে মা-যেরাত করে বললাম, হযরত! আমি তো হযরতের সফরের বিষয়ে জানতেই পারিনি। তবে কুদরতের পক্ষ থেকে দেখা হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হল। সফরের শেষ মুহূর্তের ঐ দুদিন সোহবত-সান্নিধ্যে থেকে চার চারটা বয়ান শোনার সৌভাগ্য  হল।

উল্লেখ্য, হযরত হাকীম ছাহেব হুযুর ও হারদুইয়ের হযরতের সফরের শেষ অনুষ্ঠান থাকত ধানমন্ডির বড় ব্যবসায়ী উর্দুভাষী জনাব হাজী হাবীব সাহেবের বাসায়। দুদিন পর্যন্ত তাঁর বাসা ওলামায়ে কেরামের সমাগমে খানকায় রূপান্তরিত হত। এ দুদিন সকলের মেহমানদারী করতেন হাজ্বী হাবীব সাহেব। আমার বাসা সেখানে কাছে হওয়াতে আমি হাকীম ছাহেব হুযুরকে বললাম হযরত! ঘর ছে পুডিং লে-আ-য়েঙ্গে? হযরত বললেন, হা-যেমা তো কমযোর হো গায়া, তো ঠিক হ্যায় লে-আ-ইয়ে। উল্লেখ্য যে, হাকীম ছাহেব হুযুর পুডিং পছন্দ করতেন। ঐ সফরে তাঁর শায়েখ হারদুইয়ের হযরতও ছিলেন। আমি খাওয়ার সময় পুডিং নিয়ে এসেছি। হাকীম ছাহেব হুযুর আমাকে ডেকে বললেন, ভাই! হযরত তো আ-পকা পুডিং খা-য়েঙ্গে নেহী, কেঁউকে ইয়ে মেযবানী হ্যায় হাজ্বী ছাবকা, আ-পতো মেযবান নেহী, তো এ-ক কাম কী জিয়ে, আ-পকা পুডিং হাজ্বী ছাবকো দেলা দীজিয়ে, তো হাজী ছাব আপনে খানাকে সাথ আ-পকা পুডিং ভী দে-দে-ঙ্গে। আমি তাই করলাম। খাওয়ার সময় দেখলাম, প্রফেসর হামিদুর রহমান ছাহেবও পুডিং এনেছেন আর হযরত সেখান থেকে একটু খেয়েছেন, হাকীম ছাহেব হুযুর আমার পেয়ালাটা হযরতের সামনে দিয়ে বললেন, ইহাঁছে ভী হযরত কুছ লী-জিয়ে। হযরত তখন চামচ দিয়ে একটু নিয়ে খেলেন। আমি হাকীম ছাহেব হুযুরের শফকত দেখে হয়রান হয়ে গেলাম। আমার সন্তুষ্টির জন্য প্রথমে আমাকে হিলা বাতলে দিলেন, পরে আবার আমার পেয়ালাকে হযরতের সামনে এগিয়ে দিলেন। আদব ও শফকতের সমাহার তিনি এভাবে প্রকাশ করলেন।

আরেকবারও দুজনের একসাথে সফর ছিল, আমি আমার ছোট ছেলে মাশুককে দুআ নেয়ার জন্য নিয়ে গেলাম। হাকীম ছাহেব হুযুর পকেট থেকে তাকে পাঁচটি টাকা দিলেন আর বললেন, মাশুক ডাকাটা ভালো নয়, তার আসল নামেই তো মাহবুবিয়াত আছে। তার নাম ছিল আব্দুল্লাহ আল মাহবুব। হারদুইয়ের হযরতের কাছে তাকে দুআর জন্য নিলে পরে দেখলাম, হযরত নিজের পকেট থেকে বের করে তাকে একটি চকলেট দিলেন। আমি দেখে তো অবাক, হযরতের পকেটে চকলেট কি আর খাওয়ার জন্য রেখেছেন? নিশ্চয়ই এ ধরনের শিশুদের আগমন হতে পারে এই সম্ভাবনায় হযরত আগে থেকেই নিজ পকেটে চকলেট পুরে রেখেছেন।

একবার হারদুইয়ের হযরতের নামে একটি শেয়ের লিখেছিলাম। তা হযরতকে দেয়ার মতো সাহস কারো হচ্ছিল না। তখন এ দেশে হযরতের খলিফা ছিলেন মাত্র চারজন। প্রফেসর হামিদুর রহমান ছাহেব, মুফতি আব্দুর রহমান ছাহেব, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাহেব ও খাদেমুল ইসলামের মাওলানা বজলুর রহমান ছাহেব। আমি তাঁদের প্রত্যেককে অনুরোধ করেছি আমার শেয়েরখানি হযরতের খেদমতে পেশ করার জন্য। কিন্তু তারা সবাই অপারগতার কথা জানিয়ে দিলেন। পরে আমি হযরতের খাদেমের মারফত পেশ করলাম। হযরত আমাকে ডাকালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়ে শেয়ের কেয়া আপনে লেখখা? আমি সবিনয়ে বললাম, জ্বী হযরত! কোমলভাবে আমাকে কিছু বলতেন হয়তো, এমন সময় বে-উসূলী করে অনুমতি ছাড়াই বেশ কজন আলেম বাইআতের জন্য দরজা খুলে প্রবেশ করাতে হযরতের জ্বালালী তবীয়তে ঘা লাগলো। হযরত তাদেরকে ধমক দিয়ে আমাকে কোমলভাবে বললেন, উনসে দো-ছরা কা-ম হ্যায়, আ-প আব জা-ইয়ে

হাকীম ছাহেব সবসময় একটি কথা বলতেন যে, ভাই! তোমরা সবাই আল্লাহওয়ালা বনে যাও। আল্লাহওয়ালা হলে তোমার আখেরাত তো কামিয়াব হবেই, তোমার দুনিয়ার হেফাযতের দায়িত্বও স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজের যিম্মায় নিয়ে নেবেন। শুধু তোমার নয় তোমার পরে তোমার সাত পুরুষ আওলাদের হেফাযতও আল্লাহ পাক করবেন। দলিল হিসাবে তিনি কুরআনের এই আয়াতটি বলতেন,

وكان ابوهما صالحا

 আল্লামা আলূসী রাহ. তাফসীরে রূহুল মাআনীতে বলেছেন, আবু হুমার অর্থ শুধু সরাসরি মা-বাবা নন, বরং সাত পুরুষ আগেকার মা-বাবাও হতে পারেন। কেননা ঐ এতিম দুটির মা-বাবা সরাসরি মা-বাবা ছিলেন না; বরং সাত পুরুষ পূর্বেকার মা-বাবা ছিলেন।

হাকীম ছাহেব হুযুর ও তাঁর শায়েখের যাওয়ার দিন দেখতাম হাজ্বী হাবীব সাহেবের ১৫ নং রোড পুরাটাই গাড়ির বহরে জ্যাম থাকত। শত শত গাড়ি এসেছে, এই ওলীদের কোনো গাড়ি নেই। কিন্তু শত শত গাড়ির মালিক চাচ্ছে যে, হুযুর আমার গাড়িতে আরোহন করুক। আমি একটু বরকত হাসিল করি। পক্ষান্তরে দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের নিজস্ব গাড়ি থাকা সত্ত্বেও এই সম্মান নেই। যা আছে তার সবটাই মেকি ও বানোয়াট। আল্লাহর ওলী তো আর সব গাড়িতে চড়তে পারবেন না। চড়বেন শুধু একটিতে। বাকী সবাই গাড়ি নিয়ে তাঁর পেছনে পেছনে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবে। আহা কী সম্মান! এই অবস্থা দেখে একদিন তো আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রুর বন্যা নেমে এসেছিল। মনে মনে ভাবলাম, সত্যি এরাই তো প্রকৃত সম্রাট। এঁদের এখানেও সম্মান, ওখানে ফেরেশতাদেরও দ্বারা সম্মান করা হবে। আহা! কী সৌভাগ্যবান আল্লাহর ওলীরা। আল্লাহ আমাকে এবং সকল পাঠককেও আল্লাহওয়ালা করে দিন। আমীন। কয়েক বছর পূর্বে (১৪২৬ হি.,  ২০০৫ ঈ.) হযরত এই অস্থায়ী পৃথিবী ছেড়ে চিরস্থায়ী দেশে তাঁর মাহবুবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। আর এ বছর  (২২-০৭-১৪৩৪ হি., ০২-০৬-২০১৩ ঈ.) তাঁর মুরিদ ও খলিফা হযরত হাকীম আখতার ছাহেব হুযুরও চির দিনের জন্য চলে গেলেন মাওলার সান্নিধ্যে।

আল্লাহ তাঁদের মাগফিরাত করুন এবং দরাজাত বুলন্দ করুন। আমীন। ষ

 

 

advertisement