শততম সংখ্যা : সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় আল্লাহর
আল্লাহ রাববুল আলামীনের কত মেহেরবানী যে, এক-দুই করে মাসিক আলকাউসার এখন শততম সংখ্যায় উপনীত। বর্তমান সংখ্যাটি আলকাউসারের শততম সংখ্যা। সংখ্যাটি প্রকাশের আনন্দময় মুহূর্তে আমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের প্রতি সিজদাবনত।
বান্দার কী সাধ্য দ্বীনের কাজ করার। আল্লাহই অনুগ্রহ করে দ্বীনের কাজের সৌভাগ্য দান করেন এবং বান্দার দ্বারা কাজ করিয়ে নেন। মেধা-উদ্যম-কর্মশক্তি সব তাঁরই দান। কাজের তাওফীকও তিনিই দান করেন। তিনিই কাজ করান আবার তিনিই পুরস্কার দেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা বিষয়টি একান্তই তাঁর করুণা, তাঁর অনুগ্রহ। তিনি রহমান, তিনি রহীম, তিনি রাববুল আলামীন। সকল প্রশংসা তাঁর।
দ্বীনের কাজের রয়েছে অনেক ক্ষেত্র। ‘দ্বীনের কাজে’র অর্থ যদি হয় ‘নুসরতে দ্বীন’ (দ্বীনের সাহায্য) তাহলেও এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। তালীম (কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষাদান), তাবলীগ (দীনের বিধান ও আদর্শ প্রচার), তাসনীফ ও তাহকীক (রচনা ও গবেষণা) তাযকিয়া (কলব ও আমলের পরিশুদ্ধি), দাওয়াত ইলাল্লাহ ও জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ (আল্লাহর দিকে ডাকা ও আল্লাহর পথে জিহাদ) এই সবই নুসরতে দ্বীনের একেকটি বড় অঙ্গন। প্রত্যেকটি অঙ্গনের আছে অনেক শাখা ও প্রশাখা। সুতরাং দ্বীনের কাজ বা ‘দ্বীনের খেদমত’ অনেক বিস্তৃত বিষয়। কোনো একজন ব্যক্তি, গোষ্ঠি, সম্প্রদায় বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই সকল কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর ফায়সালা ও অনুগ্রহে যিনি যে কাজে যুক্ত হয়েছেন তার জন্য একদিকে যেমন আল্লাহর শোকর-গোযারি করা কর্তব্য, অন্যদিকে অন্যান্য খাদিমে দ্বীন ও অন্যান্য অঙ্গনের খাদিমে দ্বীনের প্রতিও সমর্থন, সহযোগিতা ও শুভকামনা বাঞ্ছনীয়।
আলকাউসারের শততম সংখ্যা প্রকাশের এ মুহূর্তে আমরা আমাদের সকল সহযাত্রীকে স্মরণ করছি এবং তাদের সকলের দুআ ও সহযোগিতা কামনা করছি।
আলকাউসারের প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছি মুহাররম ১৪২৬ হি., মোতাবেক ফেব্রুয়ারি ২০০৫ ঈ.। সে সংখ্যার প্রস্ত্ততি ও পরিকল্পনা, এরপর আল্লাহর উপর ভরসা করে কিছু দুর্বল মানুষের সফরের সূচনা সব যেন এই সেদিনের ঘটনা। এরপর একেকটি সংখ্যা প্রস্ত্তত হওয়া, মুদ্রিত হওয়া ও পাঠকবৃন্দের হাতে পৌঁছানো সবই ছিল ব্যস্ততা ও আনন্দের এক একটি অনুষঙ্গ। এ আনন্দ-ব্যস্ততার পথে আমরা সিক্ত হয়েছি অসংখ্য হৃদয়ের অকৃপণ ভালবাসায়। লেখক-পাঠক, এজেন্ট-গ্রাহক ও সহযোগী-শুভাকাঙ্ক্ষী সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও অংশ-গ্রহণে আলকাউসারের পথচলা সহজ হয়েছে। এ আনন্দের মুহূর্তে আলকাউসার তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে। তাদের সকলকে নিয়ে মাসিক আলকাউসারের যে দ্বীনী পরিবার, সে পরিবারের সবাই আজ আমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের সামনে সিজদাবনত।
দান ও করুণা তো দাতার ‘উপস্থিতি’ প্রমাণ করে। আল্লাহ রাববুল আলামীনের এ নিরবচ্ছিন্ন করুণার পিছনে তাঁর উপস্থিতির উপলব্ধিতে আমরা শিহরিত। তিনিই তো সেই মালিক যার ইরশাদ, (তরজমা) এবং ভরসা কর সেই পরাক্রমশালী করুণাময়ের উপর, যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দাঁড়াও, এবং দেখেন সিজদাকারীদের সাথে তোমার ওঠাবসা। তিনিই তো সর্বশ্রোতা-সর্বজ্ঞ। (সূরা শুআরা ২৬ : ২১৭-২২০)
তাঁর আরো ইরশাদ, (তরজমা) তুমি যে কোনো অবস্থায় থাক এবং তুমি সে সম্পর্কে কুরআন হতে যা তিলাওয়াত কর এবং তোমরা যে কোনো কাজ কর আমি তোমাদের পরিদর্শক- যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নয় এবং তার চেয়ে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। (সূরা ইউনুস ১০ : ৬১)
ইয়া আল্লাহ! এ দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় আমাদের সকল ভুল-ভ্রান্তি আপনি ক্ষমা করুন। সকল অন্যায় উচ্চারণ, অন্যায় আচরণ মাফ করুন। আমাদের ভ্রান্তি-অবহেলা, ত্রুটি ও বিচ্যুতি ক্ষমা করুন। ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, কর্মগত-নিয়তগত সকল অপরাধ মার্জনা করুন। অতীতের পথচলায় আপনিই ছিলেন আমাদের সহায়, ভবিষ্যতের পথচলাতেও আপনারই ওপরে আমাদের ভরসা।
আমাদের শক্তি দিন, সাহস দিন, জ্ঞান দিন, প্রজ্ঞা দিন, আনুগত্য দিন, সমর্পণ দিন, আমাদের কলমে-কলবে, অন্তরে-বাহিরে আলো দান করুন। সকল প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতায় আপনি আমাদের
সহায় থাকুন।
আমাদের সকলকে আমাদের পরম গন্তব্যে, আপনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যের পরম মানযিলে উপনীত করুন, উন্নীত করুন। আমীন ইয়া রাববাল আলামীন। ষ