এসো ‘জাযাকাল্লাহ’ বলার অভ্যাস করি
কয়েকদিন আগে আমি দুপুরের খানা খাচ্ছিলাম। ফোন এলো; ভাই অমুক হাদীসটি কোন্ কিতাবে আছে? আমি বললাম, একটু কষ্ট করে সন্ধ্যায় ফোন করুন। কিন্তু হাদীসের হাওয়ালাটা (সূত্র) তার এখনই দরকার। বললাম, ঠিক আছে কিছুক্ষণ পরে করুন। আমি দ্রুত খানা খেয়ে তার জন্য হাওয়ালাটা বের করে বসে আছি। আমাকে দ্রুত একটা কাজে বের হতে হবে। কিন্তু ফোনের কোন খবর নেই। অগত্যা হাদীসের হাওয়ালাটা একটা কাগজে লিখে পকেটে নিয়ে বের হলাম। পথিমধ্যে ফোন এল, ভাই হাদীসের হাওয়ালাটা? পকেট থেকে চিরকুট বের করে হাওয়ালা বলা শুরু করলাম। এক কিতাবের হাওয়ালা বলা শেষ করতে না করতেই সে আসসালামু আলাইকুম বলে ফোন রেখে দিতে উদ্যত হল। (ভাবটা যেন এমন - ব্যস, আমার কাজ হয়ে গেছে এখন আর এক সেকেন্ডও দেরি নয়, আপনার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলার সময়ও আমার নেই, রাখি!) সাথে সাথে আমি বললাম, আরে ভাই! এত দ্রুত ফোন রেখে দিচ্ছেন; জাযাকাল্লাহ বলে তারপরই না ফোন রাখবেন। তাছাড়া এখনও হাওয়ালাটা পুরোপুরি বলা হয়নি। সে একটু বিব্রত হল। হয়তবা একটু লজ্জাও পেল। আমি বললাম, অসুবিধা নেই এরকম ভুল আমারও হয়, এটা হওয়া উচিত নয়। তারপর অবশিষ্ট হাওয়ালাগুলো বললাম। সে ‘জাযাকাল্লাহ’ (আল্লাহ আপনাকে প্রতিদান দিন) বলে সালাম দিয়ে সলজ্জ হাসিসহ ফোন রেখে দিল। আমিও তার উদ্দেশ্যে বললাম, ‘ওয়া ইয়্যাকা’ (আল্লাহ আপনাকেও প্রতিদান দিন)।
এ ঘটনা থেকে আমাদের যে শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার আশা করি আমরা তা শিখে নিয়েছি। আল্লাহ আমলের তাওফীক দিন। আমীন।
এখানে একটা চিত্র ফুটে উঠেছে যে, তার জন্য কষ্ট করা হল, কিন্তু সে উপকার গ্রহণ করে জাযাকাল্লাহ বলতে ভুলে গেল। আসলে ‘জাযাকাল্লাহ’র সম্পর্ক কষ্টের সাথে নয়, উপকারের সাথে। কেউ আমার সামান্য উপকার করলেই আমি তাকে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলব। এই মানসিকতার কোনো অবকাশ নেই যে, আমার উপকার করতে তো তার কোনই কষ্ট হয়নি, ‘জাযাকাল্লাহ’ বলব কেন? আমি দেখব সে আমার উপকার করেছে, সুতরাং আমি তার জন্য দুআ করব। আর উপকারটা যতই সামান্য হোক, হতে পারে এর জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কিন্তু আমার খবরই নেই। যা হোক আমার উপকারকারীকে আমি জাযাকাল্লাহ বলতে ভুলব না। উপকার ছোট হোক বা বড়। আর আমাকে যিনি ‘জাযাকাল্লাহ’ বলবেন তাঁর উদ্দেশ্যে বলব ‘ওয়া ইয়্যাকা/ওয়া ইয়্যাকুম’ আল্লাহ তোমাকে/আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, জাযাকাল্লাহ-এর সাথে ‘খাইরান’ শব্দটি যোগ করতে যেন ভুলে না যাই। ‘খাইরান’ শব্দের অর্থ উত্তম আর ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন। এক আরব শায়েখের কথা শুনেছি। তাঁকে যদি কেউ শুধু ‘জাযাকাল্লাহ’ বলত তাহলে তিনি নিজে থেকে ‘খাইরান’ শব্দটি যোগ করে নিতেন। কারণ প্রতিদান ভাল হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। তাই আমরা ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ পুরোটা বলব।
আরেকটি বিষয়, অনেক সময় আমরা ফোন রেখে দেওয়ার সময় অপর প্রান্তের সালামের জবাব না শুনেই ফোন রেখে দিই। সে আমার জন্য শান্তি ও কল্যাণের দুআ করছে (ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু; আল্লাহ তোমার প্রতিও শান্তি, রহমত ও বরকত নাযিল করুন।) আর আমার তা শোনার সময় নেই। আশা করি এমনটি আর হবে না। তেমনিভাবে ফোন ধরেই অনেক সময় আমরা ‘হ্যালো হ্যালো’ করি। ফোন ধরে প্রথমেই আমরা ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলব আল্লাহ আমাকে আপনাকে সবাইকে আমলের তাওফীক দিন। আমীন।
উপরের সবকটি আদব আমি শিখেছি আমার প্রাণপ্রিয় শায়েখ ও মুরুববী হযরত মাওলানা আবদুল মালেক দামাত বারাকাতুহুম থেকে। আল্লাহ শায়েখকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম বিনিময় দান করুন। সিহহাত, আফিয়াত ও দ্বীনের খেদমতের সাথে দীর্ঘ হায়াত নছীব করুন। আমীন। তাঁর সাথে কোথাও গিয়েছি। প্রয়োজনে কাউকে কোনো ঠিকানা জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বলে দেয়ার সাথে সাথে আমি হাঁটা ধরলাম। হুজুর বললেন, কী, ‘জাযাকাল্লাহ’ বললে না?
আবার তাঁর সাথে ফোনে কথা শেষে সালাম দিয়েই ফোন রেখে দিয়েছি, তিনি আবার ফোন করেছেন - কী, সালামের উত্তর না শুনেই যে ফোন রেখে দিলে? এভাবেই বড়দের থেকে ছোটরা শেখে। তবে আমার মাঝে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।