স্ব দে শ : শান্তির জন্য চাই সতর্কতা
নভেম্বর শীতের মাস। এ মাসে হালকা কুয়াশার চাদর নেমে আসে সকাল-সন্ধ্যায়। প্রকৃতিতে কোমল একটা আমেজ বিরাজ করে। কিন্তু ঘটনাচক্রে এবারএ মাসের এ মেয়াদটাতেই দেশজুড়ে চাপা উত্তাপ ও উত্তেজনা বিরাজমান। এবং সেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক অর্থে। ক্ষমতার পালাবদল, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, নির্বাচন এবং প্রশাসনের হাতবদলের সময়টা এ দেশের জন্য সবসময়ই কিছুটা উত্তেজনা ও ঝুঁকি নিয়ে আসে। হালকা শীতের এ মৌসুমে সেই উত্তাপই এখন দেশজুড়ে। কোথাও চাপা, কোথাও প্রকাশ্য। কোথাও ইতিবাচক, কোথাও নেতিবাচক।
কোনো দেশের এ জাতীয় সময়ে দায়িত্বশীল মহলগুলোর সচেতনতা, সতর্কতা ও দায়িত্বের পরিধি অনেক বেড়ে যায়। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীপক্ষ, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্তাব্যক্তি, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের লোকজন, ইমাম-খতীব ও ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রত্যেকের এ সময়টায় সজাগ-সচেতন ও দায়িত্বশীল থাকা অনেক বেশি কাম্য। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতার পালাবদলের এ পর্বটিতে নাগরিকদের বিভিন্ন পক্ষের রক্তক্ষয়, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, দ্বীনী
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি শত্রুদের বিষদৃষ্টি, কূটনৈতিক-অকূটনৈতিক বহিরাগতদের গোপন তৎপরতা, তৃতীয়-চতুর্থ শক্তির পদক্ষেপের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। এবার এর আশঙ্কা আরও প্রবল। এ জন্য পরিস্থিতির অবনতি বা সংঘাতের ঘনঘটা এবার অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি বলেই অনুমিত হচ্ছে। তাই যার ক্ষমতা ও অবস্থান যত বড় তার দায়িত্বও তত বড়। ইতিবাচকতা, সমঝোতা ও পারস্পরিক সদাচারের প্রতি উৎসাহব্যাঞ্জক পরিবেশ তৈরিতে সবারই সক্রিয় থাকা দরকার। শান্তির জন্য সর্বাত্মক সতর্কতা ছাড়া উপায় নেই। একপক্ষীয় গণমাধ্যম কিংবা সুবিধাবাদী সুশীলদের তৎপরতা বিনা পরখে মেনে নেওয়া মারাত্মক ভুল হবে।
ক্ষমতার রাজনীতি ও মতাদর্শিক জেদের কারণে এবার দ্বীনী ব্যক্তিত্ব, দ্বীনী প্রতিষ্ঠান ও দ্বীনদার মহলের সতর্ক-সজাগ অবস্থান অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। ইসলামী শিক্ষা বিরোধী উগ্র নাস্তিক ও নৈরাজ্যবাদী একটি শ্রেণী সম্প্রতি রাজনীতি, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে সাংঘাতিক সক্রিয়। রাজনৈতিক টানাপড়েনের জটিল যে কোনো পর্বে এই শ্রেণীটি ধর্মপ্রাণ মানুষ ও মহলের যে কাউকে নিয়ে কোনো কূট খেলায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। দ্বীনদার মহল সজাগ না থাকলে তাদের সে খেলায় দেশি-বিদেশি কুচক্রীরাও যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তুলতে পারে। একইভাবে রাজনীতির অঙ্গনে নানাভাবে দ্বীনধর্ম বিরোধী ভূমিকা রেখে কোনঠাসা ও চিহ্নিত কোনো কোনো মহল হঠাৎ করেই দ্বীন-দরদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিভ্রান্তিকর তৎপরতা চালাতে পারে। ক্ষমতা ও ভোটের রাজনীতির সাফল্যের জন্য অনেক কিছুই করা হতে পারে। রক্তস্রোত ও চোখের পানি একাকার করার চেষ্টাও চলতে পারে। ধর্মপ্রাণ ও শান্তিপ্রিয় দেশবাসীকে কাবু করার কসরতেও কেউ কেউ এগিয়ে আসতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে চিহ্নিত প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর ভুমিকা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত বাস্তবতা অনুধাবন করে দ্বীনদার মহলের সতর্ক হওয়া ও সতর্ক করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কবে।
একটি দেশের সব নাগরিকই ভাইয়ের মতো। সংকটে-দরকারে একজনের পাশে আমরা আরেকজন দাঁড়াব। কেবল ঈমানবিরোধী ও ভ্রাতৃত্ব হন্তারকদের ব্যাপারে সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। ঈমানবিরোধী চক্র কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার আয়োজন করার উদ্যোগ নিলে ইমাম-খতীব ও ধর্মপ্রাণ নাগরিক শ্রেণীর পক্ষ থেকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ রচনা করতে কবে। উত্তেজনা ও উত্তাপের এই কোমল শীতার্ত সময়ে সুযোগ সন্ধানী দুষ্ট চক্রের ব্যাপারে সতর্কতা ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখার ক্ষেত্রে সবারই ভূমিকা রাখা কর্তব্য।