অতুলনীয় মর্যাদা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহাবায়ে কেরাম কিরূপ সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁর কোনো ধরনের বেয়াদবি হয়ে যায় কিনা সেদিকে কতটুকু খেয়াল রাখতেন তা তাঁদের বিভিন্ন ঘটনা থেকে বোঝা যায়।
যখন কুরআনে কারীমে এই আয়াত নাযিল হল (তরজমা) হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের আওয়াজকে নবীর আওয়াজের উপর উঁচু করো না। (সূরা হুজুরাত : ২) তখন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রা.-এর এই অবস্থা হল যে, যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে কোনো বিষয় নিবেদন করতেন তখন এমনভাবে বলতেন, যেন কোনো গোপন বিষয় আস্তে আস্তে বলছেন। এমনি অবস্থা ছিল হযরত ফারুকে আযম রা.-এরও।
হযরত আমর ইবনুল আ’স রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আমার এ অবস্থা ছিল যে, আমি তাঁর প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেও পারতাম না। আমার কাছে যদি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আকার-অবয়ব সম্পর্কে কেউ জানতে চায় তাহলে তা বলতে আমি এ জন্য অপারগ যে, আমি কখনো তাঁকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়েও দেখিনি। ইমাম তিরমিযী রহ. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মজলিশে যখন হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনতেন তখন সবাই তাদের দৃষ্টি আনত রাখতেন। শুধু ছিদ্দীকে আকবর ও ফারুকে আযম রা. তাঁর দিকে চোখ তুলে চাইতেন। আর তিনি তাঁদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসতেন।
উরওয়া ইবনে মাসউদকে মক্কাবাসীরা গুপ্তচর বানিয়ে মুসলমানদের অবস্থা জানার জন্য মদীনায় পাঠাল। সে সাহাবায়ে কেরাম রা. কে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এমন নিবেদিতপ্রাণ দেখল যে, ফিরে গিয়ে রিপোর্ট দিল, আমি কিসরা ও কায়সারের দরবার দেখেছি এবং সম্রাট নাজাশীর সাথেও সাক্ষাত করেছি। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের যে অবস্থা দেখেছি আমার ধারণা, তোমরা কখনও তাদের মোকাবেলায় জয়ী হতে পারবে না।
হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘরের ভেতর অবস্থান করতেন, তখন তাঁকে বাইরে থেকে সশব্দে ডাকাকে সাহাবায়ে কেরাম বে-আদবি মনে করতেন। দরজায় কড়া নাড়তে হলেও শুধু নখ দিয়ে টোকা দিতেন যাতে বেশী জোরে শব্দ না হয়।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পরও সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাস এই ছিল যে, মসজিদে নববীতে কখনও জোরে কথা বলা তো দূরের কথা কোনো আওয়াজ কিংবা বয়ানও উচ্চস্বরে করা পছন্দ করতেন না। অধিকাংশ সাহাবী রা.-এর এমন অবস্থা ছিল যে, যখন কেউ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উচ্চারণ করতেন তখনই কেঁদে উঠতেন এবং ভীত হয়ে পড়তেন।
এই ছিল সাহাবায়ে কেরামের নবীজীকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। এই শ্রদ্ধা ও মর্যাদাবোধের বরকতেই তাঁরা নবুওয়াতী ফয়েয থেকে বিশেষ উত্তরাধিকার লাভ করতে পেরেছিলেন এবং আল্লাহ রাববুল আলামীনও তাঁদেরকে নবীগণের পরে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছেন।