পৌত্তলিক ধ্যান-ধারণার অনুপ্রবেশ : কয়েকটি বাহন
অবস্থা দেখে মনে হয়, এ দেশের বৃহত্তর জনগণের মুসলিম-পরিচিতি বিলুপ্ত করার ও তাদেরকে মুশরিক (পৌত্তলিক) বানানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। কাজটি হচ্ছে একটি অতি সূক্ষ্ম, সুচিন্তিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায়। পরিকল্পনাটি বহুমাত্রিক, যাতে রয়েছে শিক্ষাকেন্দ্রিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নানা দিক। এ নিবন্ধটি এমন কিছু বিষয় নিয়ে লেখা, যেগুলো শিরকি (পৌত্তলিক) ধ্যান-ধারণার বাহন হিসেবেই কাজ করছে। এসব কাজের দ্বারা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে, বিশেষত তরুণসমাজের মধ্যে যে মগজ ধোলাই হচ্ছে, তাতে ধীরে ধীরে আমাদের ঈমানী শক্তি লোপ পাচ্ছে এবং পৌত্তলিকতার দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি বলে মনে করার কারণ আছে।
মঙ্গলপ্রদীপ
কোনো অনুষ্ঠানের শুরুতে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানো একটি হিন্দু ধর্মীয় রীতি। মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোর উদ্দেশ্য অনুষ্ঠানটি যাতে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় তার জন্য অগ্নি-দেবতার আশির্বাদ কামনা করা। বাংলাদেশের বৃহত্তর সমাজে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোর এ হিন্দু-প্রথাটি চালু করেছে থিয়েটার। সর্বপ্রথম বাংলা ১৪০০ সালকে বরণ করা হয় মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে। মঙ্গলপ্রদীপ প্রথমে থিয়েটার শুরু করলেও তা অনেকটা ব্যাপকভাবে চালু হয়ে গিয়েছে। ১৯৯৫ সালের ২৭ শে নভেম্বর কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে বাংলা মঞ্চ-নাটকের দু’শ বছর পূর্তি এবং বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ৭০তম জন্মবার্ষিকীকে ঢাকঢোল বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় শিবের নৃত্যভঙ্গিমায় তৈরি প্রতিকৃতি গাঁদা ফুল দিয়ে সাজানো ছিল। তিনটি মেয়ে মঙ্গলপ্রদীপ নিয়ে নৃত্যের তালে তালে এগিয়ে আসে (ইনকিলাব, ২৯-০৩-০৪ ঈ.)
ধীরে ধীরে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোর এ রীতিটি আরো ব্যাপকতা লাভ করে। বর্তমানে মুসলিমপ্রধান এ দেশের কোনো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। কাজটি এমনভাবে করা হয় যেন তা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অংশ।
প্রশ্ন হচ্ছে, একটি হিন্দু রেওয়াজকে এভাবে চালু করার যৌক্তিকতা কোথায়? এ দেশের বৃহত্তর জনগণ কি অগ্নিদেবতার ভক্ত? আমাদের দেশে চিরাচরিত নিয়ম হচ্ছে অনুষ্ঠান শুরু করার সময় পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করা। এ নিয়ম বাদ দিয়ে মঙ্গলপ্রদীপ চালু করা আর হিন্দুত্ব বরণ করে নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এসব বিজাতীয় আচার-অনুষ্ঠান কেবল বর্জন নয়, প্রতিহত করা আজ আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা
১৯৬৭ সালের আগে বৈশাখী মেলা নামের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান এ দেশে ছিল না। সর্বপ্রথম এ মেলা আরম্ভ হয় ১৯৬৭ সালে, ছায়ানটের উদ্যোগে। প্রথম অনুষ্ঠানটি হয় ঢাকাস্থ রমনার বটমূলে (শান্তা মরিয়া, নববর্ষ, জনকণ্ঠ ১২-০৪-২০০০)। শুরুতে ‘বৈশাখ বরণ’ অনুষ্ঠান অনেকটা ক্ষুদ্র আকারে হলেও ক্রমে তা একটি বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে এবং বছর বছর এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অনুষঙ্গ।
বর্ষবরণ উৎসব পালনকালে যা করা হয় তা-ও বিজাতীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে নেয়া হয়েছে। বর্ষ বা বৈশাখ হচ্ছে সময়ের নাম। ‘এসো হে বৈশাখ’ বলে ‘কালবৈশাখী’ হিসেবে পরিচিত মাসটিকে যেভাবে বরণ করা হয় তাতে মনে হয় তার একটি জীবন্ত সত্তা আছে। এটা প্রকৃতি পূজার সমান বা সেদিকে নিয়ে যায় কি না ভেবে দেখা দরকার। বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলায় নাচ-গান, নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, বিভিন্ন জীবজন্তুর মুখোশ পরা, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা, রাখিবন্ধন প্রভৃতি যেসব কাজ হয়, তা কি হিন্দুদের পূজা-উৎসবের অনুকরণ নয়? ভেবে দেখার দরকার আছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা
বর্ষবরণের একটি অনুষ্ঠান হিসেবে ইদানিং শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটা বর্ষবরণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয়েছে ১৯৮৯ সালে, চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকে বিশাল আকারের রাজা-রানীর পুতুল ও পেঁচাসহ নানা ধরনের পশু-পাখির মূর্তি। এসব মূর্তিকে সাথে নিয়ে বাদ্যের তালে তালে এগিয়ে যায় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় যারা অংশগ্রহণ করে তাদের অনেকেই পরে নানা ধরনের মুখোশ।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও নানা পেশার ও বয়সের লোক যোগ দিয়ে থাকেন। পয়লা বৈশাখে কেবল ঢাকায় নয়, মফস্বলের কোনো কোনো শহরেও এ শোভাযাত্রা চালু হয়েছে এবং ক্রমে তা চারদিকে বিস্তার লাভ করছে। বলা হয়, সারা বছর সবাই যাতে নিরাপদ থাকে সেটাই হচ্ছে এ শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নিরাপত্তা দেবার মালিক কে? যদি এ শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিরাপত্তা চাওয়া হয় তবে কার কাছে এ কামনা বা প্রার্থনা? মুসলমানের তো আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে প্রার্থনা করার অবকাশ নেই। আর যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না বা বস্ত্তবাদী, নাস্তিক, তাদের তো এমন কেউ নেই যার কাছে তারা প্রার্থনা করতে পারে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে যারা বেশি মাতামাতি করেন তারা অসাম্প্রদায়িক হিসেবেই নিজেদের পরিচয় দেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ শোভাযাত্রার মূল অনুষঙ্গ ঢোলের বাদ্য- যা দেবী দূর্গাকে আহবান করাসহ অন্যান্য মূর্তিপূজার মূল বাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়- তা একটি বিশেষ সম্প্রদায় হিন্দুদের পূজার উপাদান।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে (১) মহান আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কারো কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা (২) হিন্দুদের দেবদেবীর পূজার অনুকরণে বাদ্য বাজানো (৩) নানা ধরণের মূর্তি ও মুখোশ বহন করা (৪) দলে দলে যুবক-যুবতী মিলে পথে-ঘাটে নৃত্য করা, এসব কি এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির সংস্কৃতি? কিংবা এ-ই কি অর্থ অসাম্প্রদায়িকতার? এ অপসংস্কৃতি প্রতিরোধ করা কি আমাদের ঈমানী দায়িত্ব নয়?
বসন্ত উৎসব
গত কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশে বসন্ত-উৎসব নামে একটি অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছে। বসন্ত ঋতুর শুরুতে পৌষ মাসে ‘পৌষমেলা’ নামে উৎসবটি সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৯৯৮ সালে (জনকণ্ঠ, ২০-১২-৯৮)।
রমনা বটমূলে পালিত এ উৎসবে যা করা হয় তার অনেক কিছুই মিলে যায় মূর্তি ও প্রকৃতি-পূজারীদের আচার-অনুষ্ঠানের সাথে। মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এটাও বিজাতীয় উৎসবের অনুকরণ বৈ কিছু নয়। বসন্ত উৎসবটি সম্পর্কে অমলচন্দ্র চক্রবর্তী বলেন ‘‘ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণের পূজো করে তাঁদের পায়ে আবির, কুমকুম ও পুষ্প দিয়ে রাধাকৃষ্ণ আরাধনা করা হয়। এভাবেই আনন্দ উৎসব আর কীর্তনের মধ্য দিয়ে বসন্ত বরণ ও দোলযাত্রা উৎসব পালিত হয়’’ (দৈনিক সিলেটের ডাক, ১০ এপ্রিল ২০১০)।
চৈত্রসংক্রান্তি
বহু কাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবটি চালু আছে। এ হিন্দু উৎসব সম্পর্কে আমাদের বলার কিছুই ছিল না যদি না একে বাঙালী উৎসবের লেবাস পরিয়ে সার্বজনীন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হত। ইসলামবৈরীদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার বদৌলতে ইতিমধ্যে উৎসবটি ব্যাপক
বিস্তার লাভ করেছে।
বাংলা সালের শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। এ দিনটি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি উৎসবের দিন। হিন্দুদের বিশ্বাস, এ দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপাসনা প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম পুণ্যজনক (বাংলাপিডিয়া)। এ কারণে প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে রেওয়াজ আছে, চৈত্রমাসের শেষ দিনটিকে এসব কাজের ভেতর দিয়ে উদযাপন করার।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে চৈত্রমেলা। এ মেলার প্রধান আকর্ষণ নানা ধরনের পণ্য কেনাবেচা ও পুতুলনাচ, নাগরদোলা, ম্যাজিক, যাত্রা ও সার্কাসসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন। তবে ইতিহাসের কোথাও এমন কোনো রেকর্ড নেই যে, চৈত্রসংক্রান্তির মেলাকে মুসলমানগণ বাঙালী মুসলিম-সমাজের উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেছেন। বাঙালী উৎসবের লেবেল লাগিয়ে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব উদযাপনের সময় যা করা হয় তার মধ্যে রয়েছে, ঢোল, বেহালা, সেতার প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, ব্যান্ডপার্টি, নৃত্যানুষ্ঠান. নাট্যানুষ্ঠান, গানের আসর, প্রকৃতিপূজা, যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশাসহ নানা ধরনের বেহায়াপনা। এ দিনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনসমাগম, বিশেষত তরুণ সমাজের ভীড়ের কারণ, প্রায় সব অনুষ্ঠানেই রয়েছে যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশাসহ আমোদষ্ফূর্তির নানা আয়োজন।
এ দেশের আবেগপ্রবণ লোকদের দিয়ে অনেক কিছুই করানো সহজ, কিন্তু ভিন্ন সম্প্রদায়কে খুশি করার জন্য কিছু মতলববাজ লোক কি ইচ্ছেমত যা-তা করে যেতে থাকবে? আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির কি কোনো অভিভাবক নেই? এ ব্যাপারে দেশের অলেমসমাজ, ঈমানদার বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মুসলিমদের কোনো দায়িত্ব নেই?
শিখাচিরন্তন/শিখা অনির্বাণ
দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি আগুনের শিখা জ্বালাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘শিখা অনির্বাণ’। পরে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সরকারের সময় সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আরেকটি শিখা জ্বালাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে; এর নাম দেওয়া হয়েছে (শিখাচিরন্তন)। শিখা অনির্বাণকে মাধ্যম বানিয়ে বিশেষ বিশেষ দিন সামরিক বাহিনীর মরহুম সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। আর শিখা
চিরন্তনকে মাধ্যম বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ৭ই মার্চের ভাষণের জন্য।
শিখা অনির্বাণ বা শিখাচিরন্তনকে কেউ পূজা করে না তবে শ্রদ্ধা জানাবার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এগুলো সম্মানিত বস্ত্ততে পরিণত হয়েছে। পৌত্তলিক হিন্দুরাও মূলত মূর্তির পূজা করে না, করে দেবতার পূজা। দেবতাকে ভক্তি জানাবার মাধ্যম হিসেবেই তারা মূর্তি ব্যবহার করে। কিন্তু তবুও তারা মূর্তিপূজারী।
অগ্নি হচ্ছে হিন্দু ও মাজুসিদের (অগ্নি উপাসকদের) দেবতা। কাজেই প্রশ্ন হচ্ছে, অগ্নি-শিখার মাধ্যমে কাউকে শ্রদ্ধা জানানো ইসলামসম্মত কি না। এখানে সহীহ বুখারির একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। তখনও নামাযের আযান প্রবর্তিত হয়নি। নামাযের ঘোষণা কীভাবে দেওয়া যায়, সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবিদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল। তখন একটি প্রস্তাবে বলা হয়, নামাযের সময় নির্দেশ করার জন্য উঁচু জায়গায় আগুন জ্বালানো যেতে পারে। এ প্রস্তাবটি ছিল কেবল নামাযের সময় ঘোষণার জন্য, আগুনের শিখাকে সম্মান দেখানোর জন্য নয়। কিন্তু অগ্নি মাজুসিদের ধর্মীয় নিদর্শন হওয়ার কারণে একবাক্যে সবাই প্রস্তাবটি নাকচ করে দেন। এ ঘটনাটি থেকে এ কথা উপলব্ধি করতে বেগ পেতে হয় না যে, কোনো কিছুর প্রতীক বা নিদর্শন হিসেবে অগ্নিকে অভিবাদন করা, একে পুষ্পমাল্য দেওয়া, এর সামনে দাঁড়িয়ে শপথ করা, নীরবতা পালন করা বা অন্য কোনো পন্থায় এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা একে নিয়ে আনন্দ-উৎসব পালন করা ইসলামসম্মত নয়।
অন্য ধর্মের পূজনীয় বস্ত্ত হওয়ায় শিখা চিরন্তন বা অন্য কোনো নামে অগ্নিকে শ্রদ্ধা জানাবার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ইসলামের তাওহীদের চেতনা ও বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ জাতীয় প্রয়াস জাতিকে পৌত্তলিকতার দিকেও ঠেলে দিবে।
শহীদ মিনারকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠান
একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনে যারা অংশগ্রহণ করেন তাদের প্রায় নববই শতাংশ মুসলমান। কিন্তু এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে যা করা হয় তা মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাসের সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। শহীদ মিনারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের অনেক কিছুরই মিল আছে হিন্দুদের পূজা-পার্বণের সাথে। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি :
১. হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমাকে যে উঁচু স্থানে স্থাপন করা হয় সে স্থানকে বলা হয় বেদী, শহীদ মিনারের পদমূলকেও বলা হয় বেদী। বেদী শব্দটির অর্থ ‘হিন্দুদের যজ্ঞ বা পূজার জন্য প্রস্ত্তত উচ্চভূমি।’ (সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী)
২. প্রতিমা বা মূর্তির বেদীমূলকে পবিত্র মনে করা হয়, তাই সেখানে যেতে হয় নগ্নপদে। শহীদ মিনারের মূলকেও পবিত্র মনে করার কারণেই সেখানে নগ্নপদে যেতে হয়।
৩. লক্ষ্মীপূজার সময় আলপনা আঁকা হয়। শহীদ মিনারের পদমূলে যাবার পথেও আলপনা আঁকা হয়। আলপনা অর্থ ‘মেঝে, দেয়াল, সিঁড়ি প্রভৃতিতে অঙ্কিত হিন্দুদের মঙ্গলসূচক চিত্রবিশেষ’। (সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী)
৪. হিন্দু দেবদেবীর পূজার সময় কয়েকটি বিষয় অপরিহার্য। এগুলো হল : লগ্ন, অর্ঘ্য বা নৈবেদ্য, স্তব বা স্ত্ততি, পুরোহিত, দেবতা ও অর্চনা। এসবের সাথেও একুশে ফেব্রুয়ারির আচার-আচরণের সাদৃশ্য আছে। যেমন, অনুষ্ঠান জিরো আওয়ারে শুরু করা (লগ্ন), অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (পুরোহিত), নির্দিষ্টভাবে আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো ... ’ গান গেয়ে কাজ করা (স্তব/স্ত্ততি), শহীদ মিনার (জড়পদার্থ)-কে নীরবে শ্রদ্ধা জানানো (অর্চনা)।
৫. দূর্গাপূজার সময় দেখা যায়, দূর্গার মূর্তির পাশে রয়েছে আরো চারটি (দূর্গার পুত্র গণেষ ও কার্তিক এবং কন্যা সরস্বতী ও লক্ষ্মীর) মূর্তি। এভাবে সব মিলে মূর্তির সংখ্যা হয়েছে পাঁচ। শহীদ মিনারেও মিনারগুলোর সংখ্যা পাঁচ। মিনারের সংখ্যা পাঁচ হওয়ার কারণ কী? ভাষা শহীদদের সংখ্যা কি পাঁচ ছিল? আবার মধ্যবর্তী মিনারটির আকার অন্যদের তুলনায় বড় কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়া দরকার।
মুসলিম-সমাজে রীতি আছে, মৃত বা শহীদ মুসলমানের মাগফেরাতের জন্য দুআর অনুষ্ঠান করা। কিন্তু ভাষা শহীদদের জন্য তাও করা হয় না; যা করা হয় তার সাথে ইসলামের রীতির মিল নেই। হিন্দুরা প্রতিমা-পূজার পক্ষে এ যুক্তি পেশ করেন যে, দেবতা পূজারীদের নাগালের ভেতর নেই, তাই তার প্রতিমার মাধ্যমে তাঁকে পূজা দেওয়া হয়। শহীদ মিনারের বেলায়ও এ বিশ্বাস করা হয় যে, শহীদ মিনারকে সম্মান দেখানো ভাষা শহীদদেরকে শ্রদ্ধা করার সমতুল্য।
শহীদ মিনারকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠানকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখার দরকার আছে। ভাষা শহীদরা সবাই ছিলেন মুসলমান। কাজেই তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আমরা এমন কিছু করতে পারি না যা ইসলামী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া কোনো মুসলমানই তাওহীদ-বিরোধী কোনো কাজ করতে পারে না।
আলপনা আঁকা
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, আলপনা শব্দটির অর্থ, সিঁড়ি প্রভৃতিতে অঙ্কিত হিন্দুদের মঙ্গলসূচক চিত্রবিশেষ। আজকাল শিক্ষিত ও ধনী মুসলমান পরিবারের প্রায় বাড়িতে বিয়ে-শাদি উপলক্ষে আলপনা আঁকা হয়। আর শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষে শহীদ মিনার ও আশপাশ এলাকার পথেঘাটে ব্যাপক আকারে যে আলপনা আঁকা হয়, তা আমাদের সবার জানা কথা।
আলপনা আঁকা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় বিষয়। নিজেদের অজান্তে অনেকে হিন্দু দেবীর উপাসনার অনুষঙ্গ এ কাজটি করে যাচ্ছেন। বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার।
‘‘হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি ধর্মীয় উৎসব লক্ষ্মীপূজা। শারদীয় দূর্গার বিজয়া দশমীর পরের পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। দেবী দূর্গার কন্যা এবং ধন ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয় মূলত ঘরে ঘরে। হিন্দু নারীরা উপবাস থেকে দেবীর প্রতি অর্ঘ্য নিবেদন করেন। সরা এবং প্রতিমা দিয়ে পূজা সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও ঘরের মেঝেতে লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ ও ধানের ছড়ার আলপনা আঁকাও এই পূজার অন্যতম অনুষঙ্গ। পারিবারিক ধন-সম্পদ অর্জন করার মানসে লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। লক্ষ্মীর সঙ্গে থাকে তাঁর লক্ষ্মীপেঁচা। তাই লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়।’’ (প্রথম আলো, ১৬-১০-২০০৮)
ভাষ্কর্য
দেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে এখানে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ভাষ্কর্য নামক মানুষের মূর্তি। কোনো সাধারণ লোকের নয়, বরং যারা সম্মানীয়, বরণীয় ব্যক্তি কেবল তাদেরই ভাষ্কর্য বা প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়। কাজটির মূলে যে অনুভূতি রয়েছে, তা হল শ্রদ্ধাবোধ। এক সাথে একাধিক ব্যক্তির ভাষ্কর্য (অপরাজেয় বাংলা) নির্মাণের মূলেও রয়েছে শ্রদ্ধামিশ্রিত এক বিশেষ অনুভূতি। কাজেই, হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি এবং ভাষ্কর্য নির্মাণের উদ্দেশ্য মূলত এক। আর তা হচ্ছে শ্রদ্ধা জানানো। এ কারণেই ভাষ্কর্য নির্মাণ এবং এটাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে শ্রদ্ধা জানানো আর মূর্তিপূজার মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। এ কারণে এ ব্যাপারে সচেতনতার প্রয়োজন।
প্রসঙ্গক্রমে একটি প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। যে ঢাকা শহর হাজার বছর থেকে ‘মসজিদের নগরী’ নামে পরিচিত ছিল, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হঠাৎ করে সেখানে শত শত ভাষ্কর্য বা মূর্তি নির্মাণ করার কারণ কী? এগুলো কারা করছে, কারা এগুলো নির্মাণের অর্থ যোগাচ্ছে আর কারা এ কাজের প্রেরণা দিচ্ছে, জানার দরকার আছে।
কপালে টিপ দেওয়া
প্রাচীন কালে হিন্দুধর্মে বিবাহের আটটি পদ্ধতির একটি ছিল নারী অপহরণ। হিন্দু দেবতা কৃষ্ণও কয়েকজন নারীকে অপহরণের মাধ্যমে বিয়ে করেছিলেন। প্রাচীনকাল থেকে বিবাহিত হিন্দু নারীদের সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল এটা বোঝানো যে, তার বিবাহ হয়ে গিয়েছে। সিঁথিতে সিঁদুর থাকলে কোনো নারীর অপহৃত হওয়ার ভয় থাকত না। হিন্দু এ সংস্কৃতির অনুকরণে আজকাল মুসলমান নারীরা কপালে টিপ দিতে শুরু করেছে। মনে করা হয়, এটা সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু আসলে এটা হচ্ছে পৌত্তলিক সংস্কৃতিকে বরণ করে নেওয়া। কপাল হচ্ছে দেহের শ্রেষ্ঠ অংশ, যা দিয়ে আল্লাহ তাআলাকে সিজদা করা হয়। আফসোসের বিষয়, অনেক মুসলিম নারীর দেহের এ অংশটিকে পৌত্তলিক সংস্কৃতি দখল করে নিয়েছে।
রাখিবন্ধন
হিন্দু সম্প্রদায় শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় প্রিয়জনের মণিবন্ধে একটি গেরুয়া সুতো বেঁধে দেয়। এ সুতোকে বলা হয় মঙ্গল-সূত্র। সূতো-বাধার কাজকেই বলা হয় রাখিবন্ধন। এটা একটা হিন্দু-সংস্কৃতি। কিন্তু নিজেদের হীনম্মন্যতার কারণে একশ্রেণীর লোক আমাদের দেশে রাখিবন্ধনের প্রচলন করেছে। আজকাল অনেক মুসলিম তরুণকে অতি উৎসাহের সাথে এ কাজটি করতে দেখা যায়।
হিন্দু দেবদেবীর নামে নামকরণ
হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের বিভিন্ন নাম এমনকি দেবদেবীর নামেও আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মুসলমানদের বহু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামের অংশ হিসেবে ‘শতরূপা’ (সরস্বতীর নাম) শব্দটি দেখা যায়। শব্দটির আসল অর্থ বা ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু জানা না থাকায় হয়ত কেউ কেউ নিজেদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য এ নাম মনোনীত করেছেন। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি : শতরূপা টেক্সটাইলস, রাজলক্ষ্মী রেস্টুরেন্ট, ইন্দ্রপুরী হোটেল। শুধু প্রতিষ্ঠানের নাম নয়, আজকাল অনেকেই অতি বাঙালিত্ব দেখাতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের এমন সব নাম রাখেন যেগুলো কেবল হিন্দুরাই রাখতে পারে। কেউ কেউ আবার আসল মুসলমানি নাম বাদ দিয়ে নিজের জন্য হিন্দু নাম রাখেন। এ প্রসঙ্গে কবি সমুদ্রগুপ্তকে উল্লেখ করা যায়। তিনি যে মুসলিম ছিলেন তা অনেকেই জানতেন না। ২০০৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পরই জানা গেল তাঁর আসল নাম ছিল আবদুল মান্নান বাদশা। এ তথ্য জানা না থাকার কারণে তাঁর গুণগ্রাহী অনেকেই তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনে ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়েননি।
পবিত্র কুরআনের সাথে অন্যান্য ধর্মশাস্ত্র পাঠ
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বেতারে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের সাথে গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করার নিয়ম চালু হয়েছিল। এ কাজের যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হতো, বাংলাদেশ যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, তা দেখানোই এর উদ্দেশ্য। পরে রাষ্ট্রীয় নানা অনুষ্ঠানেও পবিত্র কুরআনের সাথে এসব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সভায়ও এ নিয়ম চালু করা হয়েছে।
যারা এ কাজ করেন তাদের জানা থাকা দরকার যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে একটি কুফরী মতবাদ। তাছাড়া এ কাজের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনকে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের সমপর্যায়ভুক্ত করা হয়। এ ধরনের কাজের ফলে আমাদের সরলমনা তরুণদের মনে এ ধারণা জন্মাতে পারে যে পবিত্র কুরআন অন্যান্য ধর্মশাস্ত্রের মতোই একটি গ্রন্থ। এভাবে তাদের মন থেকে কুরআনের প্রতি বিশেষ মর্যাদাবোধ দূর হয়ে যেতে পারে। এটা বোঝা দরকার যে, ধর্মীয় ব্যাপারে অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামকে সমপর্যায়ভুক্ত করা করা হলে ঈমান থাকার কথা নয়।
মসজিদ ও মন্দিরে ‘সমতা’ বিধানের চেষ্টা
সরকারি পর্যায়ে আজকাল এমন সব কাজ করা হয় যা দেখে মনে করার কারণ আছে যে, মসজিদ ও মন্দিরের মধ্যকার পার্থক্য সম্বন্ধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঠিক ধারণা নেই। তারা মনে করেন, মসজিদের জন্য কিছু করতে হলে মন্দিরের জন্যও তা করতে হবে। আসলে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এটা বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই নয়। মসজিদকেন্দ্রিক কোনো প্রকল্প হাতে নিলে মন্দিরের ব্যাপারেও যে তা করতে হবে, তা মোটেই ঠিক নয়।
মসজিদ ও মন্দির এক নয়; দু’ টোর মধ্যে পার্থক্য অনেক। মুসলমান পুরুষদের প্রতিদিন পাঁচবার ফরয নামায আদায় করার জন্য মসজিদে যেতে হয়। মন্দিরের ব্যাপারটি কিন্তু ভিন্ন। কোনো কোনো মন্দিরে বছরে মাত্র একবার পূজা হয়। আবার এমন বহু মন্দির আছে যেখানে বছরে একবারও কেউ যায় না।
ইসলামের মৌলিক শিক্ষা লাভ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। হিন্দু ধর্মে কিন্তু এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। জাতিভেদভিত্তিক হিন্দুধর্মের অনুসারীরা একসাথে বসার কোনো সুযোগ নেই। তাদের অনেকেরই মন্দিরে প্রবেশের অধিকার নেই। এসব কারণে, মুসলমান শিশুদের জন্য মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম গ্রহণ করলেই যে মন্দিরের বেলায়ও তা করতে হবে এমন কোনো কথা নয়। কিন্তু এখন এমনটাই করা হচ্ছে।
ভারতের কোনো মন্দিরেই মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম নেই। কারণ জাতিভেদভিত্তিক হিন্দুধর্মের সাথে এটা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তর অংশই হচ্ছে কথিত নিম্নবর্ণের লোক। নিচ জাতের লোক (?) হওয়ার কারণে তারা মন্দিরের ধারে কাছেও যেতে পারে না। কাজেই, মসজিদের সাথে ‘সমতা’ বিধানের চেষ্টা খোদ হিন্দুদের ধর্ম-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক।
প্রতিকৃতি ও মাজারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান
আমাদের দেশে পীর-আউলিয়াদের মাজারে বাতি জ্বালানো প্রভৃতি কাজকে হক্কানি আলিমগণ বিদআত বলে থাকেন। কেবল যিয়ারত ছাড়া মৃত ব্যক্তির কবরে গিয়ে আর কিছু করার বিধান ইসলামে নেই। মরহুম শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মরহুম এ.কে ফজলুল হক ও মরহুম খাজা নাজিমুদ্দীন ঢাকা শহরেই শায়িত আছেন। তাঁদের অনেক ভক্তও দেশে আছেন। কিন্তু বছরে একবারও তাঁদের মাজারে গিয়ে ফুল দিতে কাউকে দেখা যায় না। কিন্তু মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ও মরহুম জিয়াউর রহমানের মাজার একটি ব্যতিক্রম। শুধু তাদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে নয়, বছরের আরো বহু দিন দলীয়ভাবে বা ব্যক্তিগত আনুগত্য প্রকাশের জন্য এঁদের মাজারে গিয়ে ফুলের তোড়া দেওয়া হয় এবং আরো অনেক কাজ করা হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের অতি সম্মানিত জাতীয় নেতাদের জন্য এমন কিছু কেন করা হয় না, যার দ্বারা তাঁদের পরকালীন কল্যাণ হতে পারে। আর যা করা হয়, তা কি শরীয়তসম্মত? একজন মৃত ব্যক্তির জন্য তো কেবল এমন কাজ করা উচিত যা ইসলামী অনুশাসনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ইতিহাসে দেখা যায়, মৃত ব্যক্তির প্রতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে অতি বাড়াবাড়ির পথ ধরেই পৃথিবীতে মূর্তিপূজা শুরু হয়েছে।
মৃত ব্যক্তির কফিনে ফুল দেওয়া
আজকাল প্রায়ই কোনো বিশিষ্ট লোক মারা গেলে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তার কফিনে ফুলের তোড়া দেওয়া হয়। এটা একটা অর্থহীন কাজ। এ ধরনের কোনো প্রথা কিছুদিন আগেও এদেশে ছিল না। এটা বর্জনীয়। কারণ ১. এটা একটা বিজাতীয় কালচার। ২. এতে মৃত ব্যক্তির কোনো কল্যাণ হয় না এবং ৩. মৃত ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র দাফন করার যে নির্দেশ ইসলামে রয়েছে এতে তা লঙ্ঘিত হয়।
মৃত ব্যক্তির সম্মানে নীরবতা পালন
আজকাল দেখা যায়, কোনো মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান দেখাবার জন্য কিছু সময় নীরবতা পালন করা হয়। এটা অমুসলমানদের রীতি। মৃত ব্যক্তির কল্যাণে কিছু করার বিধান তাদের ধর্মে না থাকার কারণেই তারা এ কাজ করে থাকে। একজন মৃত ব্যক্তির জন্য কী করতে হবে তার সুস্পষ্ট বিধান ইসলাম দিয়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে বিধর্মীদের অনুকরণ করা হীনম্মন্যতারই শামিল।
উপসংহার
ইসলাম এমন একটি দ্বীন, যাতে রয়েছে পরিপূর্ণ জীবনবিধান। মানুষের জীবনে যা কিছুর প্রয়োজন, তা সবই ইসলামে আছে, এতে কোনো অপূর্ণতা নেই। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বা নিদর্শনমূলক আচার-আচরণ অনুসরণ করার সুযোগ ইসলামে নেই। বিধর্মীদের অনুসরণ একজন মুসলমানকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এজন্য এ থেকে আমাদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফ থেকে দুটো উদ্ধৃতি দিচ্ছি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, (তরজমা) কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ নিবাস। (সূরা নিসা ৪ : ১১৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসেও এ ব্যাপারে সাবধানবাণী এসেছে। তিনি বলেছেন, যে কেউ কোনো কওমের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪০৩৩) ষ