উম্মে সালওয়া - মোমেনশাহী

৬৩৪০. প্রশ্ন

আমি কখনো কখনো বড় বালতিতে পানি নিয়ে সেখানে বাচ্চাদের নাপাক কাঁথা কাপড় একবার ভালোভাবে ধুয়েই তুলে ফেলি। এগুলো যেহেতু বাচ্চাদের কাপড়, তাই এগুলো পাক করার উদ্দেশ্যে তিনবার ধোয়া হয় না। এরপর এগুলো ভালোভাবে চিপে শুকানোর জন্য রশিতে ছড়িয়ে দিই। কাপড়ের আর্দ্রতায় রশিও হালকা ভিজে যায়। এরপর কখনো এই রশিতেই আমাদের পবিত্র ভেজা কাপড় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

জানার বিষয় হল, রশিতে নাপাক কাপড় শুকানোর পর পবিত্র কাপড় দেওয়ার দ্বারা কি পবিত্র কাপড়গুলো নাপাক হয়ে যাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নাপাক কাপড়গুলো পাক করে না ধুলেও যেহেতু সেগুলো ভালোভাবে চিপে রশিতে দেওয়া হয়, তাই এক্ষেত্রে ঐ রশি হালকা ভিজে গেলেও যদি তাতে নাপাকীর গন্ধ বা রং প্রকাশ না পায়, তবে ঐ রশি নাপাক গণ্য হবে না। সুতরাং এরপর তাতে পাক কাপড় শুকালে ঐ কাপড়ও নাপাক হবে না।

আর যদি তাতে নাপাক কাপড় দেওয়ার পর এর নাপাক পানিতে রশি এত বেশি ভিজে যায় যে, তা চিপলে এর থেকে পানি ঝরবে অথবা রশিতে নাপাকীর গন্ধ বা রং প্রকাশ পায় তাহলে এক্ষেত্রে উক্ত রশি নাপাক গণ্য হবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও উক্ত রশি শুকিয়ে যাওয়ার পর তাতে পাক কাপড় ভালোভাবে চিপে শুকাতে দিলে উক্ত কাপড় নাপাক হবে না।

ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৪৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৩৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৩৩

শেয়ার লিংক

হাবীবা - নোয়াখালী

৬৩৪১. প্রশ্ন

একদিন আমি মাগরিবের নামাযের সময় বাচ্চাকে খেলনা দিয়ে  দূরে বসিয়ে রাখি। কিন্তু সে খেলনা রেখে আমার কাছে চলে আসে এবং বৈঠকের সময় আমার কোলে বসে পড়ে। নামাযের পর তার ডায়াপার পরিবর্তন করতে গিয়ে দেখি, ভেতরে নাপাকি। যদিও আমার শরীরে কোনো নাপাকি লাগেনি, কিন্তু সে এ নাপাকি নিয়ে যে আমার কোলে বসল, এতে আমার নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে কি? দয়া করে সঠিক মাসআলা জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশুটি যেহেতু নিজেই কোল ধরে বসতে পারে, তাই তার ডায়াপারের ভেতর নাপাকি থাকলেও সে কোলে বসার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। তা আদায় হয়ে গেছে।

আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ২০; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৯১; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৭

শেয়ার লিংক

রিয়াজুদ্দীন - সালথা, ফরিদপুর

৬৩৪২. প্রশ্ন

গতকাল প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির কারণে আমি আসরের জামাতে শরীক হতে পারিনি। ঘরে একাকী নামায আদায় করি। তো প্রথম রাকাত সূরা ফাতেহা পড়ার সময় ভুলে চার-পাঁচ আয়াত উচ্চ আওয়াজে পড়ে ফেলি। বাকি কেরাত স্বাভাবাবিক নিয়মে পড়ি। পরে আমি সাহু সিজদা আদায় করে নামায শেষ করি। জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে কি? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

সূরা ফাতেহার ঐ পরিমাণ উচ্চৈঃস্বরে পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সুতরাং নামায শেষে সাহু সিজদা করার কারণে আপনার নামাযটি আদায় হয়ে গেছে। ইউনুস ইবনে উবাইদা রাহ. বলেন

عَنِ الْحَسَنِ أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الرَّجُلِ يَجْهَرُ فِيمَا لاَ يُجْهَرُ فِيهِ؟ قَالَ : يَسْجُدُ سَجْدَتَيَ السَّهْوَ.

হাসান বসরী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, কেউ অনুচ্চ-স্বরে কেরাতবিশিষ্ট নামাযে উচ্চৈঃস্বরে কেরাত পড়লে তার করণীয় কী? তিনি বললেন, সাহু সিজদা আদায় করে নেবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৬৬৮)

আলআজনাস, নাতিফী ১/১১০; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩২০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৭৭; রদ্দুল মুহতার ২/৮১

শেয়ার লিংক

রাশেদ - খুলনা

৬৩৪৩. প্রশ্ন

আমি প্রতি সপ্তাহে কর্মস্থল (ঢাকা) থেকে বাড়ি (চট্টগ্রাম) ফেরার জন্য রাতে সফর করি। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে মাঝপথে হোটেলে বিরতি দেয়। হোটেলে নেমে ওযু করে নিই। বিরতি শেষে গাড়িতে উঠে ফজরের নামাযের অপেক্ষা করতে থাকি। ওয়াক্ত হওয়ার পর গাড়ির সুপার ভাইজারকে নামাযের জন্য গাড়ি থামাতে বললে খুব অল্প সময়ের সুযোগ দেয়। এতে ফজরের সুন্নত পড়তে পারি না। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, যেহেতু আমার ওযু থাকেই, আর গাড়ি থেকে নেমে সুন্নতের সময় পাওয়া যায় না, তাই গাড়িতে বসেই ফজরের সুন্নত আদায় করতে পারব কি?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি গাড়িতে বসে ফজরের সুন্নত আদায় করে নিতে পারবেন। তবে ফজরের সুন্নত অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাই ওজর ছাড়া তা বসে আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

শরহু মুখতাসারিল কারখী ১/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪২৬; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ১/৩৪৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪৫১

শেয়ার লিংক

হামেদ - রাজশাহী

৬৩৪৪. প্রশ্ন

প্যান্ট, পায়জামা, টাখনুর নিচে রেখে নামায আদায় করার কী বিধান?

উত্তর

প্যান্ট, পায়জামা, লুঙ্গি, জুব্বা টাখনু গিরার নিচে ঝুলিয়ে পরা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গুনাহ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

مَا أَسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ.

লুঙ্গির (কাপড়ের) যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে, তা জাহান্নামে যাবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৮৭)

আর নামাযে এটি অধিকতর অন্যায় কাজ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত

أَنَّهُ رَأَى أَعْرَابِيًّا يُصَلِّي قَدْ أَسْبَلَ إِزَارَهُ، فَقَالَ: الْمُسْبِلُ إِزَارَهُ فِي الصَّلَاةِ لَيْسَ مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي حِلٍّ، وَلَا حَرَامٍ.

তিনি এক বেদুঈনকে দেখলেন যে, সে তার  লুঙ্গি (টাখনু গিরার নীচে) ঝুলিয়ে নামায আদায় করছে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাযে লুঙ্গি (কাপড় টাখনু গিরার নীচে) ঝুলিয়ে রাখে, সে যেন আল্লাহর হালাল-হারামের সীমারেখার কোনো তোয়াক্কা করল না। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, বর্ণনা ৯৩৬৮)

তাই সাধারণ অবস্থায় এবং বিশেষভাবে নামায অবস্থায় টাখনু ঢেকে প্যান্ট, পায়জামা, লুঙ্গি, জুব্বা পরা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। অবশ্য কাজটি অন্যায় হলেও নামায আদায় হয়ে যাবে। এ কারণে নামায ফাসেদ হবে না।

আরিযাতুল আহওয়াযী ৭/২৩৭; শরহু সুনানি আবি দাউদ, আইনী ২/৩০০; ফয়যুল বারী ৪/৩৭৩; শরহু শিরআতিল ইসলাম, পৃ. ১১৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৭৭

শেয়ার লিংক

শরীফ হাসান - লক্ষ্মীপুর

৬৩৪৫. প্রশ্ন

গতকাল আমি ও আমার  দুই সাথী রুমে জামাতের সাথে ইশার নামায আদায় করার পর সুন্নত একাকী পড়ে বিতির জামাতের সাথে আদায় করি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমাদের এ কাজটি কি ঠিক হয়েছে? এবং রমযান ছাড়া অন্য সময়ে জামাতের সাথে বিতিরের নামায পড়া কি জায়েয?

উত্তর

আপনাদের কাজটি ঠিক হয়নি। কেননা জামাতের সাথে বিতির নামায পড়া রমযানের বিশেষ আমল। রমযান ছাড়া অন্য সময়ে বিতির নামায একাকী পড়াই নিয়ম ও মুতাওয়ারাস পদ্ধতি। সাহাবা-তাবেয়ীন তথা সালাফের সাধারণ আমল এমনই ছিল। তারা রমযান ছাড়া অন্য সময়ে বিতির একাকীই পড়তেন। তাই রমযান ছাড়া অন্য মাসে বিতির নামায জামাতের সাথে পড়া সালাফের আমল পরিপন্থী কাজ। অতএব রমযানের বাইরে এটিকে কখনো নিয়ম বানানো যাবে না।

আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/২৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৭০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮

শেয়ার লিংক

আছজাদ - কুমিল্লা

৬৩৪৬. প্রশ্ন

আমার যাকাতের দশ হাজার টাকা থেকে গ্রামের বাড়ির এক গরিব বন্ধুকে তিন হাজার টাকা দিই। যে আমাদেরই অফিসে সিকিউরিটি হিসেবে কর্মরত আছে। বাকি সাত হাজার টাকাও তার পরিচিত কিছু গরীবকে দান করার জন্য তার হাতে দিয়েছিলাম। সে পাঁচ হাজার টাকা তার স্ত্রীকে দেয়। বাকি দুই হাজার টাকা তার পরিচিত কয়েকজন গরিবকে দেয়। অবশ্য তার স্ত্রীও যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ছিল। তার স্ত্রীকে দেওয়ার সংবাদ আমি জানতে পারলে তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। সে বলে, ‘আমার স্ত্রীও তো গরীব, তাই তোমার পক্ষ থেকে যাকাত হিসেবেই দিয়েছি।

হুজুর, আমার একটি খটকা লাগছে, নিজের স্ত্রীকে যাকাত দিলে তো যাকাত আদায় হয় না। সে যে উক্ত টাকা তার স্ত্রীকে দিল, যদিও তা আমার পক্ষ থেকে হোক না কেন, এতে কি আমার যাকাত আদায় হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটির স্ত্রী যেহেতু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত, আর তার স্ত্রীকে ঐ টাকা থেকে যাকাত দিতে পারবে নাএমন কিছুও আপনি তাকে বলেননি, তাই এক্ষেত্রে আপনার যাকাতের টাকা তার স্ত্রীকে দিলেও এর দ্বারা ঐ টাকার যাকাত আদায় হয়ে গেছে।

ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; আলগায়া, সারুজী ৭/১২২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৯

শেয়ার লিংক

সাজ্জাদ - সিলেট

৬৩৪৭. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। কয়েক দিনের চিকিৎসাতেই আমার কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু অসুস্থতা বেড়েই চলছিল। তখন আমি মান্নত করি যে, এ রোগ থেকে মুক্তি পেলে এক লক্ষ টাকা মাদরাসার গোরাবা ফাণ্ডে দান করব। আল্লাহর রহমতে এখন আমি সুস্থ। তবে এখনো মান্নতের টাকা দান করা হয়নি। আরো কিছুদিন পর তা দান করার ইচ্ছা। এদিকে আবার আমার সম্পদের যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। আমার জানার বিষয় হল, আমি কি এক লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে বাকি সম্পদের যাকাত দিব, নাকি তা-সহ পুরো সম্পদের যাকাত দিব?

 

উত্তর

যাকাতের হিসাব থেকে মান্নতের এক লক্ষ টাকা বাদ দেওয়া যাবে না। কেননা অনাদায়ী মান্নতের টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ হয় না। সুতরাং আপনি ঐ এক লক্ষ টাকাসহ যাকাতযোগ্য পুরো সম্পদের যাকাত আদায় করবেন।

আলজামিউল কাবীর, পৃ. ২৪; শরহুল জামিইল কাবীর, আত্তাবী ১/৩৪২; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩৪২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৬১

শেয়ার লিংক

হামেদ - সৌদি প্রবাসী

৬৩৪৮. প্রশ্ন

আমি সৌদিতে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করি। হজ্বের মৌসুমে আরাফার দিন কখনো পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে আরাফাহ প্রান্তরে যাই। সেখানে হাজ্বীগণ যোহর আসর একত্রে পড়েন। আমার জানার বিষয় হল, আমি তো তখন হজ্ব করছি না। এ অবস্থায় আমি কি তাদের সঙ্গে যোহর আসর একত্রে পড়তে পারব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

না। আপনি যেহেতু হাজ্বী নন, তাই ঐ দিন হাজ্বীদের সঙ্গে আপনি আরাফার ময়দানে থাকলেও যোহরের ওয়াক্তে যোহরের সাথে আসর আদায় করা আপনার জন্য জায়েয হবে না। বরং আসরের ওয়াক্ত হওয়ার পরই আসরের নামায আদায় করতে হবে। নতুবা তা আদায় হবে না। কেননা আরাফার দিন যোহরের ওয়াক্তে যোহর আসর একত্রে আদায় করার বিধান কেবল হাজ্বীদের জন্য; অন্যদের জন্য নয়।

আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৭; বাাদয়েউস সানায়ে ২/৩৫২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯৩; আলবাহরুল আমীক ৩/১৪৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫০৫

শেয়ার লিংক

আদনান মাহমুদ - সিলেট

৬৩৪৯. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি হজ্বের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে তায়েফ যায়। কিন্তু সেখান থেকে সে ইহরাম ছাড়াই মক্কা মুকাররমা এসে এর এক দিন পর দেশে চলে আসে। এখন তার করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তায়েফ থেকে মক্কায় ফেরার পথে লোকটির কর্তব্য ছিল, মীকাত থেকে উমরার ইহরাম করে আসা এবং মক্কায় এসে একটি উমরা আদায় করা। কেননা তায়েফ মীকাতের বাইরের এলাকা। আর হেরেমের ভেতর থেকেও কেউ মীকাতের বাইরে গেলে সেখান থেকে পুনরায় যদি সে হেরেমের ভেতর আসতে চায়, তাহলে মীকাত অতিক্রম করার সময় তার ওপর জরুরি হল, হজ্ব (হজ্বের সময়) বা উমরা কোনো একটির ইহরাম করে আসা। এক্ষেত্রে কোনো ইহরাম না করেই কেউ হেরেমে প্রবেশ করে ফেললে তার ওপর জরুরি হল, পুনরায় কোনো এক মীকাতে গিয়ে উমরা বা হজ্বের (হজের সময়) ইহরাম করে আসা এবং তা আদায় করা। কিন্তু প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি যেহেতু কিছু না করেই দেশে চলে এসেছে, তাই মীকাত থেকে ইহরাম করে একটি হজ্ব বা উমরা করা তার যিম্মায় থেকে যাবে। সামনে যেকোনো সময় সেটি তাকে আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে দম দিলে হবে না।

আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৯১; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৭০ ও ১৭১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭৪; মানাসিকে মোল্লা আলী কারী, পৃ. ৮৭

শেয়ার লিংক

মুফীদা - লক্ষ্মীপুর

৬৩৫০. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে পঁয়তাল্লিশ দিন পরই স্বামীর বাড়ি থেকে ঐ মহিলাকে বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় এবং কেবল পঁয়তাল্লিশ দিন ইদ্দত পালনকে আবশ্যক মনে করা হয়। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তাদের এ নিয়ম কি ঠিক আছে? স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য কত দিন ইদ্দত পালন করা জরুরি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত প্রথাটি সম্পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাড়িতে (স্বামীর জীবদ্দশায় সে যেখানে বসবাস করত) চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করা জরুরি। চার মাস দশ দিন শেষ হওয়ার আগে শরীয়তসম্মত ওযর ছাড়া তার জন্য সেখান থেকে পিত্রালয় বা অন্যত্র স্থানান্তর হওয়া জায়েয নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا.

তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রী রেখে যায়, তাদের সে স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে। সূরা বাকারা (২) : ২৩৪

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারী রাহ. বলেন

وأما قوله: (يتربصن بأنفسهن)، فإنه يعني به: يحتبسن بأنفسهن معتدات عن الأزواج، والطيب، والزينة، والنقلة عن المسكن الذي كن يسكنه في حياة أزواجهن أربعة أشهر وعشرا.

বিধবাগণ ইদ্দতের চার মাস দশ দিন অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার, সাজসজ্জা গ্রহণ এবং স্বামীর জীবদ্দশায় যেখানে বসবাস করত সেখান থেকে স্থানান্তর হওয়া থেকে বিরত থাকবে। (তাফসীরে তাবারী ২/৫২৫)

হাদীস শরীফে এসেছে, ফুরাইয়া বিনতে মালিক রা.-এর স্বামী মৃত্যুবরণ করার পর তিনি নবীজীর কাছে তাঁর পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন

امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ.

ইদ্দত (চার মাস দশ দিন) পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার গৃহেই (স্বামী থাকাবস্থায় যেখানে বসবাস করতে সেখানে) অবস্থান কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৪)

উল্লেখ্য, ইদ্দতের এ সময়সীমাস্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী গর্ভবতী না থাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর সময় স্ত্রী গর্ভবতী হলে তার ইদ্দতের সময়সীমা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ.

আর যারা গর্ভবতী তাদের (ইদ্দতের) মেয়াদ হল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। [সূরা তালাক (৬৫) : ৪]

কিতাবুল আছল ৪/৪০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৪১; মাজমাউল আনহুর ২/১৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১০

শেয়ার লিংক

আননূর মসজিদ কর্তৃপক্ষ - কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

৬৩৫১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মসজিদটির স্থাপনা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তাই এ উদ্দেশ্যে আমরা একটি দাতব্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করি। আলহামদু লিল্লাহ, তারা আমাদের আবেদন কবুল করেছে এবং উক্ত মসজিদটি ভেঙে সেখানে একটি নতুন মসজিদ করে দিয়েছে। সাথে মসজিদের যাবতীয় সামানাও তারা নতুন করে কিনে দিয়েছে। এতে আগের মসজিদের অনেকগুলো ফ্যান ও লাইট প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়ে যায়।

জানার বিষয় হল, পুরাতন মসজিদের ঐ অতিরিক্ত ফ্যান, লাইটগুলো কি বিক্রি করে দিতে পারব? যেন অর্জিত টাকা মসজিদের অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আগের যেসকল ফ্যান ও লাইট বর্তমানে ব্যবহারের প্রয়োজন নেই এবং ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া জায়েয হবে। এবং বিক্রিলব্ধ টাকা মসজিদের প্রয়োজনেই ব্যয় করতে হবে।

আলমুহীতুর রাযাবী ৫/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৮২

শেয়ার লিংক

মুখলিসুর রহমান - নেত্রকোণা

৬৩৫২. প্রশ্ন

প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার আমাদের বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে। তাই এই দিনগুলোতে অন্যান্য পণ্যের মতো আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ মুরগি নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করে। কিন্তু বাজারে যারা মুরগি ব্যাপারী আছে, তারা কখনো কখনো গ্রামের রাস্তাগুলো দিয়ে কিছুটা অগ্রসর হয়ে যারা মুরগি নিয়ে আসে তাদের থেকে মুরগি ক্রয় করে নেয়। কিছুদিন আগে শুনলাম যে, এভাবে বাজারের বাইরে এসে পণ্য খরিদ করা নাকি বৈধ নয়। হাদীসে তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তাই হুজুরের কাছে বিষয়টির সঠিক সমাধান জানতে চাই। বিশেষত যদি ব্যাপারীরা এমনটি করার পরও বাজারে পর্যাপ্ত মুরগি থাকে, তাহলেও কি এ কাজ করা অন্যায়?

উত্তর

বাজারে বিক্রির জন্য আগত লোকেরা বাজারে পৌঁছার পূর্বেই পথিমধ্যে বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য তাদের পণ্য খরিদ করে নেওয়াকে হাদীস শরীফে

تلقي الركبان، تلقي البيوع، تلقي السلع، تلقي الجلب

বলে অভিহিত করা হয়েছে। এবং এই কাজকে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামী বাজারব্যবস্থা থাকলে পাইকারদেরকে এহেন কাজ থেকে বাধা দেওয়া হত। কেননা এটি হাদীসে নিষিদ্ধ কাজ এবং এর দ্বারা সাধারণ ভোক্তাগণ (এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রামের বিক্রেতাও) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

তবে কোনো পাইকার এভাবে মুরগি কিনে একত্র করলে তার থেকে প্রয়োজনে মুরগি কেনা যাবে। সেটি নাজায়েয হবে না।

সহীহ বুখারী, হাদীস ২১২৬; আলজামিউস সাগীর, পৃ. ২৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১০২

শেয়ার লিংক

রফিক - মুলাদী, বরিশাল

৬৩৫৩. প্রশ্ন

আমাদের দেশের হোটেলগুলোতে খাবার পরিবেশনকারী ওয়েটারদেরকে বখশিশ দেওয়ার প্রচলন আছে। শুনেছি, ওয়েটারদেরকে বখশিশ হিসেবে যে টাকা দেওয়া হয়, তা নাকি ঘুষের অন্তর্ভুক্ত।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, আসলেই কি উক্ত টাকা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত? তা দেওয়া কি নাজায়েয? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বর্তমানে হোটেল ওয়েটারদেরকে সাধারণত যে বখশিশ দেওয়ার রেওয়াজ আছে, কিছু শর্ত সাপেক্ষে তা দেওয়া এবং গ্রহণ করা জায়েয, শর্তগুলো নিম্নরূপ

১. বখশিশের কারণে সাধারণভাবে অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি সুবিধা নেওয়া যাবে না।

২. বখশিশ দানকারীকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়, না দিলে কম দেওয়া হয়এমন হওয়া চলবে না।

৩. বখশিশের জন্য কাউকে বাধ্য করা যাবে না। কেবল স্বতঃস্ফূর্তভাবে যা দেওয়া হয় তা-ই গ্রহণ করতে হবে।

কিন্তু বখশিশের মাধ্যমে যদি অন্যায় সুবিধা নেওয়া হয়, যেমনবেশি খাবার খেয়ে কম টাকা দেওয়া বা এজাতীয় কিছু, তাহলে এটা ঘুষ ও চুরির অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তা কোনোভাবেই জায়েয হবে না।

ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৬৩; ফাতহুল কাদীর ৬/৩৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১১/৭৮; মাজমাউল আনহুর ৩/২১৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৩৬২ 

শেয়ার লিংক