মুহাররম ১৪২৯   ||   জানুয়ারি ২০০৮

প রি চি তি : ভোটার ও আইডি নিবন্ধনে এ কোন ভূত?

আবু তাশরীফ

ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় আইডি কার্ড প্রণয়নের কাজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্পন্ন হওয়ার পর এখন চলছে ঢাকা মহানগরীতে। সঙ্গত কারণেই এ কাজটি চলছে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ভোটার নিবন্ধনের প্রক্রিয়া ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার মতো কিছু কিছু বিষয় ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

গত ডিসেম্বর ০৭ -এর শুরুর দিকে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ছবি তোলার সময় পুরুষ ভোটারদের মাথা থেকে টুপি খোলা এবং পর্দানশীন নারী ভোটারদের বোরকা খোলার জন্য ঢাকার কোনো কোনো কেন্দ্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চাপ সৃষ্টি করেছে। অথচ সারা পৃথিবীতে ভ্রমণের জন্য যে পাসপোর্ট, সেখানেও টুপি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী ও পুরুষ ভোটার এ কারণে মারাত্মক বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। বহু ধর্মপ্রাণ নারী কেন্দ্র থেকে ফিরে গেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

এ নিয়ে যখন বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয় তখন নির্বাচন কমিশনার গত ৯ ডিসেম্বর ০৭ সংবাদপত্রে ভাষ্য দেন যে, টুপি ও হিজাব পরে ছবি তুলতে কোনো বোধা নেই। প্রশ্ন জাগে, ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় আইডি তৈরির কাজের এ চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে কেন এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন মুখ খুলেছে। মাঠ পর্যায়ে নিবন্ধন কর্মকর্তাদের তারা কী বলে দিয়েছিলেন? কেন এই বিড়ম্বনার মুখোমুখি এতদিন হতে হয়েছে ধর্মপ্রাণ মানুষকে? তাহলে কি বলতে হবে স্থানীয়ভাবে বহু কর্মকর্তা নিজেদের টুপি-বোরকাবিদ্বেষী মেজাজের যথেচ্ছ প্রকাশ ঘটিয়ে লাখ লাখ ভোটারকে বিব্রত করেছেন? এ অধিকার তাদের কে দিল? জাতীয় আইডি তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতীয় ও সরকারি কাজে যারা নিজেদের থেকে এরকম হঠকারী অন্যায় আচরণ করলেন তার কি কোনো জবাবদিহিতা ও বিচার নেই? এ কারণে যে বহু ভোটার হয়রানির শিকার হলেন এবং বহু নারী ভোটার ছবি না তুলে-অর্থাৎ ভোটার না হয়ে- ফিরে যেতে বাধ্য হলেন এর দায়-দায়িত্ব কি তারা নেবেন? নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকারের কি এ ব্যাপারে কিছুই করণীয় ছিল না বা নেই?

ইচ্ছাকৃত এ বিড়ম্বনা সৃষ্টির আরেকটি কারণ এখন গুঞ্জনের মতো শোনা যাচ্ছে। টুপিওয়ালা ও বোরকাওয়ালা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করার জন্য এ বিড়ম্বনা নাকি ছিল কেন্দ্রীয় দিক নির্দেশনার ভিত্তিতেই। এগুঞ্জনের খবরে আমরা কি বিশ্বাস স্থাপন করব?

এদিকে গত ১১ ডিসেম্বর ০৭ এর একটি দৈনিকের একটি রিপোর্ট এ বিষয়ক আরেকটি আশঙ্কাজনক বাস্তবতার উন্মোচন করেছে। সে রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এবং বাস্তবেও যারা ভোটার

নিবন্ধনের ফরম পূরণ করেছেন তারা জানেন যে, সে ফরমে তথ্যদাতা বা ভোটার কোন ধর্মাবলম্বী তা চিহ্নিত করার কোনো ঘর নেই। যে ফরমে ভোটারের ব্লাডগ্রুপ থেকে নিয়ে তিনি গ্রামের বাসিন্দা নাকি শহুরে নাগরিক-এসব ঘরও বিদ্যমান, সেখানে তিনি কোন ধর্মের অনুসারী তার কোনো ঘর না থাকা এদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং তার ভিত্তিমূলক

তথ্যমালাকে ধর্মীয় পরিসংখ্যান মুক্ত করারই একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস কি না এ ব্যাপারে বহু বিশিষ্ট নাগরিক সংশয় প্রকাশ করেছেন। একই অবস্থা নাকি জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও চলছে। নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পরিচিতি মুছে ফেলার এ অভিযান কি সুপরিকল্পিত, নাকি ভৌতিক কোনো হাতে এসব হচ্ছে এটা বলা এখন মুশকিল। পৃথিবীর অন্য প্রায় সব দেশেই যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-ফরমে ধর্ম পরিচয় নির্ধারণের জন্য একটি ঘর থাকে সেখানে এদেশে এ উল্টোযাত্রার রহস্য কি বেশি দিন চাপা থাকবে? #

 

 

advertisement