যিলক্বদ ১৪৩৪   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৩

আমাদের রাজ্যশাসন-১০

মাওলানা আবদুস সালাম কিদওয়ায়ী

রোম ও ইরান

রোম ও ইরানের লোকেরা সবসময় আরবদেরকে তুচ্ছজ্ঞান করত এবং তাদেরকে নিজেদের গোলাম মনে করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইরানের বাদশাহ খসরূ পারভেজের নিকট ইসলামের দাওয়াত পাঠালেন তখন সে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাওয়াতনামাকে এই বলে ছিঁড়ে ফেলল যে, হায়! আমার গোলামের এত দুঃসাহস যে, আমার নিকট এভাবে পত্র পাঠায়!

এরপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গ্রেফতার করে তার কাছে পাঠানোর জন্য ইয়েমেনের গর্ভনরকে আদেশ করে। অন্যদিকে রোমকরা তো দীর্ঘ দিন থেকেই আরবদের উপর আক্রমণ করার সুযোগ খুঁজে বেড়াত। আর নিজ দেশের প্রজাদের প্রতি তারা যে জুলুম-অত্যাচার চালিয়েছিল তা শুনলে আজও গা শিউরে উঠে। তাদের অত্যাচারে প্রজারা ছিল সদা ভীত-সন্ত্রস্ত।

ঘটনাক্রমে সে বছরই ইরানের অবস্থা বড় নাজুক হয়ে গেল। এই সুযোগে আরব ও ইরানের সীমান্তবর্তী ঐসব অঞ্চল, যাদের উপর ইরানীরা সব সময় জুলুম করে আসছিল তারা সকলে মিলে ইরান সীমান্তে আক্রমণ করে বসল। এ সময় তারা হযরত আবু বকর রা.-এর নিকট এসে সহযোগিতা কামনা করল এবং বলল, আমাদেরকে জুলুমের হাত থেকে বাঁচানোর এটাই মোক্ষম সময়। আবু বকর রা. আরবদের সাথে ইরানের শত্রুতার কথা ভালোভাবেই অবগত ছিলেন। মুসলমানদেরকে ইরানীরাদের শত্রুতা থেকে বাঁচানো ছাড়াও আরো একটি উদ্দেশ্য তাদের কানে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দেওয়া। এজন্য আবু বকর রা. তাদের প্রস্তাবে সম্মত হলেন এবং হযরত খালিদ রা.-এর নেতৃত্বে একটি সৈন্যদলকে ইরান অভিমুখে প্রেরণ করলেন। হযরত খালিদ রা. অল্প কয়েকটি লড়াইয়ের মাধ্যমে ইরানের একটি বড় অংশ জয় করে নেন।

 

ইয়ারমূক

ইরানের অধিবাসীদের মতো রোমকরাও ছিল মুসলমানদের কট্টর শত্রু। আর দীর্ঘদিন ধরে তারা আরবের ওপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা অাঁটছিল। দু একবার তারা মদীনায় আক্রমণেরও ইচ্ছা করেছিল। এজন্য আবু বকর রা. ইরানের পরপরই শাম দেশেও সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন। আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ, ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফিয়ান, আমর ইবনুল আস ও অন্যান্য বড় বড় সাহাবীকে সেনা বাহিনী দিয়ে শাম দেশে প্রেরণ করলেন। যে সময় ইরানে যুদ্ধ শুরু হল ঠিক তখনই শামেও লড়াই ছড়িয়ে পড়েছিল। আর রোমকরাও অত্যন্ত বীরত্বের সাথে লড়াই প্রতিহত করতে লাগল। তাই সেখানে হযরত খালিদ রা.-এর মতো বীরযোদ্ধার প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি তখন   ইরাকে ছিলেন। এজন্য আবু বকর রা. তাকে শীঘ্রই শামে যাওয়ার আদেশ দিয়ে পাঠালেন। আর তার স্থলে হযরত মুসান্নাকে নিযুক্ত করার আদেশ দিলেন। আদেশ পাওয়ার পর পরই হযরত খালিদ রা. শামের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন এবং সেখানকার ইসলামী সৈন্যদলের নেতাদের সঙ্গে যোগ দিলেন।

রোমকদের সঙ্গে প্রথম সংঘর্ষ হয় আজনাদিন নামক স্থানে। এতে রোমকরা অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এর ফলে শামের শাসক হিরাকল একটা বড় ধরনের ধাক্কা খেল।

আর সে মুসলমানদের মোকাবিলার জন্য ৩ লক্ষ সৈন্য প্রেরণ করল। অথচ মুসলমানদের সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি ছিল না। ইয়ারমূক নামক স্থানে দুই দলের যুদ্ধ হল। রোমকরা অত্যন্ত বীরত্বের সাথে লড়াই করল। কিন্তু এরপরও তারা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করল। লক্ষ লক্ষ লাশ ময়দানে রেখেই তারা পলায়ন করল।

এ পরাজয় রোমকদের হিম্মত ভেঙ্গে দিল। আর তারা স্পষ্ট দেখতে লাগল যে, অচিরেই গোটা শাম তাদের হাত থেকে বের হয়ে যাবে। ষ

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ

 

 

advertisement