যিলক্বদ ১৪৩৪   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৩

হারামাইনের মিম্বর থেকে

হারামাইন শরীফাইন-মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওওয়ারার সম্মানিত খতীবগণের চারটি জুমার খুতবার অনূদিত সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হলো। এতে যুক্তি ও আন্তরিক দরদের সঙ্গে ইসলামী শিষ্টাচার, সত্যের অবশ্যম্ভাবী বিজয়, পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে  ধরা এবং বিশ্বের বিপন্ন মুসলমানদের সহযোগিতার আহবান উচ্চারিত হয়েছে। এই খুতবাগুলো পেশ করা হয়েছে গত রজব ও শাবান মাসের বিভিন্ন জুমাবারে।

মাসিক আলকাউসার-এর জন্য খুতবাগুলোর সারসংক্ষেপ অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মাওলানা শাহাদাত হোসাইন

ইসলামী শিষ্টাচারের সৌন্দর্য অনেক

০৭-০৭-১৪৩৪

শায়খ সালেহ ইবনে আব্দুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহু তাআলা এই জুমায় আদব, শিষ্টাচার ও সূক্ষ্মরুচি বা মননশীলতা বিষয়ে আলোচনা করেছেন।  এতে তিনি ইসলামী আদব ও আচার এবং ওই সকল গুরুত্বপূর্ণ আখলাক ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেন, যে বিষয়গুলো আমাদের ধর্মীয় বিধানাবলী ও নির্দেশনাতে বিদ্যমান এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ধারণ করা কর্তব্য। এক্ষেত্রে তিনি নামায, যাকাত, রোযা ও হজ্বসহ অন্যান্য ইবাদত ও লেনদেনের উদাহরণ পেশ করেছেন। ইসলাম তো উত্তম ও উন্নত কাজেরই নির্দেশনা দেয় এবং নীচু ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উন্নত আখলাক বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেউ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি প্রথমে সালাম দিতেন, সঙ্গীদের সাথে তিনিই আগে মোসাফাহা করতেন, মোসাফাহাকারী হাত সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর হাত টেনে নিতেন না; তিনি তাঁর মুখ ফিরিয়ে নিতেন না, যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি নিজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় আছে, তিনি তাঁর সাথে বৈঠককারীদের সাথে তাঁর হাঁটু এগিয়ে রেখেছেন এমন দেখা যায়নি।

হযরত আনাস রা. বলেন ‘‘যে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কানে কানে অর্থাৎ গোপনে কথা বলতে চাইত তিনি তাঁর মাথাকে ঝুঁকিয়ে দিতেন এবং তাঁর হাসি ছিল মুচকি হাসি।’’

আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা ও বিধানাবলীতে এমন সূক্ষ্ম ও অনুপম বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিস্ময়কর! ইসলামের বড় বড় ইবাদতের বিন্যাসের ক্ষেত্রে চিন্তাশীল ও গবেষকগণ দেখতে পাবেন যে, ইবাদতগুলো আদব-আখলাক ও শিষ্টাচারের সাথে কতটা জোরালোভাবে সংযুক্ত। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাযের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকম মার্জিত রুচি ও উন্নত বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ। যেমন নামাযের সময় রয়েছে উত্তম পোশাক পরিধান করা, আতর ব্যবহার করা, শান্তভাবে গাম্ভীর্যের সাথে চলা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করা এবং সব রকমের দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত ও পবিত্র থাকার মতো উত্তম আচরণিক কিছু বৈশিষ্ট্য।

এমনিভাবে যাকাতের ক্ষেত্রেও  মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনের ইরশাদ -

خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا

 ‘‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও, এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’’-সূরা তাওবা : ১০৩

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-

قَوْلٌ مَعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِنْ صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى

‘‘যে দানের পর কষ্ট দেওয়া হয় তার চেয়ে উত্তম কথা ও ক্ষমা প্রদর্শন শ্রেয়।’’ সূরা বাকারা : ২৬৩

শায়খ সালেহ স্পষ্ট করে তুলে ধরেন ইসলামে সদকার তাৎপর্য অর্থ দানের চেয়ে আরো ব্যাপক। কারো সাথে হাসিমুখ থাকা সদকা, পথহারা কাউকে পথ দেখিয়ে দেওয়া সদকা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়াও সদকা।

রোযার ক্ষেত্রে হাদীসে এসেছে, ‘‘কেউ যদি রোযাদারকে গালি দেয় বা তিরস্কার করে সে যেন বলে, আমি রোযাদার।’’ আর হজ্ব সে তা তাকওয়ার আধার। এরশাদ হচ্ছে-

فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ

‘‘হজ্বের মধ্যে কোন মন্দ কথা, পাপাচার বা ঝগড়া-বিবাদ চলবে না।’’-সূরা বাকারা : ১৯৭

তদ্রূপ মোআমালাত ও মোআশারাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের আদব ও মার্জিত আখলাকের নির্দেশনা বিদ্যমান। ব্যবসা-বাণিজ্যে, আহার-আপ্যায়নে, দেখা-সাক্ষাতে ও সবার যথাযথ অধিকার রক্ষায় দ্বীনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সকলের জন্য আদর্শ। যেমন, খাবারের ক্ষেত্রে ইসলামের অপূর্ব শিক্ষা হল, খাওয়ার আগে দুহাত ধোয়া, নিজের কাছ থেকে খাওয়া, খাবারের মধ্যে ফুঁ না দেওয়া, পানির পাত্রে নি:শ্বাস না ফেলা এবং কথায় কাজে বা ইশারায়ও এমন কিছু না করা যা নোংরা, যা ঘৃণার সৃষ্টি করে বা খারাপ লাগে।

কারো সাথে সাক্ষাতে ইসলামী সভ্যতা হল, সালাম দেওয়া, কারো কাছে গেলে উপযুক্ত সময়ে যাওয়া, অনুমতি নিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করা, দরজা বরাবর না দাঁড়ানো, বাড়ির মালিক যেখানে বসায় সেখানেই বসা, মজলিস হলে যেখানে জায়গা আছে বসে পড়া, অসুস্থকে দেখতে গেলে স্বল্প সময় অবস্থান করা, সুস্থতার জন্য দুআ করা ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا

 ‘‘আর তোমাদের সন্তান-সন্ততি সাবালক হলে তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে যেমন অনুমতি প্রার্থনা করে থাকে তাদের বয়োজ্যেষ্ঠগণ’’।-সূরা নূর : ৫৯

হাঁটা-চলা ও অন্যের সাথে আচার ব্যবহারে ইসলামের নৈতিকতা হল, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, বিদ্রূপ না করা, বিকৃত নামে না ডাকা, ছোটকে স্নেহ করা, বড়কে সম্মান করা, অহংকার ও বাজে আচরণ না করা বরং হাসিমুখে কথা বলা ও কোমল আচরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ * وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ

‘‘অহংকারবশত তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তুমি পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু করা। নিশ্চয়ই আওয়াজের মধ্যে গাধার আওয়াজই সবচেয়ে অপ্রীতিকর।’’-সূরা লোকমান : ১৮, ১৯

সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী, মিথ্যা পরাজিত হবেই

১৪/০৭/১৪৩৪

শায়খ সালেহ ইবনে মোহাম্মাদ আলে তালেব মক্কা মুকাররমায় এ দিনের বয়ানে হকের বিজয় ও বাতিলের পরাজয় শিরোণামে আলোচনা পেশ করেন। এতে তিনি হক-বাতিলের মধ্যে চিরন্তন দ্বন্দ্বের কথা তুলে ধরে বলেন, সময় যতই দীর্ঘ হোক এ লড়াইয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে হকই বিজয়ী হবে। তিনি দুই ওহী তথা কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা এবং সে অনুযায়ী পথচলার প্রতি মুসলমানদেরকে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করেন।

আল্লাহ রাববুল আলামীনের কিতাবেই প্রত্যেক মুমিনের জন্য সান্ত্বনা ও প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য হিদায়েত রয়েছে। আল্লাহ কখনোই তাঁর মুমিন বান্দাদের ধ্বংস করবেন না। বিপদ, মুসিবত আপতিত হওয়ার প্রতিফল সম্পর্কে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন-

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ * إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ * وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ

‘‘তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিতও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, সেরূপ আঘাত তো তাদেরও লেগেছিল।  মানুষের মধ্যে এই দিনগুলোর পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই, যাতে আল্লাহ মুমিনগণকে জানতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কতককে শহীদরূপে গ্রহণ করতে পারেন এবং আল্লাহ জালিমদেরকে পছন্দ করেন না; এবং যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে পরিশোধন করতে পারেন এবং কাফেরদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেন।’’-সূরা আলে ইমরান : ১৩৯-১৪১

আল্লাহ তাআলার বিধান হল, বিশেষ হিকমতে তিনি তাঁর বান্দাদের মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা নেন এবং তাদের থেকে শুদ্ধ লোক বাছাই করার জন্যও তা করে থাকেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেন-

مَا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ

 ‘‘অসৎকে সৎ থেকে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদেরকে সে অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন না। অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদেরকে আল্লাহ অবহিত করার নন।’’-সূরা আলে ইমরান : ১৭৯

হযরত যায়দ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমার কাছে চিঠি লিখলেন, তাতে তিনি রোমীয় কিছু বাহিনীর কথা উল্লেখ করে তাদের ব্যাপারে আশংকার কথা জানালেন। উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু জবাবে লিখলেন, মুমিন বান্দার ওপর যে বিপদই আসুক সে বিপদের পর আল্লাহ তাআলা স্বস্তি দেবেন, আর কখনোই এক সঙ্কট দুই স্বাচ্ছন্দের উপর প্রবল হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্তত থাক, আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।-সূরা, আলে ইমরান : ২০০

 

কুরআন ও সুন্নাহ প্রত্যাখ্যানে নেমে আসে ভযাবহ বিপর্যয়

২১-০৭-১৪৩৪

এ জুমায় মসজিদে নববীতে খুতবার বিষয় ছিল কুরআনে কারীম ও সুন্নতে নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রত্যাখ্যান করার ভয়াবহতা ও বিপদ। ড. সালাহ আলবুদাইর এতে কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণের আবশ্যকীয়তা এবং তা প্রত্যাখ্যান করার ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ঈমানদার, কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী ও ইলমের ধারক-বাহকগণের মৌলিক নীতি হল, কিতাব ও সুন্নাহর সম্মান করা। কিতাব তাঁদের পাথেয়, সুন্নাহ তাদের দলিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের আদর্শ।

পথভ্রষ্ট লোকেরাই সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে। এর বিরোধিতা করে শুধু ব্যর্থরা এবং হতভাগারাই কেবল তাতে দোষারোপ করে। ইমাম আহমদ রহ. বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসকে হাদীস জেনেও মিথ্যা সাব্যস্ত করে সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’’

ইবনুল ওযীর রহ. বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসকে হাদীস জেনেও মিথ্যা সাব্যস্ত করা সুস্পষ্ট কুফরী।’’

শায়খ সালাহ আলবুদাইর আরও বলেন, ‘‘যারা সায়্যিদুনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথায় মিথ্যারোপ করে বা এর মোকাবেলা করার দুঃসাহস দেখায় রাসূলুল্লাহর মর্যাদা ও সুন্নাহকে সংরক্ষণের জন্য তাদেরকে রদ করা, দমন করা ও কঠোরভাবে বাধা দেওয়া মুসলমানদের উপর একান্ত কর্তব্য।

সুন্নাহ ও আহলে সুন্নাহর চরম শত্রু হচ্ছে তারা যারা মনগড়া বিষয়কে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে এবং নবীগণের পর সবচেয়ে নৈকট্যশীল ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামকে কাফের সাব্যস্ত করে এবং বিভিন্ন যুগে অবাধে মুসলমানদের হত্যা করে ও তাদের অসম্মান করে।’’

 

বিপন্ন মুসলমানদের পাশে সবার সহযোগিতা চাই

০৫/০৮/১৪৩৪

এ জুমায় মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী দু জায়গায়ই সিরিয়া ও মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থার উপর আলোকপাত করে বলা হয়, সমস্ত বাতিল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানামুখী জুলুম ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এর মোকাবেলায় কুরআন ও হাদীস আঁকড়ে ধরা এবং মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

শায়খ শুরাইম বিপদ-মুসিবতে ধৈর্যধারণ ও সবর সম্পর্কে কুরআনী নির্দেশনা উল্লেখ করে বলেন, উম্মতে ইসলাম আজ তথ্য-প্রযুক্তি ও বিপথগামী মিডিয়ার জোয়ারে মুসিবতগ্রস্ত। এগুলো দূরকে কাছে নিয়ে এসেছে এবং বহু সুপ্ত জিনিসকে উন্মোচন করে দিয়েছে। আধুনিকতার এই প্রচন্ড তুফানে পুরো জগতটা একটা ব্লকে পরিণত হয়েছে। এতে আদ জাতির জুলুম, কওমে লুতের পাপাচার, ফেরাউনী সম্প্রদায়ের ধোঁকাবাজি, মাদয়ান গোষ্ঠির প্রতারণার মনোবৃত্তি, কওমে নূহের ঠাট্টা-বিদ্রুপের সংস্কৃতি এবং ইউসুফ-ভ্রাতাদের নির্মম ষড়যন্ত্রের সব কটি বৈশিষ্ট্যই একাকার হয়ে গেছে।

ফলে মুসলমানগণ আজ চতুর্মুখী ফিতনা ফাসাদে জর্জরিত এবং বহুমুখী চক্রান্ত ও জুলুমের শিকার। এরই মধ্যে অন্তঃসারশূন্য এই সভ্যতার ধ্বজাধারীরা শ্লোগান তুলছে অদ্ভূত এক ‘‘মানবাধিকারের’’। যেটা নামে মানবাধিকার  হলেও বাস্তবে বীভৎস চেহারাবিশিষ্ট চরম একপেশে এক হাতিয়ার। এতে মুসলমানদের কোনো অধিকার নেই, নেই তাদের প্রতি কোনো দায়িত্ব বা ন্যূনতম মানবিকতা।

শায়খ হোসাইন আলে শাইখ তার বয়ানে বলেন, মুসলমানদের উপর চারদিক থেকে যে বিপদ ও অনিষ্টতা নেমে এসেছে এবং কোনো কোনো দেশে যে অন্যায় ও জুলুম সঙ্ঘটিত হচ্ছে এ অবস্থায় হক ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং বাতিল ও জুলুম প্রতিরোধের জন্য আমাদের সকলের উপর কর্তব্য হল পরস্পরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى

তরজমা :  ‘‘তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে পরস্পরের সহযোগিতা কর।’’-সূরা মায়িদা : ২

তালেবে ইলম বা শিক্ষানবীসদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সমগ্র উম্মতের সাথে সংশ্লিষ্ট এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ফতোয়া প্রদান থেকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। ইলমী উসূল অনুযায়ী বাস্তবতা যাচাই করে, সেটার সার্বিক দিক ও ফলাফল বিবেচনায় রেখে নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কিরামের সাথে ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ ও গবেষণার পরই কেবল এ ধরনের ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে।

ফিতনা বড় ভয়াবহ, বিচক্ষণতাপূর্ণ ফিকহী সমাধান ছাড়া এ থেকে বের হওয়ার  কোনো পথ নেই। আমাদের যাবতীয় কল্যাণ ফিকহে ইসলামীর মধ্যেই নিহিত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা যার মঙ্গল চান তাকে বুঝ বা ফিকহ দান করেন।’’

এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বর থেকে রাবেতা আল ইসলামীর মতো সংগঠনগুলোকে আমরা আহবান করছি, ইসলামী উম্মাহর উলামায়ে কিরামকে দ্রুত সংগঠিত করতে, যাতে তাঁরা নুসূস থেকে শরীয়তের বৃহৎ মূলনীতির আলোকে বিভিন্ন সমস্যা ও সঙ্কটের গবেষণা এবং সমাধানের পথ খুঁজতে পারেন। পক্ষান্তরে বিশৃংখলা ও অস্থিরতা তৈরী করা এবং প্রয়োজনীয় শর্ত পুরো না করে নবীন ও তরুণদের বিচ্ছিন্নভাবে নানারকম ফতোয়া প্রদান করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ জাতীয় অসতর্কতার জন্য ভয়ানক শাস্তির ধমকি রয়েছে।

আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে আমরা পানাহ চাই। ষ

 

 

advertisement