মুহাররম ১৪৩১   ||   জানুয়ারী ২০১০

একটি ভুল ধারণা: মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায জরুরি মনে করা

মসজিদে জামাতে নামায পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি মসজিদে নববীতে জামাতে শামিল হওয়ার সুযোগ হয়ে যায় তাহলে তো নূরুন আলা নূর। কেননা, এখানে এক নামায (কমপক্ষে) হাজার নামাযের সমতুল্য। হজ্বের সময় মসজিদে নববীতে উপস্থিত হওয়ার এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওযা মুবারকে গিয়ে সরাসরি সালাম আরজ করার সৌভাগ্য অর্জনের জন্য মদীনা মুনাওয়ারার উদ্দেশে সফরের ধারা হাজী ছাহেবানদের মধ্যে রয়েছে, যা অতি উত্তম আমল। কিন্তু সেখানে অবস্থানের জন্য শরীয়তের পক্ষ থেকে কোনো মেয়াদ নির্ধারিত নেই। অর্থাৎ এটা অপরিহার্য নয় যে, সেখানে কমপক্ষে আট দিনই থাকতে হবে। কোনো কোনো মানুষ আট দিন অবস্থানকে এত জরুরি মনে করে যে, এর জন্য নিজেকে, সফরসঙ্গীদেরকে এবং কাফেলার আমীরকে কষ্টে ফেলে দিতেও দ্বিধা বোধ করে না। অথচ তা শরীয়তের পক্ষ হতে নির্ধারিত কোনো মেয়াদ নয় যে, তা পূরণ করা এত জরুরি মনে করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমদ (৩/১৫৫) ও তবারানীতে (৫৪৪) একটি রেওয়ায়েত আছে যে, কেউ যদি এই মসজিদে (অর্থাৎ মসজিদে নববীতে) ধারাবাহিকভাবে চল্লিশ নামায আদায় করে তাহলে সে জাহান্নামের আযাব ও নিফাক থেকে মুক্তি পাবে। এই রেওয়ায়েতের কারণে লোকেরা আট দিন অবস্থান করা জরুরি মনে করে নিয়েছে। অথচ সনদের বিচারে তা জয়ীফ। উপরন্তু এই হাদীসের প্রসিদ্ধ মতন সেটি যা তিরমিযীতে রয়েছে-যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন জামাতে তাকবীরে উলার সঙ্গে নামায আদায় করে তার জন্য দুটি পরোয়ানা লেখা হয় : জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরওয়ানা ও নিফাক থেকে মুক্তির পরওয়ানা। (জামে তিরমিযী হাদীস : ২৪১) অতএব স্পষ্টত বোঝা যায় যে, এই ফযীলত যে কোনো মসজিদে জামাতে শামিল হওয়া দ্বারা হাসিল হতে পারে। প্রসঙ্গত ভুল না বোঝার অনুরোধ করব। ফযীলতের ক্ষেত্রে জয়ীফ রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য, তা আমার জানা আছে। কিন্তু একই সাথে এটাও সত্য যে, জয়ীফ দ্বারা শরীয়তের কোনো বিধান প্রমাণ হয় না এবং কোনো মেয়াদ বা পরিমাণ নির্ধারিত হয় না। এজন্য সহজভাবে সেখানে আট দিন থাকার সুযোগ হয়ে গেলে ভালো, কিন্তু একে জরুরি মনে করা বা জরুরি বিধানের মতো এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া যে, কষ্ট ও পেরেশানিতে পড়ে যেতে হয় কিংবা পরস্পর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়, ঠিক নয়। প্রকৃত করণীয় হচ্ছে, হারামাইনে যতদিন থাকার সুযোগ হয় চেষ্টা করবে যেন মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করা হয়।

 

advertisement