মুহাররম ১৪৩১   ||   জানুয়ারী ২০১০

হিজরতের ইতিকথা

মুহাম্মাদ ত্বহা হুসাইন

আল্লাহ পাক তার ইবাদতের জন্য যেমন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তাদের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা নিজেদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা, শ্রম-সাধনা এ পথে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। দিন-রাত মানুষকে আহ্বান করেছেন আল্লাহর পথে। কিন্তু খুব কম লোকই নবী রাসূলগণের হক্বের দাওয়াতকে কবুল করেছে। অধিকাংশ লোক তাদের দাওয়াতকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং আল্লাহর এই প্রিয় বান্দাদেরকে নানাভাবে অত্যাচার ও নিপীড়ন করেছে। তাঁদের ইবাদতে-দাওয়াতে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। তাদেরকে মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করার, এমনকি হত্যা করার চক্রান্ত করা হয়েছে। কাফিরদের এসব গর্হিত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ফলে একদিকে যেমন তারা আল্লাহর কঠিন আযাবের উপযুক্ত হয়ে যেত অন্যদিকে এতে এই সকল নবীর জীবনে আল্লাহর রাহে কুরবানী, সবর ও মহাব্বতের কঠিন পরীক্ষাও হয়ে যেত। এহেন কঠিন পরিস্থিতিতেই তাঁদের জীবনে নেমে আসত হিজরতের আসমানী আদেশ। মাতৃভূমির আকর্ষণ ত্যাগ করে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার-পরিজনের মায়া-বন্ধন ছিন্ন করে আল্লাহর রাহে বাড়ি-ঘর ত্যাগের এই মহান গুরুত্বপূর্ণ আমল যেমন বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাঁদের জন্য খোদার প্রেমের কঠিন পরীক্ষা তেমনি তার অভ্যন-রে নিহিত থাকে আল্লাহর সাহায্যের সূচনা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) ‘অবশেষে যখন রাসূলগণ নিরাশ হয়ে পড়েন এবং কাফিররা ভাবল যে, তাদেরকে মিথ্যা ধমকই দেওয়া হয়েছিল, তখন তাদের নিকট নেমে এল আমার সাহায্য। সূরা ইউসুফ : ১১৬

যে সকল নবীর জীবনে হিজরতের ঐশী আদেশ এসেছে, তা এসেছে চূড়ান্ত পরীক্ষা ও বিজয়ের সূচনা হিসেবে। উদাহরণস্বরূপ হযরত ইবরাহীম আ.-এর কথা বলা যেতে পারে। নবুওয়ত লাভের পর হতে তিনি নিজ মাতৃভূমির মানুষকে রাত-দিন দাওয়াত দিলেন। কিন্তু তা গ্রহণ করেনি তারা, ত্যাগ করেছে তার সঙ্গ। তাকে অকথ্য নির্যাতন করতেও দ্বিধা করেনি। দ্বিধা করেনি তাঁকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করতে। তখন আল্লাহর পক্ষ হতে সিরিয়ায় হিজরতের নির্দেশ আসে। তাই তিনি ঘোষণা করেন, (তরজমা) ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রবের দিকে হিজরত করছি, তিনি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’। -সূরা আনকাবুত : ২৬

তাঁর এই হিজরতের ফলে সূচিত হয় এক বিপ্লবের। আসে ব্যাপক সফলতা ও আল্লাহর সাহায্য। আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, ‘যখন তিনি (ইবরাহীম (আ.)) মাওলার সন্তুষ্টির জন্য স্বীয় কওমকে ত্যাগ করলেন এবং সে দেশ থেকে হিজরত করলেন, তখন তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা ও নিঃসন্তান। তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। ছিল শুধু ভাতিজা-লুত ইবনে হারূন ইবনে আজর। হিজরতের পর আল্লাহ তাঁকে অনেক নেক সন্তান-সন্ততি দান করলেন। তাঁর বংশে দেওয়া হল নবুওয়ত ও আসমানী কিতাব। এরপর পৃথিবীতে যত নবী তাশরীফ এনেছেন তারা সবাই হযরত ইবরাহীম আ.-এর বংশধর। এরপর যমীনে যত আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে তা নাযিল হয়েছে হযরত ইবরাহীম আ.-এর সন্তানের উপর। এটি আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান ও অপার অনুগ্রহ। কেননা, তিনি তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজ ভিটেমাটি ও স্বজন-পরিজনকে ত্যাগ করেছেন। এমন ভূমির দিকে হিজরত করেছিলেন যেখানে নিরাপদে আল্লাহর ইবাদত করা যায় এবং তাঁর পথে মাখলুককে দাওয়াত দেওয়া যায়। -আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৪৬

এই ধারায় হিজরত করেছেন আল্লাহর বহু নবী-রাসূলগণ। সকলের হিজরতের অক্লান্ত কষ্টের মাঝেই লুকিয়ে ছিল প্রাপ্তির সু-সংবাদ আর বিজয়ের সূচনা। নিহিত ছিল ইবাদাতের স্পৃহা আর ঈমানের তেজসহ আরো অসংখ্য হিকমত। যা আল্লাহই ভালো জানেন। এই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে এলেন রহমতের নবী, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবুওয়ত লাভের পর প্রায় তেরটি বছর-তাঁর নবুওয়তী জীবনের সিংহভাগ-তিনি কাটিয়ে দিলেন মক্কার কাফিরদের মাঝে। জনে-জনে, গোত্রে-গোত্রে, গ্রামে-পল্লীতে, পথে-প্রান্তরে মক্কার মানুষদের তিনি আহ্বান করলেন ইসলামের কালেমার দিকে, তাওহীদের সত্য পথে। কিছু মানুষ তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিল, কিন্তু মক্কার অধিকাংশ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর অনুসারীবৃন্দ এবং ইসলামের দাওয়াতকে প্রতিহত করতে উঠে পড়ে লাগে। নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা দিন দিন চরম থেকে চরমতর হচ্ছিল। কখনো ফুটন্ত গরম পানিতে ঢেলে দিয়ে কখনো বা প্রচণ্ড উত্তপ্ত মরুভূমির পাথর-বালিতে টানা হেঁচড়া করে সাহাবীদের তারা অতিষ্ঠ করে তোলে। এমন বর্বর নির্যাতনের মাঝে কেটে গেল পাঁচটি বছর। ইতিহাসে এমন একজন সাহাবীর নামও পাওয়া যাবে না, যিনি এই সময়ের এত ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে নবীজীকে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কিংবা ছেড়ে দিয়েছেন তাওহীদী বিশ্বাস। বরং তাঁরা ছিলেন ঈমানের উপর অটল-অবিচল। প্রাণ দিয়েছেন, দিতে প্রস্তুত ছিলেন; কিন্তু দেননি ঈমান। কারণ তাঁরা তাঁর হাতে হাত রেখে বাইয়াত হয়েছিলেন, এ পথে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার। নিয়েছিলেন তাঁকে ছেড়ে কোথাও পালিয়ে না যাওয়ার বজ্র কঠিন শপথ। আবার আল্লাহরই নির্দেশে কিংবা নবীজীর আদেশে বাস'ভিটা ত্যাগ করে হিজরতের ওয়াদাও তারা দিয়েছিলেন। জীবন দান, পালিয়ে না যাওয়া ও হিজরতের ওয়াদা সম্বলিত সুনানে তিরমিযীর ১৫৯১ থেকে ১৫৯৬ পর্যন- বাইয়াতের হাদীসগুলো দেখলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, হিজরত নিছক দেশ ত্যাগ নয়, নয় পলায়ন। অন্যথায় পালিয়ে না যাওয়ার ওয়াদার পর আবার হিজরতের জন্য বাইয়াত করার অর্থ কী দাঁড়াতে পারে?

সে যাই হোক, নবুওয়ত প্রাপ্তির প্রায় পাঁচ বছর পর নবীজী ভাবলেন, কাফিরদের নির্যাতন তো সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। সাথে তারা সাহাবীদের ঘরের কোণের ইবাদত-বন্দেগীতেও বাঁধার সৃষ্টি করছে। তখন তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিরাপদভাবে আল্লাহর ইবাদতের নিমিত্তে সাহাবীদের মধ্যে যাদের পক্ষে সম্ভব হয় তাদেরকে আবিসিনিয়ায় হিজরতের পরামর্শ দিলেন। নবীজীর পরামর্শে নবুওয়তের পঞ্চম সনে প্রথমবারের মতো প্রায় পনেরজন মুসলমানের একটি ছোট্ট কাফেলা আবিসিনিয়ার পথে মক্কা থেকে হিজরত করেন। পরবর্তী বছর আরো প্রায় এক’শ জনের একটি বিশাল কাফেলা একই দেশে হিজরত করেছেন। -আল মুনতাজাম ২/৩৭৪-৩৭৭

আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী এসব সৌভাগ্যবান মুসলমানরা সে দেশের তৎকালীন খৃষ্টান রাজা নাজাশী- যিনি পরবর্তীতে ইসলামও গ্রহণ করেছিলেন-এর আশ্রয়ে প্রচুর নিরাপত্তা ও বেশ আতিথেয়তার মাঝে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করতে লাগলেন। কিন্তু নবীজী রয়ে গেলেন মক্কায়। পথহারা মুশরিকদের আল্লাহর পথে আনতে প্রাণান-কর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে মক্কার কাফিররা তাঁকে ঘিরে বাঁধার সৃষ্টি করে চলেছে। নানা নির্যাতনসহ নামাযের সময় সিজদারত নবীজীর কাঁধে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ তুলে দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়ে তারা নবীজী ও সাহাবীদের ইবাদতে বিঘ্নতা সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। তায়েফে প্রিয় নবীজী রক্তাক্ত হয়েছিলেন শুধুমাত্র দাওয়াত ইলাল্লাহর অপরাধেই (?)। তবুও নবীজী তাঁর কাজে নিমগ্ন, আপন মিশন নিয়ে ব্যস্ত।

এভাবে কেটে যাচ্ছে নবুওয়ত প্রাপ্তির প্রায় বারো-তেরটি বছর। যখন কাফিরদের ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়ে গেছে, তখন আল্লাহ তার সাহায্য ও নুসরত, দ্বীনের বিজয়, কালেমার বিশ্বময় প্রসারের জন্য মুমিনদের সর্বশেষ পরীক্ষার আয়োজন করেন। নবীজী আল্লাহর হুকুমে তাঁদের নির্দেশ দিলেন মদীনায় হিজরতের। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, ‘নবীজী মক্কায় অবস্থান করছিলেন, আর কবীলাগুলোকে আহ্বান করছিলেন আল্লাহর পথে। প্রত্যেক হজ্ব মওসুমে সমবেত সব গোত্র-কবীলার কাছে তিনি তাঁকে আশ্রয় দানের জন্য পেশ করতেন। যাতে তিনি সেখানে থেকে আল্লাহর রিসালাতের তাবলীগ করতে পারেন। আর এর প্রতিদানে তারা অর্জন করে নেয় জান্নাত। কিন্তু কোনো গোত্রই তাঁর এই কথায় কর্ণপাত করেনি। অন্যদিকে আল্লাহ তাআলা এই সম্মান আনসারদের ভাগ্যেই রেখেছিলেন। আল্লাহ যখন তাঁর মনোনীত দ্বীনের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা, স্বীয় ওয়াদা পূরণ, তাঁর নবীর সাহায্য, কালেমার বিজয় এবং এই দ্বীনের শত্রুদের প্রতিশোধ নেয়ার ইরাদা করলেন তখন সে দ্বীনকে তিনি মদীনায় নিয়ে যান আনসারদের কাছে। ... এভাবে দ্বীন তাঁদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল। আনসারীদের এমন কোনো ঘর-বাড়ি ছিল না যেখানে নবীজীর আলোচনা হচ্ছিল না। অতপর নবীজী সাহাবীদের আদেশ করলেন মদীনায় হিজরতের। আর তাঁরা দলে দলে মদীনার পথ ধরলেন। আনসারীরা মদীনায় তাঁদের অভ্যর্থনা জানালেন, স্বীয় গৃহে মেহমান বানালেন। তাঁদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন সহযোগিতার হাত। এভাবেই ইসলাম ছড়িয়ে পড়ল পুরো মদীনায়।-যাদুল মাআদ ১/৯৭ সাহাবায়ে কেরামদের দলে দলে এই হিজরত কোনো অদৃশ্য বিষয় ছিল না, ছিল না রাতের আঁধারে পালিয়ে যাওয়া। বরং বাঁধা-বিঘ্নহীনভাবে আপন দ্বীন-ঈমানের সুরক্ষা ও ইবাদতের উপযোগী পরিবেশ প্রাপ্তির জন্য আল্লাহ ও রাসূলের আদেশে, তাঁদেরই সন্তুষ্টির লক্ষ্যে, তাঁদেরই দেখিয়ে দেওয়া দেশের উদ্দেশ্যে আপন দেশকে তারা বিদায় জানাচ্ছিলেন। এ ছিল একটি মহান ইবাদত ও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালনমাত্র। এ জন্য তাঁরা ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে সহায়-সম্পত্তির লোভ, গৃহ-বাড়ির প্রেম, স্বজন-পরিজনের টান আর জন্মভূমির ভালবাসাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে অনন্তর ছুটে চলেছেন এই ইবাদত পালনের পথে। দিন-দুপুরে কিংবা রাতের গভীরে, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে কিংবা সকলের অগোচরে, দলে দলে কিংবা ‌একাকী, পায়ে হেঁটে কিংবা সওয়ারীর পিঠে চড়ে, যিনি যেভাবে পেরেছেন, যখনই পেরেছেন এই ইবাদত পালন করেছেন। পালন করেছেন হিজরতের আদেশ। ছুটে গেছেন মদীনায়।

হযরত আলী রা. থেকে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে আছে, ‘হযরত ওমর রা. যখন হিজরতের ইরাদা করলেন, তখন তিনি সাথে তরবারি বেঁধে নিলেন। কাঁধে নিলেন ধনুক, তূণীর থেকে কিছু তীর বের করে হাতে নিলেন। কটিবদ্ধ করলেন তাঁর লাঠি। অতঃপর কাবার প্রাঙ্গনে এলেন। কাবার চারপাশে ছিল কুরাইশদের অনেক লোক। তিনি বাইতুল্লাহর চারপাশে সাতবার তাওয়াফ করে, মাকামে ইবরাহীমে গিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করলেন। অতঃপর মক্কার কাফিরদের উদ্দেশে চিৎকার করে বললেন, ‘দুর্ভাগ্য তোমাদের! তোমাদের মধ্যে যে তার মায়ের বুক খালি করতে চায়, সন্তানকে বানাতে চায় এতিম কিংবা চায় স্বীয় স্ত্রীকে বিধবা বানাতে, সে এসো! মক্কার ঐ প্রান্তরের পাদদেশে আমার মুখোমুখি হও। কিন্তু কেউই তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করতে এল না। সাহসের সাথে তিনি চললেন মদীনার পাণে। তখন তাঁর সাথে ছিল বিশজনেরও অধিক সাহাবীর একটি কাফেলা।’-উসদুল গাবাহ ৩/৩২৪; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৩/২২৫

এভাবে একাকী বা কাফেলার সাথে মুসলমানরা মক্কা ত্যাগ করছিলেন। মুশরিকদের হাতে আটকে পড়া কিছু অক্ষম মুসলমান ছাড়া পুরো মক্কায় তেমন কোনো সাহাবী নেই। কিন্তু তখনও মক্কায় রয়ে গেলেন আল্লাহর নবী। সাথে রাখলেন, তাঁর ‘জানেছার’ দু’জন সাহাবী হযরত আবু বকর ও আলী রা.কে। সহীহ বুখারীর বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, ‘হযরত আবু বকর রা.ও অন্য সাহাবীদের মতো হিজরতের জন্য প্রস্তুত হলেন। কিন্তু নবীজী তাঁকে বললেন, অপেক্ষা করো, আশা করছি, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেওয়া হবে। ... অতঃপর হযরত আবু বকর রা.ও নবীজীর সঙ্গী হতে রয়ে গেলেন মক্কায়। আর সফরের প্রস্তুতিস্বরূপ প্রায় চার মাস যাবত দুটি উষ্ট্রী বাহনের পরিচর্যা করতে লাগলেন।-সহীহ বুখারী হাদীস : ৩৯০৫

নবীজীর কী পরম দৃঢ়তা! প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি ও শংকা মাথায় নিয়েও নবীজী সাহাবীশূন্য মক্কায় দিব্যি হেঁটে চলেছেন মুশরিকদের নাগালের মধ্যেই। একদিন-দু’দিন নয়, একে একে চারটি মাস। শুধুই আল্লাহর ওহীর অপেক্ষা! এতো ঝুঁকির মাঝে মদীনাবাসীদের বারংবার তাগাদা সত্ত্বেও তিনি স্বেচ্ছায় মক্কা ত্যাগ বা মদীনায় আশ্রয় গ্রহণের জন্য একটি কদমও বাড়াননি। এভাবে কেটে গেল চারটি মাস। এক সময় মুশরিকদের ঔদ্ধত্য চরম আকার ধারণ করল। তারা নবীজীকে নিয়ে রাতে পরামর্শে বসল। কেউ বলল, নবীজীকে বন্দী করতে আর কেউ বলল, তাঁকে চিরতরে দেশান্তর করতে। পরে সম্মত হয়ে তারা পরিকল্পনা আঁটল, আগামীকাল সকালেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যর। নাউযুবিল্লাহ। কিন্তু তাদের সব পরিকল্পনা আল্লাহ নস্যাত করে দিলেন। রাতেই আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে এই চক্রান্তের কথা তার রাসূলকে জানিয়ে দিলেন। আল্লাহ বলেন, (তরজমা) ‘(হে নবী!) আপনি ঐ সময়টি স্মরণ করুন, যখন কাফিররা চক্রান্ত আঁটছিল যে, তারা আপনাকে বন্দী করবে, অথবা হত্যা করবে কিংবা করবে দেশান্তর। তারা তাদের ষড়যন্ত্র করছিল আর আল্লাহ আপন কৌশল করছিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম কৌশলী।-সূরা আনফাল : ৩০

আল্লাহ নবীজীকে নির্দেশ দিলেন, রাতে স্বীয় গৃহে শয়ন না করে তাঁর স্থানে হযরত আলী রা.কে রাখতে। এভাবে নবীজীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হল, জিবরীল আ. হিজরতের নির্দেশ সম্বলিত আসমানী বার্তা নিয়ে এলেন। আয়াত নাযিল হল, (তরজমা) ‘আর (হে নবী) আপনি বলুন, হে আমার রব! আমাকে প্রবেশ করান কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করান কল্যাণের সাথে। আর আমাকে আপনার পক্ষ হতে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।’-সূরা বনী ইসরাইল : ৮০

হিজরতের নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে নিজ বাড়িতে আপন চাচাতো ভাই হযরত আলী রা.কে রেখে নবীজী বের হলেন। হযরত আবু বকর রা.কে সাথে নিয়ে পরদিন বের হলেন মদীনার পথে। রওয়ানা হওয়ার মুহূর্তে বাইতুল্লাহর দিকে করুণ দৃষ্টি ফেলে নবীজী বললেন, ‘হে মক্কা! খোদার কসম, তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় শহর, আমার মাওলার কাছেও বেশি পছন্দের শহর তুমি। যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বের করে না দিতো, আমি কখনোও বের হতাম না।-তিরমিযী, হাদীস : ৩৯২৫ নবীজীকে দেশান্তরে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর একমাত্র আল্লাহর হুকুমে আদিষ্ট হয়েই তিনি মদীনার পথে হিজরত করেন। আর হিজরতের এই ঐশী হুকুম ও মহান ইবাদত পালনের মধ্য দিয়ে পদে পদে নেমে আসে আল্লাহর গায়েবী মদদ। (তরজমা) ‘আর যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তো তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, যখন কাফিররা তাঁকে দেশান্তর করেছিল। তিনি ছিলেন দুজনের দ্বিতীয়জন। যে সময় তাঁরা দু’জন ছিলেন গুহায়। যখন তিনি তাঁর স্বীয় সঙ্গীকে বলছিলেন, তুমি বিষণ্ন হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন। অতঃপর তাঁর উপর স্বীয় সাকীনা নাযিল করলেন এবং শক্তিশালী করলেন এমন সেনাদল দ্বারা, যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। আল্লাহ কাফিরদের কালামকে নিচু করে দিলেন আর আল্লাহর কালেমাই হল সমুচ্চ। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।-সূরা তাওবা : ৪০

নবীজী হিজরত করে মদীনায় এলেন। আর এর ফলে প্রতিফলন হল পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে আসা আখেরী নবীর এই মদীনায় হিজরত করার সু-সংবাদটির। যার অপেক্ষায় ইহুদীরা কয়েক যুগ আগ থেকেই মদীনায় বসতি গড়তে শুরু করেছিল। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, হিজরত ছিল আল্লাহর দেয়া অকাট্য বিধান যা নবীজি ও তাঁর সাহাবীরা পালন করেছিলেন। আর দেশত্যাগের এই বিধান-যা একটি সাময়িক রণকৌশলও বটে- এর পালনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন ও সশস্ত্র যুদ্ধে তাগুতী শক্তির মুকাবিলার শুভ সূচনা হয়, উদিত হয় মক্কা বিজয়সহ ইসলামের বিশ্বজয়ের রঙিন সূর্য।

হিজরতের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের ফলেই হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে যখন মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র পঞ্জিকা প্রণয়নের কথা উঠে আসে তখন তাঁরা সর্বসম্মতভবে হিজরত থেকেই এই পঞ্জিকার গণনা শুরু করেন। যার ফলে চান্দ্রমাসের এই পঞ্জিকাকে বলা হয় ‘হিজরী সন’। (ফাতহুল বারী ৭/৩১৪-৩১৬)
বিশ্ব ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা হল এই হিজরতের ঘটনা। ‘যোসেফ হেল’ যথার্থই বলেছেন, ‘Hijrat is the Greatest Turning Point in the History of Islam’ অর্থাৎ হিজরত ইসলামের মোড় পরিবর্তনকারী মহান ঘটনা।

‘হিজরত’ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হিজরত শব্দটির একটি সাধারণ অর্থ এবং একটি পারিভাষিক অর্থ রয়েছে। হিজরতের সাধারণ অর্থ আল্লাহর সন'ষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু, স্থান বা ব্যক্তিকে পরিত্যাগ করা, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এই অর্থটি ব্যাপক। এই ব্যাপক অর্থেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (তরজমা) ‘প্রকৃত মুহাজির সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর বারণকৃত বস্তুকে পরিত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০) অপর একটি হাদীসে এসেছে, নবীজীকে প্রশ্ন করা হল, কোন হিজরত উত্তম? তখন তিনি বললেন, তোমার রবের অপছন্দীয় বস্তু ছেড়ে দেয়া। মুসনাদে আহমদ ২/১৬০ হাদীস : ৬৪৮৭

জ্ঞানার্জন, দাওয়াত-তাবলীগ ও জিহাদের জন্য দেশ থেকে সফর করাও হিজরতের এই ব্যাপক ও সাধারণ অর্থের অন্তর্ভুক্ত। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, নবীজীকে প্রশ্ন করা হল, হিজরত কী? তিনি বললেন, পাপ ছেড়ে দেওয়া। প্রশ্নকারী বললেন, কোন হিজরত উত্তম? নবীজী বললেন, জিহাদ ...। -মুসনাদে আহমদ ৪/১১৪ হাদীস ১৭০২৭ উল্লেখ্য যে, এই ব্যাপক অর্থের হিজরতের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই; বরং তা তো একজন মুমিন বান্দার সার্বক্ষণিক আমল। কিন্তু হিজরত যা শরীয়তের একটি ‘বিশেষ পরিভাষা’ তার অর্থ হল, ‘স্বীয় দ্বীন ও ঈমানের সুরক্ষা ও নিরাপদভাবে তার ইবাদতে মগ্ন হওয়ার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দারুল হারব বা দারুল খাওফ অর্থাৎ কুফরী ভূখণ্ড বা অনিরাপদ ভূখণ্ড ত্যাগ করে দারুল ইসলাম বা দারুল আমন অর্থাৎ ইসলামী ভূখণ্ড বা নিরাপদ ভূখণ্ডে গমন করা।

হিজরতে শরয়ী’র আসল অর্থ তাই। এই অর্থেই সাহাবীদের মধ্যে হিজরতকারী জামাতকে ‘মুহাজির’ উপাধি দেওয়া হয়েছে। আর তাদের সাহায্যকারীদের বলা হয়েছে আনসার। কুরআন মজীদের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাহাবীদের এই দুই জামাতকে এই অর্থেই ‘মুহাজির’ ও ‘আনসার’ উপাধি দিয়ে বারবার বিভিন্ন প্রশংসা ও ফযীলতের কথা উল্লেখ করেছেন। এই অর্থের শরয়ী হিজরত সব সময়ের আমল নয়। বরং তার সময় ও ক্ষেত্র সবই নির্ধারিত। শরীয়তে হিজরতের জন্য সুনির্ধারিত শর্তাদি ও বিধানের আলোকে যদি কোথাও হিজরতের পরিবেশ সৃষ্টি হয় তবে তা সাধারণ অবস্থায় সুন্নত। যেমন সাহাবায়ে কেরামের আবিসিনিয়ায় হিজরত, নবীজীর মদীনায় আগমনের পূর্বে সাহাবায়ে কেরামের মদীনায় হিজরত। এই হিজরতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে জান্নাত ও মাগফিরাতসহ অসংখ্য পুরস্কার। যেমন আল্লাহ বলেন, (তরজমা) ‘সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে, জিহাদ করেছে এবং শহীদ হয়েছে। আমি অবশ্যই তাদের পাপসমূহ মাফ করে দেব এবং তাদেরকে এমন বাগানে প্রবেশ করাব, যার তলদেশে বইবে নহর। এই প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ হতে। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। (সূরা আল ইমরান ১৯৫) হাদীসে এসেছে, ‘হিজরত তার পূর্ববর্তী সকল পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়।’ -সহীহ মুসলিম হাদীস : ১২১

আবার ক্ষেত্র বিশেষে এই হিজরত ‘ফরযে আইন’ও হয়ে দাঁড়ায়। যেমন নবীজীর হিজরতের পর মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মক্কার সকল মুসলমানের জন্য মদীনায় হিজরত করা ফরয হয়ে যায়। সামর্থবান ও সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যারা এই হিজরত থেকে বিরত থেকেছে তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে প্রচণ্ড ‘ওয়ীদ’। আল্লাহা তাআলা বলেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই ফেরেশতাগণ যখন এমন লোকদের ‘রুহ’ কবজ করবে (যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও) নিজেদেরকে পাপী করে রেখেছিল, তখন ফেরেশতারা তাদের বলবেন, তোমরা কোন কর্মে ছিলে? তারা বলবে দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতাগণ বলবেন, খোদার যমীন কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা সেখানে হিজরত করতে? তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম আর তা নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান।’ (সূরা নিসা : ৯৭) মূলকথা হল,কুরআন ও হাদীসে হিজরতের ব্যাপারে যে বড় বড় ফযীলতের কথা কথা বলা হয়েছে, মুহাজির ও আনসারদের যে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, এখানে মুহাজির ও হিজরত থেকে এই শরয়ী অর্থই উদ্দেশ্য। ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হিজরতের প্রথমোক্ত সাধারণ অর্থ নয়।

শরয়ী নুসুস ও শরয়ী পরিভাষাসমূহের উপর নেহায়েত জুলুম করা হবে, যদি এই ব্যাপক অর্থের আশ্রয় নিয়ে কিংবা জ্ঞানার্জন ও দাওয়াত-তাবলীগের জন্য ঘর-বাড়ি ত্যাগের কথা বলে হিজরত ও মুহাজিরদের বিশেষ ফাযাইলগুলোকে দাওয়াত, তাযকিয়া ও ইলমে দ্বীনের অন্বেষণের সফরের উপর প্রয়োগ করা হয়। দাওয়াত-তাবলীগ, তাযকিয়া ও ইলমে দ্বীনের জন্য দূর দূরান্তের সফর নিঃসন্দেহে স্ব-স্ব স্থানে গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। কিন্তু এর কোনটাই কোনভাবেই এমন নয় যে, এর উপর হিজরত ও মুহাজিরের জন্য নির্ধারিত ফযীলত আরোপ করা যায়। এর সংশোধন খুবই দরকার। এই বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করাও নেহায়েত জরুরী। কেননা, আজকাল জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে বহু ইসলামী পরিভাষার মধ্যে পূর্ণ কিংবা আংশিক তাহরীফের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে, শরয়ী অর্থের এই হিজরতের সওয়াব এবং ফযীলতও তখনই পাওয়া যাবে যখন হবে একমাত্র আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্যেই তা নিবেদিত। যে কোন পার্থিব লাভালাভ থেকে তা হতে হবে সম্পূর্ণ মুক্ত। ‘ইন্নামাল আ’মালু বিন্নিয়াত’ এর প্রসিদ্ধ হাদীসটিতে হিজরতের উদাহরণ দিয়ে একথাটিই বুঝানো হয়েছে। এই উদ্দেশ্য তখনই বাহ্যিকভাবে পরিস্ফুট হয়ে উঠবে, যখন হিজরতকারী ব্যক্তি পাপমুক্ত জীবন ধারণে সচেষ্ট হবে। আল্লাহ ও রাসূলের নিষিদ্ধ সকল বিষয় থেকে দূরে থাকবে, কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হল, হত্যা, খুন, রাহাজানি ও নৈরাজ্যসহ সবধরনের গর্হিত অপরাধে নেতৃত্ব দেওয়া একটি দল রয়েছে পাকিস্থানের করাচিতে। তারা নিজেদের দলের নাম দিয়েছে ‘মুহাজির কওমী মুভমেন্ট’। তাদের দাবী হল তারাই হিন্দুস্থান থেকে করাচিতে হিজরত করা মুসলিম। অতএব করাচির কর্তৃত্ব ও সকল সুযোগ-সুবিধা তাদেরই হওয়া উচিত। এই কথিত ‘মুহাজির’ গোষ্ঠীর বহু সদস্যই এমন, যারা নিরেট সন্ত্রাসী। আবার এদের অনেকে এমনও রয়েছে, যাদের বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠীর কেউই হিন্দুস্থান থেকে হিজরত করেছে বলে খোদ তাদেরও জানা নেই। হিজরতের পরিভাষার এ আরেক বিকৃতি সাধন। কোথায় দ্বীন-ঈমানের সংরক্ষণ ও ইবাদতের নিরাপদ পরিবেশ পাওয়ার হিজরত আর কোথায় তারা? ভিন্ন দেশের এই গ্রুপটিকে আমরা উপরে উল্লেখিত প্রকৃত মুসলিম ও প্রকৃত মুহাজিরের পরিচয় সম্বলিত হাদীসটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুধু বলতে চাই, আপনারা যদি ‘মুহাজির’ হয়েই থাকেন, তবে মনে রাখুন, যেমনিভাবে সত্যিকারের মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে তেমনি প্রকৃত ‘মুহাজির’ সেই হবে যে, শরীয়তে নিষিদ্ধ হারাম ও অবৈধ কর্মকাণ্ড সমূহ সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে।

 

advertisement