রজব ১৪৩৪   ||   মে ২০১৩

বি ভ্রা ন্তি :সুশীলের নিস্ফল পেছানো-তত্ত্ব

ওয়ারিস রব্বানী

এদেশে সুশীল তাত্ত্বিকের সংখ্যা কত-প্রশ্নটি সামনে এলে থমকে যেতে হয়। সহসাই উত্তর দেওয়া যায় না। এর কারণটি হচ্ছে, সংখ্যায় এরা হাজারের ঘর ছুঁতে না পারলেও গণমাধ্যমে এদের দাপটের মাত্রাটা সাংঘাতিক। কোটি মানুষের দাবি ও বেদনার কথা যেখানে ছোট্ট ও চিকন পরিসরে আসে সেখানে এদের অবস্থান মেদভুড়ির বিজ্ঞাপনের মতো বিশাল আকারে তুলে ধরা হয়। এদের কথার সুর ও ধ্বনিতে বাজার দখলের বিশ্রী কসরত ফুটে ওঠে। কৌতুক আর ধিক্কার উদ্রেক করলেও সুশীলদের কর্কশ স্বরে বাতাস ভারী হয়ে যায় তখন।

এরকম ঘটনার সংখ্যা এখন বহু। একটির কথা বলি। বহুল আলোচিত ড. জাফর ইকবাল গত ২০ এপ্রিল একটি সম্মেলনে বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের প্রতিটি দফা দেশকে ১০০ বছর পিছিয়ে দেবে। আর তাদের ১৩ দফা দাবি মানলে বাংলাদেশ ১৩শ বছর পিছিয়ে যাবে। কয়েক ডজন সুশীলের ওই সম্মেলনের নাম দেওয়া হয়েছিল নাগরিক সমাজের সম্মেলন। স্লোগান ছিল- রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশে। অপরাপর বক্তারাও বলেছেন, ১৩ দফা দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যাবে, অন্ধকার যুগ ফিরিয়ে আনবে ইত্যাদি। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে ১৩শ বছর পিছিয়ে যাওয়ার তত্ত্বটি প্রথম হেঁকেছেন তিনিই। একদিন পর একই কথা বলেছেন ঢাকা থেকে নৌকামার্কা নিয়ে নির্বাচন করা তোপখানা রোডের এক বামপন্থী এমপি। দেশকে ১৩শ বছর পিছিয়ে দেওয়ার তত্ত্ব দিয়ে এরা বেশ তৃপ্তি পাচ্ছেন আবার দেশবাসীকে ভয় দেখানোর কাজটাও করছেন। কিন্তু তারা কি আসলে কথাটা বুঝে বলছেন নাকি না বুঝেই বলে চলেছেন-এতেই এখন নতুন রহস্য তৈরি হয়েছে। দেশ ১৩শ বছর পেছানোর তত্ত্ব দিয়ে তারা কি হেফাজতের প্রশংসা করছেন নাকি নিন্দা করছেন-সেটাই এখন তালগোল পাকিয়ে তুলছে।

 

সংবিধানে আল্লাহ তাআলার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুণঃস্থাপন, ইসলাম অবমাননা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির জন্য মৃত্যুদন্ডের আইন প্রণয়ন এবং নারী সমাজের শালীন ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করাই হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার মূলকথা। এ দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশ কিভাবে পিছিয়ে যেতে পারে এটাতো এক দুর্বোধ্য প্রশ্ন। ধর্মদ্রোহী শয়তানীর গতিরোধ করার উদ্যোগ নিলে তাদের গায়ে কেন ফোস্কা পড়ে যায়- এটা বোঝাও আরেক মুশকিল বিষয়। তাহলে কি তারা ইসলাম ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কটূক্তি ও বিষোদগারের চোরাপথ সবসময় খোলা রাখতে চান? নারীর অসম্মান-অমর্যাদা আর অবমাননার হাট জমজমাট রাখার আগ্রহে কি তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে? এইসব সুশীলের দিকে এ প্রশ্নগুলোই এখন চারদিক থেকে উঠে আসছে।

 

তারা দেশকে ১৩শ বছর পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলে আতংক তৈরির চেষ্টা করছেন। যদি পিছিয়ে গিয়ে দেশ ১৩শ বছর আগের শোষণমুখর আর্য আর রোম-পারস্যের পচা সভ্যতার সমাজে গিয়ে ডুবে যায় তাহলে দেশবাসীর অবশ্যই আতকিংত হওয়া উচিত। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো তো সে রকম নয়। সুতরাং তাদের তো সেদিকে যাওয়ার কথা নয়। আর যদি পিছাতে গিয়ে দেশ ১৩শ বছর আগের ইসলামের ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ের স্পর্শ পায় তাহলে তো সেটা আনন্দেরই কথা। ১৩ শ বছর আগের যুগ মানেই তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনের সুসংবাদপ্রাপ্ত সোনালী যুগ। সাহাবীযুগের পরের যুগ। সেটা তো সভ্যতা, নৈতিকতা ও মানবিক উৎকর্ষের বরেণ্য যুগ। তো ১৩ দফা মানলে দেশ যদি সেরকম একটা আদর্শদীপ্ত, নৈতিকতায় উজ্জ্বল সময়কে আবার ফিরে পায়, তাতে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের খুশি হওয়ারই কথা। এসব সুশীল কথাটা আতংক সৃষ্টির জন্য বললেও গণমানুষের এটাকে আনন্দের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে, তত্ত্ব দিয়ে অসৎ গণমাধ্যমের কাঁধে সওয়ার হতে পারলেও এসব বিকৃত চিন্তার সুশীলরা এদেশের মানুষের বুকের ভেতরে জায়গা পাওয়ার মতো কোনো শক্তি রাখেন না। সুতরাং সংখ্যায় তারা যা-ই হোন, তাদের শত বছরের অন্ধকার তত্ত্ব বিশেষ কোনো সুফল প্রসব করবে বলে মনে হয় না। ষ

 

 

advertisement