যিলক্বদ ১৪৩০   ||   নভেম্বর ২০০৯

সৌদী আরবে সহশিক্ষাঃ এ পথ তুর্কিস্থানের!

সৌদী আরবের বেদুঈন রাজাকে ওই কথাটাই বলতে হচ্ছে যা তার এক জ্ঞাতি ভাইকে একজন কবি আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘আমার আশঙ্কা এই যে, তুমি কা’বা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারবে না। কেননা, হে বেদুঈন! যে পথ তুমি ধরেছ তা তুর্কিস্থানের পথ।’

বাদশাহ আবদুল্লাহ চাইছেন তার দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শিক্ষিত করে তুলতে। এজন্য তিনি ‘সহশিক্ষা’র পথ ধরেছেন আর তা এতই দৃঢ়তার সঙ্গে যে, এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার কারণে ‘হাইআতু কিবারিল উলামা’র সদস্য শায়খ সা’দকে বরখাস্তও করেছেন!

সৌদী নেতৃবৃন্দের বোঝা উচিত যে, পৃথিবীর ইতিহাসে এই ভূখণ্ডের কোনো স্থান ছিল না। মূর্তিপূজা, কন্যাসন্তানকে জীবন- প্রোথিত করা আর উটের পানি খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে বংশ-পরম্পরায় গোত্রীয় বিবাদই ছিল এর ঐতিহ্য।

জাযীরাতুল আরব শুধু এবং শুধু ইসলামের মাধ্যমেই ইতিহাসের আলোকিত অঙ্গনে প্রবেশ করেছে। জাযীরাতুল আরব থেকে তাওহীদে খালিছ, আখিরাতের জবাবদিহিতা, আদর্শ জীবনব্যবস্থা এবং ন্যায় ও মানবতার যে পয়গাম পৃথিবীর সকল প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল তা ইসলাম ও ইসলামের নবীরই অবদান।

তদ্রূপ পৃথিবীর সকল প্রানে-র অগণিত মুমিন-মুসলমানের যে অপরিমেয় ভক্তি ও ভালবাসায় এই ভূখণ্ড সিক্ত তা-ও ইসলাম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণে। অতএব তকদীর যাদেরকে এই ভূখণ্ডের রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য নির্বাচন করেছে তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ইসলামই তাদের সৌভাগ্যের তারকা। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা যদি তা অনুধাবনে সক্ষম না হন তবে অচিরেই তাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।

এটা কি সত্য নয় যে, মুসলিম দেশগুলোতে এখনও যে নৈতিক সুরক্ষা ও পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা অবশিষ্ট রয়েছে তা ইসলামী অনুশাসনেরই সুফল? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্বর্গ ইউরোপ-আমেরিকা যখন চরম নৈতিক অবক্ষয়, বিভিন্ন প্রাণঘাতী ব্যধি এবং পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যায় পর্যুদ তখনও মুসলিম জাহানে একটি স্বাভাবিক সুরক্ষা বিরাজমান। পাশ্চাত্যের ইসলাম-বিরোধী গবেষকরাও এখন বলছেন যে, নৈতিক অনুশাসন মেনে চলা ছাড়া এই দুর্গতি থেকে উত্তরণ অসম্ভব!

অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর তুলনায় সৌদী আরবে এখনও পর্যন- হত্যা-ধর্ষণ-চুরি ইত্যাদি অপরাধের হার অনেক কম। কেননা, এসব বিষয়ে এখনও কিছু কিছু শরীয়া আইন সেখানে কার্যকর।

একথা বলাই বাহুল্য যে, একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য যেমন তার ত্রুটিগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা জরুরি তেমনি তার ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কেও সচেতন থাকা অপরিহার্য। সৌদী-বাদশা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাদানের জন্য ৭০০ কোটি ডলার ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন-এজন্য তাকে অভিনন্দন, কিন্তু তাতে সহশিক্ষা অনুমোদন করে তিনি কি প্রাপ্তি আশা করছেন? এই ব্যবস্থার দ্বারা কি ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান-শিক্ষা ত্বরান্বিত হবে?

এ প্রসঙ্গে এই নব্য আধুনিক রাজার চেয়ে ওই প্রাচীনপন্থী ‘হুজুর’কেই বিচক্ষণ বলতে হবে, যাকে তিনি সমালোচনার দায়ে বরখাস- করেছেন। সৌদী আরবের আল মাজদ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শায়খ সা’দ পরিষ্কার বলেছেন, ‘নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক গুনাহ এবং এর দ্বারা তাদের মন-মাস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস- হয়। এই ব্যবস্থার দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মূল লক্ষ্য-পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হবে।’

সৌদী নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আহ্বান, কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনার প্রতি আস্থা রাখতে না পারলে আলোচিত বিষয়ে তাঁরা পাশ্চাত্যের ন্যায়নিষ্ঠ গবেষকদের গবেষণা ও জরিপের ফলাফল জানার চেষ্টা করতে পারেন। এতে সহশিক্ষার সুফল ও কুফল সম্পর্কে তাদের ধারণায় পরিবর্তন আসতে পারে।

 

advertisement