সফর ১৪৩৪   ||   জানুয়ারি ২০১৩

মিন্ আদাবিল্ ইসলাম

শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

হযরত আবু মাসউদ উকবাহ ইবনে আমের আল বদরী আল আনসারী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গোত্রের ইমামতি করবে ঐ ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াতে বেশি পারদর্শী। তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে সবাই সমমানের হলে যে সুন্নাহর বিষয়ে অধিক জ্ঞানী। সুন্নাহর মধ্যেও সবাই সমপর্যায়ের হলে যে সবার আগে হিজরত করেছেন। হিজরতের ক্ষেত্রেও সবাই সমান হলে তাদের মাঝে যে সর্বাধিক বয়স্ক।-সহীহ মুসলিম

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে যারা বুদ্ধিমান ও প্রজ্ঞাবান তারা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে।* এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যরা দাঁড়াবে।-সহীহ মুসলি

* টীকা : এই হাদীসের শিক্ষা এই যে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পর্যায় অনুযায়ী লোকেরা ইমামের নিকটে দাঁড়াবে। কেননা এখানে মর্যাদার প্রসঙ্গ যেমন আছে তেমনি ইমামের ভুল হয়ে গেলে শুধরে দেওয়ার বিষয়ও আছে। আর এটি শুধু নামাযের বিশেষ বিধান নয়। বরং যে কোনো মজলিস, যেমন ইলমের মজলিস, কাযা ও বিচারের মজলিস, যিকরের মজলিস, দরসদানের মজলিস, ফতোয়ার মজলিস, হাদীস শোনা ও শোনানোর মজলিস ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে ইমাম বা মজলিস-প্রধানের নিকটে স্থান দেওয়া সুন্নাহ। এ সকল মজলিসে মানুষের স্থান হবে তাদের ইলম, দ্বীনদারী, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা, শরাফত, বয়স ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী।

এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো একটি অপরটিকে সমর্থন করে।-দালীলুল ফালিহীন, পৃ. ১৯

হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন দুই শহীদকে একসাথে কবরে রাখছিলেন। রাখার আগে জিজ্ঞাসা করছিলেন, এদের মধ্যে কুরআন কে বেশি গ্রহণ করেছিলেন (হিফয করেছিলেন)? যার দিকে ইঙ্গিত করা হতো তাকে তিনি কবরে আগে রাখতেন।-সহীহ বুখারী

অর্থাৎ তার সম্মানার্থে অথবা কুরআন সীনায় ধারণের ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রগামিতার মর্যাদার কারণে কিবলার দিকে তাকে আগে রাখতেন যদিও অন্য ব্যক্তি তাঁর চেয়ে বয়সে বড়।

হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, স্বপ্নে দেখলাম আমি মেসওয়াক করছি। এমন সময় দু’জন লোক এল। একজন বড় ও অপরজন ছোট ছিল। আমি ছোটজনকে মেসওয়াক দিতে উদ্যত হলে আমাকে বলা হল, বড়কে দিন। আমি তখন মেসওয়াকটি বড়জনকে দিলাম।-সহীহ মুসলিম

ইমাম ইবনে বাত্তাল রাহ. বলেন, এই হাদীসে বড়কে মেসওয়াক দেওয়ার বিষয়টি পাওয়া গেল। এর সাথে খাদ্য, পানীয়, চলাফেরা, কথাবার্তা ইত্যাদি বিষয়েও অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গ যুক্ত হবে।

হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পক্ককেশ মুসলিমকে সম্মান করা, কুরআনের বাহককে সম্মান করা, যিনি কুরআনের বিষয়ে সীমা লঙ্ঘনকারীও নন এবং কুরআনকে ত্যাগকারীও নন এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাহকে সম্মান করা আল্লাহ তাআলাকে সম্মান করার শামিল।-আবু দাউদ (হাদীসটি হাসান)

এই হাদীসে দুটো শব্দ আছে ‘গালী’ ও ‘জাফী’। গালী শব্দটির তরজমা করা হয়েছে সীমালঙ্ঘনকারী। অর্থাৎ কুরআন মোতাবেক আমলের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে এবং কুরআনের ভাব ও মর্মের ক্ষেত্রে অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধকতা অন্বেষণ করে।

হযরত মায়মূন ইবনে আবু শাবীব রাহ. থেকে বর্ণিত, একবার আয়েশা রা.-এর পাশ দিয়ে একজন ভিক্ষুক অতিক্রম করল। তিনি তাকে এক টুকরা রুটি দিলেন। এরপর ভালো বেশভূষার এক ব্যক্তি অতিক্রম করলে তিনি তাকে বসিয়ে খাবার দিলেন। সে খেয়ে চলে গেল। তাঁকে এ পার্থক্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সকল মানুষকে তার অবস্থানে রাখ।-আবু দাউদ, হাকিম তাঁর ‘মারিফাতু উলূমিল হাদীস’ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, এটি সহীহ হাদীস।

হযরত আবু সাঈদ সামুরাহ বিন জুনদুব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমি ছিলাম বালক এবং আমি তাঁর নিকট থেকে যা শুনতাম তা মুখস্থ করে ফেলতাম। তবে শুধু এ কারণে বলা থেকে নিবৃত্ত থাকতাম যে, আমার চেয়ে বয়সে বড়রা উপস্থিত ছিলেন।

           (চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

 

advertisement