মুহাররম-১৪৩৪   ||   ডিসেম্বর-২০১২

দৃষ্টি আকর্ষণ

অনেক বন্ধু মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার বর্তমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ফোনে জানতে চান, সাক্ষাতে জিজ্ঞাসা করেন, অনেক সুহৃদের দীর্ঘদিনের অনুরোধ, আলকাউসারে যেন এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখি। কিন্তু তাঁদের অনুরোধ পূরণে আমার দ্বিধা কখনো কাটেনি।

এই কদিন আগে মাওলানা হাবীবুর রহমান খান ছাহেব সরাসরি হুকুম জারি করলেন যে, আর কিছু না হোক অন্তত মসজিদের বিষয়ে তো অবশ্যই লেখা উচিত।

মসজিদ মুসলিম-সমাজের ঈমানের কেন্দ্র। আর দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের জন্য তো মসজিদ প্রাণ ও আত্মার মতো। একারণে প্রথম মনোযোগ মসজিদের দিকেই দেওয়া উচিত। আল্লাহর শোকর মারকাযুদ দাওয়াহ হযরতপুর প্রাঙ্গণেও সবার আগে মসজিদ বানানো হয়েছে, যদিও তা একটি ছোট ও নিতান্তই সাদাসিধা ঘর।

এখন প্রশস্ত ও পাকা মসজিদের প্রয়োজন, যাতে ঈমান ও কুরআন, তালীম ও তরবিয়ত এবং দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ ব্যাপকভাবে করা যায়। মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজন বর্তমান মসজিদ-ঘর সংলগ্ন জমিটির, যার আয়তন আনুমানিক ৬০ শতাংশ এবং রেজিষ্ট্রি ও ভরাটের খরচসহ মূল্য প্রায় ৯১ লক্ষ টাকা। এরপর ইমারতের প্রসঙ্গ। আপাতত ১৫০ী ১২০ চার তলা মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা। প্রতি তলায় ১৮০০ বর্গফুট আনুমানিক ১৯২০ মুসল্লা ফাউন্ডেশনসহ প্রথম তলার যা সম্ভাব্য খরচ তা মুসল্লা (এক মুসল্লীর নামাজের জায়গা) প্রতি ৪৩৮০০ টাকা হয়।

যদি কোনো আল্লাহর বান্দা এক মুসল্লার খরচ নিজে বা কয়েকজন মিলে পরিশোধ করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ নিম্মোক্ত হাদীসের প্রতিশ্রুত ছওয়াব হাসিল করতে পারবেন।

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার জন্য কোনো মসজিদ বানায়, যদিও তা কাতাত পাখির ডিম দেওয়ার পরিমাণ জায়গাই হোক না কেন, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন।’’-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২১৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১৬১০

পাখির ডিম দেওয়ার জায়গা পরিমাণ তো আর কোনো মসজিদ হতে পারে না, তবে এর উদ্দেশ্য কী? এর একটি ব্যাখ্যা এটাও যে, যদি কেউ একাকী পুরো মসজিদ বানাতে না পারে, বরং অন্যদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে আর তার সহযোগিতার পরিমাণ এত অল্প হয় যে, তা দ্বারা পাখির ডিম দেওয়ার জায়গা পরিমাণই তৈরি হতে পারে; তবুও আল্লাহ তাআলার দরবারে এ-ই ধর্তব্য হবে যে, সে যেন একাই পুরো মসজিদ তৈরি করেছে। আল্লাহ তাআলা বিনিময়স্বরূপ বেহেশতে বেহেশতের শান মোতাবেক তার জন্য ঘর বানাবেন।

এতো হল সাধারণ মসজিদের কথা; আর কোনো দ্বীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মসজিদ বানানোর গুরুত্ব ও ফযীলত আরো অনেক বেশি। কেননা দ্বীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বদৌলতেই মসজিদের সমূহ উদ্দেশ্য যথাযথ আদায় হতে পারে। আর এরই মাধ্যমে কোনো মসজিদ মসজিদে নববীর নমুনা হতে পারে।

মসজিদের পর মসজিদের সাথেই দাওয়াতী কাজের জন্য ভবনের চিন্তা আছে। দারুত তাসনীফ ও কুতুবখানাসহ অন্যান্য ভবনের বিষয় তো আছেই।

মারকাযুদ দাওয়াহর মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষক, গবেষক ও কর্মচারীদের জন্য বাসস্থানের বিষয়টি অন্যতম শীর্ষ প্রয়োজনের শামিল, যদিও এই ধারা আমাদের দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি।

এদিকে মারকাযের প্রধান দফতর ৩০/১২ পল্লবীর ভবনটিও জীর্ণ ও পুরানো হয়ে গিয়েছে। এতে ফাউন্ডেশনও নেই। এজন্য তা পুণ:নির্মাণ উপস্থিত প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। এখানে বারো তলা ভবনের কথা ভাবা হচ্ছে।

আমাদের কোনো কোনো বন্ধু মারকাযের অবস্থা জানতে চান, কিন্তু পরিকল্পনা বলতে আরম্ভ করা মাত্রই ভয় পেয়ে যান। আমাদের বোঝা উচিৎ, কাজ আল্লাহই করেন। কার মাধ্যমে কীভাবে সম্পন্ন করবেন তা তিনিই জানেন। আমরা শুধু দুআ করতে পারি এবং যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সেটা ভাগ্য মনে করে আখিরাতের ভান্ডারে সঞ্চয়ের নিয়তে পেশ করতে পারি। পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। করার মালিক আল্লাহ তাআলা। তাঁরই উপর ভরসা করা উচিৎ।

এক মারকাযুদ দাওয়াহ কেন, গোটা দুনিয়া এবং আমাদের এই দেশেও কত দ্বীনী প্রতিষ্ঠান আছে, হোক তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং আমাদের দুর্বলতার কারণে কাঙ্খিত মান থেকেও দূরে, কিন্তু

চিন্তা করে দেখুন, এটুকুও কি আমাদের সাহস ও সক্ষমতার চেয়ে বেশি নয়? আল্লাহ তাআলার নুসরত না হলে এবং সেই নুসরত সর্বদা জারি না থাকলে না এসকল প্রতিষ্ঠান জন্ম লাভ করত আর না এখনো বেঁচে থাকত।

তো কথা শুধু এটুকুই যে, আমাদের দুআ, হিম্মত ও আমলে নূর ও জোর পয়দা হওয়া চাই, যাতে আমরা আল্লাহর খাযানা থেকে নিতে পারি। হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নূরী রাহ.-এর ছাত্রদের কাছে শুনেছি, তাঁকে যখন কেউ জিজ্ঞাসা করত, আপনার ‘সোর্স অব ইনকাম’ কী তিনি উত্তরে বলতেন, আমরা ‘ব্যাংক অব রহমান’ থেকে নিয়ে থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও ঐ হিম্মত ও তাওয়াক্কুল দান করুন। আমীন।

এক দুই মাস আগে আমার ওয়ালিদ ছাহেব (দামাত বারাকাতুহুম ওয়া মুদ্দাযিল্লুহুম) বললেন যে, মাদরাসায়ে আরাবিয়া খেড়িহরে (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) তিনি ব্যাপক নির্মাণ কাজ আরম্ভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! বার্ধক্য, দুর্বলতা ও অসুস্থতার মাঝেও এত হিম্মত!

মারকাযুদ দাওয়াহ, হযরতপুর প্রাঙ্গণের অনতিদূরে মাদরাসাতুল মাদীনার মসজিদও নির্মানাধীন রয়েছে। ‘যাঁর সাথে আল্লাহ থাকেন তিনি  নিঃসঙ্গ অবস্থায়ও কাজ করতে পারেন’-এরই দৃষ্টান্ত সেখানে দেখতে পাচ্ছি।

কিছুদিন আগে বেলা এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে ০১৭১৬৬৫২৬৪৬ নম্বর থেকে ফোন এল। সালামের পর পরিচয় দিলে বোঝা গেল, আশরাফুল উলূম মাদরাসার (মঙ্গলবাড়িয়া বাজার, কুষ্টিয়া) মুহতামিম ছাহেব মাওলানা আবু দাউদের ফোন। চিনতে অসুবিধা হল না। ইতিপূর্বে ঐ মাদরাসায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি জানালেন, ‘মাদরাসা-সংলগ্ন একটি জমি বায়না হয়েছে। আগে থেকেই জমিটির খুব প্রয়োজন ছিল। এখন বিভিন্ন কারণে তা নেওয়া আরো জরুরি হয়ে পড়েছে। বায়নাতেই ত্রিশ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে, এতেই আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। পূর্ণ মূল্য কোটি টাকার উপরে। আপনি দুআ করুন এবং আহলে খায়রের ( নেক কাজে সম্পদ ব্যয়কারীদের) দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।’ তার হয়তো জানা নেই, আহলে খায়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করার যোগ্যতা আমার নেই। তবে এই প্রতিষ্ঠান এবং পৃথিবীর সকল দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজেও দুাআ করছি এবং পাঠকবৃন্দকেও অনুরোধ করছি, সালাতুল হাজত পড়ে বিশেষভাবে ঐ মাদরাসার জন্য এবং সাধারণভাবে সকল দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের জন্য দুআ করুন, আল্লাহ যেন সকল প্রয়োজন তাঁর খাযানা থেকে পুরা করেন এবং সকল প্রতিষ্ঠানকে তাঁর সন্তুষ্টির সাথে দ্বীনের নুসরতের কাজ করে যাওয়ার তাওফীক দান করেন। আমীন, ইয়া রাববাল আলামীন। ষ

বান্দা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

খাদিম, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া

১৩/১/১৪৩৪ হি.

 

 

advertisement