যিলহজ্ব ১৪৩৩   ||   নভেম্বর ২০১২

ই তি বা চ ক : মেধা প্রয়োগের সুন্দর নজির

খসরূ খান

একটি ইতিবাচক ঘটনা। কৃষিপ্রধান দেশের জন্য অবশ্যই সুখবর। পাটসহ ৫০০ টি উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জিন বা জীবনরহস্যের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে পাটের কান্ডপচা রোগ সৃষ্টি করে থাকে যে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস, তাতে পাটের উৎপাদন ৩০ থেকে ৭০ ভাগ কমে যায়। এই ছত্রাকের মূলে কী কী উপাদন রয়েছে তা-ই এখন জানতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশের জিনবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার একদল সহকারীর অব্যাহত গবেষণার ফলাফল স্বরূপ এই জানা বা সন্ধান লাভের ঘটনাটি ঘটেছে।

এখন এই ছত্রাক নিধন কিংবা উৎপাদন হ্রাসকারী ক্ষতিকর ছত্রাক থেকে পাটের সুস্থতা ধরে রাখার উপায় উদ্ভাবনের পেছনে তারা সময় ও মেধা ব্যয় করবেন। সে রকম কিছু ঘটলে শুধু পাটই নয়, আরও বহু প্রয়োজনীয় উদ্ভিদের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জীবনরহস্য জানার মধ্য দিয়ে পাটের পচন রোগের প্রকৃতি ধরা পড়েছে, এবার এর চিকিৎসার উপায় নিয়ে চেষ্টা চলতে পারে। আর সে চেষ্টা করাটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া ওই দিনই জাতীয় সংসদে দেওয়া এক ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করেন। যতদূর জানা গেছে, পাটের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য জানার ফলে পাটের উৎপাদনে ব্যাপক আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে করে কান্ডপচা রোগ প্রতিরোধী পাটের জাত উদ্ভাবন সম্ভব হবে। ফলে পাটের পচন ৩০ থেকে ৭০ ভাগ কমে যাবে। এর অর্থ হচ্ছে, দেশে পাটচাষের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে ফলন হচ্ছে এ পরিস্থিতিতেই তা গড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কৃষিপ্রধান  দেশের জন্য এটি অবশ্যই ইতিবাচক খবর। পাট আমাদের নিজস্ব বহু প্রয়োজনে লাগে। আবার ব্যাপক পরিমাণে রপ্তানিও হয়। একসময় পাটই ছিল প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য। গত আড়াই দশকে নানা কারণে এ খাতটি উজ্জ্বলতা ও সম্ভাবনা হারাতে থাকে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে দুবছর আগে একই বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় পাটের জিন বা জীবনরহস্য  উন্মোচিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। তখনই পাট নিয়ে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন জেগে ওঠে। এবার সে স্বপ্ন আরেকটি বড় ধাপ অতিক্রম করল। পরবর্তী পর্যায়ে ছত্রাক প্রতিরোধী পাটের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হলে এ স্বপ্নের বাহ্যিক পূর্ণতা সাধনে আর বাকি থাকে না।

কিন্তু এ সব কিছুর সঙ্গে একথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যে কোনো সৃষ্টির স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা। মাটি থেকে উদ্ভিদের জন্ম ও বিকাশেও আল্লাহর ইচ্ছা এবং আল্লাহর দেওয়া নীতি ও ধারাই মূল বিষয়। এক্ষেত্রে মানুষের সর্বোচ্চ সাধনা বা প্রয়াস হচ্ছে সুফল গ্রহণের জন্য সে সৃষ্টির অনু-পরমাণুর সূক্ষ্মতা বিশ্লেষণ ও যথাযথ শ্রমদান। এ গবেষণার ক্ষেত্রেও সেটিই ঘটেছে। এবং একই সঙ্গে এটাও স্মরণযোগ্য যে, মানবমেধা ও প্রয়াসের যত সমৃদ্ধ কীর্তি রয়েছে বা সামনে আসতে পারে সবই আল্লাহ তাআলার দেওয়া মেধা ও যোগ্যতার কারণেই ঘটতে পারে।

সৃষ্টির সেরা হিসেবে মানুষের মেধায় আল্লাহর দেওয়া শক্তি ও সামর্থ্যের কারণেই বহু উদ্ভাবন, আবিষ্কার এবং উন্মোচনের ঘটনা ঘটে থাকে। এটি যেমন ইতিবাচক ক্ষেত্রে ঘটতে পারে তেমনি ঘটতে পারে নেতিবাচক ক্ষেত্রেও। মানবকল্যাণের ক্ষেত্রগুলোতে আল্লাহর দেওয়া মেধার প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা বরাবরই অবদান রেখে থাকেন। আমরা বাংলাদেশী জিনবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার সহকর্মীদের মোবারকবাদ জানাই। দুআ করি, তারাসহ এদেশের মেধাবী বিজ্ঞানীরা মানুষ ও দেশের কল্যাণে সামনের দিনগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি ও দৃষ্টান্ত তুলে ধরবেন।

অর্থহীনতা ও অপচয়ের সঙ্গেই অনেক সময় যোগাযোগ বেশি ঘটে থাকে এদেশের সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। নাচ, গান, অলিম্পিক, বিশ্বকাপ, হুজুগ আর মাতামাতির পেছনে এ দেশে সময়, অর্থ আর মনোযোগ ব্যয়ের নজির ভূরি ভূরি। এসব নজিরকে আমরা ইতিবাচক বলতে পারি না। স্তর ও মর্যাদার ভিন্নতা থাকলেও কৃষি, খাদ্য,স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উন্নয়ন, নৈতিকতা আর ধর্মের ক্ষেত্রে অর্থ, মেধা ও শ্রমের বিনিয়োগকে আমরা ইতিবাচক মনে করি। পাটের ছত্রাকের জিন উদঘাটনের মাধ্যমে এবার বিজ্ঞানীরা সেই ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। রাষ্ট্রও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ভালো নজির স্থাপন করল। এ জাতীয় ইতিবাচক নজির ইনশাআল্লাহ একটি দেশের চেহারায় হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারে। 

 

 

advertisement