যিলহজ্ব ১৪৩৩   ||   নভেম্বর ২০১২

وحدة الأمة واتباع السنة উম্মাহর ঐক্য : পথ ও পন্থা মতভিন্নতার মাঝেও সম্প্রীতি রক্ষা, সুন্নাহসম্মত পন্থায় সুন্নাহর প্রতি আহবান

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

 

গত ২৩ রবিউস সানী ১৪৩৩ হিজরী, মোতাবেক ১৭ মার্চ ২০১২ ঈ. শনিবার কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার উদ্যোগে উম্মাহর ঐক্য : পথ ও পন্থা শিরোনামে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়কের পক্ষ থেকে যে প্রবন্ধটি উপস্থাপিত হয়েছিল তা হুবহু বা তার সারসংক্ষেপ আলকাউসারে প্রকাশের জন্য অনেক বন্ধু/পাঠক জোর আবেদন জানিয়েছেন। সেমিনারে উপস্থিত বন্ধুরা প্রবন্ধটি পুস্তক আকারে পেলেও আলকাউসারের অধিকাংশ পাঠকের কাছে তা পৌঁছেনি। এজন্য সামান্য পরিবর্তন-পরিমার্জনের পর প্রবন্ধটির সারসংক্ষেপ আলকাউসারে প্রকাশ করা হচ্ছে। এটি প্রবন্ধের ষষ্ঠ ও শেষ কিস্তি। যাদের কাছে মূল প্রবন্ধটি রয়েছে তাদের জন্যও তা  উপকারী হবে বলে আশা রাখি। শেষ দুই কিস্তিতে প্রকাশিত আলোচনা মূলত উক্ত প্রবন্ধের পরিবর্ধিত ও সম্পাদিত দ্বিতীয় সংস্করণের, যা গত ৪ রজব, ৩৩ হি., মোতাবেক ২৬ মে ১২ ঈ. একই স্থানে অনুষ্ঠিত সেমিনারের (দ্বিতীয় পর্ব) উপলক্ষে প্রস্ত্তত করা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা এটিকে উপকারী করুন এবং কবুল করুন। আমীন।-সম্পাদক

 

  (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

 

সবশেষে কিছু অনুরোধ করে আমার নিবেদন সমাপ্ত করছি

১. হাদীস শরীফে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের দুটি মানদন্ড উল্লেখ করা হয়েছে : আস্সুন্নাহ এবং আলজামাআহ। এ কারণে এ দলের স্বীকৃত উপাধি, যা সাহাবা-যুগ থেকে চলে আসছে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ। আমাদের কর্তব্য, আমরা যেন নিজেদের মাঝে উভয় মানদন্ড ধারণ করি। অন্য সকল ফের্কা হচ্ছে আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকা। এখন আমরা যেন নিজেদেরকে তৃতীয় দল-আহলুস  সুন্নাতি ওয়াল ফুরকা না বানিয়ে ফেলি। কারণ শুধু ফুরকা ও বিভেদও ঐ কঠিন হুঁশিয়ারির মধ্যে নিক্ষেপ করে যা হাদীস শরীফে এসেছে- من شذ شذ في النار এবং কেবল বিভেদ-বিচ্ছিন্নতাও মারাত্মক পর্যায়ের সুন্নাহবিরোধী কাজ। তাই শুধু এ কারণেও সুন্নাহর মানদন্ড হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল ফুরকার অর্থও দাঁড়াবে আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকা।

২. দ্বিতীয় অনুরোধ বিশেষভাবে ঐ ভাইদের প্রতি, যারা ফিকহে হানাফী অনুসারে হাদীস ও সুন্নাহর উপর আমল করছেন। তাদের মধ্যে তালিবানে ইলম, ইমাম ও খতীব ছাহেবান এবং ওয়ায়েজীনে কেরামের খেদমতে দরখাস্ত এই যে, সনদ ও হাওয়ালাসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহীহ-হাসান হাদীস মুখস্থ করুন, বিশেষত আহকাম সংক্রান্ত জরুরি হাদীসসমূহ। এবং বার বার দাওর করে তা কণ্ঠস্থ রাখুন।

আর আহলে ইলমের প্রতি দরখাস্ত এই যে, ফুরূয়ী মাসাইলের ক্ষেত্রে আমরা অন্য পক্ষের তরীকার উপর আপত্তি না করি। যেমন কেউ জোরে আমীন বললে প্রতিবাদের প্রয়োজন নেই। তবে সে যদি অন্যদেরকে সুন্নাহ বিরোধী বলে কিংবা নিজের সম্পর্কে এই অনুভূতি প্রকাশ করে যে, এইমাত্র সে হেদায়েত পেয়েছে, ইতিপূর্বে আলিমরা তাকে সঠিক বিষয় জানায়নি তাহলে তা ইজমা বিরোধী এবং উম্মাহর ঐক্যের পরিপন্থী। এক্ষেত্রে দাওয়াতী ভাষায় আপত্তি করা যায় এবং তা করা উচিত।

৩. তৃতীয় দরখাস্ত এই যে, আমরা সবাই যেন ঐক্য পরিপন্থী সকল বিষয় থেকে সতর্কতার সাথে দূরে থাকি। যেমন হালকার বিভিন্নতা এবং মাযহাব-মাশরাবের বিভিন্নতাকে দলাদলির কারণ না বানাই। আসাবিয়ত ও অন্যায় পক্ষপাত থেকে দূরে থাকি। মতপার্থক্যের কারণে কোনো পক্ষ যদি বাড়াবাড়িও করে তবুও কারো ইজ্জত-আব্রুতে হস্তক্ষেপ বৈধ মনে না করি। প্রত্যেক পক্ষ সাধারণ মানুষকে নিজেদের মধ্যে বা আলিমদের সাথে ইখতিলাফী মাসাইলে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখি। যখন আলিমদের জন্যও শুধু ইলমী আলোচনাই অনুমোদিত তখন যাদের শরীয়তের ইলম নেই, শুধু শুনে শুনে বা অনুবাদ পড়ে কিছু বিষয় জেনেছে তাদের জন্য তর্ক-বিতর্ক এবং উত্তেজনা-বাড়াবাড়ি কীভাবে বৈধ হতে পারে?

বিষয়টি আরো স্পষ্ট করার জন্য এখানে আমি মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে প্রকাশিত নবীজীর নামায কিতাবের ভূমিকায় লিখিত আমার একটি অনুরোধও সামান্য পরিবর্তন করে উল্লেখ করছি।

আমি আগেই আরজ করেছি যে, নামাযের অনেক বিষয়ে সুন্নাহর বিভিন্নতা বা মোবাহের বিভিন্নতা রয়েছে। তদ্রূপ কোনো কোনো স্থানে নবী-পদ্ধতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বা নবী-পদ্ধতি বোঝার ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ হয়েছে। এইসব ক্ষেত্রে এই কিতাবে সাধারণত ওই পদ্ধতির দলীলসমূহই সংকলন করা হয়েছে, যা আমাদের এ অঞ্চলে অনুসৃত।

এটা এজন্য নয় যে, অন্যান্য পদ্ধতি ভুল বা খেলাফে সুন্নাত; বরং এ এজন্য যে, এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ওই পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন এবং তা হাদীস-সুন্নাহসম্মত।

এই কিতাবে যে মাসনূন পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে এছাড়া আরো যেসব পদ্ধতি সাহাবা-যুগ থেকে প্রচলিত তা অস্বীকার করা বা বাতিল সাব্যস্ত করা এই কিতাবের উদ্দেশ্য নয় এবং তা হওয়া উচিতও নয়। কেননা, খন্ডন ও অস্বীকার তো দু ধরনের বিষয়ে হতে পারে : ১. সাহাবা-যুগ থেকে স্বীকৃত ও প্রচলিত নিয়মের বাইরে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়াদি। যেমন-তাশাহহুদে শাহাদাত আঙ্গুলি সালাম পর্যন্ত নাড়াতে থাকা, তারাবীহ নামায আট রাকাআতে সীমাবদ্ধ মনে করা ও বিশ রাকাআতকে খেলাফে সুন্নাত মনে করা, শুধু এক জলসায় তিন রাকাআত বিতর নামাযকে মাসনূন মনে করা ইত্যাদি।

২. দ্বিতীয় বিষয় এর চেয়েও মারাত্মক। তা এই যে, নিজের পদ্ধতি ছাড়া অন্যসকল স্বীকৃত ও প্রমাণিত পদ্ধতিকে খেলাফে সুন্নাত বলা এবং সেগুলোকে বিদআত ও হাদীস-বিরোধী; বরং বাতিল ও ভিত্তিহীন আখ্যায়িত করা।

বলাবাহুল্য এ ধরনের কাজ যে কেউ করুক তা ভুল এবং শরীয়তের নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

মোটকথা,  আপত্তি শুধু উপরোক্ত দুই বিষয়েই হতে পারে। কোনো স্বীকৃত ও প্রমাণিত পদ্ধতির উপর আপত্তি হতে পারে না।

মনে রাখতে হবে যে, এই স্বীকৃত পদ্ধতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত কিছু বিষয়, যথা রাফয়ে ইয়াদাইন, কিরাআত খলফাল ইমাম ইত্যাদির প্রসিদ্ধ দলীলসমূহের উপর গ্রন্থকার স্বরচিত টীকায় কোথাও কোথাও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, যা বাংলা অনুবাদে পরিশিষ্টে নেওয়া হয়েছে। এই আলোচনা আরো শক্তিশালী হওয়া সম্ভব। তবে আহলে ইলমের কাছে অজানা নয় যে, আলোচনা যতই শক্তিশালী হোক তা ইজতিহাদ-নির্ভর, অতএব অন্য ইজতিহাদের ভিত্তিতে এই পর্যালোচনার উপরও পর্যালোচনা হতে পারে এবং প্রতি যুগে তা হয়েছেও বটে।

এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য কোনো স্বীকৃত ও অনুসৃত পদ্ধতিকে বাতিল বা ভিত্তিহীন সাব্যস্ত করা নয়; বরং যেক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি রয়েছে তাতে কোনো এক পদ্ধতির অগ্রগণ্যতা এবং তা অনুসরণের যৌক্তিকতা প্রকাশ করাই উদ্দেশ্য।

এই পর্যালোচনাধর্মী আলোচনা সম্পূর্ণ ইলমী ও শাস্ত্রীয় বিষয়, যা আলিম ও তালিবে ইলমের জন্য উপযোগী। একজন সাধারণ পাঠকের জন্য এইসব বিষয়ে প্রবেশ করার প্রয়োজন নেই আর এতে কোনো সুফলও নেই। এই আলোচনাগুলো গ্রন্থের শেষে নিয়ে যাওয়ার এটিও একটি হিকমত বটে।

এই কিতাব অধ্যয়নের সময় পাঠকবৃন্দের অবশ্যই একটি বিষয় মনে রাখা উচিত। তা এই যে, আপনি এই কিতাব দ্বারা নিজের অনুসৃত পদ্ধতি সম্পর্কে দলীল জেনে প্রশান্তি অর্জন করুন কিন্তু অন্যদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবেন না। অবসর সময়ে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে শরীক হয়ে উদাসীন লোকদের নামাযী বানানোর চেষ্টা করুন এবং দ্বীন সম্পর্কে উদাসীন লোকদের মধ্যে দ্বীনের আগ্রহ ও চেতনা পয়দা করার চেষ্টা করুন। কুরআন তিলাওয়াত এবং যিকির ও দুআর মধ্যে সময় কাটান। ঝগড়া-বিবাদ ভালো নয়, তাই এটাকে মাশগালা বানাবেন না।

৪. চতুর্থ দরখাস্ত এই যে, প্রত্যেক শ্রেণীর আলিমগণ নিজেদের আওয়ামের অন্যায়, সীমালঙ্ঘন ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করুন। শুনেছি, হানাফীদের কোনো কোনো আম-মানুষ আহলে হাদীসকে শীয়া বা কাদিয়ানী বলে থাকে। আমরা এর কঠোর প্রতিবাদ করি। এত জঘন্য আক্রমণ তো দূরের কথা এর চেয়ে অনেক ছোট কথারও অনুমতি আমরা দেই না। গালি-গালাজ, নিন্দা-কটূক্তিকে আমরা জায়েয মনে করি না। আমরা আহলে হাদীস বন্ধুদের ঐসব বিষয়ের প্রতিবাদ করি, যেগুলোতে তারা শুযূয ও বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করেছেন।

যারা নুতন আহলে হাদীস হয় তাদেরকে আহলে হাদীস-এর আম লোকেরা নওমুসলিম বলে! তাকলীদকে শিরক বলে! আইম্মায়ে মুজতাহিদীন. বিশেষত ইমাম আবু হানীফা রাহ. সম্পর্কে বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করে। হানাফীদেরকে হাদীস অস্বীকারকারী বলে। তাদের নামাযকে ভুল বলে। এ ধরনের আরো চরম আপত্তিকর কথাবার্তা তারা বলে থাকে।

আমার বিশ্বাস, আহলে হাদীস আলিমরা সম্ভবত এমন কথা বলেন না। আমি তাদের কাছে এবং ঐসব আহলে ইলমের কাছে, যারা আহলে হাদীস না হলেও তাদেরকে সমর্থন করেন, দরখাস্ত করব, আপনারা আপনাদের আওয়ামের ঐসব অন্যায়ের প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করুন এবং ফুরূয়ী মাসাইলে অন্যান্য মুজতাহিদ ও তাঁদের অনুসারীদের উপর আপত্তি করা থেকে বিরত থাকুন।

হানাফী আলিমদের কাছে নিবেদন করব, নিজেদের পড়াশোনা-জানা আওয়ামের জন্য হাদীসের ছোট ছোট সংকলন প্রস্ত্তত করুন। দরসে হাদীসের মজলিসে আহকামের হাদীসও আলোচনা করুন। হাদীসের কিতাবসমূহ পড়ার নিয়ম ও সঠিক পন্থা তাদেরকে অবহিত করুন। যারা বলে, আওয়ামের জন্য হাদীসের কিতাব পড়া জায়েয নয় তাদের চিন্তার সংশোধন করুন। হ্যাঁ, হাদীসের শাস্ত্রীয় কিতাবসমূহ আম মানুষের উপযোগী নয়, তাদেরকে তাদের উপযোগী গ্রন্থ পাঠ করতে হবে। তেমনি সব ধরনের হাদীস আম মানুষের পাঠ করার মতো নয়। নতুবা তারা পেরেশান হবে। মুখাতালিফুল হাদীস এবং মুশকিলুল হাদীসের ময়দানে তাদেরকে দাখিল করে দিলে তাদের কী উপায় হবে? খোদ ইমাম বুখারীর উস্তাদ মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহাব মিসরী রাহ. যিনি বড় হাফিযুল হাদীস ছিলেন, বলেছেন যে, আমি বহু হাদীস সংগ্রহ করলাম। এরপর হাদীস সমূহের পরস্পর বিরোধ দেখে হতবিহবল হয়ে গেলাম। তখন ইমাম মালিক ইবনে আনাস রাহ. এবং ইমাম লাইছ ইবনে সাদ রাহ.-এর  সামনে তা পেশ করলাম। তাঁরা আমাকে পথ দেখালেন। তাঁরা বললেন, এর উপর আমল কর, এটা ত্যাগ কর।- (তারতীবুল মাদারিক ২/৪২৭)

সম্ভবত এ অভিজ্ঞতার কারণেই ইবনে ওয়াহাব রাহ. বলেছেন-

كل صاحب حديث ليس له إمام في الفقه فهو ضال، ولو لا أن الله انقذنا بمالك والليث لضللنا

কোনো হাদীসের ধারকের যদি ফিকহের ক্ষেত্রে কোনো ইমাম না থাকে তাহলে সে পথহারা হবে। আল্লাহ তাআলা যদি মালিক ও লাইছের দ্বারা আমাকে মুক্ত না করতেন তাহলে আমি পথ হারিয়ে ফেলতাম।-কিতাবুল জামি, ইবনে আবি যায়েদ আলকাইরাওয়ানী পৃ. ১১৭

ইবনে ওয়াহব রাহ.-এর এই কথাগুলোর আরো হাওয়ালা জানার জন্য এবং বিষয়টির গুরুত্ব বোঝার জন্য দেখা যেতে পারে শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ-এর কিতাব-

أثر الحديث الشريف في اختلاف الأئمة الفقهاء

 (পৃষ্ঠা : ৮০-১১০)

তো আমমানুষকে হাদীস অবশ্যই পড়তে হবে। কিন্তু প্রথমে তাদের জন্য বাতিল ও মুনকার রেওয়ায়েত থেকে মুক্ত শুধু সহীহ, হাসান ও সালিহ লিলআমল হাদীসসমূহের একটি সংকলন প্রস্ত্তত করতে হবে। এরপর যেসকল হাদীসে ইখতিলাফ বা তাআরুয আছে তাতে তাদের জন্য কোনটি মামূল বিহী (আমলযোগ্য) তা চিহ্নিত করে দিতে হবে। নতুবা হাদীসের কোনো শাস্ত্রীয় কিতাবের শুধু শাব্দিক অনুবাদ তাদের সামনে রেখে দিলে কিংবা এমন কোনো কিতাবের তরজমা করে দিলে, যাতে মাওযু-মুনকার রেওয়ায়েত আছে, বেচারা আওয়াম কী করবে?

৫. পঞ্চম দরখাস্ত এই যে, প্রত্যেক দল নিজের আওয়ামকে অধিক গুরুত্বের সাথে ঐসকল সুন্নত শিক্ষা দিবেন, যেগুলোর অর্থের বিষয়ে বা আমলের পন্থা সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই; বরং তা মুজমা আলাইহ্ ও সর্বসম্মত সুন্নত। যাতে এমন অবস্থার সৃষ্টি না হয় যা শাহ আব্দুল আযীয রাহ.-এর শাগরিদ মাওলানা ফযলুর রহমান গঞ্জমুরাদাবাদী রাহ. বলেছেন। তিনি কাউকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, শুনলাম আপনি হাদীস মোতাবেক আমল করেন, বলুন তো অমুক সময় কোন দুআ পাঠ করা মাসনূন আর অমুক সময় কোন দুআ। ঘটনাক্রমে তিনি তা বলতে পারেননি। তো মাওলানা বললেন, আপনি শুধু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ হাদীসগুলো মুখস্ত করেছেন, যেগুলোর (মর্ম নির্ণয়ে কিংবা আমলের পদ্ধতি নির্ধারণে হাদীসের ফকীহগণের মাঝে) মতভেদ হয়েছে। পক্ষান্তরে যে হাদীসগুলো সুস্পষ্ট এবং যার উপর গোটা উম্মতের মাঝে ঐক্যবদ্ধভাবে একই পদ্ধতিতে আমল চলে আসছে তা ইয়াদ করার কোনো প্রয়োজনই বোধ করেননি। এরই নাম হাদীস মোতাবেক আমল?! (তাদবীনে হাদীস, মাওলানা মানাযির আহসান গীলানী পৃ. ৩৩১)

এই ঘটনায় আমাদের সবার জন্য শিক্ষার উপকরণ আছে।

৬. ষষ্ঠ দরখাস্ত সকল ভাইদের খেদমতে এই যে, আমরা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর অসিয়ত মোতাবেক আমল করি-দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদির প্রচারপ্রসারে জোর দেই। তাওহীদের গুরুত্ব, শিরক-বিদআতের বর্জনীয়তা, বিশেষ করে মাযারের শিরক ও বিদআত, বাতিল সুফিবাদের খুরাফাত, সুদ, জুয়া, ধোঁকা-প্রতারণা, জুলুম, দুর্নীতির অবৈধতা, খৃষ্টবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, কাদিয়ানী মতবাদ এবং হাদীস ও শরীয়ত অস্বীকারের ফিতনা সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করি। পশ্চিমা সংস্কৃতির ধ্বংসাত্মক পরিণাম সম্পর্কে উম্মতকে সচেতন করি। অশ্লীলতা ও অন্যান্য অসৎ কর্ম সম্পর্কে সাবধান করতে থাকি, ব্যাপক বিস্তারের কারণে সাধারণত যেগুলো সম্পর্কে এখন আপত্তিও করা হয় না। সবার জন্য কুরআনের শিক্ষার ব্যবস্থা করি এবং এ ধরনের খেদমতে নিজেও যুক্ত হই, বন্ধু-বান্ধবকেও উদ্বুদ্ধ করি।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পূর্ণ তাওফীক দান করুন। আমীন।

هذا، وصلى الله تعالى وسلم على محمد وعلى آله وصحبه أجمعين، الحمد لله رب العالمين

 

 

 

 

advertisement