আরেকটি বলার ভুল : ষাট ষাট, বালাই ষাট...
গ্রামের অনেক মহিলা ছোট বাচ্চাদের বদনজর ইত্যাদি থেকে রক্ষার জন্য অনেক সময় বলে বসেন,‘ষাট ষাট বালাই ষাট’। আমাদের গল্প-উপন্যাসেও এ বাক্যটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এটা হিন্দুদের থেকে আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ষাট শব্দের অধীনে লিখেছে, ষাট: উচ্চারিত কোন অশুভ কাজের প্রতিবিধান বা প্রতিকারের উদ্দেশ্যে ষষ্ঠীদেবীর নাম উচ্চারণ (ষাট ষাট, বেঁচে থাকুক বালাই ষাট ও কথা বলতে নেই)
প্রথম কথা হল, এখানে ষাট বলে কোন মুসলিমই হয়তো হিন্দুদের ষষ্ঠীদেবী উদ্দেশ্য নেয় না। কিন্তু পৌত্তলিক সমাজের বিশ্বাসের বাহক বিশেষ শব্দগুলো পরিহার করাই ইসলামের শিক্ষা। তাছাড়া সহীহ আকীদা-বিশ্বাসের সাথে সাথে মুসলিমের উচ্চারণও সঠিক ও সুন্দর হওয়া জরুরী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বলার ক্ষেত্রেও বাক্যের উত্তম-অনুত্তমের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন এবং এক্ষেত্রে সাহাবীদের সামান্য ভুলও শুধরে দিতেন। সেখানে কোনো বাক্য যদি পৌত্তলিক সমাজের বিশ্বাসের বাহক হয় তাহলে তা যে বর্জনীয় একথা বলারই অপেক্ষা রাখে না। এক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং প্রবেশের অনুমতি চেয়ে বললেন,আ আলিজু? (এ শব্দে অনুমতি চাওয়া শুনে) নবীজী খাদেমকে বললেন, সে সুন্দর করে অনুমতি চাইতে জানে না। যাও তাকে বল, সে যেন প্রথমে সালাম দেয় তারপর (আ আলিজু শব্দের পরিবর্তে) আ-দ্খুলু বলে অনুমতি চায়। তখন তিনি সালাম দিয়ে আ-দ্খুলু বলে অনুমতি চাইলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন...।-
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৩১২৭
এখানে ‘আ আলিজু’ ও ‘আ-দ্খুলু’ দুটি শব্দের অর্থই ‘আমি কি প্রবেশ করতে পারি?’ কিন্তু দ্বিতীয়টি প্রথমটির চেয়ে উত্তম ও সুন্দর। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দ্বিতীয়টি বলতে শেখালেন।
আর সন্তানদের বদ নজর ইত্যাদি থেকে কীভাবে রক্ষা করতে হবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা উম্মতকে শিখিয়েছেন। সহীহ বুখারীর এক হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. এর জন্য এই দোয়া পড়ে আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন-
أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
অর্থ : সকল শয়তান, কীটপতঙ্গ ও বদনজর হতে তোমাদেরকে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমাসমূহের আশ্রয়ে দিচ্ছি।
দোয়াটি এক সন্তানের জন্য পড়লে ‘উয়ীযুকা’, দুইজনের জন্য ‘উয়ীযুকুমা’ আর দুইয়ের অধিক হলে ‘উয়ীযুকুম’ বলতে হবে। এর সাথে আয়াতুল কুরসী, তিন কুল ও হাদীসের অন্যান্য দোয়া তো আছেই।