জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩০   ||   জুন ২০০৯

প্র তি বে শী : টিপাইমুখ : বিভক্ত জনপদে নতুন মৃত্যুফাঁদ

ওয়ারিস রব্বানী

পানির অভাব এখন আর কেবল নগরজীবনের ইস্যু নয়, গোটা দেশের সব নদ-নদীতেও এক ধরনের ভাটার টান দেখা যায় বছরের দশ মাস। আর বর্ষার দু মাসে থাকে থৈ থৈ পানি। দুকুল ছাপিয়ে নদীগুলো জনবসতিতে ঢুকে পড়ে তখন। অভাবের সময় খরা আর বর্ষার সময় বন্যা-এই হচ্ছে বাংলাদেশের পানি এবং পানির বাংলাদেশের চিত্র। এর পেছনে রয়েছে উজানে ফারাক্কা বাঁধের বড় ভূমিকা। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে বেশ উজানে ভারত কর্তৃক নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে এদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীগুলো প্রায় মুমূর্ষ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। একই কারণে এক কালের প্রমত্তা পদ্মা এখন ধুধু বালুচরে পরিণত। দেশজুড়েই এর পরোক্ষ বিষ ছড়িয়ে পড়েছে।

এই ফারাক্কার মরণাঘাত থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশ যেখানে যুগের পর যুগ ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে এবার সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর মূল উৎসধারা বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে ভারত। মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো এখন ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করে বাংলাদেশের মরুকরণে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীদ্বয়ের উৎসধারা বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ মাল্টিপারপাস বাঁধ নির্মাণ করার দ্বারা এদেশের পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদী শুকিয়ে যাবে। কারণ বরাক নদী হচ্ছে সুরমা-কুশিয়ারা নদীদ্বয়ের জন্মদাত্রী মাতা এবং মেঘনা নদী ব্যবস্থার প্রধান পানি সরবরাহের উৎস। তাই টিপাইমুখ বাঁধ চালু হলে ওই তিনটি নদীতো বটেই ওগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাপর ছোট বড় নদী-নালাগুলো মৃত্যুর পথে যাত্রা শুরু করবে। তাই এই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সচেতন দেশবাসী প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিরোধী দলগুলো প্রতিবাদী কর্মসূচী দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীরা উল্টো বলছেন-এতে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সচিবালয়ে এসে মন্ত্রীদের ম্যাপ দেখিয়ে বুঝিয়ে গেছেন এ বাঁধের কারণে বাংলাদেশের উপকার হবে, ক্ষতি হবে না। মন্ত্রীরা রাষ্ট্রদূতের দেওয়া বুঝ সুন্দরভাবে গ্রহণ করে সাংবাদিকদেরকে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। আর ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত বিরক্তিঝরা শব্দে বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যারা কথা বলছেন তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এমন বলছেন। বিরোধিতা করার মতো নাকি বাস্তব কোনো কারণ নেই।

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের এই চূড়ান্ত লগ্নে দেশের শীর্ষস্থানীয় নদীবিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা বলছেন-ফারাক্কার সময় আমরা ঘুমিয়েছিলাম; তিস্তা আগ্রাসনের সময় ছিলাম উদাসীন। আর এখন সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনার উৎসধারায় নির্মাণাধীন টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের সময় জাতি দ্বিধাগ্রস্ত, অনবহিত এবং বিভক্ত। ভারত আন্তর্জাতিক নদীর ওপর কো-রিপারিয়ান দেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানি বন্টনের যৌক্তিক নিয়মনীতি এবং যৌক্তিক দাবি-দাওয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ধারাবাহিকভাবে তাদের সব নদী নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এক তরফাভাবে বাস্তবায়িত করে চলেছে। #

 

 

advertisement