একটি ভুল ধারণা : ইস্তিখারার জন্য কি দুআ পড়ে ঘুমাতেই হয়
ইস্তিখারার অর্থ কল্যাণ প্রার্থনা, কল্যাণ সম্পর্কে অবগত হওয়া নয়। তাই ইস্তিখারার হাকীকত এই যে, যে কাজের ইচ্ছা করা হয়েছে সে সম্পর্কে (চিন্তা-ভাবনা ও পরামর্শের পর) দুই রাকাত নফল নামায পড়ে হাদীসে শিখানো দুআ পাঠ করা। যার সারকথা হল, ইয়া আল্লাহ! এ কাজে যদি আমার কল্যাণ থাকে তবে তুমি তা সহজ করে দাও এবং তাতে বরকত দান কর। আর যদি তা আমার জন্য উপযোগী না হয় তবে তা থেকে আমাকে বিরত রাখ এবং যেখানে কল্যাণ আছে সেখানে নিয়ে যাও আর আমাকে তাতে সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক দান কর।
সহীহ হাদীসের আলোকে এটাই হল ইস্তিখারার হাকীকত। কিন্তু কেউ কেউ মনে করে, ইস্তিখারার নামায ও দুআ শোয়ার আগে করতে হয়। আর ইস্তিখারার ফলাফল অর্থাৎ কাজটি করা উচিত কি উচিত না-তা স্বপ্নযোগে জানিয়ে দেওয়া হয়। এটি নিঃসন্দেহে ভিত্তিহীন ধারণা। ইস্তিখারার পর কেউ কোনো স্বপ্ন দেখতেও পারে। কিন্তু স্বপ্ন তো ইস্তিখারা ছাড়াও দেখা যায়। স্বপ্নে কোনো কিছু দেখলে তাকে বিচার করতে হবে স্বপ্নের বিষয়ে শরীয়তের যে বিধান আছে তারই ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শরঈ বিধান অনুযায়ী। আর স্বপ্ন যে কোনো দলিল নয়-এ তো সবাই জানে।
ইস্তিখারা বিষয়ক আরেকটি ভুল হল, দুআ-ওযিফার কোনো কোনো অনির্ভরযোগ্য বইপত্রে ইস্তিখারার যে পদ্ধতি উল্লেখ রয়েছে তা পালন করা। অথচ ইস্তিখারার মাসনুন পদ্ধতি ছেড়ে কারো অভিজ্ঞতা বা উদ্ভাবন গ্রহণ করার কোনো অর্থ হতে পারে না।
ইস্তিখারার একটি নবউদ্ভাবিত ও বিদআতী পদ্ধতি হচ্ছে, কুরআন মজীদ থেকে কিংবা দেওয়ানে হাফেয, মাছনবী ইত্যাদি থেকে ইঙ্গিত গ্রহণ। এটি সম্পূর্ণ ভুল পদ্ধতি। আর কুরআন মজীদ থেকে এ জাতীয় ইঙ্গিত গ্রহণ মূলত কুরআনের সাথে বেআদবী।
আরেকটি ভুল হল, নিজে না করে অন্যকে দিয়ে ইস্তিখারা করানো। অনেকে মসজিদের ইমাম সাহেব অথবা পরিচিত কোনো আলিমের কাছে ইস্তিখারার আবেদন করে থাকেন। অথচ হাদীস শরীফে প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তিকেই ইস্তিখারা করতে বলা হয়েছে।
সবচেয়ে মারাত্মক ভ্রান্তি এই যে, কোনো কোনো মানুষ শুধু কাজের ইচ্ছার সময়ই নয়; বরং গায়েবের বিভিন্ন কথা জানার জন্য বে-শরা তদবিরকারীর কাছে যায় এবং এটাকেও ইস্তিখারা বলে। এমনকি ঐ সকল কথা বিশ্বাসও করে। অথচ গায়েব জানার জন্য কারো কাছে যাওয়া এবং তার কথা বিশ্বাস করা এক প্রকারের শিরক।
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের শিরক থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
(বিস্তারিত জানার জন্য অধ্যয়ন করুন : আলমাদখাল, ইবনুল হাজ্ব ৪/৩৬-৪০; হায়াতুল হায়াওয়ান ৩/৩৮; ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন, মুরতাযা যাবী ২/২৮৫। উর্দু দায়েরায়ে মাআরিফে ইসলামিয়া, লাহোরের (২/৫৭১-৫৭৩) প্রবন্ধটিও ভালো।)