এটি হাদীস নয় : জুমআর রাত কি কদরের রাত থেকেও উত্তম!
‘‘শবে জুমআ শবে কদর থেকেও উত্তম। কেননা শবে জুমআয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে আগমন করেছিলেন’’ এটি হাদীস কিনা-এই প্রশ্ন বার বার করা হয়।
এই রেওয়ায়েতটি কোথায় পড়েছেন বা কার কাছে শোনেছেন-জিজ্ঞাসা করা হলে কেউ কেউ একটি কিতাবের কথা বলেছেন। বললাম, সেখানে কি এর কোনো হাওয়ালা আছে? তারা দেখে বললেন, মুসনাদে আহমদের হাওয়ালা দেওয়া হয়েছে। মূল কিতাব খুলে দেখা গেল, সেখানে এই বিষয়টিকে হাদীস হিসেবে উল্লেখই করা হয়নি। বরং ‘আশিআতুল লামাআত’ (মিশকাতের ফার্সী শরহ)-এর উদ্ধৃতিতে ইমাম আহমদের বরাতে এই উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে যে, কয়েকটি কারণে জুমআর রাত কদরের রাত থেকেও উত্তম। কেননা জুমআর রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আমিনার গর্ভে আগমন করেন।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কোথাকার বিষয় কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। ইমাম আহমদের নাম দেখেই মুসনাদে আহমদের উদ্ধৃতি অবতারণা করা হয়েছে। আবার একটি উক্তিকে হাদীস বানিয়ে দেওয়া হয়েছে!! অথচ এ বিষয়টিও তাহকীক করা প্রয়োজন ছিল যে, ইমাম আহমদ থেকে কথাটি প্রমাণিত কি না? আর এ রাতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে আগমন করেছিলেন-এ কথারও সনদ খোঁজার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া এটি প্রমাণিত হলেও এটা কীভাবে আবশ্যক হয় যে, এ কারণে রাতটি কদরের রাত থেকে উত্তম? ‘আশিআআতুল লামাআত’ গ্রন্থে এ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই, অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবেও নেই।
সারকথা এই যে, উপরোক্ত উক্তিটি হাদীস নয় এবং এটি অন্য কোনো দলিল দ্বারাও প্রমাণিত নয়।
উপরের ঘটনা থেকে এই বাস্তবতা আবারো ফুটে উঠল যে, শুধু অনুবাদসর্বস্ব জ্ঞান খুবই ভয়ঙ্কর। যারা শুধু অনুবাদের উপর নির্ভর করে কোনো আরবী কিতাবের জ্ঞান লাভ করেন, মূল কিতাব থেকে সরাসরি জ্ঞান লাভের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও আবশ্যকীয় ইলম যাদের নেই-তারা অনুবাদের সহায়তায় যতটুকু অর্জন করেন তা ঝুঁকিপূর্ণ। এ পন্থায় অর্জিত জ্ঞান যেমন তাদেরকে গবেষণার যোগ্য প্রমাণ করে না তেমনি এটাকে পুঁজি করে কোনো আহলে ইলমের সাথে ইলমী আলোচনা ও পর্যালোচনার অধিকারও সৃষ্টি হয় না।
হায়! আমাদের বন্ধুরা যদি এই বাস্তবতাটুকু অনুভব করতেন তাহলে সমাজের অনেক বিবাদ দূর হয়ে যেত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।