বাস্তবেই কি তাঁরা শিয়াদের ইমাম
যে সকল ফিরকা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে তাদের মধ্যে শিয়া অতি প্রাচীন ফির্কা। খোদ শিয়ারাও অনেক দল-উপদলে বিভক্ত। বর্তমানে ইসনা আশারিয়্যাহ শিয়া সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। তাদের জনসংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। এদেরকে ইমামিয়্যাহ শিয়াও বলা হয়।
তাদের একটি গলত আকীদা হচ্ছে, আকিদায়ে ইমামত। তাদের মতে, হযরত আলী রা. থেকে হযরত হাসান আসকারী রাহ. ও তাঁর পুত্র পর্যন্ত মোট বারজন সম্পর্কে তাদের দাবি এই যে, এঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত ইমাম। তারা শুধু নবীগণের মতো মাসুমই নন; বরং এমন মাকাম ও মর্যাদার অধিকারী, যে পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশতা এবং কোনো নবী-রাসূলও পৌঁছতে পারে না ...!
এ কথা স্বয়ং রুহুল্লাহ খোমেনীর কিতাব ‘আলহুকুমাতুল ইসলামিয়্যাহ’ তেই আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটা সরাসরি কুফরি আকীদা। কোনো মুসলমান এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে না।
আমি এখানে যে কথাটি বলতে চাই তা হল, হাসান আসকারী রাহ.-এর পুত্রের অন্তর্ধানের যে ঘটনা, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি কাহিনী।
আর আলী রা. থেকে হাসান আসকারী রাহ. পর্যন্ত এগারজন সম্পর্কে শিয়াদের প্রপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে অনেকেই তাঁদেরকে সত্যি সত্যি শিয়াদের ইমাম ও নেতা মনে করেন। এটা ঠিক এ রকম, যেমন অনেক লোক ঈসা আ.কে বর্তমান খৃস্টান সম্প্রদায়ের আদর্শ মনে করে।
অথচ বাস্তবতা হল, না খৃস্টানরা হযরত ঈসা আ.-এর আদর্শ গ্রহণ করেছে, না শিয়ারা উপরোক্ত ইমামদের আদর্শের অনুসরণ করেছে; বরং তারা তো নিজেদের আবিষ্কৃত ভ্রান্ত বিশ্বাস ও আচারের অনুসারী। শুধু মানুষকে প্রতারিত করার জন্য ঐ সকল ইমামগণের নাম তারা ব্যবহার করে থাকে। তাদের আদর্শ ও শিক্ষার সাথে শিয়াদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা তো শিয়াদের বিশ্বাস ও কর্মকান্ড এবং তাদের রুসূম-রেওয়াজ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র ছিলেন। নিচে ঐ এগারজন মহান ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হল।
১. আলী ইবনে আবী তালিব রা. (হিজরতপূর্ব ২৩-৪০ হিজরী)
২. হাসান ইবনে আলী রা. (৩-৪৯ হি.)
৩. হুসাইন ইবনে আলী রা.
(৪ হি.-৬১ হি.)
৪. যাইনুল আবেদীন আলী ইবনুল হুসাইন রাহ. (৩৮-৯৪ হি.)
৫. মুহাম্মাদ ইবনে আলী আলবাকের রাহ. (৫৬-১১৪ হি.)
৬. জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আসসাদিক রাহ. (৮০-১৪৮ হি.)
৭. মুসা ইবনে জাফর আল কাযেম রাহ. (১২৮-১৮৩ হি.)
৮. হযরত আলী মুসা আররেজা রাহ. (১৪৮-২০৩ হি.)
৯. মুহাম্মাদ ইবনে আলী আলজাওয়াদ রাহ. (১৯৫-২২০ হি.)
১০. আলী ইবনে মুহাম্মাদ আলহাদী রাহ. (২১৪-২৫৪ হি.)
১১. হাসান ইবনে আলী আলআসকারী রাহ. (২৩২-২৬০ হি.)
এঁদের মধ্যে প্রথমজন তো খোলাফায়ে রাশেদীনের চতুর্থ খলিফা ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশিষ্ট সাহাবী ও আশারায়ে মুবাশশারার অন্যতম ছিলেন। পরের দুজনও সাহাবী ও আল্লাহর রাসূলের দৌহিত্র ছিলেন। কোনো সাহাবী কখনোই কোনো বাতিল ফেরকার ইমাম হতে পারেন না।
কোনো বাতিল ফেরকা যদি তাঁদের কারো অনুসারী হওয়ার দাবি করে তাহলে সেটা হবে নির্জলা মিথ্যা।
হযরত যাইনুল আবেদীন, বাকের ও জাফর সাদেক এই তিনজন তাবেয়ী ছিলেন। মুসা কাজেম তাবে তাবেয়ী ছিলেন। বাকি পাঁচজন তাবে তাবেয়ীগণের শাগরেদদের তবকার ছিলেন।
এঁরা সকলেই ছিলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়ালা জামাআতের আদর্শের অনুসারী। শিয়াদের আবিষ্কৃত বাতিল আকীদা-বিশ্বাসের সাথে সামান্যতম সম্পর্কও তাঁদের ছিল না।
এছাড়া তাঁদের মধ্যে অনেকেই শিয়াদের বাতিল মতবাদ ও কর্মকান্ড থেকে সম্পর্কহীনতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। তাদের এ বিষয়ক কিছু বক্তব্য খোদ শিয়াদের কিতাবেও রয়েছে।
সুতরাং ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার যে, না শিয়ারা ঐ সকল ব্যক্তিবর্গের অনুসারী, না তাঁরা-আল্লাহ মাফ করুন- শিয়াদের মিথ্যা ও বাতিল আকীদাকে সহীহ মনে করতেন। সুতরাং ঐ সকল বিষয় তাদের সাথে সম্পৃক্ত করার কোনো অবকাশ নেই।
আল্লাহ আমাদেরকে হক বোঝার ও হককে গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন।