একটি ভিত্তিহীন ঘটনা
জনৈক কাহিনীকার ওয়ায়েযকে বলতে শুনেছি, নূহ আ. তাঁর সঙ্গীদেরকে নিয়ে কিশতী থেকে অবতরণ করার কিছুদিন পর আল্লাহ তাআলা আদেশ করলেন, হে নূহ! এখন তো এই কিশতীর প্রয়োজন নেই। তাই এটি ভেঙ্গে ফেল। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এটিকে তো আমি নিজ হাতে বানিয়েছি। এখন কীভাবে ভেঙ্গে ফেলব। আমার তো কষ্ট হবে। আল্লাহ তাআলা বললেন, তোমার বদ দুআর কারণে তো আমি আমার সৃষ্টিকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছি। তাহলে ভেবে দেখ, আমার কতটা কষ্ট হয়েছে? তারা তো আমারই হাতে গড়া সৃষ্টি ছিল!!
অসার ও ভিত্তিহীন এই ঘটনা শুনিয়ে সে লোকদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করছিল যে, আল্লাহর কোনো সৃষ্টি কাফের-মুশরিক হলেও আল্লাহ তাআলা তাকে ভালবাসেন, তার প্রতি দয়া করেন।
মনে রাখবেন, আগেই বলা হয়েছে এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর কোনো সহীহ সূত্র ও নির্ভরযোগ্য কোনো উদ্ধৃতিও নেই। এটি সম্পূর্ণ মনগড়া একটি ইসরাইলী বর্ণনামাত্র।
সৃষ্টির প্রতি দয়াপরবশ হয়েই তো আল্লাহ তাআলা নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। এমনকি শেষ নবী সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে এই ধারার সমাপ্তি ঘটিয়ে তাঁকে কিয়ামত পর্যন্ত নবী বানিয়েছেন। তার প্রতি নাযিলকৃত আসমানী কিতাব আলকুরআনুল কারীম ও এর কার্যত ও ব্যবহারিক ব্যাখ্যা হাদীস-সুন্নাহ এবং তাকে প্রদত্ত শেষ শরীয়ত সবকিছুর হেফাযতের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি হঠকারিতা অবলম্বন করে এবং আল্লাহর এ সকল দূতের উপহাস করে, তাদের দাওয়াত কবুল করে না এবং কুফুরিতে লিপ্ত থাকে আল্লাহ তাআলার প্রতি তার কোনো ভালবাসা থাকে না। বরং সে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ক্রোধের পাত্র। কুরআন সাক্ষী যে, কাফেরদেরকে নূহ আ.-এর বদদুআ করা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ীই ছিল। বিষয়টি এমনও নয় যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস করতে চাননি, শুধু নূহ আ.-এর খাতিরে ধ্বংস করে দিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)
আবার এমনও নয় যে, নূহ আ. ওই কাফেরদের অতিষ্ঠ হয়ে বদ দুআ করেছিলেন। তিনি তো সাড়ে নয়শ বছর তাদেরকে দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যা সম্ভাব্য সকল পন্থায় দাওয়াত দিয়ে এসেছেন। কিন্তু হঠকারিতার কোনো প্রতিষেধক তো কারো কাছেই নেই! নূহ আ. সম্পর্কে কুরআন মজীদের আয়াতসমূহ কেউ মনোযোগ দিয়ে তিলাওয়াত করলেও সহজেই বুঝতে পারবে যে, তাদের বিরুদ্ধে নূহ আ.-এর বদ দুআ আল্লাহ তাআলার ইচ্ছানুরূপই ছিল। আর সেসব কাফেরদেরকে আল্লাহ তাআলা তাদের হঠকারিতা, অহংকার, আল্লাহ ও তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে উপহাসের কারণে ধ্বংস করেছেন।
وقد أشار الذهبي إلى قصة كسر السفينة في ميزان الاعتدال، وأنها منكرة باطلة وليراجع الطلاب كتاب إرشاد القاري إلى صحيح البخاري للمفتي رشيد أحمد اللدهيانوي
পৃষ্ঠা : ৪২২-৪২৩