শাবান-রমজান ১৪৩০   ||   আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ২০০৯

একটি অন্যায় কাজঃ ‘বিসমিল্লাহ ‘ ও ‘দরূদ’ অশুদ্ধ বা অসম্পূর্ণ বলা ও লেখা

প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে ‘আল্লাহর যিকর’ মাসনূন। যে কাজের সূচনায় শরীয়ত যে যিকর নির্দেশ করেছে সে কাজের জন্য ঐ যিকরই মাসনূন। অনেক কাজে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বলা বা লেখার নির্দেশনা রয়েছে। শরীয়তে তা মাসনূন। বিধানগত বিচারে এটা মাসনূন বা মুস-াহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন- গভীর। সংক্ষেপে বলা যায় যে, এর দ্বারা বান্দা নতুন করে এর অঙ্গিকার। আল্লাহ তাআলার নেয়াতমসমূস স্মরণ করে এবং আল্লাহর দিকে রুজূ করে কাজের মধ্যে দুরুস-ী ও খায়র ও বরকতের দরখাস- করে। এজন্য এই আমল গুরুত্বের সঙ্গে করা চাই। আর যেহেতু এতে মাহবূবে হাকীকী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র নাম রয়েছে তাই গভীর শ্রদ্ধা ও মহাব্বতের সঙ্গে তা আদায় করা চাই। পূর্ণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম তাজবীদ ও ইখলাসের সঙ্গে পাঠ করা চাই, শুধু রসম পুরা করার জন্য না হওয়া চাই। পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের মধ্যে অনেককে অনেক সময় দেখা যায়, যারা বিসমিল্লাহ এমনভাবে পাঠ করে থাকেন, যেন তা একটি অতিরিক্ত কাজ। মূল কাজ হল যা শুরু করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য, যারা এমন মনে করেন তারা এই সুন্নতের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন নন। বিসমিল্লাহকে মূল কাজের মতো গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করা উচিত; বরং কোনো দুনিয়াবী কাজের শুরুতে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া হয় তাহলে তা ওই কাজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ‘আররহীম’ শব্দে ওয়াকফের কারণে দীর্ঘ মদ করতে হবে। কিন' যদি এক আলিফ মদও না করা হয় তবে তা হবে ‘লাহনে জলী’। তদ্রূপ ‘আররাহমান’-এর মীমে এক আলিফ ‘মদ’ করা জরুরি। অক্ষরগুলো মাখরাজ থেকে আদায় করা, বিশেষত ও সঠিক মাখরাজ থেকে আদায় করাও জরুরি। দরূদ শরীফও অত্যন- বরকতপূর্ণ আমল। দুআর বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে দরূদ শরীফ অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ। এদিক থেকে তা আল্লাহ তাআলার ইবাদত। দ্বিতীয়ত এর সম্পর্ক রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে, যাঁর হক মুসলমানদের উপর তাদের প্রাণের চেয়েও বেশি এবং যিনি আল্লাহ তাআলার পরে আল্লাহর বান্দাদের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহকারী। দরূদের মাধ্যমে তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করা হয়। তাই এই আমল অত্যন- ভক্তি ও অনুরাগের সঙ্গে আদায় করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উল্লেখ এক মজলিসে বারবার হলে মাসআলাগত দিক থেকে যদিও প্রতিবার দরূদ পড়া জরুরি নয়, মুস-াহাব, কিন' এখানে বিষয়টি মহব্বতের। এজন্য-মাশাআল্লাহ-মুসলিম উম্মাহ এই মুস-াহাব আমলের বিষয়ে যত্নবান, কিন' এরপরও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কখনো কখনো উদাসীনতার শিকার হয়ে যায়। কেউ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এমনভাবে পাঠ করে, যেন তা একটি অতিরিক্ত বিষয়, এজন্য এত দ্রূত ও অস্পষ্টভাবে তা পাঠ করা হয় যে, কিছু অক্ষর সঠিকভাবে উচ্চারিতই হয় না। এটা ঠিক নয়। দরূদকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল মনে করে আদায় করা উচিত। লেখার মধ্যে তো দরূদ শরীফকে খুবই মাজলূম বানানো হয়। কেউ শুধু (স.) লেখেন, কেউ লেখেন (দ.)। যেন এটা শুধু ‘অতিরিক্ত’ বিষয়ই নয়, একটি ‘বিপদ’ও বটে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! প্রশ্ন এই যে, সম্পূর্ণ দরূদ লেখা হলে কতটুকু কালি বা কাগজ ব্যয় হবে? আহা! আমরা যদি উপলব্ধি করতে পারতাম যে, এই ব্যয়টুকুই হতে পারে আমাদের সঞ্চয়। আমাদের দেশের এমন একজন আলেমে দ্বীনের নাম আমার জানা আছে, যিনি শুধু এজন্য কোনো প্রকাশককে তার কিতাব ছাপতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন যে, তারা পূর্ণ দরূদের পরিবর্তে শুধু (দ:) ব্যবহার করতে চেয়েছিল। বলাবাহুল্য যে, এমন ব্যক্তিরাই হলেন আমাদের জন্য অনুসরণীয়।

 

advertisement