যিলকদ ১৪৪৬   ||   মে ২০২৫

ভারতে ওয়াকফ বিল
‖ হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার ভারতের মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের আরেকটি পথ খুলল

এবারের নির্যাতন ও দখলদারিত্ব গুলি বা বুলডোজার দিয়ে নয়; বরং অফিসে বসে কলমের খোঁচায় ইনসাফ ও বৈধতার তকমা লাগিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা ও অন্যান্য সম্পদ দখলের বন্দোবস্ত করা হয়েছে মসজিদ-মাদরাসাসহ ধর্মীয় স্থাপনা এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমগুলোতে ভাগ বসাতে, ক্ষেত্র বিশেষে সেগুলো ছিনিয়ে নিতে এবার মোদি সরকার পাশ করেছে ওয়াকফ বিল

এটা সবারই জানা, ওয়াকফ একটি ইসলামী শব্দ, ইসলামী পরিভাষা মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের যেসকল মাধ্যম রয়েছে, তার মধ্যে ওয়াকফ অন্যতম যুগ যুগ ধরে মুসলিমদের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনহিতকর বহু কাজ ওয়াকফের মাধ্যমে হয়ে আসছে মুসলিমদের এই ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা শুধু মুসলিমরাই উপকৃত হয়নি বা হচ্ছে না, বরং দেশে দেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছে

ভারতে মুসলিমদের শত শত বছরের ইতিহাস রয়েছে মুসলিমদের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে এই বৃহত্তর রাষ্ট্রটি মুসলিম শাসক ও জনগণ এই অঞ্চলের উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখে এসেছেন সে সূত্রে পুরো ভারতজুড়ে মুসলিমদের রয়েছে অসংখ্য ওয়াকফ সম্পত্তি ও স্থাপনা এবার সেই স্থাপনা ও সম্পত্তিগুলোতে বদ নজর পড়েছে বিজেপি সরকারের তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করে নিয়েছে ওয়াকফ বিল যে বিলে ওয়াকফের মূলনীতিতে মোটা দাগে সংশোধনী আনা হয়েছে ওয়াকফ আইন পরিবর্তন করে সেখানে মুসলিমদের সম্পত্তি এবং তাদের নিজস্ব বিষয়ে অমুসলিমদের দখলদারিত্বের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের সদস্য হিসেবে নেওয়া, এমনকি দায়িত্বশীল বানানোর সুযোগ তৈরি করা হয়েছে ওয়াকফ বিষয়ে বিরোধপূর্ণ সম্পত্তিতে ফয়সালাকারীদের মধ্যে অমুসলিমকে প্রবেশ করানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে

সন্দেহ নেই, এই বিলের মাধ্যমে মোদি সরকার ওয়াকফ সম্পদে ভাগ বসানো এবং মুসলিমদের থেকে এসব সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার রাস্তা খুলতে চেয়েছে যার ফলে পুরো ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে এখনো বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে শুধু মুসলিমরাই নয়, বরং কংগ্রেসসহ ভারতের বিরোধী দলগুলোও এই বিলের বিরোধিতা করে আসছে বিলটি ভারতের নীতি ও সংবিধান পরিপন্থি বলে মনে করছেন সে দেশের রাজনীতিক, আইনজ্ঞ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা তাই তাঁরা এই বিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অধিকার হরণ হবে বলছেন স্পষ্টভাবেই সন্দেহ নেই, মোদি সরকারের এ ধরনের কার্যক্রম শুধু মুসলিমদেরই ক্ষতি করবে না, বরং বৃহত্তর এই দেশটির অস্থিতিশীলতারও একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে

আশার কথা হচ্ছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই বিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা বলেছেন, মামলা চলমান থাকবে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত সরকার যেন কোনো অমুসলিমকে ওয়াকফ খাতে নিয়োগ না দেয় এখন দেখা যাক, চূড়ান্তভাবে সুপ্রিম কোর্টের কী রায় আসে! ভারতের কোটি কোটি মুসলিমসহ বিশ্বের শান্তিকামী জনগণ সেদিকেই চেয়ে আছেন

 

কাশ্মীর হত্যাকাণ্ড

একথাগুলো লেখা শেষ হতে না হতেই হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি সরকার মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের আরেকটি নতুন ফন্দি এঁটেছে ভারত অধিকৃত জম্মু কাশ্মীরের  পেহেলগাম আততায়ীদের গুলিতে ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে কোনো দলীল-প্রমাণ ছাড়াই নিরপরাধ মুসলমানদের ওপর চালানো হচ্ছে জুলুমের স্টিম রোলার যাকে পাও মেরে ফেল, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি গুড়িয়ে দাও এমন একটি পরিস্থিতি সেখানে এখন বিদ্যমান সন্দেহ নেই ভারতীয় মুসলমানদের জন্য জান, মাল ও ইজ্জত নিয়ে সে দেশে অবস্থান ক্রমশই সুকঠিন হয়ে উঠছে

অন্যদিকে পর্যটক হত্যার পর (যার জন্য শুধু ভারতীয় মুসলিমরাই নয়; বরং পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ পুরো বিশ্ব থেকেই নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে) নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে অভিন্ন সিন্ধু নদীর পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে, যার দ্বারা তারা এ অঞ্চলে তৈরি করেছে একটি যুদ্ধাবস্থা আগ্রাসি হিন্দুত্ববাদী এ সরকারের এসব আচরণে পুরো অঞ্চলে শত কোটি মানুষের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্কও ছড়াচ্ছে কেউ কেউ

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোসহ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের এসব আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এখন সময়ের দাবি

 

 

advertisement