রবিউল আউয়াল ১৪৩২   ||   ফেব্রুয়ারী ২০১১

সবার কাছে দোয়ার আবেদন

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

এতদিন যে কথাগুলি আমার তালিবে ইলম সাথীদের খিদমতে আরজ করেছি, ইচ্ছে হচ্ছে, তা আলকাউসারের পাঠক বন্ধুদের কাছেও নিবেদন করি। আমি তাদেরকে বিভিন্ন সময় বলেছি, আপনাদের প্রতিষ্ঠান (মারকাযুদ দাওয়াহ) এতই দুর্বল যে, জাহেরি তরক্কি কিংবা বাতেনি তরক্কির আসবাব-উপকরণ তার নেই। সুতরাং আপনাদের যদি ইলমে দ্বীন ও নুসরতে দ্বীনের কাজে মশগুল থাকতে হয় এবং এর জন্য নিজেদের কমযোরির কারণেই দুনিয়াবি উপায়-উপকরণের প্রয়োজন হয় তাহলে দোয়া ও সালাতুল হাজত ছাড়া অন্য কোনো পথ আপনাদের সামনে খোলা নেই। একইভাবে বাতেনি তরক্কি, অর্থাৎ যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সূচনা তা বাস্তবায়নেরও একমাত্র উপায়, চূড়ান্ত ত্যাগ ও কোরবানীর সাথে কাজে লেগে থাকা এবং ইত্তেবায়ে সুন্নত ও রোনাযারির দ্বারা আল্লাহর সাথে তাআল্লুক মজবুত করতে থাকা।

এজন্য প্রত্যেকের কাছে আবেদন, আপনারা মারকাযুদ দাওয়াহ ও সব ধরনের দ্বীনী মারকাযের তরক্কি, হেফাযত ও মকবুলিয়তের জন্য দৈনিক অন্তত দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ুন এবং দিল থেকে উপরোক্ত সকল মাকসাদের কামিয়াবির জন্য দোয়া করুন। অন্য সময়ের দোয়াতেও মারকাযুদ দাওয়া ও সকল দ্বীনী এদারার কথা মনে রাখুন।

আমরা আল্লাহর বান্দা এবং সকল অবস্থায় আল্লাহরই মুখাপেক্ষী। এক মুহূর্তের জন্যও মালিকের দরবার থেকে বেনিয়ায হওয়ার কোনো উপায় বান্দার নেই। শুধু বাহ্যিক অবস্থার ভিত্তিতে বিচারকারীদের কাছে উল্টো মনে হলেও একথা সত্য যে, বান্দাকে আল্লাহ যখন বাহ্যিক কিছু উপায়-উকরণ দান করেন তখন আল্লাহর প্রতি তার মুখাপেক্ষিতা আরো বেড়ে যায়। আমার নিবেদন এই যে, আল্লাহ না করুন, কারো যদি শুধু বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা থাকে তার দৃষ্টিতেও তো আমরা সহায়-সম্বলহীন। তবুও কেন দোয়া ও       রোনাযারির ইহতিমাম করি না?

কিছু দিন আগে হযরত মুদীর ছাহেব দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আমাদের মাঝে দোয়ার বিষয়ে অবহেলা শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন যে, মারকাযের জন্য আল্লাহ তাআলা যে কিতাবপত্রের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তা আলিম-তালিবে ইলমের ব্যবহার উপযোগী করে রাখার জন্য এবং মারকাযের নতুন জায়গায় (হযরতপুর প্রাঙ্গণে) রাহাত ও সুকুনের সাথে তালিবে ইলমদের কাজের ব্যবস্থা ও অন্যান্য আশু প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। অথচ আমাদের কাছে এসব কাজের জন্য ৮ হাজার টাকাও নেই। আমরা আল্লাহর কাছে অর্থ চাই না, পাঠকবৃন্দকেও অর্থের জন্য দোয়া করতে বলি না, আমরা দোয়া করি, প্রয়োজন পূরণের, জাহেরি-বাতেনি তরক্কির এবং আসানি ও কবুলিয়তের। আসবাব ও উপকরণ দ্বারা তো কখনো হাজত পূরণ হয়, কখনো হয় না। আমাদের প্রয়োজন উপকরণ নয়, ফলাফলের। অতএব ইয়া আল্লাহ! তোমার গায়বী খাযানা থেকে আমাদের সকল জরুরত ও জায়েয হাজত পুরা কর। যে সকল দ্বীনী মাকসাদের জন্য এই এদারা, ইয়া রাব! সেই সকল মাকসাদে আমাদেরকে কামিয়াব কর। কিয়ামত পর্যন্ত এই এদারাকে দ্বীনের মদদ ও নুসরতের জন্য ব্যবহার কর এবং সকল বিষয়ে আসানি ও মকবুলিয়তের দৌলত নসীব কর।

আমার তালিবে ইলম সঙ্গীদের সামনে বলা কথাগুলি আলকাউসারের পাঠকদের সামনেও আরজ করার উদ্দেশ্য হল, তাঁরাও যেন মেহেরবানী করে প্রতিদিন না হোক, মাঝে মাঝে সালাতুল হাজত পড়েন এবং মারকাযুদ দাওয়াহ ও সকল দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের জন্য ঐ দোয়া করেন। ইনশাআল্লাহ, তাঁরা নিজেরাও উপকৃত হবেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে ফায়েদা পাবেন। ফেরেশতাগণ তাঁদের দোয়ায় আমীন বলবেন এবং একই দোয়া তাদের জন্যও করবেন। সামান্য মেহনতে যদি ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় তাহলে তা কত বড় সৌভাগ্য!

আল্লাহ তাআলা আমাকে ও আমার সকল সাথী ও দোসতকে তাওফীক দান করুন। আমীন। 

 

advertisement