সফর ১৪৩২   ||   জানুয়ারী ২০১১

দৃষ্টি আকর্ষণ

 

 

গত সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগের ২০৬৯ নং প্রশ্নের উত্তরে ঈদের দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর তাকবীরকে সুন্নত বলা হয়েছে এবং তা ছুটে গেলে সাহু সিজদা না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু উক্ত তাকবীর ওয়াজিব হওয়ারও একটি মত পাওয়া যায় তাই কোনো কোনো সম্মানিত পাঠকের পক্ষ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন এসেছে। আমরা এখানে তার বিশ্লেষণ পেশ করছি।

 

 ঈদের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীরও অন্যান্য নামাযের রুকুর তাকবীরের মতো সুন্নত। এটি স্বয়ং ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর মত ও সিদ্ধান্ত এবং হানাফী মাযহাবের জাহিরুর রেওয়ায়াহ। মুতাকাদ্দিমীন ফুকাহায়ে কেরামের সিদ্ধান্তও তাই। হানাফী মাযহাবের কিতাবসমূহে তা উল্লেখ আছে। দেখুন : ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর কিতাবুল আসল (১/২২৫), মাবসূতে সারাখসী (১/২২০), আলমুহীতুল বুরহানী (২/৩০৯-৩১৪), ইমাম কুদূরী রাহ.-এর আততাজরীদ (২/৭১২), ইমাম জাসসাস রাহ.-এর মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা (১/২৭৫), আলইখতিয়ার (১/৭৮), তুহফাতুল ফুকাহা (১/২১১), বাদায়েউস সানায়ে (১/৪০৫-৪০৭), ফাতাওয়া খানিয়া (১/১২২), শরহু মুখতাসারিত তহাবী (২/১১) এবং আলফাতাওয়াস সিরাজিয়া (পৃ. ১৩)।  

উপরোক্ত সবকটি কিতাবেই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরগুলোকে ওয়াজিব আর রুকুর তাকবীরকে সুন্নত বলা হয়েছে। ঈদের নামাযের রুকুর তাকবীরের ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো হুকুম বলা হয়নি। এখানে শুধু একটি কিতাবের ইবারত উল্লেখ করা হচ্ছে। ইমাম কুদূরী রাহ. তার আততাজরীদ কিতাবে (২/৭১২) এই মতকেই প্রাধান্য দিয়ে বলেন- ...

কিন্তু পরবর্তীতে আল্লামা যাহেদী রাহ. (মৃত্যু : ৬৫৮ হি.) সর্বপ্রথম উক্ত তাকবীর ওয়াজিব হওয়ার কথা বলেছেন। জামেউর রুমূয কিতাবের হাশিয়ায় (১/১৪৩) আল্লামা যাহেদী রাহ.-এর এখতেলাফের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার পরে যেসব কিতাবে সেটিকে ওয়াজিব বলা হয়েছে, সম্ভব তা শুধু যাহেদী রাহ.-এর অনুসরণেই বলা হয়েছে। তাছাড়া তারাও সেটিকে মৌলিক ওয়াজিব বলেননি; বরং ঈদের ওয়াজিব তাকবীরগুলোর তাবে হিসেবে ওয়াজিব বলেছেন।

জাহিরুর রেওয়ায়েতের সিদ্ধান্তের বিপরীতে উক্ত মতটি মারজুহ বলে গণ্য হবে।

আলকাউসারে উক্ত জাহিরুর রেওয়ায়াহ অনুসারেই মাসআলাটি লিখা হয়ে~ূছল। সুতরাং রুকুর তাকবীর ছুটে যাওয়ার কারণে পুনরায় নামায পড়ার প্রয়োজন ছিল না। তবে যেহেতু পরের দিকের ফিকহের কিতাবগুলোতে উপরোল্লিখিত মারজুহ (দুর্বল মত) মতটিও আছে তাই মূল মাসআলা জানা না থাকায় কোনো মসজিদের ইমাম সে অনুযায়ী আমল করে ফেললে তার সাথে বাড়াবাড়ি করাও সমীচীন হবে না।

উল্লেখ্য, গত সংখ্যায় আলোচিত প্রশ্নটির জবাবে যে হাওয়ালাগুলি উল্লেখ করা হয়েছিল তাতে শরহুল মুনইয়াহসহ আরো যে সকল কিতাবের  খন্ড ও পৃষ্ঠা  নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তাতে মূলত তাকবীরাতে ইনতিকালিয়্যাহ সুন্নত হওয়া এবং সুন্নত ছেড়ে দিলে সাহু সিজদা লাগে না এ বিষয়ের মাসআলা বলা হয়েছে। কিন্তু এ কিতাবগুলোর কোনো কোনোটিতে ঈদের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীরকেও ওয়াজিব বলা হয়েছে, যার সূত্র আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি এবং সেটি যে জাহিরুর রেওয়ায়ার খেলাফ মারজুহ মত তাও উপরে বলা হয়েছে। 

 

 

advertisement