মুহাররাম ১৪৩২   ||   ডিসেম্বর ২০১০

পবিত্র অঙ্গন: বাগান থেকে পেঁচা দূরে সরানোই ভালো

ওয়ারিস রব্বানী

 

খবরটা প্রথমে এসেছে ২৮ নভেম্বরের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায়। এরপর ২৯ নভেম্বরের আরও একটি পত্রিকায় এসেছে সচিত্র খবর। খবরটি ছিল ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে।

প্রথম দিন দৈনিক মানবজমিনপত্রিকায় খবরটি কিভাবে এসেছে আমরা একটু দেখতে পারি। শিরোনামসহ হুবহু তুলে ধরা হল খবরটি।  

ইসলামিক ফাউণ্ডেশনে নাচগান নিয়ে তোলপাড় 

আহমেদ জালাল : ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে ওয়েস্টার্ন ধাঁচের নৃত্য পরিবেশনকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে। রাজধানীর  আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফাউণ্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে গতকাল সকালে এই নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ইসলামি ভাবধারা ও মূল্যবোধ বিরোধী অশ্লীল নাচ প্রদর্শনের অভিযোগে ফাউণ্ডেশন পরিচালনা বোর্ডের চারজন গভর্ণর তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠান বর্জন করেন। ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত দর্শক ও ইমামরাও। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার ঘোষণা দেন ক্ষুব্ধ গভর্ণররা। তারা বলেন, এর আগে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার গানের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে। নষ্ট করেছে সংস্থার ভাবধারা। তবে ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিদেশী ছেলেমেয়েরা তাদের দেশের কালচার অনুযায়ী নাচগান করেছে। অঙ্গভঙ্গি করেছে। তাতে দোষের কিছু হয়েছে বলে আমি মনে করি না।  

ফাউণ্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী ইসলাম সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য ইসলামিক ফাউণ্ডেশন পরিদর্শনে আসেন। তাদের সম্মানে ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা হামদ-নাত পরিবেশন শেষে তা ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করে তাদের শোনানো হয়। একপর্যায়ে দর্শকরা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের প্রার্থনা সঙ্গীত শোনার আবেদন করেন। কিন্তু ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল প্রার্থনা সঙ্গীতের পরিবর্তে তাদেরকে ডিস্কো ড্যান্স করার কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ছেলেমেয়েরা তৎক্ষণাৎ শর্ট পোশাকে তাদের দেশীয় স্টাইলে নাচ ও গান শুরু করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ফাউণ্ডেশনের পরিচালনা বোর্ডের গভর্ণর বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেসবাহুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সচিব   আজিজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, গোলাম মাওলা নকশবন্দিসহ     উপস্থিত ইমামরা বিব্রতবোধ করেন। আলেমদের দুএকজন প্রতিবাদও করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় মেসবাহুর রহমান চৌধুরীসহ অনেকেই দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।   ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেসবাহুর রহমান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানে এ ধরনের উলঙ্গ নৃত্যের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানের ভাবমর্যাদাকে বিনষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ বিষয়ে নালিশ করবেন বলে জানান তিনি।  

ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের পরিচালনা বোর্ডর আরেক গভর্ণর গোলাম মাওলা নকশবন্দি বলেন, ঘটনাটি সত্যি অপ্রত্যাশিত। আমরা যারা এ ধরনের নৃত্য দেখতে অভ্যস্ত নই তাদের কাছে এটা বেশ লজ্জারও বিষয়। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মতো একটি জায়গায় এবং একটি ইসলামিক অনুষ্ঠানে কার ইঙ্গিতে কার অনুমতিতে এই নৃত্য প্রদর্শন হয়েছে তার তদন্ত  হওয়া দরকার। উপস্থিত ব্যক্তিরা এই নাচ দেখে বিব্রত হয়েছেন বলে   মন্তব্য করেন তিনি। ফাউণ্ডেশনের আরেক গভর্ণর আজিজুর রহমান বলেন, ঘটনাক্রমে তখন আমি বাইরে চলে আসি। তবে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মতো জায়গায় এরকম কিছু হতে পারে তা আমার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।

ঘটনা এরপর আরো একটু অগ্রসর হয়েছে পরের দিন। ইফার ডিজি দফায় দফায় কয়েকটি মিটিং করেছেন বলে সংবাদপত্রে খবার বের হয়েছে। দেশের কয়েকটি ইসলামী সংগঠন ও শীর্ষস্থানীয় দুতিনজন আলেম এ ঘটনার    প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছেন। ফিলহাল লেখার সময়   পর্যন্ত এ ঘটনা নিয়ে কোনো জোরালো আন্দোলন কিংবা আন্দোলনের   প্রস্তুতির খবর জানা যায়নি।

আমাদের বক্তব্য হল, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন সরকারের ধর্মমন্ত্রণালের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান হলেও এ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত হয়। রমযানে সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ ও বার মাস চাঁদ দেখার বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে এ প্রতিষ্ঠানটিই। ইসলামী প্রকাশনা ও অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের একটি সুন্দর ঐতিহ্য আছে। তাই এ প্রতিষ্ঠানটির ভালোমন্দের সঙ্গে এ দেশের সচেতন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি আন্দোলিত হয়।

ডিজি সাহেব সম্পর্কে মশহুর কথা হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন মাইজভাণ্ডারি মার্কা মাজারপন্থ, বেদআতী-শিরিকী সংস্কৃতির কট্টর অনুরাগী। বাস্তবতা কোথায়-কতটুকু, যাচাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ ঘটনায় আমরা তার যে রূপ দেখলাম, তাতে মাজার-বাজারের বাইরেও ভয়ংকর আরেক সর্বনাশা সংস্কৃতির          কাছে মুগ্ধ হৃদয়ে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি একা কোথায়    গেলেন, তা নিয়ে আমাদের ভাবনটা ততটুকু নয়, যতটুকু ভাবনা আল্লাহর ঘর পরিচালনাকারী ও ইসলামী   কর্মকাণ্ড প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে। সেজন্যই দোহাই দিয়ে অনুরোধ করি, বাগান নষ্ট করার জন্য একটি পেঁচাই যখন যথেষ্ট হয়ে যায় তখন বাগান বাঁচানোর প্রয়োজনে পেঁচাটিকে দূরে কোথাও সরিয়ে কিংবা তাড়িয়ে দেওয়াই ভালো।

 

 

 

advertisement