মুহাররাম ১৪৩২   ||   ডিসেম্বর ২০১০

নতুন হিজরীবর্ষ: এখন বড় প্রয়োজন আত্মসমালোচনার!

১৪৩২ একটি নতুন হিজরী বর্ষের সূচনা। তবে তা এসেছে পরিসমাপ্তির পথ বেয়ে। তাই এটি বিগত সময়ের মুহাসাবা ও সামনের জন্য নতুন সংকল্পে উজ্জীবিত হওয়ার সময়। অতীতের যে সময়টুকু আল্লাহ তাআলা মর্জি মোতাবেক অতিবাহিত করার তাওফীক হয়েছে তার জন্য শোকরগোযারী আর যা গাফলত-উদাসীনতা ও আল্লাহর নাফরমানীতে বরবাদ হয়েছে তার জন্য অনুশোচনা। এটাই হল মুমিনের করণীয়। তবে মুমিনের আত্মপর্যালোচনা বর্ষকেন্দ্রিক নয়, মাস বা সপ্তাহকেন্দ্রিকও নয়। মুমিন প্রতিদিন তার কর্মের হিসাব গ্রহণ করে এবং গতকালের চেয়ে আগামীকালকে অধিক ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-সকল মানুষ প্রত্যুষে উপনীত হয় এবং নিজের সত্ত্বাকে বিক্রি করে। হয় আল্লাহর কাছে বিক্রিত হয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে। নতুবা শয়তানের কাছে বিক্রিত হয়ে নিজেকে ধ্বংস করে।(সহীহ মুসলিম ৩/১০০)

সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, ‘যখন তুমি সন্ধ্যায় উপনীত তখন প্রত্যুষের অপেক্ষা করো না। আর প্রত্যুষে করো না সন্ধ্যার অপেক্ষা। সুস্থতার সময়ই অসুস'তার কথা মনে রেখে কাজ কর। আর জীবন থেকেই সংগ্রহ কর মৃত্যুর পাথেয়। হে আল্লাহর বান্দা! তুমি জান না, আগামীকাল তোমার উপাধি কী হবে? (জীবিত না মৃত)। (জামে তিরযিমী ৫/৪৬৮)

হিজরী বর্ষের প্রথম মাস মুহারররম। কুরআন ও সুন্নাহয় এ মাস ফযীলতপূর্ণ। কিন্তু আশুরা ও শাহাদাতে হুসাইন রা.-এর কারণে এই মাসকে অমঙ্গলজনক মনে করা হয়, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হযরত হুসাইন রা.-এর শাহাদত অবশ্যই মুমিনমাত্রের জন্যই অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং তাঁর শাহাদত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাও প্রত্যেক মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। কিন্তু তাই বলে কোনোরূপ ভিত্তিহীন ধারণা পোষণের অবকাশ নেই। এ প্রসঙ্গে বর্তমান সংখ্যায় একটি নিবন্ধে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা হয়েছে। আরেকটি নিবন্ধে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. ও হযরত উমরে ফারূক রা. সম্পর্কে হযরত আলী রা.-এর কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এর তাৎপর্য নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।

গত সংখ্যায় বিত্‌র সংক্রান্ত ধারাবাহিক লেখাটি সমাপ্ত হয়েছে। বলা হয়েছিল, প্রবন্ধটির উপর একটি আলোচনা বর্তমান সংখ্যায় প্রকাশিত হবে। এর পরিবর্তে আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর লিখেছেন। ইনশাআল্লাহ পাঠকবৃন্দ তা থেকে উপকৃত হবেন।

সংবিধান সংক্রান্ত ধারাবাহিক লেখার সর্বশেষ কিস্তি অনিবার্য কারণবশত এ সংখ্যায় দেওয়া গেল না। আগামী সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তা প্রকাশিত হবে। লেবাস-পোশাকের বিষয়ে একটি লেখা আমরা গত সংখ্যায় পুনমুদ্রণ করেছিলাম। এ সংখ্যায় লেবাস-পোশাকের বিষয়ে নাহি আনিল মুনকারের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পত্রস্ত হল। ইনশাআল্লাহ এতে কিছু শিক্ষণীয় বিষয় পাঠক খুঁজে পাবেন। লেবাস-পোশাকের বিষয়ে শালীনতা বজায় রাখা ও শরীয়তের সীমারেখার ভিতরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লেবাস-পোশাক একটি প্রকাশ্য ও পরিচয়মূলক বিষয়। অথচ এ বিষয়ে আমাদের সমাজে চরম শিথিলতা লক্ষ্য করা যায়। সমাজে অশ্লীলতা ও বেহায়পনার বিস্তারে লেবাস-পোশাকের ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম-আহকাম মেনে না চলার গভীর প্রভাব রয়েছে। তাই এ বিষয়ে অবহেলার অবকাশ নেই।

 সমাজে অশ্লীলতা ও বেহায়পনার প্রতিরোধে প্রত্যেক মুমিনের সচেতন হওয়া অবশ্য কর্তব্য। যারা মুসলিম সমাজে অশ্লীলতার বিস্তার কামনা করে এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির নামে তার রসদ যুগিয়ে চলে তাদের জন্য কুরআন মজীদে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, পাপাচার যখন প্রকাশ্যে হয় এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মৌনতা ও উদাসীনতা প্রদর্শন করা হয় তখন অপরাধ শুধু মূল অপরাধীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, গোটা জাতি অপরাধী হয়ে যায়। ফলে এর কারণে ব্যাপক আযাব-গজবের সমূহ সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন। অতি সমপ্রতি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে তার নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই।

আজ প্রত্যেক মুমিনের ভেবে দেখা উচিত, আমরা কোথায় চলেছি এবং কী আমাদের পরিণতি? আসুন আমরা সবাই আমাদের কর্মের মুহাসাবা করি।

 

advertisement