যিলকদ ১৪৩১   ||   নভেম্বর - ২০১০

লজ্জা কি আবৃত করায়, না অনাবৃত রাখায়

বিনতে আলমগীর

 ইসলামে পর্দা ফরয এবং এতেই রয়েছে নারী ও পুরুষের কল্যাণ। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে এই বিধান দান করেছেন এবং মুমিন নর-নারীকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অতএব এই আদেশ শিরোধার্য করাই ছিল মুমিন বান্দার পরিচয়। কিন' এখন আমাদের অবস্থা প্রায়  বিপরীত। পর্দার কুরআনী বিধানটি ব্যাপকভাবে অবহেলিত। কেউ কেউ তো এমন কথাও বলেন যে, মনের পর্দাই বড় পর্দা (নাউযুবিল্লাহ!)। এ ধরনের কথা পর্দার বিধানকে অস্বীকার করারই    নামান্তর।

পর্দাই হল নারী-পুরুষের মনের পবিত্রতার সর্বোত্তম উপায়। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে বলেছেন, ‘এটাই পবিত্রতম পন্থা তোমাদের হৃদয়ের জন্য এবং তাঁদের জন্য।’ (সূরা আহযাব : ৫৩) উম্মুল মুমিনীনদের সাথে পর্দা করার আদেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরামকে উপরোক্ত কথা বলেছেন। অথচ তাঁদের চেয়ে পবিত্র মনের মানুষ আর কে হতে পারে?

উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা রা. বলেন, একদিন আমি ও মায়মূনা (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে ছিলাম। ইতিমধ্যে অন্ধ সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা. এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনই আমাদেরকে পর্দা করতে বললেন। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! তিনি তো অন্ধ! আমাদেরকে দেখছেন না! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না! (মুসনাদে আহমদ; জামে তিরমিযী; সুনানে আবু দাউদ)

 উম্মুল মুমিনীনদের চেয়েও কি আমাদের মন বেশি পবিত্র?

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চল। অতএব (পরপুরুষের সাথে) কথাবার্তায় কোমলতা অবলম্বন করো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি আছে সে প্রলুব্ধ হবে। তোমরা কথা বলবে (সতীত্বের) রীতি অনুসারে। তোমরা নিজ ঘরে সি'রভাবে অবস্থান করবে, আগের জাহেলী যামানার মতো সাজগোজ করে বাইরে বেড়াবে না। নামায আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাকবে। হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে কলুষতাকে দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সর্বোতভাবে পবিত্র রাখতে।’ (সূরা আহযাব : ৩২-৩৩)

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে সম্মানিত ও অভিজাত নারীদেরকে সম্বোধন করেই যখন আল্লাহ তাআলা পর্দার হুকুম দিয়েছেন তখন কোনো সাধারণ নারীর কি এ কথা বলার অবকাশ আছে যে, আমরা সভ্য ও শিক্ষিত, মনের গতিবিধির উপর আমাদের রয়েছে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, অতএব পর্দা মানার প্রয়োজন আমাদের নেই?! বলাবাহুল্য, এ এক মিথ্যা অহমিকা, যার পরিণাম অত্যন- ভয়াবহ।

কেউ কেউ এমন অজুহাতও খাড়া করেছেন যে, এখানে তো সাধারণ নারীদেরকে সম্বোধন করা হয়নি; তাহলে তারা এই হুকুমের শামিল হবেন কেন? এই অজুহাতের অসারতা বোঝার জন্য খুব বেশি চিন্তা-শক্তির প্রয়োজন নেই। কারণ পর্দার হুকুম তো দেওয়া হয়েছে মানসিক ও চারিত্রিক পবিত্রতার জন্য। আর তা কি শুধু মায়েদের প্রয়োজন, কন্যাদের তা প্রয়োজন নেই?

সত্যি বলতে কি, যুগের অবক্ষয়ে আমাদের রুচি এতই বদলে গেছে যে, নিজেদের আবৃত রাখতেই আমাদের সংকোচ, অথচ স্বাচ্ছন্দবোধ করি অনাবৃত হতে। এ তো আমাদের দীনতা। কোথায় আমরা এই দীনতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করব, আমরা খুঁজে বেড়াই বিভিন্ন অজুহাত। আমরা কি ভুলে গেছি, ভদ্রলোককে যিনি সর্বপ্রথম দাড় করিয়েছিলেন আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে মনগড়া অজুহাত? আগুনের সৃষ্টি বলে যিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সৃষ্টিকর্তার আদেশ! আমরা কি ভুলে গেছি তার পরিণাম? নিঃসন্দেহে ঐ পথ অভিশাপ ও     লাঞ্ছনার। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন।

আল্লাহ পাক কুরআন মজীদে পরিষ্কার বলেছেন, হে নবী! বলুন, আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের (মুখমণ্ডলের) উপর ঝুলিয়ে দেয়। এটা তাদেরকে (আলাদাভাবে) চেনার এবং এর ফলে (দুশ্চরিত্র বখাটে লোকদের) নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার পক্ষে সর্বাধিক কার্যকর। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব : ৫৯)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতম (নীতি)। তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবগত। মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এবং নিজেদের যীনত (সজ্জা ও সৌন্দর্য) প্রকাশ না করে তবে যা স্বতঃপ্রকাশিত। এবং যেন নিজেদের ওড়না গলা ও বুকের উপর ফেলে রাখে। তারা যেন নিজ স্বামী, নিজের পিতা, স্বামীর পিতা, নিজ পুত্র, স্বামীর পুত্র, নিজের ভাই, ভাইয়ের পুত্র, বোনের পুত্র, আপন নারীগণ, নিজ মালিকানাধীন দাসী, যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতিত কারো সামনে নিজেদের যীনত প্রকাশ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারে। (সূরা নূর : ৩০-৩১)

আজ আমাদের কর্তব্য নিজ নিজ অবস্থা অনুযায়ী আল্লাহর  কাছে তওবা করা এবং সকল মত ও পথ পরিহার করে এক আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। মেহেরবান আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

 

advertisement