হরম ও মসজিদে হরম কি এক?
বাইতুল্লাহর চারপাশে যে মসজিদ তার নাম ‘আলমাসজিদুল হারাম’, যাতে এক রাকাত নামাযের ছওয়াব লক্ষ রাকাতের সমান। পক্ষান-রে ‘হরম’ হচ্ছে মক্কা মুকাররমার ওই বিস্তীর্ণ এলাকা, যার কিছু বিশেষ আহকাম ও আদাব রয়েছে। যাকে কুরআন মজীদে ‘হারামান আমিনা’ বলা হয়েছে। এটা বাইতুল্লাহর পূর্ব দিকে আরাফা পর্যন-, পশ্চিমে হুদাইবিয়া (শুমাইছী) পর্যন-, উত্তরে জি’রানা ও ওয়াদীয়ে নাখলা পর্যন- এবং দক্ষিণে শুবাইকা পর্যন- বিস্তৃত। চতুর্দিকের সীমানায় চিহ্ন ও ফলক লাগানো আছে।
হরমের বাইরের অংশকে ‘হিল্ল’ বলে। বাইতুল্লাহ থেকে হিল্ল-এর নিকটতম স'ান হচ্ছে তানয়ীম, যেখানে মসজিদে আ’য়েশা অবসি'ত। অনেক সময় মসজিদে হারামকে সংক্ষেপে ‘হরম’ বা ‘হেরেম শরীফ’ বলা হয়। এতে অনেকের মনে এই ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, মসজিদে হারামের অপর নাম ‘হরম’। তদ্রূপ কেউ কেউ মনে করেছেন, হরমের গোটা এলাকাই মসজিদে হারাম। এই উভয় ধারণা ভুল। মসজিদে হারাম হচ্ছে বাইতুল্লাহর চারপাশের মসজিদের নাম, যার চতুর্সীমানা সবার চোখের সামনে। পক্ষান-রে হরমে (মক্কী) মক্কার ওই বিস্তৃত অংশকে বলে যার সীমানা উপরে বলা হয়েছে। বাইতুল্লাহ ও মসজিদে হারাম ছাড়াও সাফা-মারওয়া, মিনা, মুযদালিফা ইত্যাদিও হরমের সীমানার ভিতরে অবসি'ত।
এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ যে, ছওয়াবের দিক থেকে হরমের কোনো অংশে কৃত নেক আমলের ছওয়াব মসজিদে হারামে কৃত নেক আমলের সমান কি না। কোনো কোনো সালাফ গোটা হরমের এলাকাকে মসজিদে হারামের মতো মনে করেন, কিন্তু একথারও অর্থ এই নয় যে, হরমের অন্তর্ভুক্ত গোটা এলাকা মসজিদ। অন্যথায় যেসব কাজ মসজিদে করা না-জায়েয বা খেলাফে আদব তা গোটা হরমের মধ্যেও না-জায়েয ও খেলাফে আদব হত।
মনে রাখা উচিত যে, যারা গোটা হরমের এলাকাকে মসজিদে হারাম মনে করে মসজিদে হারামের জামাতে শামিল হয় না তারা নিতান- ক্ষতিগ্রস-। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, হরমের কোনো স্থানে এক রাকাতে লক্ষ রাকাতের ছওয়াব পাওয়া যায় (অথচ এর উপর কোনো স্পষ্ট ও শক্তিশালী দলীল বিদ্যমান নেই) তবুও মসজিদে হারামের বরকত ও নূরানিয়াত, বাইতুল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার উত্তম প্রভাব, আল্লাহর নেক বান্দাদের এত বড় জামাতে শামিল হওয়ার বরকত মসজিদে হারামের বাইরে কীভাবে পাওয়া যাবে? এজন্য মক্কায় থাকা অবস্থায় কোনো বাহানাতেই মসজিদে হারামের জামাত থেকে বঞ্চিত থাকা উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন।