যিলকদ ১৪৩১   ||   নভেম্বর - ২০১০

উ ল্টো যা ত্রা: হীনম্মন্যতার লক্ষণ এরকমই

খসরূ খান

খবরটি আমাদের দেশের নয়। ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত একটি বাংলা দৈনিকের আন্তর্জাতিক পাতায় খবরটি দেখেছি। ইতালির খবর। বিপুলভাবে খ্রিস্টান প্রধান কথিত আধুনিকরাষ্ট্র ইতালির একটি খবর আমাদের জন্য কিভাবে খবর হয়ে ওঠেছে-একটু ভেবে দেখা যাক। শুরুতে এপি ও দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন সূত্রে প্রকাশিত ওই খবরের প্রধান অংশটি শিরোনামসহ তুলে দিচ্ছি।

খাটো স্কার্ট পরলে জরিমানা

ইতালির সৈকতসংলগ্ন ক্যাসেলামেয়ার  ভি স্টারিয়া শহরে মেয়েদের অতিরিক্ত খাটো স্কার্ট পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীদের জরিমানা  করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার রক্ষণশীল মেয়র লুইগি বোবিওর উত্থাপিত এ সংক্রান্ত প্রস্তাব সিটি কাউন্সিলে অনুমোদিত হয়।

সিটি কাউন্সিলে পাস হওয়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো নারী আইন ভেঙ্গে এ জাতীয় স্কার্ট পরে বের হলে তাকে ৪৪৫ পাউন্ড জরিমানা দিতে হবে।

মেয়র বোবিও বলেছেন, কতটুকু পরিমাণ খাটো স্কার্ট পরা শাস্তিযোগ্য হবে, তা বোঝার জন্য স্কার্ট মেপে দেখার দরকার হবে না। এটা বিচারের জন্য একঝলক দৃষ্টি বোলানোই যথেষ্ট হবে।

অতিরিক্ত খাটো স্কার্ট পরা ছাড়াও মেয়র বোবিও সরকারি পার্কে ফুটবল খেলা ও মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কথা প্রকাশ্যে উচ্চারণ করার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

 

প্রায় দুমাস আগে এদেশের বিচার বিভাগ থেকে মেয়েদেরকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না-মর্মে একটি রায় দেওয়া হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছে। এসব খবর আমরা জানি। ভাবলে বোঝা যায়, এই রায় ও পরিপত্রের উদ্দেশ্য হল, মেয়েদের পোশাকে আবৃতকরা কিংবা অধিকতর শালীনতাআনার বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা নিলে শাস্তি পেতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন এ দেশে যদি কোনো নারী বা নারীগোষ্ঠী অতি সংক্ষিপ্তও সাংঘাতিক দৃষ্টি আকর্ষকপোশাক পরে জনসমক্ষে চলে আসেন তাকে বা তাদেরকে কি সংযমীহতে বলা যাবে? আরেকটু আবৃতহয়ে শালীনপোশাকে (সেটা বোরকাও হতে পারে) বাইরে আসতে কোনো নারীকে যদি আহ্বান জানানো হয় সেটা কি শাসি-যোগ্যঅপরাধথেকে মুক্ত থাকবে?

এদেশের বিচার বিভাগ ও একটি মন্ত্রণালয় যে নারীর অধিকতরআবরণের আয়োজনকে থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন, সেটা আমরা বুঝলাম। কিন্তু নারীর পোশাকের ন্যূনতম মাত্রা কী হবে-সে বিষয়ে এ দেশের বিচার বিভাগ আর মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগের কথা কেন শুনছি না, সেটা বুঝতে পারলাম না। বেশির ক্ষেত্রে (তাদের দৃষ্টিতে) নিয়ন্ত্রণ থাকলে তো কমের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। অথচ সেটা নেই। আমাদের দেশের আইন ও প্রশাসনের লোকেরা তাহলে কি ইতালির চেয়েও আধুনিক’?

ইতালির মতো দেশে সৈকতসংলগ্ন একটি শহরে খোলামেলা পোশাক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত হতে পারল। সেটির জন্যও কোনো আদালতের আশ্রয় নিতে হয়নি, শহরের মেয়র ও সিটি কাউন্সিলের ভূমিকাই যথেষ্ট হল। আর আামদের দেশে উল্টো শালীনতার পক্ষের পোশাকের বিরুদ্ধে আইনি প্রেরণাজুগানো হল। ওরা যখন পোশাকের ঘাটতি নিয়ে চিন্তি, আমরা তখন পোশাকের শালীনতা নিয়ে ক্ষুব্ধ। বিস্ময়ই জাগে!

এদেশে নারীকে দেহ ঢাকতে বললে অন্যায় হবে, খুলতে বললে ও খুলে চললে অন্যায় হবে না। অন্তত এখনও এ রকম কোনো আইন বা রায় হয়েছে বলে শোনা যায়নি। এ থেকেই বোঝা যায়, অনুকরণপ্রিয় আধুনিকতাআমাদেরকে আসলে আলোকিত না করে, করেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও হীনম্মন্যতাগ্রস্ত। আর হীনম্মন্যতার লক্ষণগুলো এভাবেই ফুটে উঠে। 

 

advertisement