শাওয়াল ১৪৩১   ||   অক্টোবর ২০১০

বর্বরতা: বাদী ও বিচারক সমাচার

আবু তাশরীফ

 

ড. আফিয়া সিদ্দিকী একজন পাকিস্তানী নারী বিজ্ঞানী। প্রথমে তাকে ধরে বন্দী করে রাখা হয় আফগানিস্তানের বাগরাম করাগারে। সেখানে রোমহর্ষক নির্যাতন করা হয় তার ওপর। তারপর সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেও বন্দী অবস্থায় তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। পুরো কাজটি করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর লোকেরা। বন্দী অবস্থায় তার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ততার অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করে। বছর খানেক ধরে এই মামলা চলে। গত সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে এই রায়ের বিরুদ্ধে এবং আফিয়ার মুক্তি ও তার ওপর চালানো বর্বর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে পাকিস্তানের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ আফিয়াকে মুক্ত করতে পাকিস্তান সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী বলেছেন, আমরা ড. আফিয়ার মুক্তির জন্য সব ধরনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চেষ্টা চালাব। তিনি আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তার জন্য কিছু করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

মিডিয়ার বর্ণনায় জানা গেছে, পাকিস্তানের সাবেক সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফের সম্মতি ও সহযোগিতা পাওয়ায় এফবিআই আফিয়াকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এরই মধ্যে তার তিন শিশু সন্তানও অপহৃত হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। সাবেক ক্রিকেটার ও রাজনীতিক ইমরান খান বলেছেন, আফিয়াকে যারা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছে তাদেরও বিচার করতে হবে। অনুর্ধ্ব চল্লিশ বয়সী এই মুসলিম নারী এখন বিধ্বস-, বিপর্যস্ত ও বিপন্ন মানবতার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উঠানো অভিযোগ আফিয়া ইতিপূর্বে বার বার অস্বীকার করেছেন এবং আদালতের ইহুদী বিচারকের প্রতি তার অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো আদালতে নয়, আমার নালিশ আমি আল্লাহর কাছে দিয়েছি।  

ড. আফিয়া একজন মুসলিম নারী। একটি মুসলিম দেশের তিনি নাগরিক। আমাদের জানা নেই, তার বিরুদ্ধে উঠানো অভিযোগ সত্য কি না। যদি ধরেও নিই তাতে কিছু পরিমাণ সত্যতা রয়েছে, তবুও বলতে পারি, তাকে ধরে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া, তার ওপর বর্বর নির্যাতন করা এবং ভিনদেশী নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতেই তার বিচার অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে দেশে দেশে মুসলমানরা সাংঘাতিকভাবে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ আর কোর্টের পরিধি কি তাহলে পৃথিবীব্যাপীই হয়ে গেল? যে কোনো দেশের যে কোনো নাগরিককে কি তাহলে নিজেদের স্বার্থের বিরোধী মনে করলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা-পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে? অত্যাচার-নির্যাতনের ঢালাও লাইসেন্স তাদের হাতে থাকবেই? ভিন্ন দেশের নাগরিকের ভিন্ন দেশের অপরাধের জন্য তাদের কোর্টের রায়কেই শিরোধার্য ধরতে হবে? যুক্তরাষ্ট্রের নির্যাতন নিগ্রহের বেলায় সব মানচিত্র ও সীমানা কি তাহলে বিলীন হয়ে গেল? বাস্তবতা তো সেরকমই মনে হচ্ছে। বাস্তবতা সে রকমই হলে এর চেয়ে বড় জুলমবাজ সাম্রাজ্যবাদিতা আর কিছুই হতে পারে না। অভিন্ন বাদী আর বিচারকের এমন অদ্ভুত খেলা তো আর দেখা যায়নি।

আফিয়া তো বিশ্ব মুসলিমেরই এক মুসলিম বোন। তার জন্য দেশে দেশে মুসলমানদের দুআ তো আর নির্যাতন করে বন্ধ করা যাবে না।

 

 

advertisement