শাবান-রমজান ১৪৩১   ||   আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১০

কল্যাণের দিকেঃ পিডিবির ভালো পদক্ষেপ

নগরজীবনে বিভিন্ন সেবার স্পর্শকাতরতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস-এসবের প্রবাহ বা সংযোগের নিরবচ্ছিন্নতা ভেঙ্গে গেলে নগরজীবনে এক রকম দুর্যোগ নেমে আসে। তারপরও দেশের বর্তমান পরিসি'তি এমন যে, এসব সেবার কোনো কোনোটির নিরবচ্ছিন্নতা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে লোডশেডিং না করে বিদ্যুৎ প্রবাহের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার সুযোগ এখন নেই। এ জন্যই নাকি পরিকল্পিত উপায়ে লোডশেডিং হয়ে থাকে। আবার এই লোডশেডিংয়ের সময় ও স্থান নিয়েও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কিছু নিজস্ব প্রাধান্য বিবেচনার পদ্ধতি রয়েছে। বিশ্বকাপের খেলা চলার সময় লোডশেডিং না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিয়ে জানান দেওয়া হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়েছে বলে জানা গেছে। একই কারণে দেখা গেছে, খেলা চলার আগের ও পরের দু’ এক ঘণ্টা লোডশেডিং প্রায় অবধারিত থেকেছে। এরকম একটি অবস্থার মধ্যেই গত ৭ জুলাই পিডিবির চেয়ারম্যান এক সভায় বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন আযান ও নামায চলার সময় লোডশেডিং না করার। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ সভার বক্তব্য ও নির্দেশ সারা দেশের বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। পরদিন এ বিষয়ক সংবাদও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এ সিদ্ধান্তটি (নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিখিত সিদ্ধান্তরূপে জারি করা হয়নি) একটি মৌখিক সিদ্ধান্ত এবং এ লেখা তৈরি করার সময় পর্যন্ত এর বাস্তবায়িত রূপটি যাচাই করার সুযোগ পাওয়া যায়নি, তবুও আমরা মনে করি এতে ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক মানুষ খুশি হয়েছেন। সিদ্ধান্তটিকে এদেশের প্রেক্ষাপটে গণমুখী ও বাস্তব একটি সিদ্ধান্ত বলে অনেকেই স্বাগত জানাবেন। পিডিবির চেয়ারম্যান এজন্য মুবারকবাদ পেতে পারেন। একই সঙ্গে আমরা স্মরণ করিয়ে দেওয়া দায়িত্ব মনে করি যে, সামনেই আসছে রমযানুল মুবারক। পবিত্র এ মাসের বিশেষ সময়গুলোতেও লোডশেডিং না করার সিদ্ধান্ত পিডিবির পক্ষ থেকে গ্রহণ করা দরকার। অন্যান্য আযান-নামাযের সময় ছাড়াও ইফতার-মাগরিব, সাহরি-ফজর এবং ইশা-তারাবীর কয়েক ঘণ্টা সময় দেশের কোথাও যেন লোডশেডিং না হয় এমন সিদ্ধান্ত পিডিবির পক্ষ থেকে গ্রহণ করা এবং দেশবাসীকে শান্তি ও স্বস্তিতে রমযানের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো পালন করার সুযোগ দেওয়া পিডিবির পক্ষে অসম্ভব হবে না। ভিন্ন সময়ে লোডশেডিং দিয়ে হলেও এ সময়গেুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখলে পিডিবির দায়িত্বশীলতা নিয়ে মানুষ আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া বিষয়টি একদম নতুনও নয়। নিকট অতীতেও কোনো কোনো রমযানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সময়গুলো বিবেচনা করার নজির পাওয়া যায়। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যদি গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের ইতিবাচক জীবনরীতি ও প্রোগ্রামের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রতি দেশবাসীর আস্থা বাড়বে। আসন্ন রমযানকে উপলক্ষ করে দ্রব্যমূল্যের রাশ টেনে ধরা এবং রমযানের পবিত্রতা ও পরিবেশ রক্ষা করার বিষয়ে বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এখন থেকেই সক্রিয় হলে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন। অনুগ্রহ নয়, রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেশবাসীর প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতার দিকে লক্ষ্য রাখা।

 

advertisement