শাবান-রমজান ১৪৩১   ||   আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১০

আধুনিক সমাজে সত্যিই কি নারীর স্থান আছে?

ইবনে নসীব

প্রচার-প্রচারণায় নারীর স্থান অতি উচ্চে, কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, আধুনিক সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানে প্রচার ও বাস্তবে কোনোরূপ মিল নেই। শুনতে হয়তো খারাপ শোনাচ্ছে, কিন্তু এটাই বাস্তব। তা না হলে প্রচার-প্রচারণায় যখন নারীর মর্যাদা ও অধিকার সশব্দে উপস্থিত, নারীর প্রতি সৎ ও বৈষম্যহীন আচরণ যখন সভ্যতার প্রধান মানদণ্ড, তখন বাস্তবক্ষেত্রে এই বিষয়গুলির অনুপস্থিতি এত প্রকট কেন? তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, এইসব প্রচার-প্রচাণার উদ্দেশ্য ও সুফল তাহলে কী? শুধুই একটি মেকি ভদ্রতার আবরণ তৈরি কিংবা বাক্যের পর্দায় গলিত বাস্তবতাকে আবৃত করা? মিডিয়া ও প্রচার-মাধ্যমের তত্ত্বকথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কেউ যদি ঐ সব মিডিয়ায় পরিবেশিত ঘটনাগুলোই পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, এই প্রশ্ন তাকেও বিচলিত করবে। অথচ প্রকৃত ঘটনার ক্ষুদ্র একটি ভগ্নাংশই মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। পত্রিকার পাতা থেকে সামপ্রতিক দু’একটি ঘটনা পাঠকবৃন্দের সামনে তুলে ধরছি। ঘটনা : ১. ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মহেশপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর একজন ছাত্রী। সহপাঠিনীর সাথে তার কিছুটা মনোমালিন্য ছিল। ঘটনার দিন তার সাথে কিছু তর্কবিতর্ক হলে সে শ্রেণীশিক্ষকের নিকটে অভিযোগ করল। শিক্ষক তখন মেয়েটিকে সকল ছাত্রছাত্রীর সামনে এমনভাবে বেত দিয়ে পেটালেন যে, মেয়েটি বেহুশ হয়ে গেল। আহত অবস্থায় তাকে ইশ্বরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের ডাক্তার রঞ্জন কুমার ভৌমিক বলেন, মেয়েটির সারা গা ফুলে গেছে এবং ভয়ে ও লজ্জায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। (দৈনিক কালের কণ্ঠ ৬ জুলাই পৃ. ১৫) শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীদের নিগৃহীত হওয়ার এটি খুব ছোট একটি ঘটনা। স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি, কোচিংসেন্টার এমনকি নিজ গৃহে গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে মেয়েদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কটুকথা ও প্রহার থেকে শুরু করে মানসিক নির্যাতন ও যৌননির্যাতনের ঘটনাও ঘটে চলেছে। দৈনিক পত্রিকা পাঠকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে তা নির্মোহভাবে ভেবে দেখার সৎসাহস কি আমাদের আছে? ঘটনা : ২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্রী নাজমা সুলতানা। বাসে করে যাচ্ছিলেন ভাগ্নিকে স্কুল থেকে আনার জন্য। পথিমধ্যে বাসটি একজন বৃদ্ধ পথচারীকে চাপা দিল। নাজমা চালককে বাস থামাতে বললেন এবং তাকে ধরতে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু সহযাত্রীদের কেউ তাকে সহায়তা না করে, গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হবে-এই আশঙ্কায় তার বিরোধিতা করতে লাগল। ইতিমধ্যে ড্রাইভার ও হেলপার পালিয়ে গেল। নাজমা বাস থেকে নেমে পথচারীটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখলেন। বাসযাত্রী ও পথচারীদের বারবার অনুরোধ করার পরও কেউ এগিয়ে না আসায় তিনি নিজেই একটি রিকশা-ভ্যানে করে আহত লোকটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হলেন। কিন্তু একে একে চারটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কোনোটিতেই জরুরি বিভাগ ছিল না। ইতিমধ্যে ভাগ্নির স্কুল ছুটি হয়ে গেল। বৃদ্ধকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে তিনি স্কুলে গেলেন। সেখান থেকে ফিরে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন।’ (দৈনিক কালের কণ্ঠ ১২ জুলাই, সোমবার পৃ. ৪) এখানে লক্ষ্য করার মতো অনেকগুলো বিষয় আছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে একটি ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততম সড়কে একজন রক্তাক্ত ও আহত মানুষকে নিয়ে হাসপাতালে-হাসপাতালে ছোটাছুটির কাজটি একজন নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া নিশ্চয়ই মানবিকতা নয়। একজন পুরুষও কেন এগিয়ে এসে বলতে পারলেন না যে, বোন! আপনি আপনার কাজে যান। আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করছি। কাজটি একজন নারী শুরু করেছেন বলেই কি কোনো পুরুষ এগিয়ে গেলেন না; বরং নির্বিকার চিত্তে তার ছোটাছুটি প্রত্যক্ষ করলেন? খুব শান্তভাবে ভেবে দেখা দরকার যে, নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এতসব প্রচার-প্রচারণা তাহলে কী সুফল বয়ে আনছে? সম্ভবত নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যে পদ্ধতি ও ভাষা অবলম্বন করা হচ্ছে তা-ই নারীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। বলাবাহুল্য, যেকোনো ছুতা ধরে পুরুষ বিদ্বেষী প্রচারণা কখনো নারীর জন্য স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করতে পারে না। ঘটনা : ৩. টাঙ্গাইলের সখিপুর ইউনিয়নের কাছারতা গ্রামের নবম শ্রেণীর একজন ছাত্রী। দুপুর সাড়ে বারটার দিকে সখিপুর বাজার থেকে খাতা কিনে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় চারজন যুবক তাকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে একটি মেসে নিয়ে যায়। বলাবাহুল্য, অতঃপর মেয়েটি ধর্ষিতা হল এবং দৃশ্যটি মোবাইলে ধারণ করা হল। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১২ জুলাই, সোমবার পৃ. ১৫) এই তিনটি ঘটনার প্রতিটিই আধুনিক সমাজের ঘটনা এবং ঘটনার প্রতিটি চরিত্র আধুনিক সমাজেরই সদস্য। আতঙ্কের বিষয় এই যে, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই ঘটছে এবং এত বেশি ঘটছে যে, এগুলো এখন আর আমাদেরকে স্পর্শ করে না। বলাবাহুল্য, যে সমাজে প্রতি মুহূর্তে একজন মানুষ তার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক অবস্থার শিকার হতে পারে। অতঃপর অন্যদের নিরুদ্বিগ্ন দৃষ্টিপাত ছাড়া আর কিছুই সে পায় না, সে সমাজ আর যাই হোক, সভ্যতার দাবিরদার হতে পারে না। ছোটদের সঙ্গে সমঝোতা ভাবলে অবাক হবেন, মাত্র এক থেকে তিন বছরের শিশুর মধ্যেও খুব স্বাধীনচেতা মনোভাব থাকে। এ কারণে যখন সে যা করতে চায়, তাতে যদি মা-বাবা বাধা দেন, নিষেধ করেন কিংবা ওখান থেকে তাকে নিয়ে আসেন তাহলে তার কাছে খুব দুঃসহ মনে হয়। মা-বাবার বা অভিভাবকদের এ রকম উদ্ভট আচরণের কোনো মানে সে বুঝতে পারে না। তার চেয়েও বড় কথা হল, তার এমন ভাষাশক্তি নেই, যার দ্বারা তার মনের কষ্ট সে সবাইকে বলে বোঝাতে পারে। স্বাধীনচেতা মনোভাব শিশুর বয়স দুই বছর হলে সে নিজে নিজে সবকিছু করতে চায়। এই যে স্বনির্ভরতার সঙ্গে করতে চাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা যখন তা বাধাগ্রস্ত হয় তখন এটা তার মধ্যে হতাশাও তৈরি করে। তবে সামান্য মাত্রার হতাশা তাকে কিছুটা জ্ঞান ও শিক্ষা দান করে। কিন্তু অতিরিক্ত হতাশা তার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। ফলে সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কেঁদে ওঠে। কোনো কোনো শিশু কান্নার সঙ্গে প্রচণ্ড জেদী মনোভাবও প্রদর্শন করে। স্বাভাবিক বিকাশধর্ম মনে রাখা উচিত, এ রকমভাবে শিশুর রেগে যাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষত যখন কোনোকিছু নিয়ে সে বনিবনায় পৌঁছাতে পারছে না, তখন সে রেগে যায়। এ অবস্থায় মা-বাবা বা শিশুকে যিনি লালন-পালন করেন, তিনি শিশুকে বেশি রকমের হতাশা থেকে রক্ষা করতে পারেন। এখানে এ প্রসঙ্গে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হল। আশা করি তা ফলপ্রসূ হবে। মা-বাবার করণীয় * শিশুকে যখন কোনো কিছুর জন্য অনুরোধ করছেন, তখন বন্ধুত্বের ভাষায় সুমিষ্ট স্বরে কথা বলুন। যেন তাকে আপনি অতিথি আপ্যায়নের বাকমাধুর্যে বশীভূত করবেন, কোনোরূপ আদেশ বর্ষণের মাধ্যমে নয়। * যখন সে কোনো নির্দেশ বা অনুরোধ পালন করতে চায় না; বরং না পিলার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন বেশি মাত্রায় প্রতিক্রিয়া জানাবেন না; বরং শান্ত, নরম ও স্পষ্ট উচ্চারণে তার বক্তব্যের জবাব দিন। * যখনই প্রয়োজন বা সম্ভব তার কাছে সীমিত সংখ্যক প্রস্তাব রাখুন। অনেক বিষয়ের দীর্ঘ তালিকা তুলে না ধরা ভালো। * যেসব পরিস্থিতিতে আগে সে রেগে যেত, সেরূপ অস্বস্তিকর অবস্থা যেন আবারও না ঘটে সে ব্যবস্থা নিন। ছোটখাটো ও তু্‌চ্ছ ঘটনা নিয়ে শিশুর সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদে না যাওয়াই ভালো। ষ [সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, স্বাস্থ্যকুশল, ১৪ জুলাই ’১০] দাঁত ব্রাশ কি শুধু সকালে? বেশির ভাগ মানুষ শুধু সকালে দাঁত ব্রাশ করে। কারণ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখে দুর্গন্ধ বেশি হয়। কিন্তু সকালে দাঁত ব্রাশ করার চেয়ে রাতে ব্রাশ করে ঘুমাতে যাওয়া বেশি জরুরি। সকালে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ হল রাতে বা বিকেলে যে খাবার খাওয়া হয়, তার কিছু অংশ আমাদের দাঁতে লেগে থাকে। রাতে আমরা যখন কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকি তখন এই জমে থাকা খাদ্যকণা পচে গিয়ে এসিড তৈরি করে। এখানে জমা হয় বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া। এই পচে যাওয়া খাদ্যকণা ও তাতে জমা হওয়া ব্যাকটেরিয়াল প্রোডাক্ট মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করে। এতে শুধু দুর্গন্ধ নয়, এসিড তৈরি হওয়ার কারণে দাঁতের এনামেলে স্ক্র্যাচ পড়ে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ক্যারিজ বা ক্ষয়রোগ তৈরি হয়। ক্যাভিটি হয় দাঁতে। এভাবে শুধু রাতে ব্রাশ না করার কারণে দাঁত ও মাঢ়ির অনেক অসুখ হয়। যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সঠিক নিয়মে ব্রাশ করা হতো, তাহলে এ সমস্যাগুলো অনেক কম হতো। অবশ্য সকালে নাশতার পরে আরেকবার ব্রাশ করাও জরুরি। সকালের নাশতার পর দাঁতে লেগে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার না করলে তাও পচে গিয়ে দাঁত ও মাঢ়ির ক্ষতি করতে পারে। ডা. শামীমুর রহমান বিএসএমইউ, ঢাকা [সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ ১৬ জুলাই, শুক্রবার] [* স্মর্তব্য যে, দাঁত ও মুখের পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্রাশ-পেস্ট ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই। তবে মিসওয়াকের মাঝে উপরোক্ত উপকারিতা ছাড়াও যে ফায়দা ও নূরানিয়াত রয়েছে তা অন্য কিছুতে নেই।]

 

advertisement