শাবান-রমজান ১৪৩১   ||   আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১০

একটি খোশখবর

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা একান্তই আল্লাহর রহমতে ১৪১৬ হি. মোতাবেক ১৯৯৬ ঈ. আকাবিরের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অনেক বড় ও সুদূরপ্রসারী। কিন্তু আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় এর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে অত্যন্ত দুর্বল স্কন্ধে। এরপরও যেহেতু বড়দের দুআ ও পরামর্শ ছিল তাই আল্লাহ তাআলা তাঁদের মর্যাদা রেখেছেন, ধীরগতিতে হলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণের ব্যবস্থাও আল্লাহর রহমতে ধীরে ধীরে হচ্ছে। মারকাযুদ দাওয়াহ প্রথম দিকে ছয় মাস ছিল নূরজাহান রোড, মুহাম্মদপুরে। এরপর তিন বছর মুহাম্মদী হাউজিং, মুহাম্মাদপুরে কয়েক কক্ষের একটি ভাড়া বাসায়। এ বাসাটিও যখন ছাড়তে হল তখন নতুন বাসার ব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস তেজগাঁয়ে এক বাসায় বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা হয়। এরপর তিন বছর সাত মসজিদ রোড, মুহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায়, এরপর উত্তর যাত্রাবাড়িতে তিন বছর বিনা ভাড়ায়। এই বাসার মেয়াদ যখন শেষ হয়ে আসছিল এবং ভবিষ্যত-ব্যবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ চলছিল তখন আল্লাহর এক বান্দা একটি দ্বিতল ভবনসহ ৩০/১২ পল্লবী, ঢাকার ৫ কাঠার মূল্যবান জায়গাটি হেবা করেন। যার দ্বারা তিনি নিজেও সম্মানিত হয়েছেন এবং তাঁর জায়গাটিও প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা লাভ করেছে ইনশাআল্লাহ। ২ সফর ১৪২৭ হি. মোতাবেক ২৫ মার্চ ২০০৬ ঈ. মারকাযুদ দাওয়াহ এই নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়। এখন পর্যন্ত এ জায়গাতেই মারকাযুদ দাওয়াহ তার সামর্থ্য অনুযায়ী দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে এবং ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত আঞ্জাম দিবে। কিন্তু বিদ্যমান কাজসমূহের পরিধি আরো বিস্তৃত করার জন্য এবং আরো কিছু জরুরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য এ জায়গাটি ছাড়াও একটি প্রশস্ত জায়গার প্রয়োজন ছিল, যার জন্য মারকাযের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আল্লাহর দরবারে দুআ ও রোনাযারী জারি ছিল। আল্লাহর রহমত তো শুধু বাহানা তালাশ করে। তাই মুরব্বীদের নেক দুআ ও তাওয়াজ্জুহ, তালাবা-আসাতিযা এবং মুহিব্বীন-মুতাআল্লিকীনের আহাজারির বদৌলতে আল্লাহ তাআল মেহেরবানী করে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের বৌনাকান্দি গ্রামের পূর্ব দিকের মাঠে মারকাযের জন্য প্রায় দশ বিঘা জমি দান করেছেন। ক্রয়সূত্রে মারকায এই জায়গাটুকুর মালিকানা লাভ করেছে। الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات، اللهم ما أمسى بنا من نعمة أو بأحد من خلقك فمنك وحدك لا شريك لك، فلك الحمد ولك الشكر. আল্লাহ তাআলা এই খেদমতের জন্য তাঁর যে বান্দাদেরকে ব্যবহার করেছেন তাদেরকে দ্বীন ও দুনিয়ার সকল কল্যাণ দান করুন এবং সকল অকল্যাণ থেকে রক্ষা করুন; তাদের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনকে দ্বীনের জন্য কবুল করুন এবং প্রত্যেককে দ্বীনওয়ালা, কুরআনওয়ালা ও আল্লাহওয়ালা বানিয়ে দিন। আমীন। আলহামদুলিল্লাহ, সেখানে একটি ছাপড়া মসজিদ তৈরি হয়েছে। ২৫০ X ৪৫ ফুট আয়তনের একটি ঘরও তৈরি হচ্ছে এবং আগামী শাওয়াল ১৪৩১ হিজরী থেকে ইনশাআল্লাহ মারকাযের কিছু বিভাগ সেখানে স্থানান্তরিত হবে। মশওয়ারা অনুযায়ী গত ২৭ জুমাদাল উখরা ১৪৩১ হি. মোতাবেক ১১ জুন ২০১০ জুমাবারে সেখানে একটি ওয়াজ ও দুআর মাহফিলও অনুষ্ঠিত হয়। মারকাযুদ দাওয়াহ (হযরতপুর প্রাঙ্গণ)-এর চারদিকে গ্রামের সকল বাড়িতে এই মাহফিলের দাওয়াতনামা পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। আয়োজনটি সংক্ষিপ্ত হলেও আলহামদুলিল্লাহ, উপসি'তি ছিল সন্তোষজনক। এই মাহফিলে তাৎক্ষণিক ভাবে মক্তব ও বয়স্কশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেওয়া হয় এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা রমযানের পর শুরু করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। একটি প্রশস্ত জায়গা আল্লাহ তাআলা দান করেছেন এবং আশা রাখি আরো দান করবেন। এখন আমাদের উপর ফরয তাঁর শোকরগুযারি করা । এই নেয়ামতের হক আদায়ের বিষয়ে মারকাযের মুহিব্বীন ও শুভানুধ্যায়ীদের সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখা জরুরি। এই মুহূর্তে সেখানে কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা অতি প্রয়োজন। যেমন-মহল্লার শিশু-কিশোরদের জন্য মক্তব, হেফযখানা ও প্রাথমিক শিক্ষাভবন, মারকাযের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, দারুল ইকামা (আবাসিক ভবন) ও শিক্ষাভবন, দারুত তাসনীফ (রচনা, গবেষণা ও অনুবাদ বিভাগ)-এর আলাদা ভবন ইত্যাদি। অতঃপর ৩০/১২ পল্লবী জায়গাটি, যেখানে মারকাযের কেন্দ্রীয় দফতর রয়েছে, এর পূর্ণ ব্যবহার ও আরো কিছু নতুন বিভাগ (যেমন : আততাখাসসুস ফী উলূমিল কুরআন এবং আততাখাসসুস ফিদদাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ) চালু করার জন্য ফাউণ্ডেশন দিয়ে যে কয় তলার অনুমোদন পাওয়া যায় সে কয় তলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরি। তাই কিছুদিনের জন্য মারকাযুদ দাওয়াহর সকল কার্যক্রম হযরতপুর ইউনিয়নে স্থানান্তর করতে হবে। এ কারণেও কেরানীগঞ্জের জায়গাটিতে দ্রুত অনেকগুলি ঘর তৈরি করা জরুরি। অথচ উপরোক্ত একটি কাজ করার সাধ্যও আমাদের নেই এবং এর বাহ্যিক উপায়-উপকরণও আমাদের নিকট নেই। আমরা শুধু আল্লাহর নিকট দুআ করছি এবং পাঠকবৃন্দের নিকটও দুআর আবেদন করছি। আল্লাহ তাআলাই জানেন, তিনি তাঁর কোন্‌ বান্দাদেরকে এই দ্বীনী কাজের জন্য ব্যবহার করে সৌভাগ্যবান করবেন। আলকাউসারের পাঠকবৃন্দ ও মারকাযুদ দাওয়াহর অন্যান্য মুহিব্বীন ও শুভানুধ্যয়ীর পক্ষ হতে মারকাযুদ দাওয়াহর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। যদি আল্লাহ তাআলা তাওফীক দেন তাহলে আমরা এ বিষয়ে মারকাযের দায়িত্বশীলদের মধ্য থেকে কারো বিস্তারিত সাক্ষাতকার প্রকাশ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এই খোশখবর শোনানোর অবসরে আমরা নিজেরাও দুআ করি এবং পাঠকবৃন্দের নিকটেও দুআর আবেদন করি যে, প্রত্যেক দ্বীনী এদারা, যার ভূমি ও ভবনের প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তাকে বা-বরকত প্রশস্ত ভূমি দান করুন। এ প্রসঙ্গে মাদরাসাতুল মাদীনা আশরাফাবাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ তাআলা এ প্রতিষ্ঠানটির জন্যও বা-বরকত ও প্রশস্ত ভূমি ও ভবন দান করুন। প্রফেসার হামীদুর রহমান দামাত বারাকাতুহুমের মাদরাসাগুলোর জন্যও দুআ করছি। আল্লাহ তাআলা সবাইকে বরকতের সাথে প্রশস্ত ভূমি মিলিয়ে দিন এবং সকল প্রয়োজন গায়ব থেকে পূরণ করুন। আমীন। আল্লাহ তাআলা সকল দ্বীনী এদারাকে সর্ব প্রকার যাহেরী ও বাতেনী তারাক্কী নসীব করুন এবং সব ধরনের ফেতনা-ফাসাদ থেকে হেফাযত করুন। আমীন। وما توفيقنا إلا بالله عليه توكلنا وإليه أنبنا وحسبنا الله ونعم الوكيل وصلى الله تعالى وسلم على سيدنا مولانا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين، والحمد لله رب العالمين.

 

advertisement