রজব ১৪৩১   ||   জুলাই ২০১০

ইভটিজিং

লুৎফুন নাহার রেনু

মেয়েটিকে কোচিং-এর ক্লাশে বসিয়ে দিয়ে অভিভাবকদের বসার জায়গায় আসতেই নাঈম ভাবী বললেন, ‘ভাবী, সরকার একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘‘ইভটিজিং’’ বন্ধে কঠিন আইন হচ্ছে।’ আমি গুছিয়ে বসতে বসতে বললাম, ‘আইন হলেই যে ‘‘ইভটিজিং’’ বন্ধ হবে তা কি আপনার মনে হয়? এ বিষয়ে আমাদেরও কিছু করণীয় আছে। আজ পথে ঘাটে, মার্কেটে, শপিং সেন্টারে এমনকি কলেজ-ভার্সিটিতেও মেয়েদের যে পোশাক-আশাক দেখা যায় তা তো চলচ্চিচত্রের অভিনেত্রীদেরও হার মানিয়ে দেয়। আমাদের মেয়েদের পোশাক সংক্ষিপ্ত ও আঁটোসাঁটো হয়েছে। চাল-চলন ও অভিব্যক্তিতেও এমন অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে, যা যুবকদের আকৃষ্ট করে। অন্যদিকে যুবসমাজকে অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অবাধ আকাশ-সংস্কৃতি। টিভি-ভিসিআর এবং সিডি-ইন্টারনেটের অশ্লীলতায় অনেক শিক্ষিত, ভদ্র, মুখচোরা যুবকও বখাটের মতো আচরণ করে বসে। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে শুধু আইন করে কি ইভটিজিং বন্ধ করা যাবে?’’ নিগার আপা বললেন, ‘আর সমস্যা তো শুধু ইভটিজিং নিয়ে নয়, এখন তো মেয়েরা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নির্যাতিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও কি নিরাপদ? ক’দিন আগে ইডেন কলেজের যে ঘটনা সংবাদপত্রে এল তা তো এককথায় রোমহর্ষক! সংবাদপত্রের উপর চোখ বুলালেই চোখে পড়বে নারীদের নিগৃহিত হওয়ার নানা ঘটনা। তরুণী-যুবতীদের হত্যা ও আত্মহত্যার মর্মান্তিক সব সংবাদ। আরো কত নীরব কান্না যে কত মেয়ের বুকে গুমড়ে মরছে তার খবর কে রাখে?’’ আমি বললাম, ‘‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। পরিচ্ছন্ন ও চিরআধুনিক। এমন কোনো বিষয় নেই, যা আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অহীর মাধ্যমে জানাননি। আমরা যারা পবিত্র কুরআন পেয়েছি আমাদের পথ-নির্দেশক হিসেবে তাদের মতো সৌভাগ্যবান আর কে আছে? আমরা পর্দার হুকুমের মাধ্যমে সম্মানিত হয়েছি। নারীর প্রকৃত সম্মান ও অধিকার কুরআনের অনুসরণের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলাম কখনো অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক নয়। নারীদের স্বাধীনতার পথেও নয়। আমরা কি পারি না কুরআনের পথে চলে নিজেদের ইজ্জত-আব্রু হেফাযত করতে? পথেঘাটে যদি বের হতেই হয় তাহলে আল্লাহর হুকুম মেনে শরীয়ত মোতাবেক পর্দা করে বের হলে যুবসমাজ বিভ্রান্ত হবে না; বরং মেয়েদের লাঞ্ছিত করার পরিবর্তে সম্মান করতে শিখবে। নাঈম ভাবীসহ অন্যরাও প্রায় একই সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে। আর তার পথ হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধান মোতাবেক চলা।’ কথা বলতে বলতে সময় যে কীভাবে কেটে গেল তা বুঝতে পরিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোচিং শেষের ঘণ্টা বাজল। এখন মেয়ে-বোনকে নিয়ে সবাইকে ঘরে ফিরতে হবে পথের কঠিন বিপদের মধ্যে দিয়ে।

 

advertisement