রজব ১৪৩১   ||   জুলাই ২০১০

সেক্যুলার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গল্প

ওয়ারিস রব্বানী

কিছুদিন আগে মফস্বলের এক দ্বীনদার শিক্ষিত তরুণের সঙ্গে সাক্ষাত। এক বাসা থেকে প্রাইভেট পড়িয়ে তিনি বের হয়েছেন মাত্র। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেল, চাকরির বাজারের মন্দা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে গত কিছুদিন ধরেই তার চাকরিটা হচ্ছে হচ্ছে করেও হয়নি। সরকারি চাকরি পেতে গেলে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের লিখিত সুপারিশনামা লাগে বলে সে পথে হাঁটা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাছাড়া একটি তৈরি পোশাক ডিজাইন-নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে সব ব্যবস'া পাকাপাকি হওয়ার পরও শেষ পর্যন- তার চাকরিটা সেখানে হয়নি। কেন হয়নি? সে গল্পটাই এখানে আলোচনার বিষয়। ওই তরুণকে যিনি পছন্দ করেছিলেন এবং কাজ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি যোগাযোগের একপর্যায়ে তাকে খোলাখুলি বললেন, বেশভূষা ও ধর্মপ্রবণতার জন্যই তার চাকরিটা হচ্ছে না। ওই প্রতিষ্ঠানের নির্মাতাদের একজন আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, প্রতিষ্ঠান শুরু করার সময়ই তাদের প্রতিজ্ঞা ছিল তারা প্রতিষ্ঠানটিকে সেক্যুলার চরিত্রের একটি প্রতিষ্ঠান বানাবেন। আর চাকরি-প্রত্যাশী ওই তরুণের মাথায় টুপি, পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি। এটাতো সেক্যুলার চরিত্রের সঙ্গে মিলে না। অতএব তাকে চাকরি দেওয়া যায় না।’ আমার জানা মতে, এদেশের আরো বহু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের অবস'া একই রকম। প্রতিষ্ঠানের ‘সেক্যুলার’ চরিত্রের জন্য স্টাফের টুপি, দাড়ি কিংবা বোরকা বিষয়ে একটা সূক্ষ্ম বাধা কিংবা দ্বিধা সেখানে কাজ করে। কোনো কোনো স্কুল, কোনো কোনো কলেজের ভেতরের অবস'া খোঁজ নিলেও এ ধরনের চিত্র পাওয়া যায়। বহু ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের চরিত্রে এই ‘প্রাতিষ্ঠানিক সেক্যুলারিজমে’র নানা আলামত বিদ্যমান। ব্যক্তির ইসলামী পোশাক-আশাক ও চাল-চলনের কারণে তাকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ‘সেক্যুলার’ চরিত্র রক্ষা করা হচ্ছে। এ তো গেল প্রাতিষ্ঠানিক সেক্যুলারিজমের কথা। এবার ব্যক্তির ‘সেক্যুলার’ হওয়ার নমুনা দেখা যাক। একজন মুসলিম তরুণ। নিজেকে সে মুসলিম মনে করে। নাসি-ক্যবাদের অন্ধত্ব তার মাথায় সওয়ার হয়নি। নামায-রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের সঙ্গে সম্পর্ক কিছু কিছু রক্ষাও করে। তাকে পরিচয় করে দেওয়া হচ্ছে এভাবে- ‘নামায রোযা করলে কী হবে, সে অত্যন- সেক্যুলার মানুষ।’ এই পরিচিতিতে ওই তরুণও কুণ্ঠিত হচ্ছে না। একজন ধর্মাবলম্বী তরুণ, কিন' সেক্যুলার! আলোচনা ও উপস'াপনার প্রথম পর্যায়ে বিষয়টিকে মানসিক উদারতার একটি বিষয় বলে ভ্রম হয়। মনে হতে থাকে, ভিন্নধর্র্মীদের সঙ্গে তরুণটির সহাবস'ান-যোগ্যতার বিষয়টিকেই ‘সেক্যুলার’ শব্দের মধ্য দিয়ে বড় করে দেখানো হচ্ছে। কিন' চিন-া করতে গেলেই খটকা লাগে। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ বা ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে কোন্‌ উপায়ে সেক্যুলার হতে পারেন? একজন মানুষ ধর্মপ্রাণ হলে আবার ধর্মনিরপেক্ষ হন কীভাবে? ন্যূনতম ঈমানওয়ালা কোনো মুসলমানের পক্ষে কি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব? দুই. রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বানানোর কথা আমরা শুনি। যারা রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বানানোর পক্ষে তারা নানা ধরনের যুক্তি পেশ করেন। সেসব যুক্তির মাঝে সবচেয়ে নিরীহ ও মোলায়েম যুক্তিটি হল-ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। একটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকেন। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারেন, সমস্যা নেই। কিন' রাষ্ট্র যেহেতু সবার, তাই রাষ্ট্র কোনো ধর্মের পক্ষে থাকবে না। এভাবেই রাষ্ট্র সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হবে। এ যুক্তিটা শুনলে মনে হতে পারে রাষ্ট্রের ‘সেক্যুলার’ হয়ে ওঠার মাঝে নির্বিরোধত্বের দাবিটাই বড়। এর যে সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত রূপ থাকতে পারে প্রথম ধাক্কায় তা মনে জাগেই না। সেক্যুলার রাষ্ট্রের প্রবক্তারা যখন বলেন-ধর্ম যার যার, ... তখন বিভ্রম তৈরি হয় যে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্মাচরণ ও ধর্মানুসরণকে তো তারা নিরুৎসাহিত করছেন না। তারা কেবল বলছেন, রাষ্ট্রকে কোনো একটি ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে পৃথক রাখতে হবে। অথচ তার জেরটি প্রকাশ পাচ্ছে এখন এভাবে যে, ব্যক্তিও ‘সেক্যুলার’ হয়ে যাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠানও ‘সেক্যুলার’ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে তাদের কথামতো ধর্ম কি যার যার থাকল? ‘সেক্যুলার’ কথাটির বাংলা তরজমা জোর করে করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতা। সেক্যুলার শব্দটির মর্ম ও ভাব কি আসলে এতটুকুই? দেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শব্দটির প্রয়োগ ও মর্ম খুঁজে দেখলে অনুমিত হয় যে, সেক্যুলার অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, ধর্মহীনতা। এ দেশের বিবেচনায় অবশ্য সেক্যুলার শব্দের অর্থ ব্যাপকভাবে ধর্মহীনতাও নয়; প্রধান ও বিশেষ একটি ধর্মের শূন্যতাকেই এখানে সেক্যুলারিজম বলে প্রচার করা হয়। কারণ এখানে সেক্যুলারিষ্ট হিসেবে পরিচিত সুশীল ও রাজনীতিকরা যখন কোনো মন্দির-গির্জায় যান এবং নানা বিষয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান তখন তার সেক্যুলার চরিত্র নষ্ট হয় না, কিন' কোনো মসজিদ-মাদরাসায় যেতে তিনি দ্বিধান্বিত থাকেন, কেবল তার সেক্যুলার ইমেজটা ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে। এ দেশে টুপি-দাড়ি, পাঞ্জাবি-পাজামা থাকলে সেক্যুলার থাকা যায় না, কিন' ধুতি, পৈতা, ক্রুশ, উত্তরীয় ও গৌঢ় বসন থাকলে সেক্যুলার থাকতে সমস্যা হয় না। বোরকায় সমস্যা হয়, সিঁথির সিঁদুরে সমস্যা হয় না। রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বানানোর কথা বলার সময় বলা হয়-ধর্ম যার যার, কিন' বাস-ব পরিসি'তিতে দেখা যায়, ধর্ম কারো কারো। সবার ধর্মাচরণকে প্রচলিত সেক্যুলারিজমের দৃষ্টিতে স্বীকার করা হয় না। মুখে বলা হয়, সেক্যুলার হতে পারে কেবল রাষ্ট্র, এর কোনো প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজ পর্যায়ে পড়তে পারে না। অথচ এখন সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়েও সেক্যুলার হওয়ার নমুনা চালু হয়ে যাচ্ছে। মুখে বলা হয় সেক্যুলারিজম মানে ধর্মনিরপেক্ষতা, কিন' সেক্যুলারিজম মানে যে বিশেষ একটি ধর্মের শূন্যতা, বাস-বে তার আলামতই চারদিকে দৃশ্যমান। এমন সেক্যুলার কি একজন ন্যূনতম ঈমানওয়ালা মুসলমানের পক্ষে হওয়া সম্ভব? এমন সেক্যুলারিজম কি কোনো ন্যায়বান মানুষ কোনো দেশে চাইতে পারেন? তিন. যেকোনো মুসলমানের জন্য অপর ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস'ান ও সদাচারের বিষয়টিকে ধর্মনিরপেক্ষতা হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো প্রয়োজন কি আছে? ব্যক্তি হোক, প্রতিষ্ঠান, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র হোক সব ক্ষেত্রেই তো সহাবস'ান ও সদাচারের বিষয়টি ধর্মীয় প্রেরণা থেকেই করা যায়; অন-ত ইসলামের ক্ষেত্রে। ইসলাম তো সবার জন্য উদার দস-রখানা বিছিয়েই রেখেছে। তারপরও সবক্ষেত্রে মুসলমানদের মাঝে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়ার তাৎপর্য কী-এ সময়ে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। হাল আমলে প্রণীত শিক্ষানীতির ক্ষেত্রেও প্রথমে ‘সেক্যুলার’ এবং পরে প্রতিবাদের মুখে তার পরিবর্তে ‘অসামপ্রদায়িকতা’ ধরনের শব্দ বসানো হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের রাষ্ট্রকে ‘সেক্যুলার’ বানানো কিংবা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন- সেক্যুলার রূপে গড়ে তোলার এ চেষ্টা বা প্রবণতার পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা কি আসলে কোনো সূক্ষ্ম বিষয়? নিজ ধর্মের প্রতি একজন মুসলমানের একক আস'া একটু একটু করে আলগা করে দেওয়ার পথ রচনাই এসব সেক্যুলার-কসরতের টার্গেট-বললে কি ভুল বলা হবে? নিজের ধর্মকে ভালো মনে করেও অপর ধর্মগুলির প্রতি সূক্ষ্ম একটি আত্মিক স্বীকৃতির পথ এ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা এর উদ্দেশ্য। একটু একটু করে সর্বধর্মীয় মানসিকতার স্রোতে গা এলিয়ে দেওয়ার অনুভূতি সামনে চলে আসে এ উপায়ে। মুসলমানের হৃদয় থেকে ঈমানী গায়রতকে উচ্ছেদ করে কথিত ‘সহনশীলতা’র মেজাজ এ প্রক্রিয়ায় চাঙ্গা করা হয়। বাদশাহ আকবর সাহেব তার ‘দ্বীনে এলাহী’ দিয়ে এ কাজটিই করেছিলেন কিছুটা সরাসরি উপায়ে। আর আজ মুসলিম পরিচিতি নিয়েও ব্যক্তিপর্যায়ে ‘সেক্যুলার’ বানানোর মধ্য দিয়ে এ কাজটি করা হচ্ছে কৌশলে। রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বানানোর প্রয়াসের সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি, স্বার্থ ও মতবাদের সম্পর্ক থাকে। শোনা যাচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে আবার সেক্যুলার রাষ্ট্রের পোশাক গায়ে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সে রকম কিছু আদৌ হবে কি না কিংবা হয়েই গেলে তখন কী হবে-এসব তর্কের জায়গা এটি নয়। কিন' ব্যক্তি, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে সেক্যুলার বানানো বা হওয়ার যে ধ্বংসাত্মক কসরত শুরু হয়েছে এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেক্যুলারবাদীরা তাদের সম্পৃক্ততা বা আগ্রহের কথা প্রকাশ্যে বলেন না বলেই এতদিন জেনে এসেছি; বরং তারা বলে এসেছেন-ধর্ম যার যার। তাদের এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, ব্যক্তি পর্যায়ে ধর্মপ্রাণতাকে তারা একদমই নিরুৎসাহিত করেন না। কিন' শব্দের প্রয়োগ যাই থাকুক, বাস-বে দেখা যাচ্ছে, আস'াহীন, সংহতিবোধ-হীন ও দুর্বলচিত্ত মুসলিমের এক নব সংস্করণ গড়ে উঠছে সেক্যুলার মুসলিমরূপে। সেক্যুলার চেতনাধারী এই মুসলিমদের অবস'া হচ্ছে এই যে, ইসলামের অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো শিআর বা বৈশিষ্ট্য ও প্রতীক নিয়ে অবমাননাকর কোনো ঘটনা ঘটলেও তিনি নিস-রঙ্গ দীঘির জলের মতোই থাকেন অচঞ্চল ও নির্বিকার। তার সামনে এটা কোনো ইস্যুই নয়। কারণ তিনি তো সেক্যুলার চেতনা লালন করেন। ধর্মীয় বিষয়ে প্রতিক্রিয়া গ্রহণ বা প্রকাশের মধ্যে তো তিনি যেতে পারেন না। উম্মাহর কোনো অংশে ভয়াবহ বিপর্যয় ও বেদনা নেমে এলেও তার হাস্যোচ্ছল অন-রে মালিন্যের কোনো ছাপ পড়ে না। কারণ তার অন-র তো একটি ধর্ম বা ধর্মানুসারীদের জন্য বরাদ্দ নয়, সেখানে সব ধর্মের স'ান। সুতরাং উম্মাহর কোথাও কিছু ঘটলেই তিনি মুষড়ে পড়তে পারেন না! এভাবে সংহতিবোধ-শূন্য, ঐক্যচেতনারহিত ও প্রাণহীন এক উদার মুসলিম জেনারেশন গড়ে উঠছে সেক্যুলার মুসলিমের নামে। চার. বিশ্বাস, আস'া, স্বীকৃতি ও চেতনায় গভীরভাবে ইসলামকে গ্রহণ ও লালন করাই হচ্ছে যেকোনো মুসলমানের ন্যূনতম ঈমানের শর্ত। আল্লাহর কাছে নিজ ধর্মের একক গ্রহণযোগ্যতা, নিজ ধর্মের পূর্ণাঙ্গতা এবং চূড়ান-তা সম্পর্কে পূর্ণ আস'াই মুসলমানের মুসলিম পরিচিতির প্রথম পাঠ। বিশ্বাস, আস'া ও চেতনায় এ অবস'ান থেকে সামান্য সরে আসলে কোনো মুসলমানের পক্ষে মুসলমান হিসেবে গণ্য হওয়ার কোনো অবকাশ থাকার কথা নয়। এরপর আসে অপর ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সদাচার, তাদের সঙ্গে সহাবস'ানের ইসলামস্বীকৃত উজ্জ্বল আদর্শের পাঠ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথে সদাচার ও কল্যাণকামিতা ইসলামের শিক্ষা। বিপদাপদে অমুসলিমদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার শিক্ষা ইসলামে রয়েছে। নিজের ধর্ম বিশ্বাসে ভেতর-বাহিরে অনঢ় থেকে অপরের প্রতি সৌজন্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য। নিজের বিশ্বাস ও আস'াকে ধুসর করে দিয়ে কিংবা সে চেতনা থেকে আলগা হয়ে গিয়ে কেউ যদি ‘উদার’ হওয়ার জন্য ‘সেক্যুলার’ হতে চান তাহলে তিনি তার পরিণতি নিজ হাতে নিয়েই তা হতে পারেন। অন্য কোনোভাবে নয়। পাঁচ. হৃদয়, বোধ, চেতনা ও বিশ্বাস হচ্ছে একান-ই পবিত্রতায় আচ্ছাদিত অখণ্ডনীয় একটি অবয়ব। আর বাস-ব ময়দানে সহাবস'ান, সদাচার ও সৌজন্য হচ্ছে একটি বিস-ৃত অনুশীলনের দেহ। একটার সঙ্গে অপরটিকে সবক্ষেত্রে মিলিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। সবার সঙ্গে চলতে হবে, সৌজন্যও রক্ষা করতে হবে। কিন' সবার বিশ্বাস ও চেতনাকে ধারণ করা তো যাবে না। জীবন চলার পথে একজন বিশ্বাসী মুসলিমের এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় খোলা নেই বলেই মানি। এক্ষেত্রে রাজনীতি, দলমত কিংবা তত্ত্বের দখলদারিত্বের কোনো সুযোগ করে দিয়ে যারা বিশ্বাসের শুভ্রতাকে মলিন করতে উদ্যোগী হবেন তারা অবশ্যই ভুল করবেন এবং এ ভুলটি জাগতিক ভুলচুকের হিসাব অতিক্রম করে তাদেরকে পরকালের অনন- গভীর সংকটে নিক্ষেপ করতে পারে। মতাদর্শ কিংবা দলীয় পক্ষ-বিপক্ষ বিবেচনা থেকে যেকোনো বিষয়কে দেখার একটা অভ্যাস আমাদের সমাজে চালু হয়ে গেছে। এমনকি অপরিহার্য ও অকাট্য ধর্মীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও এ বদ অভ্যাসটি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি না। বদ অভ্যাসের এ মহামারির মধ্যে বাস করে বর্তমান আলোচনাটিকেও সে চোখে না দেখতে অনুরোধ করা আমাদের দায়িত্ব। আমার আপনার প্রত্যেকের জীবনের অমূল্য সম্পদ-ঈমানের হেফাযতের জন্য আসুন সবাই সতর্ক হই। ব্যক্তিগত জীবনে ‘সেক্যুলার’ হওয়ার ধ্বংসাত্মক রোগ থেকে মুক্ত থাকি।

 

advertisement