দুটি বিদআত: ‘লাইলাতুর রাগাইব ও শবে ইস্তেফতাহ পালন
কিছুদিন আগে একটি মসজিদে ‘ইসলামী পবিত্র দিনসমূহ’ শিরোনামের একটি তালিকা নজরে পড়ল। সযত্নে লেখা এই তালিকাটিতে দেখলাম, রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার ‘লাইলাতুর রাগাইব’ আর রজবের পনেরো তারিখ ‘শবে ইস্তেফতাহ’।
আসলে রজব মাস নিয়ে কোনো কোনো মহলে বিভিন্ন কল্পিত বিদআত ও রসমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এর সমর্থনে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও জালকৃত বিভিন্ন বর্ণনাও ‘মাকছুদুল মুমিনীন’ ও ‘বার চাঁদের ফযীলত ও আমল’ জাতীয় কিছু অনির্ভরযোগ্য বইয়ে পাওয়া যায়। যেমন একটি জাল বর্ণনা হল, ‘যারা রজব মাসে রোযা রাখে তাদের গুনামাফীর জন্য ফেরেশতাকুল রজবের প্রথম জুমআর রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়ায় মগ্ন থাকেন।’
এরকম আরেকটি ভিত্তিহীন বর্ণনা হল, ‘যে ব্যক্তি রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার রোযা রাখে অতঃপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে দু’রাকাত করে (বিশেষ পদ্ধতিতে) বার রাকাত নামায আদায় করে তার সকল প্রয়োজন পূরণ করা হয় এবং তার সকল গুনাহ মাফ করা হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, বালুকণা, পাহাড়ের ওজন এবং বৃক্ষের পাতার সমপরিমাণ হয়। আর কিয়ামতের দিন সে তার পরিবারের সাত শত গুনাহগার জাহান্নামের উপযোগী মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।’ প্রয়োজন পূরণের কথিত এই রাতটির নামও রাখা হয়েছে ‘লাইলাতুর রাগাইব’। আর বিশেষ পদ্ধতির উল্লেখিত নামাযের নাম ‘সালাতুর রাগাইব’।
এমনিভাবে পনের রজবের রাত সম্পর্কিত একটি জাল বর্ণনা হল, ‘এ রাতে চার রাকাত নামায বিশেষ নিয়মে আদায় করে নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরূদ, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল আদায় করলে আল্লাহর পক্ষ হতে তার নিকট এক হাজার ফেরেশতা পাঠানো হয়। যারা ঐ ব্যক্তির জন্য নেকী লিখতে থাকেন এবং ঐ রাত পর্যন্ত যত গুনাহ সে করেছে সব ক্ষমা করে দেন। অবশেষে তার কাঁধে হাত রেখে একজন ফেরেশতা বলে, তুমি নতুন করে আমল শুরু কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন ...।’
গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নতুন করে আমল শুরু করার এই বানোয়াট বর্ণনার কারণেই সম্ভবত এই রাতের নাম রাখা হয়েছে ‘শবে ইস্তেফতাহ’।
উল্লেখিত বর্ণনা ছাড়াও এই দুই রাত সম্পর্কে এই ধরনের আরো প্রচুর পরিমাণ ভিত্তিহীন বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল, শরীয়তে ‘লাইলাতুর রাগাইব’ ও ‘শবে ইস্তেফতাহ’ নামে বিশেষ মহিমান্বিত কোনো রাতের অস্তিত্বই নেই।
নামে-বেনামে রজব মাসে এই বিশেষ রাত উদযাপন হচ্ছে নবউদ্ভাবিত বিদআত। কুরআন ও সুন্নাহ্য় যার কোনো প্রমাণ নেই। তেমনিভাবে ঐ রাত বা দিনগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট নামায-রোযা বা অন্য কোনো বিশেষ আমলের কথাও ইসলামে নেই। এ সম্পর্কিত সকল বর্ণনা ও রেওয়ায়েত সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও জাল।
অতএব ‘লাইলাতুর রাগাইব’ হোক কিংবা ‘শবে ইস্তেফতাহ’ এগুলো উদযাপন করা কিংবা কল্পিত ও ভিত্তিহীন বর্ণনার উপর নির্ভর করে বিশেষ ধরনের আমল করা সবই পরিত্যাজ্য। এগুলো থেকে দূরে থাকাই একজন মুমিনের একান্ত কর্তব্য।