রজব ১৪৩৮   ||   এপ্রিল ২০১৭

বিশ্বাস করাতে হবে আব্বু আমার আপন

মুহাম্মাদ আবদুর রহমান

ছোট্ট শিশুরা খেলা-ধুলা করে। কখনো একা একা, কখনো কয়েকজন মিলে। কিন্তু সবার কাছে তো খেলনা থাকে না। তখন কয়েকজন মিলে একটা দিয়ে খেলে। একজনের কাছে হয়তো একটা গাড়ি আছে। মানব-চালিত গাড়ি। মালিকশিশুটি তাতে চড়ে। আর অন্যরা ধাক্কা দেয়। কখনো অন্যরাও তাতে চড়ার ও চালনার সুযোগ পায়। এতেই ওদের আনন্দ।

শিশুর নির্মল মন এতে কোনো আপমান বোধ করে না। কিন্তু বড়দের মনে এই দৃশ্যটি কখনো গ্লানির সৃষ্টি করে।

কখনো সবার সামনেই ধমক দিয়ে বলে ওঠেন- এই! তোরে কি ও কামলা রেখেছে? যা, বাড়ি যা! শিশুটি তখন লজ্জা পায়। নিজেকে ছোট মনে হয়। সে তো শুধু খেলছিল, কামলা তো খাটছিল না! কখনো বা ঘরে এনে বলেন, জান! তোমার ছেলে পরের কামলা দেয়! একদম শরম নেই।

এইভাবে শাসন করে শিশুর মনে বপন করা হয় হিংসার বীজ। ধীরে ধীরে দানা বাধে জেদ ও দর্প। খোলা মনের খিড়কি বন্ধ হতে থাকে। এক সময় তা বের হয়ে আসে জিঘাংসা ও পরশ্রীকাতরতার রূপে। তাই অভিভাবককে সতর্ক হতে হবে। সচেতন হতে হবে নিজের ভেতরের জগৎ সম্পর্কে। শাসনে-সোহাগে আসলে প্রকাশিত হয় আমাদেরই ভেতরের রূপ।

শিশুর হৃদয়ভূমি উর্বর শস্যক্ষেত্র। তাতে যা বপন করা হবে তা-ই উৎপন্ন হবে। তাই বাবার প্রথম কর্তব্য নিজের চিন্তা ও হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করা। এরপর সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

শিশুকে শেখাতে হবে কোমল ভাষায়। নরম কথায়। হিংসা বিদ্বেষ নয়, তাকে সচেতন করতে হবে ভদ্রতা ও আত্মমর্যাদা সম্পর্কে। ধীরে ধীরে; কখনো আব্বু ডেকে, কখনো আদর সোহাগ করে, কখনো চকোলেট দিয়ে, আবার কখনো ঈষৎ ধমক দিয়ে।

 

শিশু যেন বিশ্বাস করে ইনি আব্বা। আমার আপন, আমাকে কত আদর করেন। শিশু তখন বাবাকে দেখে পালিয়ে যাবে না। বাইরে থেকে এলে দৌড়ে কাছে আসবে। কাছে থাকতে ভালবাসবে। সামনে যা কিছু করা হবে কৌতূহলী হয়ে দেখবে, বোঝার চেষ্টা করবে। এই আগ্রহ, স্পৃহা, এই কৌতূহল ও স্বতস্ফূর্ততা অনেক বড় সম্পদ!

 

 

advertisement