জুমাদাল উলা ১৪৩১   ||   মে ২০১০

জীবন-গাঙের বাঁকে বাঁকে-(২)

মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী

যে দেশেতে জন্ম আমার (কৃতি পুরুষদের আলোচনা) মরক্কো নিবাসী বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা যে নদীটিকে তার বিখ্যাত সফরনামায় বলেছেন ‘নহরে আযরাক’ তা হচ্ছে আমাদের সুরমা নদী। এই সুরমা ও কুশিয়ারা বিধৌত বৃহত্তর সিলেট সম্পর্কে আর্য পণ্ডিতরা বলতেন ‘শ্রীহট্ট মধ্যমা নাস্তি’। অর্থাৎ সিলেট মধ্যম পর্যায়ের জনপদ নয়, এটা নির্ঘাত উত্তম শ্রেণীভুক্ত। ভূ-প্রকৃতির সৌন্দর্য সুষমায় এটিকে তুলনা করা হয় মর্তের স্বর্গ ‘কাশ্মীর জান্নাত-নযীর’-এর রাজধানী শ্রী নগরের সাথে। তাই বিশাল ভারতীয় উপমহাদেশে ‘শ্রী’ শব্দ সংযোগে গঠিত মাত্র দু’টি জনপদের প্রথমটি শ্রীনগর, দ্বিতীয়টি শ্রীহট্ট বা সিলেট। হিন্দু পণ্ডিতদের ব্যাখ্যায় যেখানে শ্রীর হস্ত পড়েছে সেটাই শ্রীহট্ট, আর মুসলিম ব্যাখ্যায় শেষ হিন্দুরাজ গৌড় গোবিন্দের নির্মিত প্রস্তর প্রাচীর ডিঙানোর প্রচেষ্টায় ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল ইয়ামানী রাহ. বলেছিলেন, ‘শিল-হট’ অর্থাৎ ‘পাথর সরে যা’-তাই এ জনপদের নাম শিলহট। ইংরেজরা একে তাদের বানানে লিখত ঝুষযবঃ । শেষ পর্যন্ত ওলি শাহজালালের সেই শিলহটই সিলেট নামে সমগ্র বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। গোটা বাংলাদেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ অর্থাগম হয় এই পুণ্যভূমি সিলেট থেকেই। বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ হাওর (৩৫ঢ২০ মাইল) হাকালুকি, এশিয়া মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অতিথি পাখির অভয়ারণ্য (গ্রিনিজ বুকভুক্ত) টাঙ্গুয়ার হাওর এবং ভারত উপমহাদেশের বিশালতম গ্রাম বানিয়াচঙ্গ এই সিলেটেই অবসি'ত। হযরত শাহজালালের যুগ থেকে এ পর্যন্ত কত ওলী-আল্লাহর জন্ম হয়েছে এ জনপদে! বিদেশ থেকেও এসেছেন কত ওলী-বুযুর্গ! কত জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিত বিদগ্ধ ব্যক্তির জ্ঞান-সাধনায় ও কর্ম-সাধনায় ধন্য এ পবিত্র ভূমি! সিলেট অঞ্চলের প্রথম গ্রন্থরচয়িতা শাহ ইসরাঈল ৯৪১ হিজরী, ১৫৩৪ ঈ. সালে ফার্সী ভাষায় রচনা করেন ‘মা’দিনুল ফুওয়াদ’। আরাকান রাজদরবারের রাজকবি, বাংলাভাষার প্রথম সীরাতুন্নবী-গ্রন্থ ‘নবীবংশ’-এর লেখক মহাকবি সৈয়দ সুলতান (১৫৫০-১৬৪৮ ঈ.) ছিলেন শাহজালাল রাহ.-এর সঙ্গী সৈয়দ নাসিরুদ্দীনের ৫ম অধঃস্তন পুরুষ। প্রায় সহস্র পৃষ্ঠার ‘নবীবংশ’ ছাড়াও ‘শবে মেরাজ’, ‘ওফাতে রাসূল’ ও ‘রাসূল বিজয়’ প্রভৃতি গ্রন্থ তিনি লিখে গেছেন আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে। ফুলবাড়ীয় শাহ আবদুল ওয়াহহাব (১৭৬৩-১৮৮৮ ঈ.) ছিলেন ঢাকা আজিমপুর দায়রা শরীফের শাহ আহমদুল্লাহ মুহাম্মাদ আজীম আবদুল কাদীর সিলসিলার ৫ম অধঃস্তন খলীফা। মাওলানা মুহাম্মাদ সালীম ওরফে সূফী শীতালং শাহ (১৮০০-১৮৮৯ ঈ.) তাঁর লিখিত ‘মুশকিল তরান’, ‘কিয়ামত-নামা’ ও ‘রাগ বাউলা’ শিরোনামে বার শতাধিক পৃষ্ঠার সিলেটী নাগরী হরফে লিখিত পুস্তকাদি ছেপে প্রকাশ করতে নিষেধ করে গেছেন। তাই সিলেট ও কাছাড় (বর্তমান আসাম রাজ্যের) জেলার বিভিন্ন এলাকায় এগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। ১৮৭৪ ঈ. সালে প্রতিষ্ঠিত ঝিংগাবাড়ি মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল বারী রাহ. (১৮৪১-১৯৪৭ ঈ.) ছিলেন দারুল উলূম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কাসিম নানুতুবী রাহ.-এর প্রত্যক্ষ শাগরেদ। বাহরুল উলূম মাওলানা মুহাম্মাদ হোসেন, হযরত মাওলানা আতহার আলী রাহ ও শায়খে বাঘা মাওলানা বশীরুদ্দীন আহমদ প্রমুখ তাঁরই কাছে তা’লীম ও তরবিয়ত লাভ করেছেন। খিলাফত আন্দোলনকালে তিনি সিলেট অঞ্চলে নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণ করেছিলেন। ঝিংগাবাড়ি (আজীরিয়া) মাদরাসা যার নামে প্রতিষ্ঠিত সেই মাওলানা আজীরুদ্দীন (মাদহাত-কাব্যনাম) লিখিত ফার্সী কাব্যগ্রন্থ ‘রিয়াযুন্নূর’ ১২৯৯ হিজরী মোতাবেক ১৮৮১ ঈ. সালে কানপুরের বিখ্যাত নিযামী প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়। সিলেটের প্রথম মহিলা কবি উর্দূ-ফার্সী ভাষায় সুপণ্ডিত সহীফা বানু ওরফে হাজী বিবি (১৮৫০-১৯১৭ ঈ.) ছিলেন মরমী কবি হাসন রাজার বৈমাত্রেয় বড় বোন। তাঁর বড় ভাই দেওয়ান উবেদুর রেজা (১৮৩৩-১৮৭২ ঈ.) ছিলেন একজন ফার্সী কবি। মির্জা মাযহার জানে জানাঁ-এর শিষ্য মৌলবী কলীম ফারুকীর পৌত্র, বিখ্যাত ‘জামউল জাওয়ামে’ কিতাবের শরাহ লেখক এবং বাংলার ‘সদরুস সুদূর’ খান বাহাদুর মৌলবী মুহাম্মাদ ইদরীস এর তিন পুত্র : মৌলবী আবদুল কাদীর (শেখঘাটের খান বাহাদুর ইয়াহিয়া ওরফে জিতু মিয়ার পিতা) মৌলবী আবদুর রহমান এবং আবদুর রহমান যিয়া (মৃত্যু : ১৮৯৩ ঈ.) তিনজন উচ্চ পর্যায়ের আলিম ও লেখক। মৌলবী আবদুল কাদীর লিখিত ‘আলজাওয়ামে আল কাদীরিয়া ফী মু’তাকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ (মুদ্রণকাল : ১২৯৪ হিজরী, মোতাবেক ১৮৭৭ ঈ.), আদদুররুল আযহার ফী শারহিল ফিকহিল আকবর’ (১২৯৮হি./১৮৮০ ঈ.), আররদ্দুল মা’কূল আলান নাহজিল মাকবূল’ (ওয়াহাবী আন্দোলন-বিরোধী গ্রন্থ, ১২৯৮ হিজরীতে মুদ্রিত), আল ফাওয়াইদুল কাদিরিয়া ফী শারহিল আকাইদিন নাসাফিয়্যাহ (আরবী, ১৩০৪ হিজরী) প্রভৃতি গ্রন্থের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আহলে হাদীস সমপ্রদায়ভুক্ত ভুপালের নবাব সিদ্দীক হাসান খান। তাঁর ‘কাশফুল কাদীর ফী শারহিল জামিইস সাগীর’ অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি। ফার্সী ভাষায় রচিত ‘তাফসীরে কাদেরিয়া, খুলাসাতুল মাসায়েল (উর্দূ) ১২৮২ হিজরী, ১৮৬৫ ঈ. সালে লিখিত হয়। এর প্রথম সংস্করণ কানপুর থেকে এবং সর্বশেষ সংস্করণ ১৯৬৯ সালে করাচির এডুকেশন প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়। ‘মাখযানুল ইরফান মিন সুনইস সুবহান (উর্দূ) ১৩০৪ হিজরী, ১৮৮৬ ঈ. সালে আগ্রার মেডিক্যাল প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে। হুগলী ও কোলকাতা আলিয়া মাদরাসার আরবীর অধ্যাপক এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল আবদুল মুনইম যাওকী সিলেটের লংলা এলাকার লোক ছিলেন। ফার্সী ভাষায় বেশ কিছু কিতাব রচনা করেছেন। যেমন তাসবীবুল বয়ান ফী শারহিদ দিওয়ান (দেওয়ানে আলীর ব্যাখ্যা ১৩০০ হিজরী, ১৮৮২ ঈ. সালে কানপুর থেকে মুদ্রিত) ‘আখলাকে আহমদী’ (১৩০৯ হিজরী, ১৮৯৯ ঈ.), ‘দাফেউল আওহাম আম্মা ওয়াকাআ বায়নাস সাহাবাতিল কিয়াম’ প্রভৃতি। বিখ্যাত কুস্তিগীর পাহলোয়ান ও ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রের সুপন্ডিত আশরাফ আলী মাস্‌ত (১৮২০-১৮৮৪ ঈ.) ছিলেন বাঙলা-আসামের বিখ্যাত বুযুর্গ মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী রাহ.-এর সাক্ষাৎ শিষ্য। ১৮৫৯ থেকে ১৮৮৩ সাল পর্যন্ত তার ১৩ টি উর্দু-ফার্সী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যা ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস, ভ্রান্ত বিশ্বাসীদের খণ্ডন এবং তিব্বে ইউনানী ও কুস্তি বিষয়ে লিখিত। মাওলানা হাফিয আহমদ জৌনপুরীর খলীফা মাওলানা শাহ মুহাম্মাদ ইয়াকুব বদরপুরী (১৮৫৭-১৯৫৮). গাছবাড়ি জামেউল উলূম মাদরাসার প্রাণপুরুষ মাওলানা আবু ইউসুফ মুহাম্মাদ ইয়াকুব (১৮৮৮-১৯৬৯) অঙ্গারজোর বিয়ানী বাজারের মাওলানা তাফাজ্জুল আলী ফযলী (১২৯৬/১৮৭৯-১৯২৬ আরবী-ফার্সীতে ২৩টি গ্রন্থের রচয়িতা, তন্মধ্যে ১০টি প্রকাশিত) করিমগঞ্জ এলাকায় (বর্তমান ভারতভুক্ত) বিশকুটের পীর সাহেব মাওলানা মুহাম্মাদ মাশহুদ ছিলেন ফুরফুরার হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দীকীর খলীফা। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.-এর বিখ্যাত খলীফা, পাকিস্তানে ইসলামী আন্দোলনের প্রধান পুরুষ হযরত মাওলানা হাফিয আতহার আলী রাহ. (১৮৯৪-১৯৭৬ ঈ.) এবং তার অপর খলীফা হাফিয মাওলানা যহুরুল হক (খতীব উবায়দুল হক রাহ.-এর পিতা) এই সিলেটেরই লোক ছিলেন। জাতীয় পর্যায়ে বিখ্যাত খতীব মাওলানা উবায়দুল হক, মাওলানা মুহাম্মাদ মুশাহিদ বাইয়মপুরী এবং বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা উবায়দুল হক উজীরপুরী মরহুম সর্বজনপরিচিত ব্যক্তিত্ব। দ্বীন ও ইলমে দ্বীনের প্রচার-প্রসার এবং সমাজ-জীবনে দ্বীনী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় এঁদের সবার মেহনত ছিল। দারুল উলূম দেওবন্দ ও দিল্লীতে হাদীস-ফিকহের উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ শেষে কানাইঘাট থানার উমরগঞ্জ মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকারী (১৮৯৮ ঈ.) বিখ্যাত আলেম খেলাফত আন্দোলনে কারাবরণকারী এবং মাওলানা ইবরাহীম আলী তশনাও (১৮৭০-১৯৩০ ঈ.) থানভী সাহেবের মুরীদ ছিলেন। সিলেটে সর্বপ্রথম ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নবপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলনকারী মাওলানা আবদুর রশীদ টুকেরবাজারী (১৮৯৬-১৯৮৭ ঈ.)ও ছিলেন হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.-এর আধ্যাত্মিক শিষ্য। পাকিস্তানের সোয়াতে জন্মগ্রহণকারী মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব (১৮৫০-১৯২১ ঈ.) সিলেট শহরের হাওয়াপাড়া মহল্লায় বসবাস করতেন। তিনি একজন জবরদস্ত আলেম ও আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন। সিলেটের সামাজিক জীবনে তাঁর বিপুল প্রভাব ছিল। হযরত মাওলানা হুসায়ন আহমদ মাদানী রাহ. এর দ্বিতীয় কর্মস্থল হয়ে উঠেছিল এই সিলেট-ভূমি। ফলে বহু আলেম, তালিবে ইলম এবং তাসাওউফ ও সুলূকের দীক্ষাগ্রহণকারীদের পবিত্র পদচারণায় এই ভূখণ্ড মুখরিত ছিল। ১৯১৮ সাল থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেটে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তারপর ১৯২৬ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৯ বছর রমযান মাসে তিনি সিলেটে অবস্থান করতেন। তখন গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর আধ্যাত্মিক শিষ্যবৃন্দ আধ্যাত্মিক সাধনার এই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাসটিতে শায়খের সাহচর্য লাভের একান্ত বাসনা নিয়ে সিলেটে ছুটে আসতেন। এবং এখান থেকেই খিলাফত লাভ করে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যেতেন। একমাত্র সিলেট জেলায় হযরত মাদানীর ২০/২৫ জন খলীফা ছিলেন, যাঁদের প্রায় সকলেই এখন পরজগতের বাসিন্দা। তাঁর শিষ্য-শাগরিদ ও খলীফাগণ বৃহত্তর সিলেটের ইলমী ও আমলী খেদমতে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.-এর প্রস্তাবক্রমে দেওবন্দ মাদরাসার গভর্ণিং বোর্ড সদরুল মুদাররিসীনরূপে মাওলানা মাদানীর নিয়োগপত্র সিলেটেই পাঠিয়েছিলেন এবং এখান থেকে গিয়েই তিনি সে পদে আসীন হয়েছিলেন। ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট আলিয়া মাদরাসাটি প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেটের মুসলিম মৎসজীবী সমাজের টাকায়। এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজীদ সি.আই.ই. ওরফে কাপ্তান মিয়া (১৮৭২-১৯২২ ঈ.)। তিনি আসামের শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। তার প্রচেষ্টায় এটি আসাম প্রদেশের একমাত্র সরকারী আলিয়া মাদরাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারী মাদরাসা বিধায় ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ আলেমগণ এখানে উচ্চ বেতনে অধ্যাপনার জন্য আসতেন। সেই সুবাদে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের দু’জন প্রখ্যাত দেওবন্দী পাঠান আলিম মাওলানা আবদুল আযীয রাহ. ও মাওলানা শের জামান রাহ. এবং বিহারের ভাগলপুরের মাওলানা সহূল উছমানী রাহ. (দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক মুফতীয়ে আযম) সিলেটে আগমন করেন। এঁরা একদিকে যেমন জাঁদরেল আলেম ছিলেন অপরদিকে আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও অনেক উচ্চমার্গের লোক ছিলেন। তাঁদের সুদীর্ঘকাল সিলেটবাসের ফলে বৃহত্তর সিলেট জেলায় (বর্তমানে সিলেট বিভাগে) প্রচুর প্রভাব পড়ে। খান বাহাদুর আবু নসর ইয়াহিয়া ওরফে জিতু মিয়া (১৮৫১-১৯২৪ ঈ.), মাওলানা আবদুল আযীযের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজের বৈঠকখানা থেকে বিলাত ও তুরস্কের ঐতিহাসিক স্মৃতিসম্বলিত রাজদরবারের সমস্ত ছবি অপসারিত করে সেখানে আলকুরআনের ক্যালিওগ্রাফি স্থাপন করেছিলেন। উপমহাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রাম তথা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে আমার জন্মভূমি সিলেটের স্থান অনেক উপরে। ১৮৩১ সালে বালাকোটের ময়দানে হযরত সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ ও ইসমাঈল শহীদ রাহ. প্রমুখ মুজাহিদীনের শাহাদত বরণের দীর্ঘ চল্লিশ বছর পূর্বেই ইংরেজ-শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ ও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন সাইয়্যেদ হাদী ও সাইয়্যেদ মাহদী (হাদা মিয়া মাদা মিয়া) নামের দু’জন সংগ্রামী। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৭৮২ সালের ১০ মহররম তারিখে। তাঁদের জনৈক সাথী ‘পীরজাদা’ (যিনি ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম একজনের বংশধর ছিলেন।) সেদিন জলদগম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন ‘আজ মারবার অথবা মরবার দিন। ইংরেজ-রাজত্ব আজ খতম।’ দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকৃত সিলেট বিভাগের ইতিহাস-গ্রন্থে এ তথ্যটি উল্লেখিত আছে। (চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

advertisement