সফর ১৪৩৮   ||   নভেম্বর ২০১৬

কিতাবের দান কিতাবের প্রাপ্য : কিছু কথা কিছু ব্যথা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

[১৪৩৭-১৪৩৮ হিজরী শিক্ষাবর্ষের শুরুতে (১৮ শাওয়াল ১৪৩৭ হিজরী) মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় কুতুবখানায় মারকাযের তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে কিতাব ব্যবহারের বিষয়ে প্রদত্ত বয়ান]

কিতাব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনেক বড় নিআমত এবং অনেক পুরনো নিআমত। তাদবীনে উলূমের যামানায় কিতাবের সূচনা হয়েছে, এমন নয়, বরং এর হাজার হাজার বছর আগ থেকেই কিতাব চলে আসছে। হাঁ, কোন্ যামানায় কিতাবের ধরন কেমন ছিলো, আগে কীসের মধ্যে লেখা হতো, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কুরআন মুশরিকদেরকে বলে, ‘তোমাদের কাছে আছে কি কোনো কিতাব? أثارة من علم কি আছে তোমাদের কাছে’? আগে থেকেই যদি এর কোনো ধারণা না থাকে, তাহলে কুরআন কীভাবে এই কথা বলে? আর ঐতিহাসিক দলীল তো আছেই এই বিষয়ে। 

তো কিতাবÑ বিশেষ করে আহলে ইসলামের জন্য, আরো বিশেষ করে আহলে ইলমের জন্য অনেক বড় নিআমত। কিন্তু এই নিআমতের কদর করে, এই নিআমতের শোকর আদায় করে এবং হক আদায় করে এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম।

ما كل من يجمع الكتب يحب الكتب + وما كل من يجمع الكتب يقدر الكتب

وما كل من يجمع الكتب يشكر الكتب وأهلها + وما كل من يجمع الكتب يؤدي حق الكتب

যে-ই কিতাব ধারণ করে, কিতাব বহন করে, তার ঘরে হয়তো এক দুইটা আলমারি আছে, একটা মাকতাবাই আছে, এতে জরুরি না যে, সে কিতাবকে যেমন মুহাব্বত করা উচিত তেমন মুহাব্বত করে। কিতাবের যেমন কদরদানী করা উচিত তেমন কদরদানী করে। কিতাবের যেমন শোকরগুযারি করা উচিত তেমন শোকরগুযারি করে। কিতাবের যেমন হক আদায় করা উচিত তেমন হক আদায় করে।

কিতাব অনেকের কাছেই আছে। কিন্ত ঐ যে  وَقَلِيلٌ مِنْ عِبادِيَ الشَّكُورُ কিতাবের কদরদান খুব কম! কিতাবের পাঠকারীই কি কিতাবের কদরদান? না, এটা ভিন্ন একটা বিষয়। এটার জন্য তোমার মধ্যে মুরাকাবা থাকতে হবে, দায়িত্বের অনুভূতি থাকতে হবে। কদাচিৎ এমন হয় যে, কারো স্বভাবের মধ্যেই বিষয়টি আছে। অন্যথায় অনেকের জন্যই বিষয়টি চেষ্টা করে অর্জন করার।

শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর  صفحات من صبر العلماء على شدائد العلم والتحصيل -এর মধ্যে কিতাব সম্পর্কে দুইটি অধ্যায় আছে।

الجانب الثامن في أخبارهم في بذلهم المال الكثير وبيع المملوكات والمقتنيات لتحصيل العلم والارتحال ولقاء الشيوخ وشراء الكتب والورق وتدوين المؤلفات.

আরেকটি অধ্যায় হল,

الجانب السادس في أخبارهم في فقد الكتب أوالمصاب بها أو بيعها والخروج عنها أو نحو ذلك عند الملمات وتحصيلها ببيع الملبوسات.

এই দুই অধ্যায়ে, বরং পুরো কিতাবেই কিতাবের প্রতি, ইলমের প্রতি সালাফের মুহাব্বতের অনেক ঘটনা, অনেক বিবরণ এসেছে। এরকম একটি ঘটনা এসেছে سير أعلام النبلاء কিতাবে- উরওয়া রাহ.-এর জীবনীতে।

معمر، عن هشام، عن أبيه، أنه أحرق كتبا له فيها فقه، ثم قال : لوددت لو أني كنت فديتها بأهلي ومالي. (سير أعلام النبلاء (৪/৪২৬

অন্য রেওয়ায়েতে আছে, হাররার দুর্ঘটনার সময় তাঁর অনেকগুলো কিতাব জ্বলে গিয়েছিল, তখন তিনি এই কথা বলেছেন, আমার আওলাদ যদি ইন্তেকাল করে যেত তাহলেও আমার এত কষ্ট হত না এই কিতাবগুলো নষ্ট হওয়াতে যত কষ্ট হচ্ছে। কিতাবের সাথে এমন মুহাব্বত ছিল তাঁর! এই কথা আওলাদকে শুনিয়ে বলতে হবে, তা নয়।

কিতাবের মুহাব্বত করনেওয়ালার নমুনা তো অনেক, খায়রুল কুরূন থেকে নিয়ে আমাদের যামানা পর্যন্ত। খায়রুল কুরূনের নমুনা অনেক আছে। শেষ যামানার নমুনা কম। শেষ যামানায় কিতাবের মুহাব্বত করনেওয়ালাদের একজন হলেন যাহিদ কাউসারী রাহ.। তিনি যখন শায়খুল ইসলামের মারহালার মানুষ- এমনিতে ইস্তিলাহী অর্থে তিনি উসমানী খেলাফতের সময় নায়েবে শায়খুল ইসলাম ছিলেন- তখনও তার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল? তিনি যখন নায়েবে শায়খুল ইসলাম  -নায়েবে শায়খুল ইসলামের অযিফা একজন মন্ত্রীর সমান- তখনও তাঁর উপর যাকাত ওয়াজিব হয়নি! এই পরিমাণ অর্থ জমা হয়নি যে, তিনি হজ্ব করতে পারবেন! কিন্তু তার মাকতাবাতে বিশাল সংগ্রহ। কীভাবে? সুয়াল করে? কাউসারী সুয়াল করার মানুষ না; কাউসারী তো ছিলেন যাহিদ’; নামে যেমন, কর্মেও তেমন। তো কীভাবে জমা হল কিতাবের এত বিশাল সংগ্রহ?

আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ.-কে দেখেছি, আমরা যখন হুযুরের কাছে, তখন তাঁর অজীফা ছিলো পনের শত রূপি। তাঁর কুতুবখানা তো তাঁর ছেলে আব্দুশ শহীদ নুমানীর কাছে আছে; গিয়ে দেখ! যারা বা-যাওক মুহাক্কিক আলেম, মানের দিক থেকে তাঁদের কুতুবখানার মিছাল পাওয়া মুশকিলই বটে। কিন্তু পরিমাণের দিক থেকেও দেখ, অনেক বড়। ব্যক্তিগত কুতুবখানা এরকম বড় হওয়ার নযীর খুব কম। কীভাবে হয়েছে এত বড় কুতুবখানা? তিনি আর যাহিদ কাউসারী এক মেযাজের মানুষ ছিলেন। ইশারা-ইঙ্গিতেও কারো কাছে সুয়াল করবেন, এমন মানুষ ছিলেন না। আর দুনিয়ার দিক থেকেও ছিলেন সুনাম-সুখ্যাতি থেকে মুক্ত, প্রচারবিমুখ! তো কীভাবে হয়েছে এগুলো?

তোমাদেরও হয়তো কিতাবের মুহাব্বত আছে। কিন্তু সব জরুরত সারার পর কিতাব। আর না হয় বাবার উপর সওয়ার হয়ে, বড় ভাই থাকলে বড় ভাই, আত্মীয় থাকলে আত্মীয়...। আরো কত তরীকা।

নুমানী ছাহেব হুযুরের বাসায় কখনো গেলে প্রথম সুয়াল ছিল, হেঁটে এসেছ না বাসে? যদি বলতাম হেঁটে এসেছি, খুশি হতেন। আর যদি বলতাম বাসে এসেছি, তখন বলতেন, বাসে ভাড়া কত রাখে? বলতাম ত্রিশ পয়সা। বলতেন, তালিবুল ইলমের জন্য ত্রিশ পয়সাও কম নয়। আমাদের কাছে চার আনা জমা হলে রেখে দিতাম, পরে কখনো আরো চার আনা জমা হলে আট আনা দিয়ে কিতাব সংগ্রহ করতাম।

আসলে এভাবেই হয়েছে। শহীদবাড়ীয়ার টান বাজার মসজিদের খতীব, ফজলুল হক ছাহেবের মামা, তিনি তাঁর ঘটনা শোনালেন। দারুল উলূম দেওবন্দে যখন তিনি পড়তেন, দুইটা রুটি দেওয়া হত। একটা খেতেন, আরেকটা রেখে দিতেন। কিছু লোক ছিল এগুলো নিয়ে যেত এবং কয়েক পয়সা দিত। এভাবে কিছু পয়সা জমা হলে তা দিয়ে তিনি কিতাব সংগ্রহ করতেন। এভাবেই হয়েছে; আসলে এভাবেই হয়।

এ তো হল কিতাব সংগ্রহ। কিতাব সংগ্রহের ক্ষেত্রে মুহাব্বতের প্রকাশ। এরপর আরো কত মারহালা আছে।

দেখ, কিতাব থেকে নিজের জরুরত হাসিল করার মানুষ অনেক। কিতাবের কদর করার মানুষ কম।  কিতাব থেকে হাসিল করা, এ তো তোমার স্বার্থ। এক্ষেত্রেও মুহাব্বতের প্রকাশ হতে পারে, কিন্তু এর জন্য অনেক বড় দিল, অনেক বড় নিয়ত দরকার। আল্লাহ করে দিন তোমাদের এরকম দিল আর এরকম নিয়ত! কিন্তু সাধারণভাবে কিতাব থেকে হাসিল করাটা তোমার স্বার্থ। তুমি আলেম হতে চাচ্ছ, তাখাসসুস করতে চাচ্ছো, তোমার কিতাব দরকার। তুমি একটা বিষয় লিখতে চাচ্ছ, তোমার তথ্য দরকার। এগুলো তোমার স্বার্থ। দ্বীনী স্বার্থ হোক বা দুনিয়াবী স্বার্থ। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। বাহ্যত বিষয়টা হতে পারে দ্বীনী স্বার্থ, কিন্তু তোমার নিয়তের কারণে, হালাতের কারণে এটা দুনিয়াবী স্বার্থ হয়ে যেতে পারে না?! আবার হতে পারে যে, বাস্তবেও দ্বীনী স্বার্থ; তোমার নিয়ত, তোমার হালাত, এসবের দিক থেকেও দ্বীনী স্বার্থ। কিন্তু সেটা তো স্বার্থ। তো কিতাব থেকে নিলে, কিতাবকে দিলে কী? আর তো কিছু দিতে পারবে না কিতাবকে; কমপক্ষে মুহাব্বত আর যত্নটা দাও। মুহাব্বত আর যত্ন- এতটুকু দাও। আর কী দিতে পারবে? কিতাবের মুসান্নিফের জন্য দুআ করবে; এ তো কিতাবের মুসান্নিফ। কিন্তু খোদ কিতাব, কিতাবও এমন এক সত্তা, যে তোমার কাছে কিছু পায়! কী পায়? যারা ফিকিরমান্দ মানুষ, আহলে দিল, তারা অনেক কিছু অনুভব করেন। এমন হতে পারে কিতাবের হিস’ (অনুভূতি-শক্তি) আছে, যবান নেই। এটা কি হতে পারে না? এটা কি অসম্ভব? বিজ্ঞান তো অসম্ভব বলে না। আর বিজ্ঞান  তো এতদিনে এই ইলম পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, জড়বস্তুর মধ্যে অনুভূতি-শক্তি থাকতে পারে। শরীয়তের দলীলে এ কথা আরো আগে থেকেই আছে!

সুতরাং এমন হতে পারে যে, কিতাবের হিসআছে, যবান নেই। যদি কিতাবকে  যবান দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে হয়তো কাউকে নিষেধ করে দেবে আমাকে ধরবে না। আর কাউকে বলবে আমি তোমার অপেক্ষায়। তুমি কিতাবের এমন বাহক ও এমন পাঠক হও, যদি কিতাবের যবান দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কিতাব বলবে, ‘আমি তোমার অপেক্ষায়! তুমি আমার বাহক হওয়ার হক রাখ। আমার থেকে ইস্তিফাদা করার হক রাখ।তুমি এমন বাহক ও এমন পাঠক হয়ো না যে, কিতাবের যবান খুলে দিলে কিতাব তোমাকে সঙ্গ দিতে রাযি হবে না। তোমার নিন্দা করবে, ভর্ৎসনা করবে। যদি এই একটা কায়েদা মনে রাখ আর আকল ব্যবহার কর তাহলে কিতাব ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত না-মুনাসিবহরকত আছে, যত রকম অসমীচীন আচরণ আছে, কোনোটা তোমার থেকে প্রকাশ পাবে না।

এই যে তোমরা বড় বে-দরদীর সাথে কিতাব ধর, নেওয়ার সময় এবং রাখার সময়। একবার এদিকে ধাক্কা, আরেকবার ওদিকে। এখানে তুমি নিজেকে চিন্তা কর, তোমাকে যদি কেউ সরাতে গিয়ে এভাবে ধাক্কা দিয়ে সরায়, তোমার কাছে কেমন লাগবে?

তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা কিতাব বের করতে গিয়ে তোমরা জিলদের উপরের দিকের মাথাটা ধরে টান দাও। এভাবে টান দিলে ঐ জায়গাটা ছিঁড়ে যায়। তাছাড়া একটু চিন্তা করে দেখ, তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তোমার পেছন থেকে কেউ জামা ধরে টান দিলে তোমার কাছে কেমন লাগবে? কিতাব বের করার জন্য তুমি হাত আরো সামনে বাড়িয়ে আস্তে করে টান দাও, দেখবে সুন্দর বের হয়ে আসবে।

তাকের মধ্যে কিতাব কখনোই ঠাসাঠাসি করে রাখা ঠিক নয়। তারপরও কখনো এমন হল যে, ঠাসাঠাসি হয়ে থাকার কারণে কিতাবটা সহজে বের হচ্ছে না। তখন তুমি এটাকে ঐ অবস্থাতেই টানতে থেকো না, তুমি দেখ, এখানে সমস্যাটা কী? কী জন্য বের হচ্ছে না? অন্য কোনোখানে কোনো ফাঁকা জায়গা আছে কি না? দেখলে যে, এখানে একটু ফাঁকা জায়গা আছে, তাহলে এদিকে একটু চাপিয়ে রাখ। এতে হালকা হবে। তারপর তুমি তোমার কিতাব বের কর। দেখ, এটা কিন্তু সময়ের অপচয় না। এটা সময়ের উত্তম ব্যবহার। তুমি عنف এর সাথে, شدة -এর সাথে কিতাব বের করবে, রাখবে- এটা না-ইনসাফী, এটা  কিতাবের উপর যুলুম।

কাজের জন্য তোমার দুই জিলদ দরকার। তুমি তাক থেকে দুই জিলদ বের করে আনলে, বাকিগুলো কাত হয়ে গেল । ব্যস, ওভাবে রেখেই তুমি চলে গেলে। কারণ এগুলোতে তো আর তোমার জরুরত নেই! পরে যখন তুমি আবার এখানে আসবে, তখন যদি কিতাবের যবান থাকতো তাহলে কী বলত? ‘একটু আগে তুমি আমাকে কাত করে ফেলে চলে গেলে।তো যখন কিতাব বের করে আনছ, তখন দেখ, এরপরের হালাতটা কী? তাকে কিতাব সবসময় সোজা করে রাখবে।

তুমি কিতাব মুতালাআ করবে, যত্নের সাথে মুতালাআ করবে। কিতাব যখন খুলবে, رفق -এর সাথে খুলবে। কিতাব খুলে টুলের উপর রাখবে, তখন লক্ষ্য রাখবে, কিতাবের কোনো পার্শ্ব যেন কাঁত হয়ে না থাকে। উভয় পার্শ¦ যেন সমান থাকে,  اعتدال -এর সাথে থাকে। হয় হাত দিয়ে ধরে রাখ বা নীচে অন্য কিছু দিয়ে রাখ। এভাবে যদি না রাখা হয় তাহলে হয়তো জিলদ ছুটে যাবে, না হয় বাঁধাই ছুটে যাবে। আর যার যাওক আছে, দিল আছে, সে শুধু এটা দেখবে না যে, ছুটে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে, বিষয় শুধু এটুকু নয়। বিষয় হল, কিতাব একটা মুহাতারাম জিনিস। এটাকে তোমার মুহতারাম ব্যক্তির মত মনে করতে হবে। তোমার কী অধিকার- কিতাবকে তুমি বে-হিস’ (অনুভূতি-শূন্য) মনে করে ইস্তিমাল করবে?  কিতাবকে  বা-হিস’ (অনুভূতিসম্পন্ন) মনে করে তোমাকে ইস্তিমাল করতে হবে। মানুষ যখন মারা যায়, লাশ হয়ে যায়, লাশের ইকরাম শরীয়তে ফরয করে দেওয়া হয়েছে কি না? লাশকে কষ্ট দেওয়া জায়েয আছে? তুমি লাশকে গোসল দেবে, কাফন পরাবে, কবরে রাখবে, এসব কি তোমাকে ইকরামের সাথে, মুহাব্বতের সাথে করতে হবে না, যেমন জীবিত মানুষ অসুস্থ হলে করতে হয়? যেমন ছোট বাচ্চাকে করতে হয়? লাশের হিসথাকুক না থাকুক, তুমি বে-হিসমনে করে তার সাথে আচরণ করতে পার না! তদ্রূপ কিতাবকেও বে-হিসমনে করে ইস্তিমাল করা কিতাবের সাথে বেআদবী, ইলমের সাথে বেআদবী!

এটা হয়তো রূহানী বিষয়। কিন্তু একেবারে বৈষয়িক এবং জাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে কথা, সেটা হল, এই কিতাব আমানত। আমি-তুমি এটার মালিক না, এটা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা। যেটা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, সেটা পুরো কওমের আমানত। কিতাব তো হল সদাকায়ে জারিয়া। সদাকায়ে জারিয়ার অন্যতম ক্ষেত্র হল কিতাব। এটা তোমরা জান না? তো সদাকায়ে জারিয়া কীভাবে হবে? ১৪৩৭ হিজরী থেকে ১৪৪০ হিজরী পর্যন্ত যে ফরীক আসে, এরাই যদি খতম করে দিয়ে যায় তাহলে জারিয়া হবে কীভাবে? ইলমও সদাকায়ে জারিয়া। ইলমের ক্ষেত্রে তো হল, তুমি কাউকে ইলম শিখিয়ে দিলে। সেটা ভিন্ন একটি বিষয়। সে কথা বলছি না, আমি বলছি কিতাবের কথা। কিতাবও সদাকায়ে জারিয়া। কিতাব সদাকায়ে জারিয়া হওয়ার জন্য কিতাবের উজুদ তো রাখতে হবে। কিতাবকে ব্যবহারের উপযোগী তো রাখতে হবে।

নুমানী ছাহেব হুযুরের সামনে একদিন কোনো একটা বহস খোঁজার জন্য ورقگردانی করছিলাম। আরবীতে বলে تصفح الأوراقবাংলায় পাতা উল্টানো। আচ্ছা! এটার জন্য বাংলাতে আর কোনো ফাসীহ শব্দ নেই? উল্টাবে কেন কিতাবের পাতা? উল্টানো তো হল সব উল্টাইয়াদেওয়া। আর কি কোনো ভালো শব্দ নেই তোমাদের সাহিত্যে? যাই হোক, নুমানী ছাহেব হুযুরের সামনে ورقگردانی করছিলাম। তখন তিনি বললেন

تم سے پہلے والے اگر ایسے استعمال کرتے، تمہیں نہیں ملتی یہ کتاب! یہ کتاب صرف  تمہیں استعمال کرنا ہے، نہ آئندہ  لوگوں کو بھی استعمال کرنا ہے!

এই যে তোমরা ঠাসঠাস কিতাবের পাতা উল্টাতে থাক, একটু পুরাতন হলেই তো ছিঁড়ে যাবে! আর যদি একেবারে নতুন হয় তাহলে হয়তো ছিঁড়বে না, নষ্ট তো হবে! কিন্তু এখানে তো প্রশ্ন ছিঁড়ে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়ার নয়? এ কথা তোমাকে যেহেনে রাখতে হবে যে, কিতাব তুমি বে-হিস’, সাধারণ জিনিস মনে করে ইস্তিমাল করবে, না ইকরামের সাথে মুহাব্বতের সাথে    বা-হিসমনে করে ইস্তিমাল করবে? এটা তোমার যাওক এবং আকলের বিষয়! ইলমের সাথে তোমার মুহাব্বতের বিষয়!!

এই কিতাব তোমার সালাফের ইলম তোমার কাছে পৌঁছায়। এই কিতাব তোমার খামোশ উস্তায। একটা মাকূলা যে আছে- من البلية تشيخ الصحيفةএই মাকূলাতে আসলে কিতাবের যাত ও কিতাবের সত্তা উদ্দেশ্য নয়। এই মাকূলা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উস্তায ছাড়া শুধু কিতাব পড়া, কিতাব পড়ে পড়ে ফকীহ হয়ে যাওয়া। অথচ ফকীহ হতে হলে উস্তায লাগে! এটারই এখানে নিন্দা করা হয়েছে। কিতাবের যাত ও কিতাবের সত্তা এখানে উদ্দেশ্য নয়। যাই হোক, কিতাব তোমার খামোশ উস্তায। এই দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা কর আর আকল ব্যবহার কর। তোমাকে আর কিছু বলে দিতে হবে না। আকল যদি না থাকে, অনুভূতি যদি না থাকে তাহলে আমার বয়ানও কাজে আসবে না।

তোমরা ছোট কিতাবের উপর বড় কিতাব রেখে দাও। শুনেছ যে, হাদীসের কিতাব উপরে রাখতে হয়, ফিকহের কিতাব নীচে রাখতে হয়! এই জন্য ছোট কিতাবের উপর বড় কিতাব রেখে দাও! এভাবে রাখলে কিতাব দুই দিকে বাঁকা হয়ে থাকে। এতে কিতাবের ক্ষতি হয়। ফন্নের দিক থেকে কিতাবের তারতীব- এটা তখন, যখন مگر بعارض -এর মাসআলা না আসে। এখন ধর, পাশাপাশি রাখার কোনো উপায় নেই, একটার উপরে আরেকটা রাখতে হবে, এখন যদি একটা মিশকাত, আরেকটা হিদায়া হয় তাহলে তো ঠিক আছে। মিশকাত হাদীসের কিতাব উপরে, হিদায়া ফিকহের কিতাব নীচে রাখবে। এখানে তুমি ফন্নের তারতীবে রাখতে পারবে। কারণ দুটোই সমান সাইজের। কিন্তু যদি ধর একটা হল আররাফউ ওয়াত তাকমীলঅপরটা মিশকাত শরীফ। তাহলে কোন্টা উপরে রাখবে আর কোন্টা নীচে? মিশকাত হাদীসের কিতাব উপরে রাখা দরকার, ‘আররাফউ ওয়াত তাকমীলনীচে রাখা দরকার । কিন্তু কেমন হবে ছোট কিতাবের উপর বড় কিতাব? দুই দিকে বাঁকা হয়ে থাকবে। তুমি পারলে পাশাপাশি রাখ। দুই কিতাব দুই জায়গায় রাখ । যদি এক জায়গায়ই রাখতে হয় তাহলে মিশকাত যেহেতু বড়, এটা রাখতে হবে নীচে। আররাফউ ওয়াত তাকমীলছোট, সেটা রাখতে হবে উপরে। এখানে ঐ সূক্ষ্ম বিবেচনার চেয়ে এই দিকটা বড়। কারণ এখানে হেফাজতের মাসআলা। এখানে ঐ বিবেচনা চলবে না।

তোমরা কাজের জন্য কিতাব টুলে রাখ, কীভাবে রাখ? দেখ! প্রত্যেক জিনিসের মধ্যেই নযম’, ‘নসককাম্য। তুমি পাঁচ-ছয়টা কিতাব নামিয়ে আনলে, তোমার পড়া দরকার। একসাথে তো আর সবগুলো পড়বে না। পড়বে একটা। বাকীগুলো রাখবে কীভাবে? ছড়িয়ে ছিটিয়ে, এলোমেলো রেখে দেবে? কাত করে, বাঁকা করে কোনো যতœ ছাড়া? এটা দেখতেও অসুন্দর আর এটা দালালত করছে যে, তোমার মধ্যে কিতাবের মুহাব্বত নেই। ইলমের মধ্যে তোমার এত নিমগ্নতা যে, কিতাবের খেয়াল রাখছো না। এটা মূলত ইলমের নিমগ্নতা নয়, এটা তোমার বদ যাওকী। বদ যাওকীর ব্যাপারে তোমার ধোঁকা যে, আমি খুব নিমগ্ন- ইলমের প্রতি।

এই যে আমরা বলি, কিতাবের আদব রক্ষা করা জরুরি, তো কিতাবের আদব বলতে তোমরা শুধু কী বুঝ? অযু অবস্থায় কিতাব ধরা। এই সাআদাত যদি কারো থাকে তাহলে বহুত ভালো। আলহামদু লিল্লাহ। তবে কিতাবের আদব শুধু এটাকে বলে না। কিতাবের যত্ন, কিতাবের হেফাজত, ইকরামের সাথে কিতাবের ইস্তিমাল এগুলো কিতাবের অতি গুরুত্বপূর্ণ আদব। অযু অবস্থায় কিতাব স্পর্শ করার ইহতিমাম করা থেকে এগুলো বড় আদব।

কিতাব হেফাজতের কত দিক আছে! তালিবুল ইলম যারা, কলম তাদের সাথে থাকেই। কলম হাতে রেখেই কিতাবের পাতা উল্টায়। ব্যস, হঠাৎ একজায়গায় একটা দাগ পরে গেল বা এক জায়গায় একটু বেশি কালি লেগে গেল। এটা কি জায়েয কাজ? এটা তো কিতাবের যত্ন পরিপন্থী। এতে তো আমানতের হক আদায় হল না। এত ব্যস্ত হবে কেন? এত ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তুমি কলম হাত থেকে রাখ, ধীরেসুস্থে কিতাব ইস্তিমাল কর।

কিতাবের মধ্যে হাশিয়া লেখা, নোট লেখা এগুলো গলদ কাজ। এমনকি নিজের কিতাবের মধ্যেও লেখা উচিত কি না- এটা নিয়ে ইখতিলাফ আছে। আর ওয়াকফের কিতাবের ব্যাপারে  তো ইত্তিফাক যে, এতে হাশিয়া লেখা যাবে না। নোট লেখা যাবে না। একটা কাজ আমি করি, কাজটা অনুচিত। আমি সেটা ছেড়ে দিচ্ছি। সেটা হল, কিতাবের কোনো ফায়েদা কিতাবের শুরুতে সাদা যে পৃষ্ঠা থাকে, সেখানে কাঠ কলম দিয়ে লিখে রাখি। এটার জরুরত আছে, কিন্তু জরুরত থাকলেই কি সহীহ হয়? ওয়াকফের কিতাবের ক্ষেত্রে এটা সহীহ নয়। নিজের কিতাবের মধ্যে এতটুকু চলতে পারে। নুমানী ছাহেব হুযুর রাহ., শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ রাহ. নিজেদের কিতাবে সাদা পৃষ্ঠাতে ফায়েদা লিখে পৃষ্ঠা নম্বর লিখে রাখতেন। তাঁদের খত তো ছিল মুক্তোর মত। যা হোক, এই বিষয়ে তাকলীদ করবে না। কিতাবের ভেতরে বিলকুল কোনো কিছু লিখবে না। একেবারে স্পষ্ট ছাপার ভুল, ইছলাহ করা দরকার, তাও না। তুমি যদি এই ভুল বের করতে পার, ভবিষ্যতের তালিবুল ইলমরাও বের করতে পারবে। হাঁ, তুমি ভিন্ন নোট রাখতে পার।  কিতাবুত তাসহীফাতদেখনি! দারাকুতনীর কিতাবুত তাসহীফাতআছে। অন্যদেরও কিতাবুত তাসহীফাতআছে। এগুলো কীভাবে  তৈরী হয়েছে? বিভিন্ন কিতাবে রাবীদের, মুসান্নিফদের যে সব তাসহীফহয়েছে সেগুলো জমা করে দেওয়া হয়েছে। এখানে মাকতাবায় একটা রেজিস্টার্ড বানাও। কোথাও কোনো কিতাবে তাসহীফপেলে এখানে সবাই নোট করবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ইস্তিফাদা করতে পারবে। কিতাবের ভেতরে কিছু লেখার ইজাযত নেই। বুঝতে পেরেছ? ফিকহের মাসআলাই হল, ওয়াকফের কিতাবে লেখা জায়েয নেই। এটা পরিষ্কার মাসআলা। এর দলীল স্পষ্ট।

আরেক সমস্যা হল ভিজা হাতে কিতাব ব্যবহার করা। এতে কিতাবের অনেক ক্ষতি হয়। তোমরা তো ভিজা হাতের সংজ্ঞাই জান না। তোমরা মনে করছ, ভিজা হাত কে না বুঝে। অযু করে আসলাম, হাতে পানি। খাবার খেয়ে হাত ধুলাম, হাতে পানি। এখন আমি কিতাব ধরব কীভাবে? ভিজা হাতে কিতাব ধরা যাবে না, এটা কে না বুঝে? আরে, যেটা সবাই জানে সেটা তো বয়ান করতে হয় না। ভিজা হাত বলে, এই যে তুমি অযু করে আসলে বা খাবার খেয়ে উঠলে, এরপর তুমি হাত মুছে ফেললে গামছা দিয়ে অথবা মিনদীল’ (টিস্যু) দিয়ে, এখন তোমার হাত শুকনো। এই শুকনো হাতে যদি কিতাব ধর পাঁচ সেকেন্ড পর দেখবে যে, কিতাবের জিলদের উপর পানি! কীভাবে আসল পানি? বিষয়টা হল, লোমকূপে পানি ঢোকে। তুমি যে মুছেছো, উপরেরটা মুছেছো। লোমকূপে  যে পানিটা ঢুকেছে, তা এখনো ভেতরে রয়ে গেছে। ওটা যেতে সময় লাগে। কয়েক মিনিট পার হতে হয়। হাত মোছার সাথে সাথে লোমকূপে থাকা পানি শুকায় না। এখন তুমি যদি এমন কোনো জিনিসের উপর হাত রাখ যেখানে জায্বআছে, আকষর্ণ আছে, তাহলে সাথে সাথে পানি সেখানে চলে যাবে। তাই ঐ সময় কিতাব ধরলেই তুমি দেখবে যে, জিলদ ভিজে গেছে। এই জন্য অযু করে এসে দস্তরখান থেকে উঠে হাত ভালোভাবে মোছার পর সামান্য বিরতি দেবে। বিরতি দেওয়া ছাড়া কিতাব ধরবে না। এবং ঐ যে, ‘বা-হিসবে-হিসএর বিষয়টা চিন্তা কর যে, আমাকে যদি কেউ ভিজা হাতে ধরে, তাহলে আমার কাছে কেমন লাগবে?

কিতাবের বিষয়ে বলার মত কথা অনেক। আমি শুধু আর দুটি কথা বলেই শেষ করছি। আল্লাহ করুন, এ কথাগুলো আমাদের অন্তরে গেঁথে যাক।

প্রথম কথা হল, কিতাব মুতালাআ করার সময় তুমি কিতাবের মুসান্নিফ এবং ইলমের সিলসিলার যত রিজাল আছেন সবার তাসাওউরও কল্পনা হৃদয়ে জাগরুক করার চেষ্টা করবে। তুমি যেন চিন্তা ও কল্পনার জগতে সেই মহান ব্যক্তিগণের সোহবতে অবস্থান করছো। তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করছো। এই অনুভূতির মাধ্যমে মুতালাআর ফায়েদা বহুগুণ বেড়ে যায় এবং এতে তোমার নিজের মুহাসাবারও অভ্যাস গড়ে উঠবে যে, কিতাব থেকে আমি কি শুধু কিছু তথ্যই হাসিল করব নাকি কিতাবের মুসান্নিফ ও তাঁর পূর্ববর্তীগণ যেভাবে ইলম থেকে নূর ও হেদায়েত হাসিল করেছেন আমিও সেই নূর ও  হেদায়েত হাসিল করার চেষ্টা করব?! কিতাবের ইলম কিতাবের মধ্যেই রেখে দেব নাকি সহীহ ইলমের মাধ্যমে নিজের যিন্দেগীকে আলোকিত করার চেষ্টা করব?! এটা কিন্তু আমি নতুন কোনো কথা বলছি না। এই যে, চিন্তা ও কল্পনার জগতের সোহবত- এ আমাদের সালাফের মধ্যেও ছিল। এই শেরটি দেখ, এর অর্থ ও আবেদন নিয়ে চিন্তা কর

أهل الحديث همُو أهل النبي وإن + لم يصحبوا نفسه أنفاسه صحبوا.

আর এই ঘটনা তো কত আগের! খায়রুল কুরূনের কাছাকাছি যুগের! বিখ্যাত ইমাম মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া যুহলী (১৭২-২৫৮ হি.)-এর ঘটনা। তাঁর ছেলে আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

প্রচ- গরমের দিনে একদিন দুপুরের সময় আমি আমার আব্বার কাছে গেলাম। তিনি তার কিতাবের কুঠরিতে ছিলেন। তার সামনে ছিল লন্ঠন। কারণ ভরদুপুরেও কুঠরির ভেতরে ছিল অন্ধকার। আমি বললাম, আব্বাজী! একে তো গরমের দিন! তার উপর দুপুরবেলা এই লন্ঠনের ধোঁয়া!! নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছেন! একটু যদি আরাম করতেন! তিনি জওয়াব দিলেন-

يا بني! تقول لي هذا وأنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ومع  أصحابه والتابعين؟

বাছা! তুমি এটা বলছ অথচ আমি তো আছি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে, তাঁর সাহাবী এবং তাবেয়ীদের সঙ্গে। -সাফাহাত মিন সাবরিল উলামা, পৃ. ১২৩-১২৪ (-এর মাধ্যমে তারীখে বাগদাদ, খ. ৩, পৃ. ১১৪; তাহযীবুল কামাল, খ. ৩ পৃ. ১২৮৭)

আর দ্বিতীয় কথা হল, তুমি কিতাব হাতে নিবে, হাতে নেওয়া মাত্রই কিতাবের মুসান্নিফ ও তাঁর পূর্ববর্তীগণের দিন রাতের মেহনত এবং জীবনব্যাপী কুরবানীর যে কীর্তি, তা যেন তোমার হৃদয়ে ও অনুভূতিতে জাগ্রত হয়। কত মানুষের মেহনত-মোজাহাদা ও কুরবানীর বদৌলতে, কত পরিবেশ-পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, কত শতাব্দীর পথ অতিক্রম করে আজ এই ইলমের এক একটি শব্দ আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং অক্ষত ও সংরক্ষিত অবস্থায় পৌঁছেছে! শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. সাফাহাতের খাতিমায় এ বিষয়ে লিখেছেন। তালিবুল ইলমদের বারবার এটা পড়া উচিত। আসলেই আমাদের উপর হক- কিতাবের মুসান্নিফীন এবং সালাফের সকলের প্রতি শোকরগুযার থাকা। আমাদের হৃদয় মন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার অনুভূতিতে আপ্লুত থাকবে  আর যবানে তাদের জন্য সবসময় দুআ জারি থাকবে-

رحمهم الله تعالى رحمة واسعة وجزاهم الله عنا خيرالجزاء.

এক মজলিসে মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ দামাত বারাকাতুহুমের কাছে শুনেছি, যে তালিবে ইলম কিতাব হাতে নিয়ে এটা ভাবতে সক্ষম হয় না যে, লেখক আমার জন্য লিখেছেন এই কিতাব! কীভাবে লিখেছেন?! একদিকে দোয়াত রাখা, ময়ূরের পর দোয়াতে ডুবিয়ে একটি লাইন লিখলেন, আরেকটি লাইন লেখার জন্য আবার তা দোয়াতে ডোবালেন! এভাবে যে কল্পনা করতে সক্ষম নয়, সে তো লেখকের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারল না।

শুধু মুসান্নিফ নন, প্রত্যেক যুগের অনুলিপিকার, অনুলিপির সংরক্ষক, পাণ্ডুলিপির সম্পাদক, প্রকাশক, পরিবেশক, তোমার পাঠাগারের জন্য এর কপি সংগ্রহকারী, সংগ্রহে সহযোগিতাকারী এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী- সবাই আমাদের শোকর ও দুআর হকদার। শেখ সাদীর এই শের এখানেও প্রযোজ্য-

ابرو باد ومہ وخورشید ہمہ درکاراند + تاتو نانے بکف آری وبغفلت نخوری

 (ধারণ ও লিখনে : আনাস বিন সাদ)

 

 

advertisement