রবিউল আখির ১৪৩১   ||   এপ্রিল ২০১০

চিকিৎসাঃ গ্রামে ডাক্তারদের উপস্থিতি দরকার

খসরূ খান

গ্রামের মানুষ সহজে চিকিৎসা পান না। রোগ কিছুটা জটিল হলেই বহু ভোগান্তি মাথায় নিয়ে রোগীসহ রোগীর লোকজনকে শহরে ছুটতে হয়। কখনো জেলা শহরে, কখনো ভিন্ন জেলার কোনো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তারপরও যে তারা চিকিৎসার সব সুবিধা সহজে পেয়ে যান এমন নয়। বহু টকাকড়ি খরচ করতে হয়, বহু ধরাধরি করতে হয় এবং তীর্থের কাকের মতো কখনো ডাক্তার আর কখনো অপারেশনের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু গ্রামে যদি তারা প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসাটা পান তাহলে তাদের এসব ভোগান্তির পাহাড়টাই ছোট হয়ে যায়। অথচ চিকিৎসা-ব্যবস্থা ও সেবার পর্যায়টা বহু দিন থেকে নিয়ে বর্তমান পর্যন্ত এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, গ্রামাঞ্চলগুলোতে চিকিৎসা সুবিধাই নেই, সেবার পর্যায় তো আরও দূরের। গ্রাম প্রধান এ দেশের এ চিত্রটাকে তো সন'ষ্টিজনক বলা যায় না। গত ২৮ মার্চ ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএর নতুন নির্বাচিত প্যানেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-চিকিৎসকদের গ্রামে যেতে হবে। গ্রামাঞ্চলে অবস্থান ও চিকিৎসার রেকর্ড দেখে ডাক্তারদের পদোন্নতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ এদেশের চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির বিবেচনা থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে বাস্তবানুগ ও যথার্থ বলা ছাড়া উপায় নেই। মূলত গ্রামগুলোতে ছোট্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকে, উপজেলা পর্যায়ে আরেকটু উন্নত পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রও থাকে। কিন্তু অধিকাংশ সময় সেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাশ করা কোনো ডাক্তারের উপস্থিতি থাকে না। নিয়োগ ও নিবন্ধন থাকলেও গ্রামগুলোতে ডাক্তারদের উপস্থিতির সংকট গ্রাম পর্যায়ে চিকিৎসা-ব্যবস্থাকে চরম ভঙ্গুর করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী এ রকম কোনো ব্যবস্থা বাস্তবে গৃহীত হলে সন্দেহ নেই, গ্রামের মানুষের জন্য চিকিৎসা প্রাপ্তির বিষয়টা অনেক সহজ হবে। তবে এ কথা সত্য যে, গ্রামের দুর্বল চিকিৎসা-ব্যবস্থার সবকিছু কেবল ডাক্তারদের অনুপস্থিতির সঙ্গেই যুক্ত নয়। অবকাঠামো, পর্যাপ্ত সেবক-সেবিকা, ওষুধ, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতেও সেখানে যে অচলাবস্থা বিরাজমান তাতে একক চিকিৎসকের উপস্থিতি গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার চেহারাটাকে উন্নত করার জন্য যথেষ্ট নয়। তারপরও চিকিৎসার প্রধাম মাধ্যম যে চিকিৎসক তিনি যদি গ্রামে উপস্থিত থাকেন, তার দায়িত্বটুকুই তার মতো করে পালন করেন তাতেও অবস্থার অনেক উন্নতি হতে পারে। সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ডাক্তারদের গ্রামে অবস্থানের বিষয়টিকে উৎসাহিত ও অবধারিত করা গেলে গ্রামের মানুষ বড় রকমভাবে উপকৃত হবেন। পদোন্নতি প্রত্যাশী এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারাররা সবাই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী গ্রামে দু’এক বছর কাটালে তাদের অভিজ্ঞতা ও কর্মকৌশলও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা যায়। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন ভিন্ন মতের ডাক্তারদের বেছে বেছে গ্রামে পাঠানো না হয়।

 

advertisement