প্রতিবেশী : কাশ্মীরের জন্য...
আবার কাশ্মীরে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। কাশ্মীরের পরিচিতি দিতে গিয়ে বলা হয়, ভূস্বর্গ, দুনিয়ার বেহেশত। সেই কাশ্মীর ১৯৪৭-এর পর থেকে নারকীয় রক্তপাত ছাড়া আর কী পেয়েছে! এই জুলাইয়ের শুরু থেকে সেই উপত্যকায় নতুন রকম বর্বরতা শুরু হয়েছে। প্রথমে বুরহান ওয়ানি নামের এক যুবককে হত্যা এবং তার দাফনকালে বিক্ষোভরত অবস্থায় আরো অনেককে হত্যা করা হয়। সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৪০ পেরিয়েছে। আহত হয়েছে অসহায় নারী-শিশু-কিশোরসহ বহু মানুষ। কিন্তু ভারতীয় বাহিনীর তা-ব থামেনি।
কাশ্মীরে এবারের ভারতীয় বাহিনীর হামলার একটি বর্বর ও অমানবিক দিক ছিল, বিশেষ রকম ছড়রা গুলি বা পেলেট-এর প্রয়োগ। এ পেলেট মানবদেহে চালুনির মতো ছিদ্র ও ঝাঁঝরা করে ফেলে। ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরিদের মুখ ও চোখ লক্ষ্য করে এবার অনবরত পেলেট ছুঁড়েছে। এতে নারী-শিশুসহ শত শত নিরাপরাধ কাশ্মীরি অন্ধ হতে চলেছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, এরা বেঁচে থাকবেন, কিন্তু আমরণ চোখে দেখতে পাবেন না। অর্থাৎ পরিকল্পিত আক্রমণের মধ্য দিয়ে অন্ধত্বের এক ‘জীবনমৃত’ কাশ্মিরী তারুণ্য উপহার দিতে চলেছে এবার ভারতীয় বাহিনী। হিন্দুবাদী বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতি এ -এক ভিন্নতর ‘উপহার’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। কিন্তু এইসব বর্বরতার খবর সত্ত্বেও ভারত কিংবা বাংলাদেশের মূলধারার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম পাশ কাটিয়ে কাটিয়েই দিন পার করেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রকম ছবি ও ফুটেজ। লাল বর্বরতার বহু দলিল। সেসব দেখলে গা শিউরে উঠে। হৃদয় কেঁদে ওঠে।
আজ হয়েছে কি দুনিয়ার! বড় বড় দেশের বড় বড় বর্বরতার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো কথা বলতে চাইছে না। কোনো দেশ কিংবা সংস্থা এগিয়ে আসছে না। কাশ্মীরিরা কি মানুষ নয়? ধর্মীয়ভাবে মুসলিম হওয়ায় এখন কি তারা অস্পৃশ্য? তাদের কি বেঁচে থাকার, সহানুভূতি পাওয়ার কোনো রকম অধিকার নেই? জঙ্গিবাদের কথা বলে আমরা প্রতিবাদী সশস্ত্র তৎপরতার প্রতি গালি দিই, ঘৃণা করি। ঠিক আছে, ঠিক আছে। কিন্তু দেশে দেশে আক্রান্ত, নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য সহানুভূতি, দুআ ও নিঃশব্দ কান্নাও কি জঙ্গিবাদের অংশ? তবে আর সহানুভূতির দু’টি শব্দ এবং চোখের দু’ফোটা পানি ছাড়তে আমরা কৃপণতা করছি কেন? জঙ্গিবাদের পরিবর্তে এ কোন ‘নির্মমতাবাদে’ আমরা আক্রান্ত হতে চলেছি? মজলুম কাশ্মীরিদের জন্য আমাদের দু’ফোটা ‘নিরস্ত্র’ চোখের জল!