সফর ১৪৩৭   ||   ডিসেম্বর ২০১৫

বর্তমান পরিস্থিতি : সতর্কতা ও সচেতনতা কাম্য

বিশ্বপরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সিরিয়ার সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি, লাখ লাখ মুসলিমের উদ্বাস্তু জীবন-যাপন, প্যারিসে হামলা-পরবর্তী নানা ঘোষণা ও পদক্ষেপ ইত্যাদি সব কিছুর বিশ্লেষণ বেশ জটিল ও কঠিন। নানামুখী সংবাদ ও বিশ্লেষণ থেকে নিশ্চিত সত্য বের করে আনা খুব সহজ নয়। দেশের ভিতরেও নানা ঘটনা ও ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি কোনো কিছুই খুব স্বাভাবিক নয়। এ ধরনের অস্বচ্ছতা ও অস্পষ্টতার পরিবেশে দ্বীন ও ইলমের ধারক-বাহকগণের অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতা কাম্য। আচরণ-উচ্চারণ সব কিছুই সংযত হওয়া দরকার। শুধু মন্তব্যের জন্য মন্তব্য বা আনুমানিক তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা-সমালোচনা কাম্য নয়।

দাওয়াত ও তালীমের মেহনত সকল দ্বীনী কাজের প্রাণ। এ মেহনত জারি থাকা ও জারি রাখতে সক্ষম হওয়া অতি প্রয়োজন। নতুবা দ্বীন পালন ও দ্বীনী কর্মতৎপরতা প্রতিকলতার শিকার হওয়া বা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা প্রবল। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন ইনাবাত ইলাল্লাহÑ আল্লাহ অভিমুখী হওয়া। তিনিই ঐ সত্তা যিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করে আনেন। আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং পরিণাম ও ফলাফল সব তারই হাতে। প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে তিনি আনেন অনুকল ফলাফল আবার অনুকূল পরিস্থিতি থেকে বের করেন প্রতিকল ফলাফল। একারণে তাঁরই দিকে রুজু করা মুমিনের প্রথম কাজ। দ্বিতীয় কাজ, নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্বে কর্মব্যস্ত থাকা। দায়ীগণের গোটা জামাত সবাই মিলে একটি একক। সকল অংশ যদি নিজ নিজ জায়গায় সচল থাকে তাহলে দাওয়াতের গোটা এককটি সচল থাকবে। পক্ষান্তরে কোনো একটি অংশ অচল হয়ে পড়লে গোটা এককটিই অচল হয়ে পড়তে পারে। একারণে কোনো অংশেরই অবকাশ নেই নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার। চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে প্রভাবিত হয়ে বা কোনো অস্পষ্ট আহŸানে সাড়া দিয়ে আপন কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হলে তা অশুভ পরিণাম বয়ে আনতে পারে। মুমিনের এক বৈশিষ্ট্য, ‘মুমিন প্রতারণা করে না এবং প্রতারিতও হয় না। খলীফায়ে রাশেদ হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর বাণী لست بخب ولا الخب يخدعني আমি নিজেও প্রতারক নই আবার কোনো প্রতারকও আমাকে প্রতারিত করতে পারবে না। বস্তুত এটিই সতর্ক ও সচেতন মুমিনের শান।

তৃতীয়ত চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে চোখ বন্ধ রাখাও দায়ীর শান নয়। পরিস্থিতির প্রতিকলতা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারা এবং সে প্রতিকলতা জয় করার ইসলামী পন্থা অবলম্বন করা দায়ীর কর্তব্য। আর এর জন্য দ্বীনের সঠিক প্রজ্ঞা ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের সাহচর্য এক বিকল্পহীন বিষয়।

সবর ও ধৈর্যের সাথে নিয়মানুযায়ী নিজ নিজ অঙ্গনে কর্মতৎপর থাকাই দায়ীর শান। সমাজের সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। এখনো এ সমাজের সর্বস্তরের সিংহভাগ মানুষ আল্লাহভীরু ও নবী প্রেমিক। এদের ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটো দিকই চিহ্নিত করা এবং সংশোধনের কার্যকর পন্থা উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। এ দেশ ও ভখণ্ডের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের দ্বীন ও ঈমান গুটিকয়েক ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কৃপার উপর ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। দ্বীনী ইলমের বিস্তার, দ্বীনের মৌলিক চিন্তা ও সৌন্দর্যের ব্যাপক চর্চা, দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়ে উত্থাপিত নানা কটপ্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ জবাব ও দাওয়াতের অন্যান্য অঙ্গনে কাজ করার জন্য একদল প্রাজ্ঞ ও সচেতন মানুষের উৎসর্গিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

 

advertisement