একটি বানোয়াট কিসসা : শাদ্দাদের বেহেশত
সমাজে ‘শাদ্দাদের বেহেশত’ শিরোনামে বিভিন্ন ধরনের কিস্সা প্রচলিত আছে। কেউ কিস্সাটি এভাবে বলেনÑ
শাদ্দাদ বিশাল রাজত্ব ও ধন-সম্পদের মালিক ছিল। তার কওমের নবী তাকে দাওয়াত দিলে সে বলে, ঈমানের বদলে কী মিলবে? নবী বললেন, জান্নাত। তখন সে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে নিজেই জান্নাত বানাতে শুরু করে।
৩০০ বছর ধরে জান্নাত বানায়; তাতে বিভিন্ন ফলের গাছ লাগায়। প্রাসাদ বানায়, নহর খনন করে ইত্যাদি। এরপর সে যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে তার বানানো বেহেশতের দিকে রওনা হয়। এক দিন এক রাতের রাস্তা বাকি থাকতেই আল্লাহ তাকে তার সৈন্য-সামন্তসহ ধ্বংস করে দেন।
কেউ বলে, তার বানানো জান্নাত দেখতে যাওয়ার পথে একটি সুন্দর হরিণ দেখতে পায়। হরিণটি শিকার করতে গিয়ে সে একটু দূরে চলে যায়। এ মুহূর্তে মালাকুল মাউত হাযির হয় এবং তার রূহ কবয করে। সে তার বানানো জান্নাত নিজেও দেখতে পারে না।
কেউ বলে, সে তার বানানো বেহেশতে প্রবেশ করার জন্য যখন এক পা দিল,তখন দ্বিতীয় পা রাখার আগেই মালাকুল মাউত তার রূহ কবয করে ফেলে ইত্যাদি ইত্যাদি।
কারো কারো মুখে এ-ও শোনা যায়, এরপর আল্লাহ তাআলা তার ঐ জান্নাত যমিনে ধ্বসিয়ে দেন; মাটির সাথে মিশিয়ে দেন। বালুর মধ্যে যে অংশ চিকচিক করে, তা শাদ্দাদের বানানো বেহেশতের ধ্বংসাবশেষ।
এ ছাড়াও শাদ্দাদের বেহেশত কেন্দ্রিক আরো অনেক কথা সমাজে প্রচলিত আছে। তার বেহেশত কীভাবে বানালো, কতজন শ্রমিক লেগেছে, এর দেয়াল কিসের ছিল,ফটক কিসের ছিল, মেঝে কিসের ছিল, ইত্যাদি।
শাদ্দাদের বেহেশত বানানোর কিসসা একেবারেই অবাস্তব ও কাল্পনিক; নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল দ্বারা তা প্রমাণিত নয়। যারা এটি উল্লেখ করেছেন তারা ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে তা এনেছেন। এজন্যই ইমাম ইবনে কাসীর ও আল্লামা ইবনে খালদুনসহ আরো অনেকেই এ কিসসাকে অবাস্তব ও কাল্পনিক বলে অভিহিত করেছেন। Ñতাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৮০২-৮০৩; মুকাদ্দামাতু ইবনে খালদূন ১/১৭; আলইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাওযূআত ফী কুতুবিত তাফসীর ২৮২-২৮৪